যে কারণে গিয়েছিলাম শাহবাগে: অঞ্জন রায়
লিখেছেন লিখেছেন জেএফটি ইসলাম ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:২৬:৩৯ বিকাল
আমার শাহাবাগে যাওয়ার একটি ব্যাখ্যা দেয়াটা জরুরি। সেই প্রয়াসেই এই লেখা। ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে কাদের মোল্লার রায়ে অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। সেই কারণেই দুপুরে ফেসবুকে লিখেছিলাম আদালত অবমাননার দায়িত্ব নিয়ে বলছি- এই রায় মানি না। বিকেলে এস এম শাকিলের মোটর সাইকেলে গেলাম প্রেসক্লাব। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই খবর পেলাম শাহাবাগে তরুণেরা সমাবেত হচ্ছে। মোটর সাইকেল ঘুড়িয়ে সেখানে গেলাম। দেখা হলো ইমরান সহ অনেকের সাথে। তখন সামনে ছিলো দুটি সিদ্ধান্ত। সমাবেত মানুষেরা কি ট্রাইবুনাল ঘেরাও করবে, নাকি তারা শাহাবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন? শেষ পর্যন্ত শাহাবাগ মোড়ে সমাবেত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সমাবেশ। সবাই গেলেন সাথে আমিও। আমরা অবস্থান নিলাম। সন্ধ্যা নামলো- মানুষ বাড়ছে। আসতে থাকলেন রাজনৈতিক নেতা কর্মীরাও। তবে পুরো সমাবেশের তখন চরিত্র অরাজনৈতিক। রাত বাড়ছে- বাড়ছে মানুষ। আমি অফিসে আসলাম। রাতের শো শেষে গিয়ে দেখলাম আরো বেড়েছে মানুষের সংখ্যা। তখুনি জানতে পারলাম অবস্থান ধারাবাহিক করার সিদ্ধান্ত। এটিও সকলের মতামতের ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছিলো। পরদিন সকাল ১১ টার দিকে আবারো মোটর সাইকেলে শাহাবাগে গেলাম। দেশের বিভিন্ন মানুষ সংহতি জানাচ্ছেন। মানুষ বাড়ছে। আসছে খাবার পানি। এভাবেই ৮ ফেব্রুয়ারি। ৭ তারিখ রাতের সিদ্ধান্তে আমি উপস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলাম। আধাআধি করার পরে পারছিলাম না অসুস্থতার কারনে। সেটি দেখে আমার এক প্রিয় স্বজন বিশ্রাম নিতে বললেন। মাইকে এলেন নাসরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। শেষ হলো সমাবেশ। চলতে থাকলো অবস্থান কর্মসূচি। মতামতের অনেক বিষয়েই আমি ছিলাম না, থাকার কথাও না। কারণ যে তরুণেরা মূল নেতৃত্বে তাদের শ্রদ্ধা আমার প্রতি থাকলেও সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিতেন। যে কারণেই সবাই আমাকে অন্যতম উদ্যেক্তা বললেও আমি দেখতে পাইনি সংসদে পেশকরা স্মারকলিপি। ঠাঁই পাইনি কোন প্রতিনিধি টিমে। অবশ্যই এ নিয়ে আমার কোন খেদ নাই, কারণ যাদের ব্যানারে আয়োজন- তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন, এটি আমি বিশ্বাস করি।
৮ তারিখের পরে থেকেই আমার মনে হতে থাকে কোথাও ছন্দপতন ঘটছে- এখন আর এই সমাবেশের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন নাই। আমি আমার এই মতামত জানিয়েও দেই। কিন্তু আমার সেই মতামত কোন গুরুত্ব রাখে নি। চেষ্টা করতে থাকি বোঝাতে, কিন্তু সেখানেও আমি ব্যর্থ হই। গোপনে শুনতে থাকি আমি নাকি চীনপন্থী বাম। প্রশ্ন ওঠে আমার নাকি বিএনপি কানেকশন আছে এমনও। এর মধ্যেই আমার একাধিক বন্ধুজনও বলেন বিষয়টি বালখিল্যতায় পরিণত হচ্ছে। আমার নিজেও নিজেকে মনে হতে থাকে ভুল পথের যাত্রী। আমার স্পষ্টই মনে হয়- আর না। এই অবস্থান সাধারণ মানুষের কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এক ধরনের বিরক্তি নিয়েই সরে আসি। কেননা আমার মনে হয় দলের নিয়ন্ত্রণের চাইতেও এই আন্দোলনে দলকানাদের নিয়ন্ত্রণ বেশি। বাস্তবতার থেকে দূরে থেকে একধরনের ফ্যান্টাসি নিয়ে তারা চলতে চাইছেন। তারা যেমন সাধারণ মানুষদের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তেমনই তারা প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই একধরনের বিপাকে ফেলছেন। সরকারের বিরুদ্ধেও বলছেন- আবার বিএনপিকেও বলছেন। অথচ দেশের মানুষ এই দুই
দলে বিভাজিত সেটি তাদের মাথায় আসছে না। হেফাজতে ইসলামের সাথে যে সাংঘর্ষিক অবস্থা, সেটিও সৃষ্টি হতো না। যদি তারা সময় মতোন শাহাবাগের প্রতিবাদ শেষ করতেন। আর সত্যি কথা হলো তারা ক্রমশ বিস্তার করেছেন দাবির বৃত্ত- যেটির কোন বিষয়েই আমি জানতাম না। নগন্য কর্মী হিসাবে যা জানার অধিকার আমার ছিলো, যেমন ৮ তারিখের ঘোষণাতেও কিছু বিষয় ছিলো- যা সামনে আসার মত বিষয় ছিলো না।
যাই হোক- যে অসম্ভব স্বপ্ন নিয়ে ব্যক্তি আমি শাহাবাগে গিয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেই আমি ফিরেছি স্বপ্নের লাশ কাঁধে নিয়ে। কারণ এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলেরা ব্যর্থ হয়েছেন। এদেশের মানুষ যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তেমনই চায় সাগর রুনী, বিশ্বজিত, শেয়ার বাজার, একুশে আগস্ট, ভারতীয় সরকারের হিংস্রতার প্রতিবাদ। দীর্ঘকালীন কোন আন্দোলন করতে গেলে এই সকল বিষয়েই গুরুত্ব দিতে হবে, না হলে সেই আন্দোলন সফল হতে পারে না- বিচ্ছিন্নতাই তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। যা হয়েছে শাহাবাগের ক্ষেত্রে।
Click this link
বিষয়: রাজনীতি
১৮৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন