যারা হতে পারতো দ্বীনের সঠিক দায়ী তারা কেন সন্ত্রাসী?
লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০৪:২৮:২৭ বিকাল
ছেলেটি শার্ট-প্যান্ট পরিহিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মেয়েদের ছবিসহ নিজের ছবি আপলোড করে| বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলে ইংরেজি বা হিন্দিতে। ফুটবল প্রিয়। ভারতীয় নায়িকার ভক্ত। এসব দেখে বুঝাই যায়, সে প্রাকটিসিং মুসলিম না। অন্তত একটি দীর্ঘ সময় সে ইসলামের হুকুম-আহকাম প্রাকটিস করে নি। কিন্তু হঠাৎ তার নিরুদ্দেশ। অতঃপর মাথায় লাল রুমাল। গায়ে কালে পাঞ্জাবি। পেছনে কালিমা খচিত ব্যানার লাগিয়ে ছবি। আল্লাহু আকবার পবিত্র বাক্য উচ্চারণ করতে করতে নিরিহ মানুষ হত্যা করা| শাহাদাতের তামানেওয়া, মনগড়া, প্রাণ দিয়ে দিয়ে দেওয়া!
কেন?
মোটামোটি এতটুকু বয়স তাদের হয়েছিল, যে বয়সে একজন যুবা-তরুণ ভাল-খারাপ, সত্য-মিথ্যা ও রাত-দিনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। তারপরও কেন এভাবে পুরো জাতিকে আতঙ্কিত করে, রামাদ্বানের রাতে, তারাবির সময় রেস্তোরাঁয় আক্রমণ করতে গেল সে ও তারা? কেন?
বিষয়টা গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন আছে।
গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় যারা মারা গেছে। তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা দরবারে মাগফিরাত কামনা। ভিন্ন ধর্মীরা ও সকলের পরিবারের জন্য সহানুভূতি।
দেখা যাচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সকলেই সমাজের শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের ছেলে। স্বভাবতই যখন যা চেয়েছে পেয়েছে। অভাব নামক বস্তুটির দেখা তাদের জীবনে খুব একটা হয়েছে বলে মনে হয় না। হঠাৎ কারো সংস্পর্শে গিয়ে দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ঠ হয়। এবং দেখেছে পৃথিবীর প্রায় সবখানে মুসলিমরা নিপিড়িত, নিগৃহিত ও লাঞ্ছিত। সাধারণভাবেই ঘটনাপ্রবাহে তারা প্রভাবিত হয়। এর থেকে উত্তোরণের উপায়ও খোঁজতে থাকে। যেহেতু তারা সবকিছু চাওয়া মাত্রই পেতে অভ্যস্ত, এ ক্ষেত্রেও তারা (তাদের ধারণা মত) সবচে সংক্ষেপ রাস্তাটিই গ্রহন করল। আর তা হলো, প্রাণের বদলে প্রাণ, রক্তের বদলে রক্ত, জুলুমের বদলে জুলুম। তাদের যারা লিড দিয়েছে, তারা এসব সহজ সরল ধর্মপ্রাণ (!) তরুণদের এ কথা বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করার কারণে এ সমাজ জাহিলী সমাজে পরিণত হয়েছে। জাহিলী সমাজ ব্যবস্থা মেনে নেওয়ার কারণে সমাজের সবাই কাফির। কারণ, তারা আল্লাহ তা'য়ালার হুকুম প্রতিষ্ঠা করে করে নি| আর যারা আল্লাহর হুকুম মত দেশ পরিচালনা করে না তারা কাফির। এটিই পবিত্র কোরআনের ভাষ্য! কোরআন শরীফের সূরা মায়েদার ৪৪ নাম্বার আয়াত তাদের দেখিয়ে দিল। " وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ" আর এসব যুবকরা মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত নয় বিধায় কোরআনের ভাষা তারা সরাসরি বুঝে না। আর তাতে সূরা মায়েদার পরবর্তী আয়াত, যা তাদের বস দেখিয়ে দেয় নি, দেখার সুযোগ হয় নি। সেখানে যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে নি তাদের জালেম এবং ফাসেক বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআন কেন একিই অপরাধে জড়িতদের কাউকে কাফের, কাউকে জালেম আর কাউকে ফাসেক বলল সে তত্ত্ব উদ্ধারের সুযোগ তাদের হয় নি। কারণ, তারা দ্বীন শিখেছে ইন্টারনেট থেকে বা তাদের নন-আলেম মুরুব্বীদের কাছে। হক্কানী ওয়ামায়ে কিরামের কাছ থেকে দ্বীন শিখে নি। অথচ আল্লাহ তা'য়ালা বিতর্কিত বিষয়ের ব্যাপারে স্পষ্ট বলেছেন- "وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ "
"যদি তারা তা (বিতর্কিত বিষয়টি) নবীজীর প্রতি বা তাদের ওলামাদের প্রতি ফিরিয়ে দিত, তবে তাদের মধ্যে যারা কোরআনকে (সঠিকভাবে বুঝে) তার (হুকুম-আহকাম) বের করার যোগ্যতা রাখে, তারা তা জানতে পারত" সূরা নিসা: আয়াত ৮৩। যেহেতু এসব তরুণদের আগে থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এ জাহিলী সমাজের আলিমরাও অপরাধী। বরং ক্ষেত্র বিশেষে কাফির!
তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা জাহিলী সমাজের জাহিল বা কাফির আলিমদের শরঈ বিষয়ে প্রশ্ন করার কথা নয়। ফলে একটি অধ:পতিত সমাজের সঙ্গে আচরণের পদ্ধতি কি হতে পারে তা তারা জানতে বা বুঝতে পারে নি। তাই আল্লাহ তা'য়ালার পবিত্র নাম নিয়ে নিরিহ লোকগুলোকে হত্যা করছে। হুমকি দিচ্ছে। ধমকি দিচ্ছে। বোমাবাজি করছে। এবং একেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা বাস্তবায়নের আসল পথ মনে করছে। যা তাদের দেওয়া তৃতীয় শর্ত থেকেই বুঝা যায়। বুঝা যাচ্ছে, এসব ছেলেগুলোর মূল সমস্যা ইসলামকে ভুলভাবে বুঝা। কারণ, উম্মতের গ্রহনযোগ্য ওলামাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কছেদ বা নিদেন পক্ষে দূরত্ব। ফলে কোরআন-হাদীসের সঠিক জ্ঞানের অভাব। অথচ পুরো উম্মাহকে সঠিক পথে রাহবারী করতে ওলামায়ে উম্মতের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। কিন্তু আমাদের মিডিয়া, রাজনীতিবিদ ও সর্বোপরি এক প্রকার আলেম নামের কলঙ্ক, যার মধ্যে এক শ্রেণীর আহলে হাদীস ও বেদাতীরাও জড়িত, এ মর্মান্তিক ট্রাজেডির জন্য দায়ী। আর যতদিন সাধারণ জনতা ওলামায়ে কিরামের যথাযথ সম্মান করা শিখবে না, তাদের কাছে থেকে দ্বীন জানার-বুঝার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবে না, তাদেরকে নিজেদের রাহবার হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁদের কাছ থেকে দ্বীন শিখবে না ততদিন চলমান এ সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দেখা যাচ্ছে না। তাই প্রয়োজন, সমাজ ও জনগণের মধ্যে ধর্মীর শিক্ষার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, ব্যাপকতা, ও আলেম-ওলামার মর্যাদা বৃদ্ধির সর্বত্মাক চেষ্টা। আর তা যদি এখন থেকে শুরু না করা হয়। তাহলে সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের তরুণরা আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র নাম নিয়ে মুসল্লিদেরও হত্যা করবে। মসজিদ ভাঙবে। অন্যদের তো রেহাই দিবেই না। তাই দেশের কর্তা ব্যক্তিরা ওলামায়ে কিরামের সঙ্গে যোগযোগ সৃষ্টি করুন। ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপকতা দিন। (জঙ্গিবাদ বলে জিহাদকে অঃস্বীকার করার ব্যার্থ চেষ্টা বাদ দিয়ে) স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবখানে জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা শিক্ষা দিন। জিহাদের আহকামগুলো শিক্ষা দিন। তা কখন ফরজে আইন, কখন ফরজে কিফায়া, কার বিরুদ্ধে জিহাদ করবো, কখন করবো, তার মূলনীতিমালা কি এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিক্ষা দিন। তবে মনে রাখতে হবে, ভুল ব্যাখ্যার চেষ্টা করে লাভ হবে না। জিহাদের ভুল ব্যাখ্যা মানে পবিত্র কোরআনের জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতগুলোর ভুল ব্যাখ্যা। কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা আল্লাহ তা'য়ালা মানুষের সামনে প্রকাশ করেই দিবেন। এতে পরিনতি হয়তো আরো ভয়াবহ হতে পারে। তাই আসুন। প্রত্যেকে আপনাপন স্থান থেকে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ও মূল শিক্ষ্যা সকলের কাছে প্রচারে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সহীহ বুঝ, সঠিক সিদ্ধান্ত ও সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করুন। উম্মাহকে বাহিরের-ভিতরের শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন| আমীন।
হোছাইন মুহাম্মদ নাইমুল হক
দোহা-কাতার
বিষয়: বিবিধ
১৩১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তার মানে আবারও বিএনপি-শিবির কাহিনী শুনিয়ে মানুষকে কনভিন্সড করে ফেলা হবে । বাংলাদেশের মানুষ নাসিমদের কথাই বিশ্বাস করবে ।
তবে মনে প্রশ্ন জাগে - বিদেশীরা এগুলো হজম করে যায় কিভাবে ? আমরা না হয় তটস্থ থাকি, উনাদের তো সে সমস্যা নেই ?
পথে রাহবারী করতে ওলামায়ে উম্মতের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর।
কিন্তু আমাদের মিডিয়া, রাজনীতিবিদ ও
সর্বোপরি এক প্রকার আলেম নামের কলঙ্ক,
যার মধ্যে এক শ্রেণীর আহলে হাদীস ও
বেদাতীরাও জড়িত, এ মর্মান্তিক
ট্রাজেডির জন্য দায়ী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন