যে কারনে নব্য নাস্তিক আব্দুল্লাহ মাসুদ, মুফাস্সিল ইসলামসহ অন্যান্য নাস্তিকদের কোন প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারছেন না তথাকথিত ইসলামী স্কলাররা

লিখেছেন লিখেছেন আবু বকর সিদ্দিকী ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৪৯:৩৪ সকাল

অবাক লাগছে না, যারা প্রতিনিয়ত নানা ইসলামী নিয়মনীতি শিখাতে বক্তৃতা, বিবৃতি, বই পুস্তক, টিভি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঝড় তুলেন, মহানবীর সামান্য কোন সমালোচনা হলে প্রতিবাদের তুফান বইয়ে দেন, সেই তারাই কিনা নব্য এক্স-মুসলিমদের সমালোচনার কোন জবাব দিতে পারছেন না। নাস্তিকদের যারা জবাব দিয়েছেন তারা কেউই কোন ইসলামী স্কলার নন। উনারা নিছকই সাধারণ মুসলিম, যারা বিবেকের তাড়নায় নানা বই পুস্তক পড়ে জবাব দেবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাদের তা করার কথা, তারা বরাবরই নিশ্চুপ। কিন্তু কেন? আসলে এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মত নব্য নাস্তিকেরা কিন্তু একাধারে মুফতি, হাফেজ এবং সালাফী মতাবলম্বী। একইভাবে মুফাস্সিল ইসলাম নামীয় এই বয়স্ক আধপাগলা লোকটিও কিন্তু একসময় জামাত শিবিরে যুক্ত ছিলেন এবং দেশে বিদেশে ইসলামী জ্ঞান বিতরণ করে বেড়াতেন। কাজেই এরা সাধারণ নাস্তিক নয়। কোরআন-হাদিস থেকে উদ্বৃতি দিয়েই তারা মহানবীর বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এইসব নাস্তিকেরা ভালোভাবেই জানেন, বর্তমানে সালাফী মতবাদ গোটা বিশ্বে বেশ ঝাঁকিয়ে বসেছে। আর সালাফীরা হাদিসকে ঠিক একইভাবে কোরআনের মতই মানেন। কিছু কিছু সালাফীর মগজ এমনভাবে ধোলাই হয়েছে যে, তারা কোরআনের চাইতেও হাদিসকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অথচ কোরআন হলো সহি শুদ্ধ আল্লাহর বানী। হাদীস রাসুলুল্লাহর বানী হলেও তা সব বানী সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি। তার মৃত্যুর ২৫০-৩০০ বছর পরে হাদীস লিখিতভাবে সংরক্ষণ করার কাজ শুরু হয়েছে। যার কারনে সহি হাদীসের সাথে অনেক জাল, জঈফ এবং বিকৃত হাদীস সংরক্ষিত হয়ে গেছে। সুন্নিরা যে হাদীস মানেন, শিয়ারা তা মানেন না। আবার শিয়াদের হাদীস সুন্নিরা মানেন না। সুন্নিদের সিহা সিত্তার মধ্যে প্রধানতম হাদীস গ্রন্থ বোখারী এবং মুসলিম শরীফ। এই সিহা সিত্তা আবার আবু হুরাইরার বর্ণিত হাদীস দ্বারা পরিপূর্ণ। অথচ এই আবু হুরাইরাকে উম্মুল মুমেনীন আয়শা (রা) ‘মিথ্যাবাদী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপরও এই আবু হুরাইরার বর্ণিত হাদিসই সুন্নিরা মেনে আসছেন যে কারনে তা হলো, আবু হুরাইরা মুসলিম বিশ্বের প্রথম বাদশাহ মুয়াবিয়ার রাজপ্রাসাদে ঠাই পেয়েছিলেন আলীর বিরোধিতা করার কারনে। আবু হুরাইরা মানে বিড়ালের বাবা। তার স্বভাব বিড়াল জাতীয় ছিল বলে মহানবি তাকে ঐ নামে ডাকতেন। রাছুলের সময় আবু হোরায়রা (রা) সংসার বিরাগী চরম দারিদ্র্যে দিন কাটালেও পরবর্তী জীবনে তিনি বিয়ে করে সংসারী হন।সন্তান-সন্ততির পিতা এবং ধনসম্পদের অধিকারী হন। ইছলামী শরিয়তে তার ব্যুৎপত্তি, বিদ্যা-বুদ্ধিও প্রজ্ঞায় ওমরের (রা) গভীর আস্থা ছিল। তিনি তাঁকে বাহরা্ইন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু অর্থ সঞ্চয়ের অপবাদে তাকে বরখাস্ত করেন। যথাবিহিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সন্দেহ দূর হলে পরে তাকে পুনরায় উক্ত পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু আবু হুরায়রা(রা)-এর আহত আত্মসম্ভ্রমবোধ উক্ত পদ পুনঃগ্রহণে তাঁকে নিরুৎসাহ করে তোলে। আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত হাদিছের সংখ্যাধিক্যের জন্য তার হাদিছ সাধারণত অগ্রাহ্য মনে করেন। কিন্তু এর পশ্চাতে কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি নেই।” [দ্র: সংক্ষিপ্ত ইছলামী বিশ্বকোষ; ১মখন্ড. ৩য় মুদ্রণ, আবু হোরায়রা অধ্যায়; পৃ: ৫৭; ই. ফা.]

