প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার ব্রিটিশ ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। এদের বেশির ভাগই নারী। the guardian
লিখেছেন লিখেছেন জেএফটি ইসলাম ২১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৫১:৩৯ সন্ধ্যা
প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার ব্রিটিশ ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। এদের বেশির ভাগই নারী। এদেরই পাঁচজনের গল্প নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ানে ‘কনভার্টিং টু ইসলাম: ব্রিটিশ ওমেন অন প্রেয়ার, পিস অ্যান্ড প্রেজুডিস’ এই শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
নিবন্ধটিতে বর্ণিত তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনাগুলো থেকে পশ্চিমা সমাজে ঘটে চলা এক নীরব পরিবর্তনের একটি বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে।
এদেরই একজন আইওনি সুলিভান। পেশায় তিনি একজন অথরিটি ওয়ার্কার। সুলিভান ৩৭, ইস্ট সাসেক্সের বাসিন্দা। ইসলামে ধর্মান্তরিত এই ব্রিটিশ নারী বলেন, ‘আমি একজন মুসলিমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে। আমরা লিওয়েসের বাসিন্দা। ওই গ্রামে সম্ভবত আমিই একমাত্র হিজাবি নারী।’
তিনি বলেন, ‘এক মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমাদের পরিবারটি ছিল বামপন্থী এবং নাস্তিক। আমার পিতা ছিলেন অধ্যাপক, আর মা ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০০ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রি শেষ করার পর আমি পর্যায়ক্রমে মিশর, জর্ডান, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলে কাজ করি।’
সুলিভান বলেন, ‘এর আগ পর্যন্ত ইসলাম সম্পর্কে আমার মধ্যে একটা সাদামাটা গতানুগতিক ধারণাই বিরাজ করছিল। কিন্তু এসব দেশে কাজ করতে গিয়ে মুসলিমরা তাদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে যে অফুরন্ত জীবনী শক্তি আহরণ করে তা দেখে আমি বিস্মিত হই। বৈষয়িকভাবে তাদের সবারই জীবন প্রায় পুরোপুরি নিঃস্ব হওয়ার পথে, তথাপি প্রত্যেকেই খুবই শান্তভাব এবং স্থিরতার সঙ্গে জীবন যাপন করে চলেছেন। আমি যে দুনিয়া পেছনে ফেলে এসেছি এটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র।’
‘২০০১ সালে আমি এক জর্ডানি মুসলিম পুরুষের প্রেমে পড়ি। তার পরিবার ছিল খুবই আধুনিক। তেমন একটা ধর্মকর্ম করতেন না তারা। প্রথমদিকে আমরা দু’জন ধুন্দুমার পশ্চিমা ধাঁচের জীবন যাপন করি। নিয়মিতই মদপান এবং নাইট ক্লাবে যেতাম আমরা। এ সময়টাতেই আমি আরবী ভাষা শেখা শুরু করি এবং কুরআনের একটি ইংরেজিতে অনুদিত কপি সংগ্রহ করি’ যোগ করেন তিনি।
বৃটিশ এই নারী বলেন, ‘এক সময় আমি কুরআন পড়ে জানতে পারলাম যে, সৃষ্টি জগতের অপার সৌন্দর্য্য এবং ভারসাম্যের মধ্যেই স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ নিহিত রয়েছে। বিপরীতে বাইবেলে বলা হয়েছে, যিশু খ্রিস্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর মানুষের রূপ ধরে পৃথীবিতে এসেছিলেন। আমি দেখতে পেলাম, কুরআনে আরো বলা হয়েছে, স্রষ্টার আশির্বাদ পেতে হলে আমাকে কোনো পাদ্রির শরনাপন্ন হতে হবে না এবং প্রার্থনা করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট পবিত্র স্থানের দরকার নেই।’
‘এসব দেখে আমি এরপর অন্যান্য ইসলামি ধর্মচরণগুলোর দিকেও নজর দিলাম যেগুলোকে এর আগে আমি নির্মম বলে এড়িয়ে গেছি। যেমন, রোজা রাখা, বাধ্যতামূলক দান-সদকা এবং বিনয় নম্রতা ও সংযম প্রদর্শন করা। এসবকে আমি আগে মনে করতাম ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারলাম, এসব আসলে নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ অর্জনের উপায়’ যোগ করেন তিনি।
সুলিভান বলেন, ‘এরপর থেকে মনেপ্রাণে আমি নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবেই গণ্য করতে লাগলাম। তবে তা প্রকাশ করার কোনো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। আমার মনের একটা অংশ পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলার জন্য আমার এ পরিবর্তন গোপন রাখার প্রতিই সায় দিল। তবে অবশেষে হিজাবই আমার ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি সমাজে প্রকাশ করে দিল। আমি অনুভব করতে লাগলাম যদি হিজাব না পরি তাহলে নিজের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘হিজাব পরা শুরু করার পর থেকে লোকে আমাকে নির্মমভাবে হাসি-ঠাট্টা শুরু করলো। তারা আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো, আমার ক্যান্সার হয়েছে কিনা। কিন্তু তাদের এসব আচরণ আমার কাছে খুবই তুচ্ছ মনে হত। কারণ ইতোমধ্যেই আমি অনেক গভীর অর্থপূর্ণ এক সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করেছিলাম।’
