প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য

লিখেছেন লিখেছেন এ এম ডি ০২ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:০১:৩৮ রাত



১। গিজার মহা পিরামিড এটি গিজার গোরস্তানের তিনটি পিরামিডের মধ্যে সবচাইতে পুরাতন এবং বড় । এটি বর্তমান মিসরের এল গিজা নামক স্থানের কাছে অবস্থিত ।



ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান

ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয়েছিল । সম্রাট নেবুচাদনেজার সম্রাজ্ঞীর প্রেরণায় এটা নির্মাণ করেছিলেন । প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল একটি ভিত যার আয়তন ছিল প্রায় ৮০০ বর্গফুট । ভিতটিকে স্থাপন করা হয়েছিল তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে । ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট । এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগান । আর ৪০০০ শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করেছিলেন সে বাগান । বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল আরো প্রায় ১০৫০ জন মালী । ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল সেই ঝুলন্ত বাগানে । ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলে সাহায্যে । ৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় ।

মেসোপটেমিয় সভ্যতার মধ্যে এই ব্যাবিলনের সভ্যতা অন্যতম ব্যাবিলনে । ইফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে ওঠা ব্যাবিলন শহরটি ছিলো জাকজমকপূর্ণটায় ভরা । চারকোণা এই শহরটি তখন প্রশস্ত প্রতিরক্ষা প্রাচীরে ঘেরা ছিল যা বলাবাহুল্য উঁচ্চু এবং প্রশস্তের দিক থেকে ছিলো বিস্ময়কর । শহরের সামনে ছিল মজবুত এবং উঁচ্চু প্রবেশ পথ । আবার শহরের মধ্যে একটি বড়ো স্তম্ভও তৈরি করা হয়েছিল । যার নাম ছিলো ব্যাবিলন টাওয়ার । নামটির সঙ্গে সম্ভবত ব্যাবিলন নামটির সম্পর্ক ছিল ।

খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে সুমেরীয় সভ্যতার পতন হলে ব্যাবিলন সে অঞ্চলের শক্তিশালী একটি সাম্রাজ্যের পরিণত হয় । ব্যাবিলনের প্রথম সম্রাট সারগন ছিলেন মোটামুটি সফল এর কারণ ছিল তিনি ব্যাবিলনের সভ্যতা সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে সম্রাট হামুমারাবির সময়ে ১৭৯২ থেকে ১৭৫০ সালের পূর্বে সুমেরীয় সংস্কৃতি ও বহু জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নয়ন করা হয় ।

পরবর্তী কয়েকশ বছর ব্যাবিলনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিভিন্ন জাতি এবং গোষ্ঠীর হাতে । হিট্টাইট ও অ্যাসিরিয়ান ও ক্যাসাইট এবং ক্যালডিয়ান জাতি প্রায় হাজার বছর ব্যাবিলনের ক্ষমতা হরণ করেন । তারপর ৬২৫ সালেরপূর্বে নানোপোলাসার এর নেতৃত্বে ব্যাবিলন আবার জেগে ওঠে । তিনি অ্যাসারিয়ানদের রাজধানী নিনেভে দখল করে নেন । তার মৃত্যুর পর তার ছেলে নেবুচাদনেজার ক্ষমতায় আসে । সে ব্যাবিলকে আরো সমৃদ্ধ এবং জাঁকজমকপূর্ণ করে গড়ে তোলে । তিনি ছিলেন স্থাপত্য এবং শিল্পের প্রতি বিশেষভাবে অনুরাগী । তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির ও প্রাসাদ এবং স্থাপত্য পূনর্নির্মাণ করেন । ব্যাবিলন শহরকে গড়ে তোলেন সরম্য এবং আকর্ষণীয় করে তোলেন ।

নেবুচাদনেজার II এর ৬০৫ সাল থেকে ৫৬২ সালের পূর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপন হলো ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান অথবা ঝুলন্ত উদ্যান । এই ঝুলন্ত বাগান গড়ে তোলার পিছনে তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন তার প্রিয়তম সম্রাজ্ঞীনি । ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান বিশ্বের সপ্তাশ্চাযের একটি হয়ে ব্যাবিলনের সুখ্যাতি প্রকাশ করেছে । সম্রাট নেবুচাদনেজার ছিলেন ভীষণ আমুদে । নিনেভে দখল করার সময় মিডিয়ান সম্রাট তাকে সহযোগিতা করেছিলেন । মিডিয়ান রাজকন্যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাকে বিয়ে করেন । বিয়ের পর রাজকন্যা হলেন ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞীনি । কিন্তু ব্যাবিলনের সম্রাজ্ঞীনির আদৌ ভালো লাগত না কারণ মিডিয়া ছিলো পাহাড় পর্বতের দেশ । আর ব্যাবিলন ছিল সমতল ভূমি । সম্রাজ্ঞীনি পাহারী দৃশ্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন । সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মনের কথা বুঝতে পেরে তাকে খুশী করতে প্রাসাদের ওপর বিশাল পাহাড় তৈরি করেন । পাহাড়ের সঙ্গে তৈরি করা হয় মনোরম বাগান । সারা পৃথিবী থেকে চমৎকার সব উদ্ভিদ আর ফুল এনে সাজিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিখ্যাত সেই বাগান । কারণ তিনিও চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব আনন্দ আর সুখের সম্রাজ্ঞীনির জন্য ভালোবাসার প্রতীক অঙ্কন করতে ।

পারস্যের সম্রাট সাইরাস ৫১৪ সালেরপূর্বাব্দে জেরুজালেম দখল করে শহরটি ধ্বংস করেন । এবং তাদের উপসনালয় ও রাজপ্রাসাদ পুড়িয়ে দিলেন । তার সময় থেকেই ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য ম্লান হতে থাকে । তার পরবর্তীকালে নেবোনিডাস সম্রাট হলেন । তবে ব্যাবিলনের সমৃদ্ধি আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে । ব্যাবিলন এখন ধ্বংস স্তুপ । পারসিয়ান সম্রাটের প্রচন্ড আক্রমণে নিমিষেই ধুলোয় মিশে গিয়েছিলো ব্যাবিলন নগরী ।



আর্টেমিসের মন্দির যা ডায়নার মন্দির নামেও পরিচিত আছে । একটি গ্রিক মন্দির যা নির্মান করা হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে এফিয়াস যা বর্তমান তুরস্ক অঞ্চলে । ৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এক ভয়াবহ অগিকান্ডে এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় ।

মন্দিরটি ৩৭৭ ফুট লম্বা এবং ১৮০ ফুট চওড়া । পুরোটাই মার্বেল পাথরের তৈরি । এতে ১২৭ টি স্তম্ভ আছে প্রত্যেকটি ৬০ ফুট উঁচ্চতা বিশিষ্ট । প্রতি দেওয়াল জুড়ে বসানো ছিল মণি, মুক্তা, রুবি, পান্না আর হীরক খন্ডের মত মহামূল্যবান রত্নরাজি । প্রবেশ পথের দুইধারেও বসানো হয়েছিল ডায়ানার মূর্তি ।



জিউসের মূর্তি পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যেও একটি । ফিডিয়াস খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৫ অব্দে মূর্তির নক্সা করা হয় । যে দ্বীপের উপর মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পুরোটা জুড়ে এর ভিত্তি তৈরি করা হয় । এটি ছিল ৪২ ফুট উঁচ্চু এবং ৬ ফুট ব্যাসার্ধের । সাতজন মিস্ত্রী আড়াই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মুর্তিটি তৈরি করেছিলেন । প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এই মূর্তিটি খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারের সাথে সাথে খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দীতে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল ।



ঈজিয়ান সাগরে অবস্থিত সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম রোডস । খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দে এই দ্বীপে নির্মিত হয় এক বিশাল মূর্তি । আর এতে সময় লেগে ছিল প্রায় ১২টি বছর । এই মূর্তি দুই স্তরে বিভক্ত । প্রথম স্তরটি ছিল ৪০ মেট্রিক টন ওজনের বিশিষ্ট পাথরের ভিত্তি । এই ভিত্তির অপ্রে তৈরি হয়েছে মূর্তির মূল কাঠামো । মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে কিছু লোহাও ব্যবহার করা হয়েছিল । ব্যবহৃত তামার ওজন ছিল ২৫০ মেট্রিক টন । এর উঁচ্চতা ছিল ১২০ ফুট । খ্রিস্টপূর্ব ২২৮ অব্দে এক প্রলংকরী ভূমিকম্পে মূর্তিটির এক পা ভেঙ্গে যায় । ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সারাসিন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করার পরে মূর্তিটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল ।



খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর । প্রথমে বন্দরের পরিচিতি চিহ্ন হিসেবে তৈরি করা হলেও পরবর্তীতে এটী বাতিঘর হিসেবেই কাজ করে ।

বাতিঘরের মূল ভিত্তিভূমির আয়তন ছিল ১১০ বর্গফুট । উঁচ্চতা ছিল ৪৫০ ফূট । মূল দেহের গোটা শরীরে একটা প্যাচানো সিড়ি ছিল । এই সিড়ি বেয়েই উঠতে হতো । বাতিঘর তৈরির সময় ৪৫০ ফুট উচুতে যে বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্বে সেটি আর কেও নিভে যেতে দেখেনি । ৫০ মাইল দূর থেকেও বাতিঘরটি দেখা যেত । দ্বাদশ শতকে এক প্রবল ভূমিকম্পে বাতিঘরটি ভেঙ্গে পড়েছিল ।



হ্যালিকারনেসাসের সমাধি মন্দিরটি খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে তুরস্কের দক্ষিণ পশ্চিম কোনে অবস্থিত কারিয়া রাজ্যে নির্মিত হয় এই সমাধি স্তম্ভ । ১৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ মর্মর পাথর ধারা । এটি তিন স্তরে বিভক্ত করা হয় । প্রথম স্তরে আয়তাকার বিশাল এক প্রস্তর ভিত্তি । দ্বিতীয় স্তরে ছিল ৩৮টি থাম যার প্রতিটির উচ্চতা ছিল ৫৬ ফুট এবং তৃতীয় স্তরটি ছিল সোজা উর্ধ্বাকাশে উঠে যাওয়া বিশালাকৃতির পিরামিড আকারের গম্বুজ এর মতো । গম্বুজের উঁচ্চুটা ছিল ৫০ ফুট । এটি ছিল মার্বেল পাথরের । গ্রিক বীর আলেকজান্ডার তুরস্ক আক্রমণের সময় এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন ।

ছবি তথ্য গুগল ও ইন্টারনেট

বিষয়: আন্তর্জাতিক

২৪২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348196
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
348221
০২ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
নাবিক লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট, ধন্যবাদ।
348260
০২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:০৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : স্বাগত
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File