ঘটনা তদন্তের পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ওমর তাকে পুনরায় ঐ পদে বহাল রাখার অনুরোধ করেন বলে মুহাদ্দেসগণ ইতিহাস রচনা করেছেন বটে; কিন্তু যে ওমর আপন সন্তানকে অভিযুক্ত প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড দেন; সেই ওমর অভিযোগের তদন্ত না করেই তাঁকে পদচ্যুত করেন; অতঃপর তদন্ত করেন। অতঃপর মিথ্যা অভিযোগের ফলে কোনো ছাহাবাকে দণ্ডিত করেছেন এমন কোনো হাদিছ-ইতিহাস রচিত হয়নি; অতএব মোহাদ্দেছদের মন্তব্য বিশ্বাস করার অর্থ ওমরকে খলিফা হিসেবে অযোগ্য ও হেয় প্রতিপন্ন করা। সম্ভবত ওমরের ওপর পূর্ব থেকেই ইমামগণ নাখোস ছিলেন কারণ হয়ত ওমর জনসাধারণের কাছে হাদিছ লেখার কথা দিয়েও তা পূরণ করেননি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

প্রথম খলিফা আবু বকরের সময় আবু হোরায়রার কোনো খোঁজখবরই ছিল না কিন্তু ওমরের সময় তিনি বাহরাইনের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। এখানেও তিনি অর্থ আত্মসাতের দায়ে ওমর কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

কথিত হয় তিনি দুর্দান্ত কপর্দকহীন চূড়ান্ত অলস ভিখারী ছিলেন; কিন্তু ওমরের আমলে শাসনকর্তা হওয়ার পরেই হঠাৎ করে প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। কিভাবে হলেন তার কোন ইতিহাস রচিত হয়নি।

তিনি মহানবী সম্বন্ধে অতিরিক্ত কথা বলতেন, বাংলায় যাকে ‘বাচাল’বলে; সে কারণে ছাহাবাগণই প্রতিবাদ করতেন। মোহাদ্দেছগণ লিখেছেন, ‘বেশি হাদিছ বলতেন বলেই অন্য ছাহাবাগণ প্রতিবাদ করতেন। ’মূলত এ যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই; কারণ বেশি বেশি হোক বা কমই হোক সত্য [?] কথা [হাদিস] বলতেন, অথচ ছাহাবাগণ প্রতিবাদ করতেন বা ক্ষোভ প্রকাশ করতেন! এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মাত্র তিন বছরে মহানবীর (সা.) সাহচার্যে থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হাদিছ বয়ান করেছেন! পক্ষান্তরে, খোলাফায়ে রাশেদ্বীনগণ সারাজীবন রাছুলের সাহচর্যে থেকে মাত্র পাঁচশত হাদিছ রচনা করতেও সাহসী হননি!

