ইসলামি আন্দোলনের রোগ সমূহ-১:বেশি কথা এবং অযথা তর্ক - ডঃ ইউসুফ আল কারাদাওয়ী

লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ২২ মে, ২০১৫, ১০:০৭:০২ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম



প্রথম রোগঃ বেশি কথা এবং অযথা তর্ক

ইদানিং কালে আন্দোলন গুলোর মাঝে একটা রোগ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, তাহলো কথা ও কূট তর্ক বেশি বেশি করা। এই সব কথা গুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়ে থাকেঃ

ক। অতীতের গৌরব গাথাঃ

অতীতের গৌরব গাথা বলতে যেয়ে আমাদের কথা খুব বেড়ে যায়। আমরা আমাদের অতীত দিনের সফলতার কথা ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করতে না পারলে শান্তি পাইনা। যত অবদান আমাদের আছে, যত সুনাম আমরা অর্জন করেছি- সবাইকে তা বলতেই থাকি। ভালো কথা, কিন্তু ঐসব অবদান বা সুনাম গুলো আমাদের কাজের মধ্যেও যে আনা দরকার সেটা সবাই ভুলে যাই। অতীত বিষয়ের আলোচনা তো করতে হয় বর্তমান কে সুন্দর ও উন্নততর করার জন্যে। কারণ, মুসলিমদের গত দিনের চেয়ে বর্তমান দিন হওয়া চাই উন্নততর। আমাদের আজকের চেয়ে আগামি কাল হতে হবে বেশি সুন্দর।

আমি বলছিনে মানুষ তার অতীত ভুলে যাক। কিংবা তাদের অবদান গুলোর আলোচনা বন্ধ করে দিক। আসলে মানুষ তার কাঁধে অনেক কিছু নিয়ে জন্মে। তার জাতির উত্তরাধিকার তার মাঝে থাকে। তার গোত্র বা পরিবারের অনেক বৈশিষ্ট্য তার রক্তে প্রবাহিত। কাজেই একজন মানুষকে অতীত ভ্রষ্ট হয়ে নতুন ভাবে দিন শুরু করতে বলা অযৌক্তিক। পূর্ব পুরুষের অবদান ও ইতিহাস থেকে কাওকে মুখ ফেরাতে বলাও ঠিক না। আমাদের নবী (সা) হুনায়নের যুদ্ধের দিন বলেছিলেনঃ

আমি নবী কভু মিথ্যে নয়

আমি আব্দুল মুত্তালিব তনয়

তিনি বলতেন, “আল্লাহ ইসমাঈল (আ) এর সন্তানদের থেকে কিনানাহ কে বেছে নিয়েছেন। তিনি কিনানাহ থেকে কুরায়শকে পছন্দ করেছেন। কুরায়শ থেকে হাশিমকে এবং আমাকে হাশিমের মধ্য থেকে বাছাই করেছেন”। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেনঃ “আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে জাহিলিয়্যাতের বদ অভ্যাস এবং বাপ-দাদা নিয়ে গর্ব করার সংস্কৃতি দূর করে দিয়েছেন। কেউ তোমরা মুমিন মুত্তাকি, কেউ আবার হতভাগা পাপী। তোমরা কিন্তু আদমের সন্তান, আর আদম ছিলেন মাটির তৈরী”।

অতীতের গৌরবময় পথে চলতে উৎসাহিত হওয়ার জন্য আমাদের ইতিহাস স্মরণ করা ভাল। কথা সর্বস্ব স্মরণ না হয়ে আমাদেরকেও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার দিকেই খেয়াল রাখতে হবে বেশি। কবি সত্যই বলেছেনঃ

বাপ দাদাদের মান যদিও উচ্চ ছিল

তাদের উপর ভরসা করে রইনা বসে,

সৃষ্টি করি যেমন ভাবে করত তারা

বর্তমানে আমরা সবাই মিলে মিশে।

খ। অতীতের ভুল ধরাঃ

অতীতের ভুল গুলো নিয়েও আমরা কম বাড়াবাড়ি করিনা। অতীতে যে সব বেদনার দিন গেছে, যে সব বিপদাপদ আমাদের ইতিহাসে এসেছে, তা নিয়ে আমরা দুঃখের সাথে স্মৃতিচারণ করি। অথচ ঐ সব বিপাদাপদ আমাদের জীবনে আবার না আসুক সেই চেষ্টা আমাদের করা উচিৎ সব সময়। কারণ, কোন মানুষ এ সব কালো অধ্যায় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, সে নিজের জন্য কিংবা দ্বীনের জন্য কিছুই করতে পারেনা। ওগুলো নিয়ে আফসোস করে জীবন চলে যাক, তা হতে দেয়া যায়না। মহানবী (সা) আমাদের কে শক্তি ও সাহস অর্জনের জন্য উৎসাহিত করেছেন, তিনি দূর্বলতার যাবতীয় উপকরণের ব্যপারে আমাদের সাবধান ও করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “যে কাজে উপকার আছে তার খোঁজে তুমি ব্যস্ত থাক, এরপর আল্লাহর সাহায্য চাও এবং তা করতে যেয়ে অপারগতা দেখায়োনা। বলবেনা, ‘যদি আমি এটা করতাম, তাহলে এটা হত’। বরং তুমি বলবে, ‘ আল্লাহ যা লিখেছেন তাই হবে, আল্লাহর মর্জি হলে এটা হবে। কারণ কোন কাজে ‘যদি’ শব্দটা হলো শয়তানের চাবি”। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ, তোমরা কাফিরদের মত হয়োনা। তাদের ভাইরা যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, বা যুদ্ধে বের হয়, তখন বলে, ‘ওরা আমাদের সাথে থাকলে মরতোও না, শহীদও হতনা’। এভাবে তাদের অন্তরে আল্লাহ আফসোস পয়দা করে দেন। আল্লাহই হলেন জীবন দান কারি, বা মৃত্যু আনয়ন কারি। আর তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তা সবই দেখছেন”।(আল ইমরান, ১৫৬)

গ। অন্যের দোষ খোঁজাঃ

মানুষ অন্যের দোষ ধরতে ও তা নিয়ে বেশি বেশি কথা বলতে যেন আরাম পায়। কখনো ‘সমালোচনার’ জন্য বা কখনো তথা কথিত ‘পরামর্শ’ দেয়ার জন্য অবলিলায় মানুষ এগুলো নিয়মিত করে যাচ্ছে। কিন্তু সমালোচনা আর গীবত এক জিনিষ না। পরামর্শ আর পরের দোষ প্রচার কখনো এক ভাবা ঠিক না। কিছু কিছু মানুষ যখন দোষ খোঁজে, মনে হয় এটাই তার শখ। কারো কোন দোষ পেয়ে গেলে খুব খুশি হয়। আবার যখন প্রচার শুরু করে, তখন তিলকে করে তাল। তার আলোচনার সিংহ ভাগ জুড়ে থাকে মানুষের ভুল, যেন কার কোন সঠিক কাজ এ দুনিয়াতে নেই। কারো সমালোচনা করলে শুধু খারাপ দিকটাই যেন হয় মূল প্রতিপাদ্য, তার বিপরীতে কোন ভাল গুণ যেন নাই ই। পরের চোখের ধুলি কণা তার কাছে বড়, অথচ নিজের চোখের বিশাল কাঠ সে দেখতে পায়না। নিজের দোষ নিয়ে ব্যস্ত থেকে অন্যের দোষ না দেখতে পারা যে কত বড় সৌভাগ্যের ব্যপার, এরা তা বুঝতে পারেনা।

পরের দোষ খুঁজে মানুষকে হেয় করার চেয়ে, এবং ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের ঢোল নিজে পেটানোর চেয়ে অনেক অনেক ভাল কাজ কিন্তু আপনি করতে পারেন। ভুল হলেও আমরা ইতিবাচক কিছু কাজ করতে পারি। কাজ না করে বসে থেকে মানুষের অযথা সমালোচনা করার চেয়ে, কোন কাজ করে ভুল করা অনেক ভাল। আবু তাইয়িব মুতানব্বি দারুনই বলেছেনঃ ‘সাধ্য যার নেই, গীবত করাই তার বড় সাধনা’।

আরেক ধরণের আশ্চর্য জনক ব্যাপার দেখি মাঝে মাঝে। আমরা যখন অন্যের দিকে সমালোচনার তীর সোজা করি, আমরা বলতে থাকি এতে নাকি তার উপকার করছি, ভালবাসার প্রমান দিচ্ছি, সৎ কাজের পরামর্শ দিচ্ছি ইত্যাদি অনেক কিছু!! অথচ আমার বিরুদ্ধে যদি কোন সমালোচনা হয় আমার চেহারা চেইঞ্জ হয়ে যায়। অথচ একজন বুদ্ধিমান মানুষ যেমন ভাবে বন্ধুর পরামর্শ থেকে উপকৃত হতে পারে, তেমন ভাবে শত্রুর সমালোচনাও তাকে উপকার করতে পারে। কারন বন্ধু সব সময় সন্তুষ্টির নযরে তাকে দেখবে, ফলে সেখানে দোষ ধরা পড়েনা। অথচ শত্রু তাকে রাগের চোখেই দেখবে এবং প্রতিটি পদবিক্ষেপে তার নযরে ভুল ধরা পড়ে সহজেই। উমার (রা) প্রায়ই বলতেন, “যে আমার দোষ গুলো উপহার মনে করে আমাকে বলে দেয় আল্লাহ তাকে রহম করুন”।

ঘ। অযথা তর্কঃ

অনেক নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে আমার মনে হয় খুব সামান্য ব্যাপার নিয়ে অযথা তর্ক করে বেড়ানো খুবই খারাপ। এই সব বিষয়ে তর্ক করে অন্তরে কষ্ট বাড়ানো, সময়ের অপচয় করা আর বড় বড় কাজ থেকে ফিরে থাকা ছাড়া আর কোন লাভ আমি দেখিনে। এই ধরণের তর্ক করাকে আগে বাইযান্টাইনি তর্ক বলা হত। কারন বাইযান্টাইনি ধর্মযাজকেরা যেসব বিষয় নিয়ে তর্ক করত তা হতো খুবই ছোট খাট ছিল। তাদের নাকি যুগ যুগ ধরে তর্ক চলতে ছিল একটা বিষয় নিয়ে। তাহলোঃ ডিম আগে তৈরী হয়েছে নাকি মুরগী? মানে আগে ডিম তৈরী হয়ে তাতে তা দিয়ে মুরগির জন্ম হয়েছে, নাকি আগে মুরগী তৈরি হয়ে সেখান থেকে ডিমের উৎপত্তি হয়েছে। কথিত আছে এই বিষয়টা নিয়ে যখন তাদের মাঝে তর্ক চলতেছিল, সে সময় হঠাৎ করে মুসলিমদের আক্রমনে তারা পরাজিত হয়ে যায়।

এই ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা তা আমার আলোচনার বিষয় না, আমি বুঝাতে চাচ্ছি এই ধরণের কূটতর্ক আমাদের ইসলামি আন্দোলন গুলোকে পেয়ে বসেছে। আমাদের নবী (সা) অনেক আগেই আমাদের সাবধান করে গেছেন, তিনি বলেছেন, হিদায়াতের উপর টিকে থাকার পর কোন জাতির ধ্বংশ তখনই চলে আসে, যখন তারা তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর পর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ “তারা আপনার সাথে তর্ক করতেই থাকে। ওরা বড়ই তার্কিক জনগোষ্ঠি”। (যুখরূফঃ৫৮)

জনৈক সালফে সালেহীনের বক্তব্য হলোঃ আল্লাহ তাআলা কোন জাতির অকল্যান চাইলে, তাদের কে কাজের তাওফীক না দিয়ে তার্কিক বানিয়ে দেন। যারা সারাক্ষণ তর্ক নিয়ে থাকতে ভালোবাসে তাদের সম্পর্কে মহানবী (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ অতি মাত্রার তার্কিক কে বেশি অপছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে কিছু লোকের কথা শুনে আপনার খুব ভালো লাগবে, অথচ আল্লাহ তার অন্তরের বিষয় সম্পর্কে দেখছেন, সে কিন্তু খুব তর্ক বাগিশ।(আলবাকারাহঃ ২০৪)

তর্ক করতে করতে মানুষ এমন পর্যায়ে চলে যায়, সত্য কে সে মিথ্যায় বা মিথ্যাকে সত্য প্রমানের মত ধৃষ্ঠতাও সে দেখিয়ে থাকে মাঝে মাঝে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ সত্যকে পরাজিত করতে ওরা মিথ্যা নিয়ে তর্ক করতে থাকে। (গাফিরঃ ৫) আর এই জন্যই কুরআন ইসলাম বিরোধিদের সাথে উত্তম পন্থায় তর্ক করতে নির্দেশ দেয়। এর অর্থ হলো যে পদ্ধতিতে তর্ক করলে উত্তম ফল পাওয়া যায় সেই সর্বোত্তম ভাবেই তর্ক করার অনুমতি কুরআন আমাদের দেয়। মূলতঃ যদি দেখা যায় কোন বিষয়ের ডিবেইট করার দুই পদ্ধতি সামনে এসে যায়, যে পদ্ধতিটা ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবেশের জন্য বেশি উপকারি ও ফলপ্রসু, সেই পদ্ধতিই তখন অবলম্বন করা ভাল। এভাবে তর্ক করাই হলো ইতিবাচক এবং গঠনমূলক। এতে করে কোন এক পক্ষের যুক্তিগ্রাহ্যতা থাকার করণে মেনে নেয়া সহজ হয়, আর তা অন্তরেরও কাছে পৌঁছে দেয়। এভাবে আসল বিষয়টা প্রকাশিত হয়ে ওঠে। ফলে বিরোধিদের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠেনা।

ইসালমি আন্দোলনের কর্মিরা সাধারণত যে সব ব্যাপারে উম্মাতের উলামাগণের মধ্য প্রচুর মত পার্থক্য আছে সে সব নিয়ে অযথা তর্কে ব্যস্ত থাকে। অথবা এমন বিষয় নিয়ে তর্ক করা। কখনো কখনো যে সব ব্যপারে ইসলামের কোন যুগে একমত হওয়া যায়নি এমন বিষয় নিয়েও তর্কে মেতে ওঠে কেউ কেউ। একদল কোন একটা মত গ্রহন করে সেটাকেই একমাত্র মাননীয় করে, অন্য মতের জন্য মনে কোন যায়গা রাখতেই চায়না। এর পর শুরু হয় পছন্দ করা মতামত কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাওয়া। এবং সেখান থেকেই শুরু হয় ঝামেলা। তার পর শুরু হয় অন্য মতের অধিকারি দের কে বাতিল প্রমানের চেষ্টা। তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় আক্রমন। এবং একে কেন্দ্র করেই চলতে থাকে বাগযুদ্ধ। অথচ বুঝতেই চায়না যে সাহাবিগণের যুগ থেকেই এই বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে।

দেখুন তো সেই শ্রেষ্ঠ সোনার যুগের মানুষদের মন কত উদার ছিল, চিত্ত কত বিশাল ছিল। এই ধরণের মতানৈক্যে তাঁদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারেনি। আর তাঁরাও কোন দিন এই ধরণের মত পার্থক্যকে বিলীন করে দিতে চাননি। তারা একেক জনের মতানৈক্য মেনে নেয়ার উদারতা দেখিয়েছেন। এক জন আরেক জনের পিছে সালাত আদায় করেছেন। আর আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে আল্লাহর নিয়ামতের ধারক হয়ে ভাই ভাই রূপে জীবন যাপন করে গেছেন। কিন্তু আজ হতবাক হয়ে যাই কিছু কিছু অতি ধার্মিক শায়খগণ জোর করে সবাইকে এই সব মতভেদ পূর্ণ বিষয়ে এক সুতোয় বাঁধতে চান।

আল্লাহ তো চাইলে সমস্ত মানুষকে এক মতাবলম্বী বানিয়ে দিতে পারতেন। তিনি এমন কিতাব নাযিল করতে পারতেন যেখানে সমস্ত আয়াত গুলো থাকতো মুহকাম তথা সরল অর্থ বোধক। যেখানে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন তাফসীর করার কোন সুযোগ হতো না, বা একাধিক মত প্রকাশের উপায় থাকতোনা। তিনি তো পারতেন দ্বীনের প্রতিটা দলিলকে ‘কাতঈউস সুবূত’ তথা অকাট্যভাবে প্রমানিত অথবা ‘কাতঈউদ দালালাহ’ তথা অকাট্য অর্থবোধক বানিয়ে দিতে। এতে করে কোন ইজতিহাদের প্রয়োজন পড়তোনা; ইখতিলাফের দরকার হতোনা।

আল্লাহ তা করেন নি বিধায় মানুষের জ্ঞান ও বুঝের তারতম্যের কারণে দ্বীনের ব্যপারে মতপার্থক্য এসেই গেছে। আর মত পার্থক্য গুলো এমন বিষয়ে এসেছে যা কখনো দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের সাথে ছিল না। বরং দ্বীনের সিংহভাগ মৌলিক বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। দ্বীনের সৌন্দর্য এখানেই যে যুগে যুগে এই কুরআন থেকে গভীর জ্ঞানের ধারক বাহক আলিম উলামা এই সব দলীল গুলো নিয়ে অধিকতর গবেষণার সুযোগ নেবে। বিভিন্ন মতামত থেকে অধিকতর পরিশুদ্ধ মতকে প্রাধান্য দেবে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হবেনা। তারা মনে করবে তুমি যেমন গবেষণা করে একটা মত গ্রহন করেছ, অন্যেরও অধিকার আছে তার বুঝ মত সঠিক টাকে ধারণ করা। কোন মুসলমানের উচিৎ না বিভিন্ন দলিল বা উপাত্তর উপর ভিত্তি করে নেয়া একটা সিদ্ধান্ত কে, কোন এক মহারথীর কথার জোরে বাদ দিতে হবে। কারণ আল্লাহর সামনে তাকেই তার অভিমত ও ইজতিহাদের হিসাব দিতে হবে, অন্যরা কি মত গ্রহন করলো এটা তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হবেনা।

কাজেই, ইলম ও ফিক্বহের ময়দানে মতপার্থক্য উঠিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো, শত আন্তরিকতাঋদ্ধ হলেও, আমাদের উচিৎ নয়। কারণ এই সব অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা-সাধনা বিভেদকে আরো বাড়িয়ে দেয়, এবং এর বৃত্তকে আরো ছড়িয়ে দেয়। যারা দ্বীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন একটা মাযহাব মানা যাবেনা বলে চেষ্টা করে যাচ্ছে, আমি ওদের বলতাম, ‘তোমরা তো আগেকার মাযহাব সমূহের সাথে আরেকটা মাযহাব যোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছো’।

ডঃ ইউসুফ কারাদাওয়ীকে অনেকেই চিনে থাকবেন। ইসলামি আন্দোলনের উপর তিনি মোট পনেরটি বই লিখেছেন। কয়েকটি বই অনূদিতও হয়েছে। আমি ‘আসসাহওয়াহ আলইসলামিয়্যাহঃ মিনাল মুরাহাক্বাহ ইলার রুশদ’ বই টি অনুবাদ করে যাচ্ছি। বইটির নাম আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘ইসলামি আন্দোলনঃ তারুন্য থেকে প্রাপ্তবয়স্কতার দিকে’। এখানে তিনি ইসলামি আন্দোলন গুলোকে এখনো তারুন্যের উন্মাদনার দিন গুলোতে আছে দেখাতে চেয়েছেন । এই সময়ের যে সব সমস্যা এগুলোতে আছে তাকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন একে প্রাপ্ত বয়স্কতার দিকে নিতে হলে এই রোগ গুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন। ইসলামি আন্দোলন বলতে তিনি ইখওয়ান বা জামাআতে ইসলামি কেই শুধু বুঝিয়েছেন এমন নয়, তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার সাথে যারাই কাজ করছেন তাদের আলোচনা নিয়ে এসছেন। ইখওয়ান ও জামাআতে ইসলামির ব্যাপারে তার অবস্থান সব সময় পজিটিভ হলেও রোগ নির্ণয়ে তিনি ডাক্তারের ভূমিকাই পালন করেছেন। হিযবুত্তাহরীর, সালাফি, তাবলীগ জামাআত সহ অন্যান্য সব গুলোই তার আলোচনায় শোভা পেয়েছে। তিনি এই বই তে অত্যন্ত সচেতন ভাবেই নিরপেক্ষ। কাজেই তার রোগ নির্ণয়ে কারো ব্যক্তি বিশেষে আঘাৎ নেইই। আল্লাহ আমাদের কে আরো গভীর ভাবে ইসলামের কাজ করার তাওফিক্ব দিন।

অনুবাদ; ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী

বিষয়: বিবিধ

১৮০৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321892
২২ মে ২০১৫ রাত ১১:০৩
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : ভাল কাজে হাত দিয়েছেন, ডঃ ইউসুফ কারাদাওয়ীর বই টি অনুবাদে আল্লাহ আপনার সহায় হউন। মুসলমান দের এক করার জন্য ওনি ভাল কাজ করছেন আল্লাহ তাঁহার হায়াত দারাজ করুন আপনাকেও । জাযাকাল্লাহ খায়ের

"দ্বীনের সৌন্দর্য এখানেই যে যুগে যুগে এই কুরআন থেকে গভীর জ্ঞানের ধারক বাহক আলিম উলামা এই সব দলীল গুলো নিয়ে অধিকতর গবেষণার সুযোগ নেবে। বিভিন্ন মতামত থেকে অধিকতর পরিশুদ্ধ মতকে প্রাধান্য দেবে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হবেনা। "
321897
২২ মে ২০১৫ রাত ১১:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
321900
২২ মে ২০১৫ রাত ১১:৩২
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। লেখাটি দারুণ হয়েছে বাস্তবতা উপস্থিত হয়েছে, ধন্যবাদ এমন একটি পোস্ট উপহার দেবার জন্য।
321901
২২ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৫
নীলাঞ্জনা লিখেছেন : ইসলামের দুষ্ট লোকের মিস্টি কথা?

এই আজও- সৌদি আরবে মুমিন বাহিনীর আত্মঘাতি বোমায় ৪০ মুমিন কতল।
২৩ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
263161
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : @নীলাঞ্জনা লিটুয়ারা 
অপ্রিয় সত্য কথা,খেলাঘর বাধঁতে এসেছ,আকবার ,স্বাধীনতা,জুলিয়া, 
মারিয়া 
পরীবানু 
মরুর মুসাফির 
পরীবানু ,সততার আলো 
অশ্বথমা 
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক 
পরমা ,নীলমণীলতা 
বিলকিস লায়লা 
দস্তার 
রুপবান 
মুক্তিযুদ্ধ ৭১ 
দ্রাবীড় বাঙাল 
লেয়লা ইসলাম 
বিলকিস 
বাংলা ৭১ 
ভিক্টোরিয়া 
হেলেনা 
পল্লব প্রভাতে 
খালেদ 
রুশো তামজিদ 
বারাংগনা 
মধুবালা 
সখি 
ফয়সাল১ 
মাঝি-মাল্লা, , 
লায়লার 
লায়লা০০৭ 
রাতুল দাস 
চকো চকো 
সায়েদ-রিয়াদ 
বিভ্রান্ত নাবিক 
ফাজিল 
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক 
মুক্তিযুদ্ধ ৭২ 
দ্রাবীড় বাঙাল 
পিচ্চি পোলা 
কাওসাইন হক 
চাষা 
jahed_ullah 
নীরু 
সাদা মন 
সাদা মন 
চোথাবাজ 
আমি বিপ্লবী 
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা 
এই নেরিকুত্তার এত নিক
নীলাঞ্জনা লিটুয়ারা 
অপ্রিয় সত্য কথা,খেলাঘর বাধঁতে এসেছ,আকবার ,স্বাধীনতা,জুলিয়া, 
মারিয়া 
পরীবানু 
মরুর মুসাফির 
পরীবানু ,সততার আলো 
অশ্বথমা 
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক 
পরমা ,নীলমণীলতা 
বিলকিস লায়লা 
দস্তার 
রুপবান 
মুক্তিযুদ্ধ ৭১ 
দ্রাবীড় বাঙাল 
লেয়লা ইসলাম 
বিলকিস 
বাংলা ৭১ 
ভিক্টোরিয়া 
হেলেনা 
পল্লব প্রভাতে 
খালেদ 
রুশো তামজিদ 
বারাংগনা 
মধুবালা 
সখি 
ফয়সাল১ 
মাঝি-মাল্লা, , 
লায়লার 
লায়লা০০৭ 
রাতুল দাস 
চকো চকো 
সায়েদ-রিয়াদ 
বিভ্রান্ত নাবিক 
ফাজিল 
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক 
মুক্তিযুদ্ধ ৭২ 
দ্রাবীড় বাঙাল 
পিচ্চি পোলা 
কাওসাইন হক 
চাষা 
jahed_ullah 
নীরু 
সাদা মন 
সাদা মন 
চোথাবাজ 
আমি বিপ্লবী 
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা 
এই নেরিকুত্তার এত নিক
321908
২৩ মে ২০১৫ রাত ১২:৩৮
সালাম আজাদী লিখেছেন : মরা লেখাটা জীবিত করলেন, ধন্যবাদ
321962
২৩ মে ২০১৫ সকাল ০৯:২২
গুরু মরিসকো লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File