মৌখিক সাক্ষী নয়, বাস্তব সাক্ষী হতে চাই

লিখেছেন লিখেছেন ইঁচড়ে পাকা ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:২৭:২৮ সকাল

وكذلك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدًا .

“আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি যাতে করে তোমরা লোকদের জন্যে সাক্ষী হও আর রাসূলও যেন তোমাদের জন্যে সাক্ষী হন।” (সূরাআল বাকারাহ-১৪৩)





মানব জাতির সামনে এ সত্যের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করাই হচ্ছে মুসলিমের আসল করণীয়।

এই সাক্ষ্যদানের জন্য প্রয়োজন আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং ইসলামের যথাযথ ও স্পষ্ট জ্ঞান।

আল্লাহ সবাইকে বাকপটু করেন না। তাই যে কেউ চাইলেই বক্তৃতা, সভা, সেমিনার, আলোচনা করে ইসলামকে মানুষের কাছে সহজবোধ্য করতে পারবে না। তাদের জন্য ইসলামকে যুক্তির সাথে মানুষের কাছে তুলে ধরা কঠিন। তাই তাদের জন্য এটা ফরজ না।


কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন,

يايها الذين امنوا كونوا قومين بالقسط شهداءلله

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর জন্যে সত্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।” (সুরা আন নিসা-১৩৫)



আর এই সাক্ষী হওয়ার মানে হল, বাস্তব সাক্ষ্য হওয়া। আমি যতটুকু জানি মানুষকে তা হয়তোবা বোঝানোর যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু নিজের জীবনে তা পরিপুর্ণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ আমার আছে। সেটা করতে যদি আমি ব্যর্থ হই তবে আল্লাহর আযাবের পাকড়াও হতে বাঁচার সুযোগ আমার কাছ থেকে কমে যাবে।

ومن اظلم ممن كتم شهادة عنده من الله .

“যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন রাখে, তবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? (সুরা বাকারা-১৪০)



সাহাবীরা কখনো অন্যকে জানানোর জন্য জ্ঞান আহরণ করতেন না। তারা জ্ঞান আহরণ করতেন বাস্তব সাক্ষী হওয়ার জন্য। নিজের জীবনে আমল করার জন্য।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (র) বলেছেন “আমার সুরাহ বাকারাহ শিখতে ১৪ বছর সময় লেগেছে।”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ছিলেন অনেক বড় মাপের একজন হাদীস ও ফিকহের পণ্ডিত। তার মত এমন ব্যক্তির কেন সূরা বাকার পড়তেই ১৪ বছর লেগে গেল?

উত্তর খুবই সহজ। ওনারা জানার জন্য পড়তেন না। জেনে মানার জন্য পড়তেন। যতদিন কোন আয়াত বাস্তবে আমলের আয়ত্বে না আনতে পারতেন ততদিন পরবর্তী আয়াত পড়তে অগ্রসর হতেন না।

আর আমাদের অবস্থা হল, যে যত দ্রুত কুরআন খতম দিতে পারে, সে তত বেশি আলেম, তত বেশি মর্যাদাসম্পন্ন হাফেজ।

তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব হল, বাস্তব জীবনে ইসলামের প্রতিফলন ঘটানো। এ ক্ষেত্রে নিজের কথাবার্তা চালচলন কাজকর্ম সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ইসলামকে চরিত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অতঃপর মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে।

মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য অবশ্যই আমাদের পাকড়াও হতে হবে।

وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗ

অর্থ: আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায় [সূরা আল ফুরকান:৭২]


তাই মৌখিক সাক্ষ্য আমাদের জন্য অনেক সময় আমাদের জন্য ধ্বংস বয়ে আনতে পারে, যদি আমাদের স্বল্প জ্ঞান নিয়ে আমরা লেখালেখি করতে যাই, স্পষ্ট ধারনা না নিয়ে যুক্তি তর্ক করতে যাই। তাই যেটুকু জানি সেটুকু বাস্তব সাক্ষ্যে পরিণত করার জরুরত আগে, পরে মৌখিক সাক্ষ্য।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

"তোমরা আমার থেকে একটি আয়াত (হাদীস) হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌছে দাও |” (আল-হাদীস)



সুরা বাকারার ১৪০ নম্বর আয়াতটিও অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে, যেন আমরা সত্য গোপনকারীদের দলে শামিল না হয়ে যাই।

এমনও বর্ণনা রয়েছে যে, সাহাবীদের কাছে কেউ কোন বিষয়ে ফতোয়া নিতে গেলে তিনি বলতেন অমুক সাহাবীর কাছে যাও। এভাবে কয়েকজন সাহাবীর পর আবার প্রথম সাহাবীর কাছে ফিরে আসতে হত সেই ব্যক্তির। কারন তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ভয় করতেন।

সাহাবীরা সব সময় মেপে মেপে কথা বলতেন। রাসুলের (সা) সবচেয়ে কাছের ব্যক্তি ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)। কিন্তু তার বর্ণনাকৃত হাদীসের সংখ্যা খুবই কম। কারন তিনি ভুল বলে ফেলার ভয় করতেন।

আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা বাস্তব জীবনে ইসলামকে মানতে পারিনা। আর এ জন্য প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে আমরা সক্ষম হচ্ছি না। তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে দ্বীনের হককে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ইসলামের দ্বারা যাবতীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই বাস্তব সাক্ষ্যের পূর্ণতা পাবে।

তাই মৌখিক সাক্ষ্য নয়, বাস্তব সাক্ষ্যই হোক আমাদের জীবনের চলার পথের মাধ্যম।

বিষয়: বিবিধ

১২১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File