সুন্নিদের জন্যে অধিক হাদিস বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা সম্পর্কে এ সামান্য আলোচনা থেকেই পাঠক একটা ধারনা নিশ্চয়ই পেয়েছেন।

যাক, আলীর খেলাফত শেষ হলে মুসলিম বিশ্বে আর খেলাফত ব্যবস্থাকে স্থান দেয়া হয়নি। শুরু হয় উমাইয়া রাজবংশের শাসন। সূদীর্ঘকাল ধরে তারা ক্ষমতায় থাকায় সবকিছু তাদের অনুকুলে চলে যায়। তাদের ব্যাখ্যাই সর্বাধিক প্রাধান্য পাওয়া শুরু হয়। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজা প্রত্যেকেই হয় সরাসরি রাজতন্ত্রের আনুকুল্য পেয়েছেন, নয়তো কোন না কোনভাবে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। যে কারনে আবু হুরাইরার বর্নিত হাদীস দ্বারা সুন্নিদের হাদীস গ্রন্থ পরিপূরর্ণ হলেও, তাতে আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইনের রেওয়াত নেই বললেই চলে। নিরপেক্ষতার খাতিরে সামান্য কিছু রেওয়াত নেয়া হয়েছে মাত্র। সবচেয়ে অথেনটিক হাদিস গ্রন্থও যে অথেনটিক নয়, তা ঐ হাদিস গ্রস্থ নিজেই প্রমাণ করে। কন্ট্রাডিকশনে ভরা অনেক হাদিস রয়েছে, তথাপি কট্টরপন্থীরা তা মানতে নারাজ। বুখারীর কিছু হাদিস রয়েছে যা মহানবির চরিত্রে কলংক লেপন করে। যেমন একটি হাদীস রয়েছে, মহানবি ৬ বছর বয়সের আয়শাকে বিয়ে করেছিলেন। অথচ ঐ হাদিস গ্রন্থেই আরেকটি হাদীস রয়েছে,আয়েশার বিয়ের বয়স সংক্রান্ত হাদীসটি ভুল। কেননা ঐ হাদীসে আয়েশা সুরা ৫৪ নাজিল হওয়ার সময় কিশোরী ‘যারিয়াহ’ (শিশু ‘সিবিয়াহ’ নয়) হিসাবে দাবী করেছেন। ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় হিজরী পূর্ব ৯ সালে মক্কায় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন কমপক্ষে ৫ বছর (কেননা তার মনে আছে) হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনভাবেই ১৫/১৬ বছরের নিচে নয়। দাম্পত্য জীবন শুরু হয় আরো ২ বছর পর। (Sahih Bukhari, kitabu'l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al-sa`atu Maw`iduhum wa'l-sa`atu adha' wa amarr) Volume 6, Book 60, Number 399:

মোনাফেক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জন্য রাসূল (সা.)-এর দোয়া করার ব্যাপারে বুখারীতে যে হাদীস আছে সে সম্পর্কে ইবনে হাজার আসকালানী (যিনি বুখারীর হাদিস ব্যাখ্যা করে ফাতহুন বারী নামে বই লিখেছিলেন) বলেন সুরা তওবার এই আয়াত (“আত্মীয় স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা নবী এবং মু’মিনদের জন্য সংগত নয়” -৯:১১৩) বর্তমান থাকতে, হযরতের পক্ষে আব্দুল্লাহর জন্য জানাজার নামাজ পড়া বা ক্ষমাপ্রার্থনা সম্পূর্ণ অসম্ভব। অতএব এ হাদীসটি অবিশ্বাস্য। (বোখারী, ফৎহুল বারী, ১৯ খন্ড ২০৩ হতে ২০৬ পৃষ্ঠা) [উদ্বৃত: মাওলানা আকরাম খা রচিত “মোস্তফা চরিত”, পৃষ্ঠা-৫৪]