আনিতা নায়ার। পেশায় একজন সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বিরোধী সমাজকর্মী। ৩১ লন্ডনের বাসিন্দা আনিতা বলেন, ‘আমি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংরেজ। আমার দাদা-দাদী ছিলেন সনাতন হিন্দু। ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় আমার পরিবার একদল মুসলিম দাঙ্গাবাজের কবলে পড়ে। মুসলিমদের সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না বললেই চলে।’
‘আমি খুবই ধার্মিক খৃস্টান ছিলাম। নিয়মিত গির্জায় যেতাম এবং পাদ্রি হতে চাইতাম। ১৬ বছর বয়সে আমি এক সেক্যুলার কলেজে ভর্তি হই। সেখানেই আমি কয়েকজন মুসলিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। দৈনন্দিন জীবন যাপনে তাদের স্বাভাবিকতা দেখে আমি তাজ্জব বনে যেতাম। আমি তাদেরকে খুবই পছন্দ করা শুরু করি’ যোগ করেন তিনি।
আনিতা বলেন, ‘প্রথমে আমি তাদেরকে তাদের ধর্মের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝাতে গিয়ে তর্কে লিপ্ত হতাম। কিন্তু এরপর আমি বুঝতে শুরু করলাম, খৃস্টান ধর্ম থেকে ইসলাম খুব বেশি আলাদা নয়। এমনকি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম আরো বেশি অর্থপূর্ণ ধর্ম। এভাবে আকৃষ্ট হতে হতে ২০০০ সালে ১৮ বছর বয়সে এক পর্যায়ে আমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হই। এতে আমার মা খুবই অসন্তুষ্ট হন, তবে আমার বাবা আমাকে নীরবে সমর্থন করেন। কিন্তু আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমাকে বিদ্রোহী হিসেবে গণ্য করতে থাকেন।’
‘আমি একটি স্কার্ফ পরতে অভ্যস্ত হই, যার মানে অনেক কিছুই হতে পারে। এটা হতে পারে কারো ধর্ম বিশ্বাসের প্রতীক। এটা দেখে হয়তো আপনার সঙ্গে কোনো অপরিচিত পুরুষ কথা বলতে আগ্রহী হবে না বা আপনাকে মদপানের জন্য ডাকবে না। তবে যারা মুসলিম নারীদেরকে গতানুগতিক ধারণা অনুযায়ী নিপীড়িত বা সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে থাকেন তারা হয়তো হিজাব দেখে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া করতে পারেন। তবে মুসলিমদের কাছ থেকে এতে করে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেতে পারে’ যোগ করেন তিনি।
‘কিন্তু লোকে হিজাব পরা একজন নারীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু আচরণই প্রত্যাশা করে থাকেন। ফলে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবতে শুরু করি আমি কি স্রষ্টার জন্যই এসব করছি নাকি শুধু একজন ‘ধার্মিক নারীর’ ভূমিকা চরিত্রায়নের জন্য এসব করছি। অবশেষে হিজাব পরা বন্ধ করলে আমার ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস আবারো অদৃশ্য হয়ে পড়ে। এরফলে স্রষ্টার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আমি আবারো ঝালাই করে নিতে সক্ষম হই’ বলেন আনিতা।
তিনি বলেন, ‘মুসলিম হয়ে আমি সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই তা হলো, মসজিদে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। কোনো উচ্চ সত্ত্বার সঙ্গে যোগাযোগে প্রস্তুত হয়ে নারীদের কোনো অনুমতি নেই এই অজুহাতে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, এটা খুবই দুঃখজনক। আগে আমি কার পার্কিংয়ের জায়গায়, আমার অফিসের বারান্দায় এবং এক ফ্রাইড চিকেন শপে নামাজ পড়তাম। কিন্তু নির্মম পরিহাস হলো, যেখানে আমার সেক্যুলার অফিস আমার নামাজ পড়ায় বাধা দেয়াটাকে ধর্মীয় বৈষম্য মনে করতো, সেখানে অনেক মসজিদেই নারীদের নামাজ পড়ার কোনো অনুমতি নেই।
http://www.theguardian.com/world/2013/oct/11/islam-converts-british-women-prejudice
Click this link
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২৭১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন