ব্যক্তিগত আবস্থা/ পারচনাল ফেক্ট:::::::::::::::::::

লিখেছেন লিখেছেন বিনতে আইয়্যুব ০৯ আগস্ট, ২০১৭, ১১:১৮:১০ রাত

আমাদের মধ্যে একটা স্বভাব খুব বেশি পরিমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আজকাল। হয়ত আগেও ছিল। তবে কেন যেন আমার কাছে মনে হয়েছে এই উন্নত যুগে, প্রযুক্তির যুগে এটা খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে আমি/ তুমি/ আমরা / তোমরা/ আপনারা সব্বাই অল্প করে হলেও এসবে জড়িয়ে পড়ছি। তা হল নিজের ব্যক্তিগত ব্যপার, সমস্যা মানুষের সাথে শেয়ার করা।

আমাদের জীবনটা সবসময় সুখে কাটবে না অবশ্যই এই ছোট্র জীবনে আসবে দুঃখের বিষাধ ছায়া। যা আমাদের হৃদয়কে চূর্নবিচূর্ণ করে চলে যাবে।

কেউ দুঃখ পায় নিজের অপরাধে অর্থাৎ নিজের উপর নিজে জুলুম করে নতুবা ভুলবশত কর্মকান্ডে, কেউবা দুঃখ পায় হঠাৎ করে আগত বিপদে। যেমন-

বাবা-মা মারা যাওয়া, ছেলে-সন্তানের অবেলায় পরলোকগমন, যে কোন ধরনের এক্সিডেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো হঠাৎ করে আসে। বলে কয়ে আসে না।

দুঃখগুলোর যেমনিভাবেই হোক না কেন, এসব দুঃখ কিছু ধরণ আছে-

* কিছু দুঃখ অপমানজনক

*আবার কিছু দুঃখ সম্মানজনক

সম্মানজনক এ অর্থে বল্লাম কারণ হল এই-

কিছু দুঃখে সবর করলে বিনিময়ে আল্লাহ্‌ সুবহান ওয়া তায়'লা দুনিয়া ও আখিরাত বা আখিরাতে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দান করেন। যেমন ধরুন- স্বামী মারা গেলে ধৌর্য ধরলে, কোন প্রিয় বস্তু হারিয়ে গেলে ধৌর্য ধরলে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর যে দুঃখগুলো নিজের ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত তা হয় অপমানজনক। উদাহরণস্বরূপ:

খুন করলে, ঘুষ খেলে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই অপমানজনক নিজস্ব কাজগুলো নিজেই মানুষকে বলা মানে সেচ্ছায় নিজেকে আরও একধাপ অপমান করা। এ ধরনের অপমানজনক কাজগুলো আমরা সাধারনভাবেই বুঝতে সক্ষম। তবে এমনকিছু দুঃখ-বেদনা, জুলুম, অত্যাচার আছে যা আমরা নিজেরাও জানি না তা জুলুম কি না? অত্যাচার কি না? পক্ষান্তরে আরও কিছু আছে ইমোশনাল। আবেগি জুলুম বুঝা আরও বেশি কষ্টসাধ্য।

""আমার স্ত্রী আমাকে গালি দিয়েছে, আমার সন্তান আমাকে ঝাড়ি দিয়েছে, ঐ বেটা আমাকে লাথি মেরেছে, ঐ ছেমড়ি আমাকে এন বলেছে তেন বলেছে.........। এসব কথাগুলো অন্য মানুষকে কেন বলে বেড়াতে হবে?????

অনেকেই আমরা বলে থাকি ""আরে অন্যের কাছে নিজের দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করলে সে উপকার করতে পারুক আর নাই পারুক মনে একটু শান্তি লাগে""

এই যে মনে শান্তি লাগার কথাটা বলছি না আমরা এটা আসলে আপনার বা আমার ভাল নফসটা বলছে না। এটা বলছে শয়তান। শয়তান আপনাকে আমাকে এই একটু শান্তির কথা বলে আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে। উদাহরণসরূপ::

""শোন দোস্ত আর ভাল লাগছে না সংসারটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে। কেন যে এমন মানুষ আনলাম ঘরে!!!"""

কিছুদিন পরে যদি আপনার সেই বন্ধুর সাথে আপনার কোন কারনে জগড়া হয় সে আপনাকে দমানোর জন্য সুযোগের অসৎ ব্যবহার করে বলে বসতে পারে "" ইহ!! চিনি তোকে ভালভাবেই চিনি একটা সংসারই এখনও ভালভাবে চালাইতে পারিস না আবার বড় বড় কথা.......""

তখন আপনি বা আমি বলব-

"আরে বন্ধু তোকে এত কাছের মনে করেছিলাম, এত ভাল মনে করেছিলাম আজ তুই আমাকে খোটা দিতে পারলি??""

এবার দেখেনতো ব্যপারটা ঐ ছোট্র একটু শান্তি আপনার/আমার কিভাবে দুঃখে পরিনত হয়ে গেল।

অনেক সময় জীবনের সব কথা আমরা একজন আরেকজনকে বলে দেই ভালভেবে বা ভালবেসে, বন্ধুকে বা আত্মীয়কে, ফেসবুকে বা হোয়াটসএপে, বা অন্যকোন মাধ্যমে অন্য কোন উপায়ে কারোও কাছে.....

ধরুণ, আপনি আপনার ঘনিষ্ট বন্ধুকে আপনার মনের কথা বলে দিলেন আর বল্লেন বন্ধু কারো কাছে বলিস নে। তোকে যে বড্ড আপনভেবে বলেছি।

বন্ধু ভেবে বলেছেন ভাল আছে। কিন্তু আপনার সেই বন্ধু তো আর কোন ফেরেস্তা নয়। তাকেও তো শয়তান ধোঁকা দেয়।

সেই বন্ধু হয়ত কোন প্রেক্ষিতে ভুলেগেল আপনার নিষেধের কথা আর ঘটনাক্রমে অন্য একজনকে বলে দিল। সে আবার তার কোন প্রিয় বন্ধুকে। তার প্রিয় বন্ধু আবার তার প্রিয় কাউকে। এভাবে তার থেকে তার, তার থেকে তার করতে করতে পুরো দেশ জুড়ে হয়ে যেতে পারে আপনার গোপন কথা ফাস এবং ছড়াতে থাকবে আপনার বদনাম।

এবার দেখুন তো শয়তান কিভাবে আপনাকে ইমোশনালি ধ্বংসের পথে নিয়ে গেল। কিভাবে একটু ছোট্র শান্তির প্ররোচনায় ফেলে কত বড় অপমানজনক দঃখে ছুড়ে মারল!!

শয়তান এভাবেই মিথ্যে আশা দিয়ে শান্তির প্ররোচনা দিয়ে পুরো জিন্দেগী অশান্তির দিকে আমাদের নিক্ষেপ করতে চায়।

হায়! আমাদের কি হয়েছে....

আজও কি বুঝব না শয়তানের এই বাস্তব নিকৃষ্ট ফাঁদ???

ওহে আমার আত্তা ও আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা শয়তানের এই নিকৃষ্ট জালে নিজেকে আর বারংবার সপে দিও না।

সে যে নিজেও ধ্বংস হয়েছে সাথে আমাদের ও করতে চায়। (আসতাগফিরুল্লাহ)

আবেগের তাড়নায় না চলে বুদ্ধিদীপ্ত জীবন সাজাতে চেষ্টা করি চলুন সবাই।

(ইনশাআল্লাহ)।

আর সবাই আল্লাহর কাছে কাকতি মিনতি করে বলি-

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাই বিতাড়িত শয়তান থেকে।

আর শত দুঃখ-কষ্ট শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করি, তাঁর কাছেই রহমত চাই, ক্ষমা চাই। তিনিই যে রহমানুর রহীম, পরম-দয়ালু।

তবে হে আপনার আমার অন্তরে না একটা কাজ করলে শান্তি আসবে।

জানেন এ ব্যপারটা না আল্লাহ আমাদের বলে দিয়েছেন তা কি জানেন তো?? তা হল:

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’।

( সূরা: আর-রাদ - ২৮)

দুঃখ কষ্টের সময় মানুষকে না বলে চলুন আল্লাহ্‌কেই বলি:::

দোয়া::

اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُــــلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي

হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনারই এক বান্দার পুত্র এবং আপনার এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে; আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর; আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজে রেখেছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকেও শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন—আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী।

[[আহমাদ ১/৩৯১, নং ৩৭১২। আর শাইখ আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থে ১/৩৩৭ একে সহীহ বলেছেন।]]

বিষয়: বিবিধ

৬৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File