আলোর খোঁজে বহুদূর

লিখেছেন লিখেছেন দীপ জ্বেলে যাই ০৯ মে, ২০১৫, ০৩:২১:৫৫ রাত



গ্রামটির নাম ‘জায়ান’।

পারস্যের ইসফাহান অঞ্চলের একজন ধনাঢ্য পিতার ঘরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে একটি শিশু।

প্রকৃতির আলো-হাওয়ায় বাড়তে থাকে শিশুটি। বাড়তে বাড়তে হয়ে যায় নওজোয়ান।

রাজপুত্রের মতো সুন্দর ফুটফুটে নওজোয়ানকে সবচেয়ে ভালোবাসে তার পিতা।

তিনি গ্রামের সর্দার। একমাত্র পুত্র তার নয়নের মণি। কলিজার টুকরা। পিতা চান না ছেলের অমঙ্গল। চান না কোনো রকম বিপদ তার ছেলেকে স্পর্শ করুক। এজন্যে তিন ছেলেকে ঘরের ভেতর আবদ্ধ করে রাখেন।

নওজোয়ান ঘরের ভেতর আবদ্ধ থাকে সারাকষণ।

খাঁচার পাখির মতো তার হৃদয়ে দুলে ওঠে মুক্তির দুর্বার ঢেউ।

সে মুক্তি পেতে চায়। পেতে চায় মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া। দেখতে চায় চাঁদ জোছনা আর প্রতৃতির ‍নির্মল শোভা।

দিন যায়, মাস যায়। নওজোয়ানের প্রতীক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। কিন্তু মুক্তির সুযোগ আর আসে না।

অবশেষে একদিন এলো।

তার পিতার ছিল বিশাল খামার। তিনি সেদিন নিজে আর খামারে যেতে পারলেন না। আদরের ছেলেকে বললেন,

আমিতো আজ খামারে যেতে পারছিনে। তুমিই যাও। কাজ কর্ম একটু দেখাশুনা করে এসো।

পিতার কথা শুনে নওজোয়ানের বুকে আনন্দের ঝড় বয়ে গেল। আবদ্ধ ঘর থেকে সে বের হয়ে আসে। দু’চোখ ভরে দেখে পাখির ঝাঁক। ফুলোর শোভা। সবুজ প্রকৃতি। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে টেনে নেয় বুকের ভেতর শীতল হওয়া।

আহ! মুক্তির স্বাদই আলাদা!

নওজোয়ান হাঁটছে মনের আনন্দে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে চারপাশের সবুজ গাছ-গাছালি গুল্মলতা। শুনছে পাখির কলরব। দেখছে আকাশে মেঘের খেলা। দেখছে আর ভাবছে। ভাবছে আর হাঁটছে।

হঠাৎ সে থমকেদাঁড়ালো ওপাশে কাদের আওয়াজ?

গুন গুন করে কথা বলছে কারা?

নওজোয়ান কান খাড়া করে শুনতে থাকে।

এক পা দু’পা করে এগিয়ে যায়।

ধীরে ধীরে সেই ঘরটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আবারও তার কানে ভেসে এলো প্রার্থনার শব্দ।

ঘরটি শুধু ঘর নয়। একটি গির্জা। এখানে খ্রিস্টানরা উপাসনা করে।

নওজোয়ান তো আর এদের উপাসনার খবর জানে না। তার পিতা একজন বিখ্যাত অগ্নি-উপাসক। পিতার কাছ থেকে সে আগুনের উপাসনাই শিখেছে

গির্জার লোকদের কাছে নওজোয়ান জিজ্ঞেস করলো তোমরা এখানে কি করছো?

আমরা প্রভুর প্রার্থনা করছি। তারা জবাব দিল।

তাদেরকে দেখে নওজোয়ান খুশি হলো। তার হৃদয়ে অন্যরকম হাওয়া বইতে থাকলা। সে ভুলে গেল খামারে যাবার কথা।

ভুলে গেল পিতার নির্দেশ। সারাদিন সে কাটিয়ে দিল তাদের সাথে গির্জায়।

বেলা বাড়তে থাকে। একসময় দিনের সূর্য হারিয়ে যায়।

নেমে আসে সন্ধ্যার কালো ছায়া। নওজোয়ানের মনে পড়ে বাড়ি ফেরার কথা। ফেরার সময় তার মনে প্রশ্ন জাগে, এ ধর্মের উৎস কোথায়?

গির্জার লোকেরা বললো- শামে।

ক্লান্ত। অথচ প্রশান্ত নওজোয়অন। চোখে মুখে আন্দের ফোয়ারা। পিতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি খামারে গিয়েছিলে? কেমন দেখলে?

নওজোয়ান মিথ্যে বললো না। বললো, খামারে না গিয়ে সারাদিন গির্জায় থেকে উপাসনা করেছি।

সর্দার পিতা ছেলের কথা শুনে ক্ষেপে গেলন। তার চোখ দিয়ে আগুনের হুলকা ছুটছে।

থেলে আগুনের উপাসনা না করে গির্জায় উপাসনা করেছে? ধর্মান্তরিত হচ্ছে?

পিতা ভুলে গেলেন স্নেহের কথা। আদরের কথা। তিনি নিষ্ঠুরভাবে ছেলের পায়ে বেড়ি দিয়ে পুনরায় ঘরে আবদ্ধ করে রাখলেন।

আবদ্ধ ঘরে হাওয়া ঢোকে না।

ছেলেটি কাঁদে মুক্তির প্রার্থনা করে।

খ্রিস্টানদে কাছে গোপনে খবর পাঠায়। শামের দিকে যদি কোনো কাফেলা যায় তাহলে যেন তাকে কৌশলে মুক্ত করে নিয়ে যায়।

খ্রিস্টান ধর্মের মূল উৎস শামে। সেও শামে যাবে। সেখানেই গিয়ে তার হৃদয়ের ইচ্ছা পূরণ করবে।

কিন্তু তার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না। সে পায়ে বেড়ি নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকে। কেবলই প্রতীক্ষা করে- কখন আসবে সেই সোনালি সুযোগ?

একদিন সুযোগ এলো।

রাতের গভীরে নওজোয়ানকে উদ্ধার করে একটি কাফেলা তাকে নিয়ে গেল শামে।

নতুন শহর শাম। নওজোয়ানের চোখে মুখে অবাক- বিস্ময়। সে জিজ্ঞেস করলো, এখানকার সর্বোত্তম এবং সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে?

তারা জবাব দিল- বিশপ। গির্জার পুরোহিত।

নওজোয়ান তার কাছে গেল।

পুরোহিতের খেদমতে নিজেকে উজাড় করে দিল। পুরোহিতকে সে ভালো করে দেখতে থাকলো। তার স্বভাব, তার চরিত্র, তার আচরণ- সবকিছু। তাকে দেখে আর তার সাথে থেকে নওজোয়ানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার বুজে জমে উঠলো ঘৃণা ও কষ্টের মেঘ।

সবাই যাকে ভালো মানুষ বলে জানে- আসলে সে আদৌ ভালো মানুষ ছিল না।

তার ছিল লোভ আর মিথ্যার ছলনা। সে সবাএক সওয়াবের লোভ দেখিয়ে দান খয়রাত করতে বলে। পুরোহিতের কথায় সবাই দান করে অঢেল টাকা। অনের্ক স্বর্ণ অনেক সম্পদ। পুরোহিত এসব দানের সম্পদ গচ্ছিত রাখে তার গোপন গুদামে। আর সেসব সম্পদ এবং অর্থ নিজেই আত্মসাৎ করে।

পুরোহিত মারা গেলে তার ভক্তরা তাকে দাফন করতে এলো।

নওজোয়অন সবাইকে বললেঅ- এ পুরোহিত ভালো মানুষ ছিল না। তোমাদের দানের সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজেই ভক্ষণ করেছে আর জমা করে রখেছে গোপন গুদামে।

সত্যি বলছো? তা হতেই পারে না। উনি আমাদর বিশপ। আমাদের পুরোহিত। এমন কাজ তার পক্ষে কি করা সম্ভব?

নওজোয়ান গোপন গুদামে তাদেরকে নিয়ে গেল। তারা দেখলো গচ্ছিত সম্পদের পাহাড়।

এমন ভণ্ড তাপসকে কি দাফন করা যায়?

তারা তাদের বিশপের লাশকে ঘৃণায় আর ক্ষোভে শূলে বিদ্ধ করে ঝুলিয়ে রাখলো।

মানুষেরা দেখুক- ভণ্ডামির এবং পাপের কি সাজা।

ভণ্ড বিশপের মৃত্যুর পর এলা আর একজন বিশপ। নওজোয়ান তার সেবা করা শুরু করলো। বিশপের সে জিজ্ঞেস করলো-

আপনার মৃত্যুর পর আমি আর কার কাছে যেতে পারি? কে সবচেয়ে সত্যবাদী পুরুষ? বেশি ধর্মভীরু?

বিশপ বললো, মাওসেলে এক ব্যক্তি আছেন। তার নামও তোমাকে বললাম। তিনি অপেক্ষাকৃত ভালো এবং সৎ মানুষ। তুমি তার কাছে যেতে পারো।

বিশপের মৃত্যুর পর নওজোয়ান মাওসেল গেল। খুঁজে বের করলো লোকটিকে। তাকে দেখে নওজোয়ানের ভালো লাগলো। শ্রদ্ধা করার মতো ব্যক্তি বটে! কিন্তু তিনি অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। নওজোয়ান তাকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করে।

একদিন বৃদ্ধের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো। নওজোয়ান কেঁদে ফেললো। এবার আমি কার কাছে যাবো?

বৃদ্ধ দুঃখভরা হৃদয়ে বললেন, তোমার সত্য সন্ধানের নেশা আমাকে মুগ্ধ করেছে যুবক! তোমার মতো এতো ভালো- উৎসাহী ব্যক্তি আমি আর পাইনি। নসিব মন্দ! আমি বিদায় নিচ্ছি। আমরা যে বিশ্বাসের ওপর অটল ছিলাম, এখন আর তেমন কোনো সত্যপুরুষ এ ধর্মে নেই। তুবি তুমি আমার মৃত্যুর পর নাসিবীনে যেতে পারো। সেখানে এক ব্যক্তি আছেন এই নামের লোকটির কাছে তুমি থাকতে পারো।

বৃদ্ধের মৃত্যুর পর নওজোয়ান সেখানে। খুঁজে বের করলো তাকে।

অল্প দিনের মধ্যে তিনিও মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। নওজোয়ান বললো, এবার আমি কার কাছে যাবো?

তিনি বললেন আম্বুরিয়াতে এক ব্যক্তি আছেন। ‍তুমি তার কাছে যেতে পারো।

নওজোন আম্বুরিয়ার সেই ধার্মিকের কাছে গেল।

নওজোয়ানের মুখে তার অতীতে ত্যাগ এবং সত্য সন্ধানের কথা শুনে খুব খুশি হলেন। তাকে কিছু গরু এবং ছাগল প্রদান করলেন।

নওজোয়ানের বুকটা ফুলে উঠলো আনন্দে। মনে পড়লো তার পিতার ঐশ্বর্যের কথা। সম্পদের কথা। কত আদর যত্নে সে পালিত হয়েছে- সে কথা।

কিন্তু সত্য ধর্মের প্রতি হৃদয়ের দুর্বার টানে মুহুর্তে সে ভুলে গেল পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধির কথা।

নওজোয়ান হৃদয়-মন ঢেলে দিযে সেবা করে যায় বৃদ্ধকে।

কিন্তু বার্ধক্যের তো আর কোনো ঔষধ হয় না!

মৃত্যুকে তো কেউ আর ফেরাতে পারে না।

ঝরে পড়ার সময় হলে গাছের পাতা যেমন ঝরে যায়, তেমনি- মৃত্যু এলেই তাকে মৃত্যুমুখে সমর্পিত হতে হয়। এর কোনো বিকল্প নেই।

দিনে দিনে বৃদ্ধও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

নওজোয়ানের চোখে বিষাদের কালো ছায়অ। এবার সে কোথায় যাবে?

নওজোয়ানের উৎকণ্ঠা দেখে বৃদ্ধ তাকে কাছে ডাকলেন। আদরে আদরে ভরে দিলেন যুবকের হৃদয়। তারপর আস্তে করে বললেন,

আমি জানিনে- এরপর তুমি কোথায় যাবে। আমিতো তেমন কোনো ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাচ্ছিনে। যার কাছে তোমাকে পাঠানো যায়। আমরা যে ধর্মের ওপর আস্থাশীল ছিলাম, যে সত্যের ওপর সুদৃঢ় ছিলাম, এখন আর তার ওপর তেমন কোনো সৎব্যক্তি অবশিষ্ট নেই। নেই কোনো সত্য পুরুষ। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। অদূর ভবিষ্যতে আরবে একজন ব্যক্তি আসবেন। তিনি বনী। ইব্রাহীমের ধর্মকে তিনি নতুনভাবে প্রচার কবেন। তাঁর ওপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হবে। তাঁর প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে তিন বড় বড় পাথরের জমিনের মাঝখানে খেজুর উদ্যান বিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরত করবেন। নবুওয়তের নিদর্শন থাকবে তাঁর কাছে। তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে থাকবে নবওয়তের মোহর। তিনি হবেন সর্বশেষ নবী। সত্যনবী। মহা সম্মানী এই নবী হাদিয়ার জিনিস খাবেন। কিন্তু সাদকার জিনিস তিনি কখনোই খাবেন না। সম্ভব হলে তুমি সেখানে যেতে পারো। তাঁর কাছ থেকে পান করতে পারো সত্য পিপাসার অঢেল পানি। তোমার যাবতীয় তৃষ্ণা মিটে যাবে তখন।

বৃদ্ধ মারা যাবার পর নওজোয়ান সিদ্ধান্ত নিলেন আরবে যাবার। কালব গোত্রের কিছু আরব ব্যবসায়ী আম্বুরিয়াতে এলো। নওজোয়ান বললো, আমার এই গরু ছাগলগুলি তোমাদেরকে দেব। বিনিময়ে আমাকে তোমরা আরবে নিয়ে যাবে?

তারা রাজি হয়ে গেল। যুবক চললো তাদের সাথে।

সুদূর আরবে।

কিন্তু লোকগুলো ছিল অসৎ, বিশ্বাসঘাতক।

পথিমধ্যে তারা তাকে বিক্রি করে দিল এক ইহুদির কাছে।

ধনীর ঘরের আদরের সন্তান শুরু করলো দাসত্বের জীবন। আর দাসত্বের জীবন মানেই তো কষ্টের জীবন।

আগুনের জীবন!

অল্পদিনের মধ্যেই হাত বদল হলো যুবক।

বনী কুরাইজা গোত্রের এক ব্যক্তি তাকে কিনে নিল। তারপর তাকে নিয়ে গেল ইয়াসরিবে (মদীনায়)।

মদীনায় এসে নওজোয়অন চারদিকে তাকিয়ে দেখে।

সবকিছু অচেনা অজাা।

কোথাওবা পাহাড় পর্বত। আবার কোথাওবা পাথর কুঁচির বিস্তীর্ণ ভূমি। তারই মধ্যে আবার খেজুরের সুন্দর সাজানো বাগান।

মুহূর্তেই মনে পড়লো তার আম্বুরিয়ার বৃদ্ধের কথা। বৃদ্ধের দেয়া নির্দেশের মধ্যে একটি ছিল- খেজুরের বাগান।

খেজুরের বাগান দেখে নওজোয়ানের প্রাণে আনন্দের মৌমাছি গুন গুন করে উঠলো। মনিবের সাথে সে এখানে অবস্থান করলো।

মন দিয়ে সে মনিবের কাজ করে যায়। তার কাজে কোনো ফঅঁকি নেই। সততা আর শ্রমে নেই কোনো চালাকি।

নওজোয়ান খেজুর বাগানে। খেজুর গাছের চূড়ায় উঠে কাচে ব্যস্ত।

মনিব গাছের নিচে বসে আরামে বিশ্রাম করছে।

এমন সময় মনিবের ভাতিজা এসে বললো, মক্কা থেকে আজ এক ব্যক্তি ইয়াসরিবে। বনী কায়লারা তাঁর কাছে ছুটে গেছে।

লোকটি নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবি করছে। লোকটির কথা কানে যেতে না যেতেই নওজোয়অন চমকে উঠলো।

তার হৃদপিণ্ডে রক্তের চাপ বেড়ে গেল। মনে পড়লো- বৃদ্ধের কথা। এ কি তাহলে সেই নবী! যিনি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে মদীনায় হিজরত করেছেন

গাছ থেকে নেমে এলো সে।

জিজ্ঞেস করলো তার কাছে- তুমি কি বললে? আর একবার বলো তো?

দাসের জিজ্ঞাসায় মনিব রেগে গেল। তার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো, তোমার তাতে কী হে?

মনিবের চড়েড় আঘাতেও দমে গেল না দাস। বৃদ্ধের কথা মতো সে মক্কা থেকে আগত লোকটিকে পরীক্ষা করতে চাইলো। সত্যিই তিনি নবী কি না।

সন্ধ্যার পর নওজোয়অন কিছু খেজুর নিয়ে মক্কা থেকে আগত লোকটির কাছে গেল। খেজুরগুলো তাঁকে দিয়ে বললো,

শুনেছি আপনি পুণ্যবান ব্যক্তি। আমার কাছে কিছু সদকার জন্যে খেজুর আছে। এগুলি আপনি গ্রহণ করুন।

লোকটি খেজুরগুলি নিয়ে তাঁর সঙ্গীদেরকে বললেণ- তোমরা খাও।

আশ্চর্য! তিনি নিজে একটি খেজুরও খেলেন না।

নওজোয়ান প্রথম পরীক্ষায় সত্যের সাফল্যে আনন্দিত হলো।

তার বিশ্বাসের ভীত শক্ত হয়ে উঠলেঅ- ইনি সত্যিই সেই নবী। যার কথা বৃদ্ধ আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষাটিও করা প্রয়োজন।

একদিন- বাকি আলগারকাদ গোরস্তানে নবী (সা) তাঁর এক সঙ্গীকে দাফন করেছিলেন। তাঁর গায়ে ছিল এক ধরনের ঢিলা পোশাক।

যুবকটি সেখানে গেল। নবীকে দেখতে থাকলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ভালো কর। যুবকটি নবীর কাঁধের দিকে বারবার তাকাতে থঅকলো। খুঁজতে থাকলো তার প্রার্থিত নমুনাটি।

যুবকটির উৎসাহ নবী (সা) দৃষ্টিগোচর হলো।

তিনি বুঝলেন- সে কী দেখতে চায়।

নবীজী নিজের পিঠের চাদরটি সরিয়ে নিলেন। আর সাথে সাথেই বিদ্যুতের মতো চমকে উঠলো নবুওয়াতের মোহরটি।

নওজোয়ান বিশ্বাসের সমুদ্রে নেমে যায়। আন্দে দিশাহারা হয়ে সে নবীজীর মোহরটি চুমুতে চুমুতে ভরে দেয়।

তার দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। সে পানি বিষাদের নয়, বিশ্বাসের।

আনন্দের।

পাওয়ার তৃপ্তিতে ভরে উঠলো তার তৃষিত হৃদয়ের দু’কূল।

নবীজী(সা) জিজ্ঞেস করলেন- তোমার পরিচয়?

নওজোয়ান তার পরিচয় দিল। সেই সাথে বললো তার পেছনের সকল কথা।

সব শুনে নবীজী খুশি হলেন। আনন্দিত হলেন।

তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে বললেন- নওজোয়ানর জীবনের কথা। তার সত্য অনুসন্ধানের কথা। তার ত্যাগের কথা।

নবীর (সা) সঙ্গীরা সে কথা শুনে খুব খুশি হলেন।

নবীজীর পরামর্শে একদিন দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তি পেল নওজোয়ান। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে।

মুক্তির পর নবীজীর সাথে থেকেই কাটিয়ে দেন সারাটি জীবন। সত্যের আলোতে গড়ে তোলেন নিজের জীবন।

দাসত্ব জীবনের কারণে তিনি বদর এবং উহুদ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। এই না পারার কারণে তার বুকে জমে থাকে কষ্টের কুয়াশা।

বেদনার বৃষ্টি ঝরতে থাকে অষ্ট প্রহর।

এরপর এলো খন্দকের যুদ্ধ। নওজোয়ান ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং প্রাজ্ঞ। তিনি পরামর্শ দিলেন এই যুদ্ধে পরিখা খননের জন্য। নবীজী তার এই সুন্দর পরামর্শ গ্রহণ করলেন।

খন্দকের যুদ্ধে খনন করা হলো পরিখা।

আদরে আদরে বেড়ে ওঠা এক যুবক।

সত্য গ্রহণের জন্যে ত্যাগ করেছেন জীবনের যাবতীয় সুখ। দুনিয়ার অস্থঅয়ী জীবনের প্রতি তার ছিল না এতটুকু মোহ। তাইতো তিনি বসবাসের জন্যে তৈর করননি কোনা সুন্দর ঘর। বানাননি বিলাসের সামগ্রী ।

অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন তিনি।

তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত অর্থেই মুসাফির।

মুসাফিরের মতোই ছিল তার জীবন যাপন, কিন্তু আখেরাতের প্রতি ছিল তার অবিচল আস্থা।

আল্লাহর প্রতি ছিল পর্বতের মতো সুদৃঢ় বিশ্বাস এবং নবীজীর প্রতি ছিল অসীম ভালোবাসা।

নওজোয়ানের বয়স বাড়তে থাকে।

বার্ধক্যের সিঁড়িতে পা রাখলেন তিনি। ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলেন মৃত্যুর দিকে।

অন্তিম রোগ শয্যায় শায়িত তিনি।

তিনি কাঁদছেন। তার দু’গণ্ড ভিজে যাচ্ছে অশ্রুধারায়।

হযরত সা’দ রাঃ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- আপনি কাঁদছেন কেন? রাসূল (সা) তো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। হাউজে কাউসারের কাছে আপনি রাসূলের সাথে মিলিত হবেন।

তিনি কম্পিত কণ্ঠে বললেন, আমি মৃত্যুভয়ে কাঁদছিনে।

তবে?

তিনি বললেন- রাসূল (সা) আমাদেরকে মুসাফিরের মতো চলতে বলেছিলেন। অথচ আমার কাছে অনেক জিনিসপত্র জমা হয়ে আছে।

সেই জিনিসগুলো আর কিছু নয়। মাত্র একটি বড় পিয়ালা, আমার একটি থালা ও একটি পানির পাত্র। সত্য সন্ধানী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং আত্মত্যাগী এই দুঃসাহসী মুসাফিরের নাম সালমান আল ফারসী।

সত্যের আলোর খোঁজে যিনি ছুটছেন অনন্ত জীবন- দিক থেকে দিগন্তে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

(বই- সাহসী মানুষের গল্প হতে)

বিষয়: বিবিধ

১২৫৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

318962
০৯ মে ২০১৫ সকাল ০৬:২৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : বিস্তারিত এবং আদ্যপান্ত সিরাত পড়ার ইচ্ছা আমার সালমার ফারসী (রা.) এর।
দরকারি পোষ্ট জাজাকাল্লাহ
১১ মে ২০১৫ রাত ০৩:২৫
260457
দীপ জ্বেলে যাই লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিক! শুকরিয়া!
318969
০৯ মে ২০১৫ সকাল ০৯:০৩
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : "একটু খানি আলো দাও! আমি ছড়িয়ে দেব হৃদয় থেকে হৃদয়ে"।
আমার এই লিখাটি পড়ার জন্য আপনার দাওয়াত রইলো জাজাকাল্লাহ।
Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
১১ মে ২০১৫ রাত ০৩:২৫
260458
দীপ জ্বেলে যাই লিখেছেন : পড়ে নিব ইনশা আল্লাহ!
318980
০৯ মে ২০১৫ সকাল ০৯:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ মে ২০১৫ রাত ০৩:২৫
260459
দীপ জ্বেলে যাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File