১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পুটপাট , বাংলাদেশের চোরাকারবারিদের নৈরাজ্য

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:১৬:৩৮ সকাল



১৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর প্রতিনিধি জেনারেল আরোরার কাছে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। সেই দিন থেকে পরবর্তী সময়ে দেশবাসী দেখতে পেয়েছিলেন সারাদেশ ছেয়ে গেছে ভারতীয় সেনায়। তাদের ঘিরে আছে আওয়ামীলীগের ভারতীয় এজেন্ট বি এল এফ, লুটপাটের কাদেরিয়া বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাদের দলীয় ক্যাডার ভিত্তিক বিভিন্ন বাহিনী আর দল ভারি করার জন্য আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির মেম্বার যাদের ভুঁইফোড় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

জনগণ এই সমস্ত বাহিনীর নাম করন করেছিলেন ‘16th Division’. পুরো দেশে চলেছে মিত্র বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হরির লুট ও লুট করা মাল সামগ্রী গনিমতের মাল হিসাবে ভারতে পাচার। পাচারের সাথে জড়িত সবাই আওয়ামীলীগের তৎকালীন শীর্ষ নেতা ও তাদের পরিবার। সীমান্ত খুলে দিয়ে চলছিল হরিলুট। আওয়ামীলীগের নেতারা তাদের দলীয় ক্যাডারদের হাতে অস্ত্র দিয়ে জনগণকে জিম্মি করে জোর পূর্বক জনগণের সম্পদ , পাকিস্থানীদের ফেলে যাওয়া সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে যায়।

১৯৭১ এর পরবর্তীকালে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিন খবরের শিরোনাম ছিল লুটেরা চক্রের দানবীয় তান্ডব। তৎকালীন ভারতীয় সেনা বাহিনী ও আওয়ামীলীগের লুটপাটের প্রতিবাদ করার কারণে বহু রণাঙ্গণের মুক্তি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। ভারতীয় সেনা বাহিনী ও আওয়ামীলীগের লুটপাটের প্রতিবাদ করার কারণে তৎকালীন মুজিব সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলকে। মেজর জলিলের বইয়ে লিখে গেছেন সেই লুটপাটের কথা। ১৯৭১ থেকে শুরু লুটপাট ভয়ঙ্কর পর্যায়ে যখন আয়ত্বের বাহিরে চলে যায় , তখন দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনীকে নামানো হলে আওয়ামীলীগের ভারতীয় এজেন্ট বি এল এফ, লুটপাটের কাদেরিয়া বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাদের দলীয় ক্যাডার রক্ষার জন্য শেখ মুজিব আবারো সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত আসতে বাধ্য করেন। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটা উদহারণ দিলেই বুঝতে সুবিধা হবে মূলত ভারতীয় সেনা বাহিনী ও আওয়ামীলীগের লুটপাটের ভয়াবহতা কেমন ছিল।

চোরাকারবারি ও পাচার কারীদের ট্রাককে ধাওয়া করে সেনাবাহিনী। সামনে ট্রাক পিছনে সেনাবাহিনীর গাড়ি। এক পর্যায়ে চোরাকারবারি ও পাচার কারীদের ট্রাক তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনসুর আলীর ( আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতা নাসিমের পিতা ) বাড়ীতে ঢুকে যায়
। শেখ মুজিবের কাছে খবর পাঠানোর পর শেখ মুজিব নিজেই তখন সেনাবাহিনীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনসুর আলীর বাড়ির চোরাকারবার গোপন রেখে নীরবে চলে আসতে। সেই ঘটনার তদন্তে দেখা যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনসুর আলীর মদদে আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতা নাসিম সীমান্তে বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে পাচার করতো। এর পর খবরের কাগজে সীমান্তে পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত প্রমান সহ প্রকাশিত হতে থাকে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের লোকদের নাম।

১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পুটপাট। জেনারেল অরোরাকে সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা 'জগ্গি' নামেই ডাকতেন। জেনারেল অশোক মেহতা নামের আরেকজন ছিলেন।এডিসি মহিন্দর সিং। 'জগ্গি', অশোক মেহতা , এডিসি মহিন্দর সিং দের মদদে চলতে থাকে বাংলাদেশে লুট।


একি সাথে দীর্ঘ মেয়াদি অবস্থানের জন্য ভারতীয় বাহিনীর পায়তারা। নিরস্ত্র জনগনের কিছুই করার ছিল না। কিন্তু দেশ প্রেমিক এবং সচেতন মুক্তিযোদ্ধারা এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে স্থানীয় পর্যায়ে। ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা। সারা দেশে জ্বলে ওঠে স্ফুলিঙ্গ। তাদের কর্মকাণ্ডে ক্রমান্নয়ে যোগ দিতে থাকেন জাগ্রত জনতা। প্রমাদ গোনেন শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধী। স্ফুলিঙ্গ দাবানলে রূপান্তরিত হলে সেই ঘৃনার অনলে পুরে ছারখার হয়ে যাবে চানক্যদের বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিনত করার সুদুরপ্রসারি নীল নকশা, ভারতীয় ইউনিয়নের কৃত্তিম অস্তিত্বও পড়বে ঝুঁকির মুখে। এতে আমও যাবে ছালাও যাবে। তাই দিল্লীশ্বরেরা বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনা বাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে। এ ছাড়া আরও একটি কারন ছিল।

বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সেনা অবস্থানের জন্য জাতিসঙ্ঘের বেশিরভাগ সদস্য দেশ বাংলাদেশকে একটি দখলকৃত ভূখণ্ড(Occupied Territory) হিসাবে বিবেচনা করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছিল না। এই জটিলতা থেকে পরিত্রানের জন্যও ইন্দিরা সরকার বাধ্য হয়েছিল তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে। এই সত্যের আলোকে আওয়ামী লীগের দাবি, ‘দেশে ফিরে মুজিবই ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য করেছিল দেশের মাটি থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত নিতে’ এই প্রচারনা একটি মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

তথ্য সূত্র -

(১) রাষ্ট্রদূত লেঃ কর্ণেল (অবঃ) শরিফুল হক ডালিম বীর উত্তম।

(২) তৎকালীন দৈনিক ইত্তেফাক।

(৩) তৎকালীন গণকণ্ঠ।

(৪) সাংবাদিক আহমেদ ছফার ইতিহাসরের কাঠগড়ায় আওয়ামীলীগ।

বিষয়: বিবিধ

১২৯১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386271
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
হতভাগা লিখেছেন : আমার তো মনে হয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা পাকিস্তানী বাহিনীরা করে নি । কারণ এসব বুদ্ধিজীবীরা শেখ মুজিবের কথা অমান্য করে পাকিস্তান সরকারের চাকরি করে যাচ্ছিল। মানে তারা পাকিস্তান সরকারের অনুগত ছিল। তাহলে কেন তাদেরকে পাক বাহিনী মারতে যাবে যারা এতদিন তাদের হয়েই কাজ করেছে। তখন যারা ডিসি , এডিসি ছিলেন তারাও তো পাকিস্তান সরকারের অধীনেই কাজ করে গেছেন।

ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে - পাকিস্তানী বাহিনী তাদের সরকারের অনুগত হয়ে কাজ করাদের এত দিন না মেরে একেবারে শেষ দিকে এসে মারতে গেল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File