আবার দেখুন, “আনাছ, আয়েশা ও এবনে-আব্বাছ বলছেন:- ‘হযরত ৪০ বৎসর বয়সে নবী হয়ে, ১০ বৎসর মক্কায় অবস্থান করে হিজরত করেন; এবং মদিনায় আর দশ বৎসর অবস্থান করার পর, নবুয়তের ২০শ সনে, ৬০ বৎসর বয়সে পরলোকগমন করেন।’ (বোখারী ১৮-১০৯, মোছলেম ২-২০৬ পৃষ্ঠা) হযরতের ২০ বৎসর নবুয়ত, মক্কায় ১০ বৎসর অবস্থান এবং ৬০ বৎসর বয়সে পরলোক গমন – এই তিনটি কথাই ভুল। তিনি মক্কায় ১৩ বৎসর অবস্থান করে হিজরত করেন এবং ২৩ বৎসর নবী-জীবন অতিবাহিত করার পর ৬৩ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য; বোখারী ও মোছলেমের কথিত রাবিগণ কর্তৃকই এটা বর্ণিত হয়েছে। এ-সম্বন্ধে অধিক প্রমাণের আবশ্যক নেই। কারণ বোখারী ও মোছলেমে বর্ণিত এ দুটি পরস্পর বিপরীত বিবরণ উভয়ই সত্য হতে পারে না-সুতরাং একটা বিবরণ যে ভুল – তা সকলেই স্বীকার করবেন। অত্এব আমরা দেখছি হাদীসছের সনদ ছহী, অথচ হাদীছটি অগ্রাহ্য” [মাওলানা আকরাম খা রচিত “মোস্তফা চরিত”, পৃষ্ঠা - ৪৫]

এরকম আরো অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

কতিপয় কট্টরপন্থী মুসলমান নামধারীরা হাদিসের নামে মানুষের জীবনকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলেছেন। অথচ কোনআনে বলা হয়েছে, আমি তোমার উপর কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে তুমি দু:খ-কষ্ট ভোগ করবে। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-২)

তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না...”[সূরা বাকারাহ্; ০২:১৮৫]

আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ৬)

“তিনি (আল্লাহ্রাব্বুল ‘আলামীন) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি’ ”[সূরা হজ্ব; ২২:৭৮]

‘আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি; সেটি এমন যে, প্রত্যেক বস্তুর সত্য ও সুস্পষ্ট বর্ণনা; হেদায়াত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ (সূরা নাহল, আয়াত ৮৯)।

আল্লাহতালা সহজ করে দিলেও, গোমরাহীতে লিপ্ত লোকেরা কঠোরতার পথ বেছে নিয়েছে। আল্লাহপাক বলেন, ‘এক দল লোককে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর দ্বিতীয় দলটির উপর গোমরাহী ও বিদ্রোহ ভালোভাবেই চেপে বসেছে; এরাই (পরবর্তী পর্যায়ে) আল্লাহতালাকে বাদ দিয়ে শয়তানদের নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (এসত্বেও) তারা নিজেদের হেদায়াত প্রাপ্ত মনে করে। (সুরা আল আ’রাফ ৭: ৩০)

জীবনকে শরীয়ত সম্মতভাবে উপভোগ করার জন্যে আল্লাহপাক বরং তাগিদ দিয়েছেন, একই সুরার পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তানেরা, তোমরা প্রতিটি এবাদতের সময়ই তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহন করো, তোমরা খাও এবং পান করো, তবে কোন অবস্থাতেই অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা আল আ’রাফ৭: ৩১)

‘(হে নবী) তুমি বলো, আল্লাহতালার (দেয়া) সে সব সৌন্দর্য এবং পবিত্র খাবার তোমাদের জন্যে কে হারাম করেছে? যেগুলোকে তোমাদের জন্যে আল্লাহতালা স্বয়ং উদ্ভাবন করেছেন ; তুমি বলো এগুলো হচ্ছে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্যে পার্থিব পাওনা, (অবশ্য) কেয়ামতের দিনও এগুলো ঈমানদারদের জন্যেই (নির্দ্দিষ্ট থাকবে); এভাবেই আমি জ্ঞানী সমাজের জন্যে আমার আয়াতসমুহ খুলে খুলে বর্ণনা করি।’ (সুরা আল আ’রাফ ৭: ৩২)

কোরআনের এতো এতো আয়াত থাকা সত্বেও হাদিসের নামে নানা বিধি নিষেধ দ্বারা মুসলমানের জীবনে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াত বললে হাদিসপ্রেমীরা তা খন্ডাতে হাজারটা হাদিস এনে হাজির করেন। অনলাইনেই এরকম প্রচুর উদাহরন ছড়িয়ে আছে। আগ্রহী পাঠক, https://www.amarblog.com/blogs/mjbashar?page=25 সাইট ঘুরে আসতে পারেন। পরিস্থিতি এমন যে, এই সব হাদিস মেনে চলতে গেলে সত্যিকার অর্থে কোন মুসলমানের পক্ষে এক পা-ও এগুনো সম্ভব নয়। উপরন্তু এমন অনেকগুলো হাদিস রয়েছে যা মহানবির চরিত্রে কালিমা লেপন করে। অথচ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মহানবি মানুষের জন্যে অনুকরনীয় চরিত্র। হাদিস রচয়িতারা এই দিকটি ঐসময়ে লক্ষ্য করেছেন বলে মনে হয় না। কাজেই অনেক মুসলমানই অপরাধবোধ বুকে চেপে মানসিক কষ্টে জীবন অতিবাহিত করেন। আবার বিপরীতে অনেকে এতো কঠিন ধর্মকে অস্বীকার করে বসেন। তারা নাস্তিকতা গ্রহন করে মুক্তির স্বাদ লাভ করেন। এমন একজন ব্যক্তি হচ্ছেন সম্প্রতি ইসলাম ত্যাগ করা মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মুফাস্সিল ইসলামরা। তারা হাদিস থেকে মহানবির চরিত্রে কলংক লেপন করে চলেছেন। আর হাদিসের আলোকে কোরআনের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়েছেন।

এবার আসি মুল কথায়। আমাদের দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ইসলামী স্কলাররাই লেখাপড়া করেছেন মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় বা অনুরূপ কোন রাজতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে ঐতিহাসিকভাবেই রাজতন্ত্রের অনুকুলে ইসলামকে ব্যাখ্যা করা মতাদর্শ সালাফী মতবাদকে অনুসরন করে। স্বাভাবিকভাবেই তারা হাদিসের অন্ধ অনুসারী। হাদিসের বানী আর কোরআনের বানী তাদের কাছে একই। তারা এতোই বুখারীর ভক্ত যে, অনেকেই তাদেরকে ‘বুখারীর ধর্মের অনুসারী’ বা ‘বুখারীর উম্মত’ বলতেও ছাড়েন না। হাদিসপ্রেমীরা নিজেদের দলের নামই রেখেছেন ‘আহলে হাদিস’। নাস্তিক মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মুফাস্সিল ইসলামরা যখন হাদিস বর্ণনা করে মহানবির চরিত্র হনন করেন, তখন এইসব স্কলাররা চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কেননা তারা আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেন হাদিসে কোন ভুল নেই। এ কারনে আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামীয় এই ব্যক্তি বলেছেন, এই স্কলাররাও যখন হাদিসগুলো অনুধাবন করতে শুরু করেন তারাও মনে মনে নাস্তিক হয়ে যান।

আমরা বলছি না সব হাদিস দুর্বল বা জঈফ। আমরা বলছি, কোরআনের সাথে কন্ট্রাডিক্ট হলেই সেটা বাতিল। হোক সেটা বুখারী বা মুসলিম। কোরআনের বাইরে কোনকিছুকে অন্ধভাবে অনুসরন করা যায় না। কোরআন নাজিল হওয়ার সাথে সাথেই লিখে রাখা হয়েছে। কাজেই তা একেবারেই বিশুদ্ধ এবং অকাট্য। কিন্তু হাদিসের ক্ষেত্রে অনুরূপ মনে করা নিরেট মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষতঃ যা কোরআনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আমি অতি সংক্ষেপে বিষয়গুলো তুলে ধরলাম। আকলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়। আল্লাহপাক সবাইকে সত্যটা বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

২০২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File