ইতিহাসের কাঠগড়ায় শেখ মুজিব ৷৷

লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ২৭ মার্চ, ২০১৪, ১০:৫৬:১৫ রাত

স্বাধীনতার একটা নির্দিষ্ট ঘোষণার প্রয়োজন হয়, যে ঘোষণায় দেশের মানুষ জানবে যে আমরা আজ থেকে স্বাধীন ৷৷ তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা ছিল তার একটু বেসি, কারন বাংলাদেশকে কেউ স্বাধীনতা দেয়নি বরং স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়েছে ৷৷ আসুন ইতিহাস থেকে জেনে নেই আমাদের স্বাধীনতা কখন কিভাবে ঘোষনা করা হয় আর কে ঘোষণা করেন ৷৷ অখন্ড পাকিস্থানের সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খান ৬৯ সালের গনঅভ্যুথ্যানের মাধ্যমে ক্ষমতাচুত্য হন, দেশ শাসনের ভার ন্যস্ত হয় জেনারেল ইয়াহিয়া খানের উপর ৷৷

জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, ১৯৭০ সালে অল পাকিস্থানের গনপরিসধের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, নির্বাচনে প্রধান দল হিসেবে অংশ গ্রহন করে পাকিস্থান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্থান আওয়ামীলীগ ৷৷ মূলত এই দুই দলের মধ্যেই মূল প্রতিধন্ধিতা হয় ৷৷ নির্বাচন সম্পুর্ন বয়কট করে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), মাওলানা ভাসানী তখন পূর্বপাকিস্থানের সকল রাজনৈতিক দলকে বিশেষ করে শেখ মুজিবকে বলেন স্বাধীনতা ঘোষণা করতে, কিন্তু শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা না করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে ৷৷

নির্বাচনে পশিম পাকিস্থানের সবকটি আসনে ভুট্টুর পিপিপি জয় লাভ করে, আর পূর্ব পাকিস্থানে একটি ছাড়া বাকি আসন গুলাতে পাকিস্থান আওয়ামীলীগ জয় লাভ করে ৷৷ পশ্চিমের চেয়ে পূর্বে যেহুতু আসন বেসি ছিল সে হিসেবে পাকিস্থান আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করবে এমনি কথা ছিল ৷৷ কিন্তু এতে পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাজি হলেননা, ভুট্টো মুজিব সরকারকে মানতে চাইলেননা ৷৷ ইয়াহিয়া খান যেহুতু পশ্চিমা ছিলেন তাই পাকিস্থান আর্মিও ভুট্টোর পক্ষ নিলো ৷৷

শুরু হলো নানান টালবাহানা, মিটিংয়ের পর মিটিং হলো কিন্তু সমাধান বেরুলনা ৷৷ ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে ছাত্র জনতা স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে লাগলো !! মার্চের শুরুর দিকে আ স ম আব্দুর রউফ পতাকা উত্তোলন করলেন, তত্কালীন পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং আরো কয়েকটি ছাত্র সংগঠন মিলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিশোধ ৷৷

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রামের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয় ৷৷ জনসভা থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার কথা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের, রেসকোর্সের উত্তাল ময়দানে একে একে সকল নেতারা ভাষন দিলেন, সর্বশেষ ভাষন দিতে উঠলেন শেখ মুজিবুর রহমান ৷৷ সবাই ভাবছিলেন এই বুজি শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষনা করতে যাচ্ছেন.. কিন্তু না ১৮ মিনিটের সেই ভাষনে স্বাধীনতার কোনো ঘোষনায় দেয়া হয়নি, উল্টো পশ্চিমাদের ভাই বলে সম্মোধন করে আর্মিদের ক্যাম্পে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন শেখ সাহেব ৷৷

জনতা সেই ভাষন শুনে হতাশ হয়ে পরে, কেউ কোনো কিছুই বুজে উঠতে পারছিলনা ৷৷ এর মধ্যে পশ্চিম থেকে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো আসেন ঢাকায়, দফায় দফায় মুজিবের সাথে বৈঠক করেন, কিন্তু কোনো ভালো ফল বের হয়নি ৷৷

৭ মার্চ ভাষনের পর শেখ সাহেব মিডিয়ার সামনে আসা মুটামুটি বন্ধ করে দেন, এর মধ্যে তিনি কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দেননি ৷৷ দেখতে দেখতে চলে আসে ২৫ তারিখ, সেইদিন সকালে ঢাকার একটি হোটেলে জুলফিকার আলী ভুট্টো সংবাদ সম্মেলন করেন, ভুট্টো বলেন দেশের অবস্থা কি হবে কিছু বলা যাচ্ছেনা ৷৷

ভুট্টোর সংবাদ সম্মেলন শেষ হবার পর তত্কালীন দৈনিক পাকিস্থানের সাংবাদিক এবং বর্তমান নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ রহমান একজন বিদেশী সাংবাদিক এবং আরেকজন দেশীয় সংবাদীক ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার শেখ সাহেবের বাসায় যান তার পতিক্রিয়া জানতে ৷৷ তখন শেখ সাহেব তাদেরকে নিয়ে একটি ঘরে গিয়ে আলাপ করে জানান যে বিকেলে পাকিস্থান আওয়ামীলীগ কার্যালয় থেকে করনীয় বিষয় জানানো হবে ৷৷

২৫ মার্চ সন্ধার সময় আওয়ামীলীগের অফিস থেকে শেখ সাহেবের মুখপাত্র কর্মসূচি ঘোষণা করেন, কর্মসূচি ছিল ২৭ তারিখ আওয়ামীলীগের ডাকে পূর্ব পাকিস্থানে হরতাল পালিত হবে ৷৷

রাত ৮ টার দিকে ইয়াহিয়া খান পাকিস্থান এইয়ারলাইন্সে ঢাকা ত্যাগ করেন ৷৷ সন্ধার সময় জগন্যাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলিগ সভাপতি কাজী ফিরোজ রশিদ শেখ সাহেবের বাসায় যান, শেখ সাহেব তখন তাকে বলেন আমার চিন্তা করিসনা পালিয়ে যা ৷৷

রাত ১১ টা থেকে শুরু অপারেশন চার্জলাইট/ক্লিনহার্ট ৷৷ পাকিস্থানি আর্মি নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকা শহরে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যুদ্ধ হয় ৷৷ রাতেই পাকিস্থান সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে শেখ মুজিবুর রহমান করাচিতে চলে যান বা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় ৷৷

২৬ মার্চ সারা বাংলাদেশ এক বিদ্ধস্ত ভুখন্ডে রুপান্তরিত হয়, পাকিস্থান সরকার জরুরী অবস্থা জারি করে ৷৷ আওয়ামীলীগ নেতারা পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ৷৷ বাংলাদেশের মানুষ তখন এক অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হন, তারা কি করবে বা কি করা উচিত কিছুই জানা ছিলনা ৷৷ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে কোনো রখম নির্দেশনে না থাকায় যুদ্ধে সংঘঠিত হবে কিনা তাও বুজতে পারছিলনা বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষ ৷৷

ঠিক ঐ ক্লান্তিলগ্নে বাংলা মায়ের এক দামাল সন্তানের উদয় হয়, নাম মেজর জিয়াউর রহমান !! ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন ৷৷

"আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি..."

মেজর জিয়ার এই ঘোষনায় ছিল স্বাধীনতার ঘোষনা, এই ঘোষনা প্রচার হবার পরেই সারা দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ৷৷

আওয়ামীলীগ দাবি করে থাকে ৭ মার্চই স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া হয় !! আমি তাদের বলি যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সাথে কিসের মিটিং করা হয়েছিল ?? স্বাধীনতার মিটিং নাকি ক্ষমতার মিটিং ? ইতিহাস দেখুন তার পর কথা বলুন ৷৷ আবার অনেকে বলে থাকে ২৫ মার্চ শেখ সাহেব গ্রেপ্তার হবার আগে নাকি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে গিয়েছিলেন, তাহলে ২৭ মার্চ আবার কেন হরতাল পালনের কথা বলা হলো !! যুদ্ধের মধ্যেও কি আওয়ামীলীগ হরতাল পালন করতে চেয়েছিল ??

বিষয়: বিবিধ

২৬৬৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

199007
২৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই এক বিষয় নিয়ে এত বিতর্কের মানে হয়না। আওয়ামি লিগ এর বুঝা উচিত ৭ই মার্চ স্বাধিনতার ঘোষনা না দেয়া শেখ মুজিবুর রহমান এর সন্মান কমায় না বরং বৃদ্ধি করে। তাকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান ভাঙ্গার দায় থেকে। অন্যদিকে যদি ৭ই মার্চ ই স্বাধিনতার ঘোষনা শেখ সাহেব দিতেন তাহলে পাকিস্তান সেনাবাহিনির অভিযান কিন্তু আইনত বৈধ হয়ে যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File