আমি বড়ই অহংকারী

লিখেছেন লিখেছেন বিনতে আইয়্যুব ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ০২:৩৫:০৪ দুপুর



ওহ! কি ভয়ংকর একটি শব্দ। কি করুণ তার পরিনতি। ভাবতেই যেন গা শির শির করে উঠে। বুকের মধ্যে এক আতংক সৃষ্টি হতে থাকে। কেমন যেন ফিল হতে থাকে ভাষায় বুঝানই মুশকিল।

আচ্ছা ইবলিশ তো জান্নাতে ছিল তাই না? ছিল এমন জায়গায় যেখানে যেতে মুৃমিন নর-নারী হুমড়ী খেয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করছে। হায়! কবে হবে দেখা সেই ওদেখা জান্নাত। যেখানে থাকবে মনরোম পরিবেশ, লোভনীয় ফল, চোখ শীতল করা হুর ইত্যাদি ইত্যাদি।

ইবলিশতো এক সময় এই জান্নাতেই ছিল। ভাবতেই কেমন যেন লাগে।

আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তায়'লা কি তাকে খুব কঠিন কাজ দিয়েছিলেন?

শুধু এতটুকু বলেছিলেন আদাম (আলাইহিসসালাম) কে সিজদা দিতে।

কিন্তু সে তো অমান্য করেছিল অহংকার দেখিয়ে। কাজটা পাহাড় ভাঙ্গার মত কঠিন মোটেও ছিল না। একদমিই সহজ সোজা-সাপটা একটা কাজ। শরীরটাকে নিচুতে নিয়ে মাটিতে মাথাটা ঠেকানো। বাচ! এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সে তা করে নি। একদমিই করে নি।

অহংকার যার কারণ ছিল।

যার ফলে তাকে জান্নাত থেকে চিরকালের জন্য বের করে দেয়া হয়। অভিশপ্ত করা হয়।

দেখুন আমাদের আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তায়'লা কি বলেছেন-

শির্ক করো না, সালাত কায়েম কর, রোজা রাখ ইত্যাদি।

কাজগুলো কি খুব কঠিন? না তো। মোটেই না।

যারা শির্ক করে তারা তো আজও গেছে কালও গেছে।

বাকি থাকে ফরজ ইবাদাত যেমন- সালাত, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত

আচ্ছা এই স্বলাত-ই বা আমরা কয়জনে ৫ ওয়াক্ত পড়ছি? কয়জন-ই বা রোজা সবকটা রাখছি? কয়জন সামর্থ্য থাকা শর্তেও হজ্জ্ব করছি?

এসব কি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা নয়??

আমরা কি তাহলে অহংকার দেখাচ্ছি না??

হে আমারতো মনে হয় করছি নইলে কেন এই সহজ কাজগুলো আমরা করছি না??

সত্যিই আমরা বড় অহংকারী।

রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

, لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ

“যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।” (মুসলিম)

তাহলে আমাদের অবস্থা কি হবে সেই দিন!!!

আমরা তো কত নির্দেশ আমান্য করছি প্রতিটা মূহুর্তে, প্রতিটা দিন।

দেখুন আজ যদি আল্লাহ ওহী পাঠাতেন যে-

"তোমাদের আজ থেকে কোরবানী করা নিষিদ্ধ"

তাহলে অবশ্যই তা আজ থেকেই আমাদের করা বন্ধ করতে হত।

কেন বলুন তো?

শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশ তাই। কোন যুক্তি, তর্ক, প্রশ্ন আর করতে পারতাম না।

শুধু এই জন্যেই যে আল্লাহর যা নির্দেশ তা মানা ফরজ।

আল্লাহ এটাই চান যে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে আমরা তাঁর দাস হয়ে যাই। হে তিনি এটাই চান।

বিনিময়ে জান্নাত তো আছেই।

জানেন অহংকার আরও অনেক ধরণের আছে-

আমার ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলি:

একবার আমার এক উস্তাদের সামনে আমি একজনকে "বোকা" বলেছিলাম।

সাথে সাথে উনি এত রেগে গিয়েছিলেন যে বলার বাইরে।

ঠিক তখনি উনি আমাকে তওবা করায়েছিলেন। উনি ইস্তেগফার বলছেন আর আমাকে উনার প্রতি শব্দে শব্দে মিলিয়ে মিলিয়ে তওবা করালেন ঠিক প্রথম যখন নওমুসলিমকে শাহাদাত পাঠ করানো হয়।

তারপর আমি উনাকে জিঙ্গেস করলাম উস্তায আমিতো শুধু "বোকা" বলেছি এতে অহংকার কি করে হয়?

উনি বল্লেন তুমি তাকে বোকা বলেছ।

তারমানে কি হয়েছে- তুমি নিজেকে বুদ্ধিমান ভাব। আর মানুষকে বোকা মনে কর মানে ছোট মনে কর।

আর এটাই অহংকার।

এরপর থেকে আমার যতবার এই শব্দটা মুখ ফষ্কে বের হওয়ার উপক্রম হত ঠিক তখনি উস্তাদের কথাটা মনে পড়ে যায়। আর সেই দিনকার করা তওবাটাও মনে পড়ে যায়।

আর একটু ভাল করে দেখেন আমি শিধু সেইদিন "বোকা" বলেছি। আমরা তো এর চাইতেও আরও কত জঘন্য ভাষা ব্যাবহার করি। মানুষকে ছোট করি, ছোট করে কথা বলি। আমাদের কি অবস্থা এবার দেখুন।

অহংকার আমাদের জীবনটাকে ছেয়ে ফেলেছে। স্প্রিং এর মত দ্রুতবেগে জাহান্নামের দারপ্রান্তে নিজেকে সোপে দিচ্ছি।

আমরা মানুষের করা সমালোচনা, নিন্দা সহ্য করতে পারি না নিজেকে বড় ভাবি বলে।

আমরা প্রশ্নের উপর প্রশ্ন তুলি, যুক্তির উপর যুক্তি দেখাই, তর্কের উপর তর্ক করি নিজেকে বড় ভাবি বলেই।

কখনও ভাবি না আহ্হারে আমারও তো ভুল হতে পারে, আমার জ্ঞানেরও তো ত্রুটি থাকতে পারে, আমার ইবাদাতে তো ত্রুটি হতে পারে, আমার কথাবার্তায় ও তো হিকমাতের অভাব থাকতে পারে, হয়ত আমার আমলে বিদাত থাকতে ও তো পারে, মানুষ যে বিষয়ে আমাকে নিন্দা করছে তা সঠিক ও তো হতে পারে, আমাকে নিয়ে মানুষের সমালোচনার বিষটা আগুনের ফুল্কির মত সত্যিও তো হতে পারে!!!!!!!!!!!!!

এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের ভুলগুলো শুধরানোও তো যেত। কেন তবে তা যুক্তি তর্কের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করছি??

কেন নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই না??

তবে কি সত্যিই আমি অহংকারী!!!!!

হায় আপসোস!!! হায় আপসোস!!!

সত্যিই আমি বড় অহংকারী। বড়ই অহংকারী।

হায় কি হবে আমার পরিনতি!!!!

বিষয়: বিবিধ

৭৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File