তাওহীদ- ইসলামের পবিত্র দৃঢ় গ্রথিত মূল কিন্তু আমাদের হৃদয়ে আজো প্রবেশ করেনি

লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ২১ আগস্ট, ২০১৪, ১২:১৫:৩১ দুপুর

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম



আমরা অনেক সময় চিন্তা করে দেখি না আমাদের ধর্মে যে সৃষ্টিকর্তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটা কত সহজ এবং যুক্তিযুক্ত। আপনি যদি আজকে একজন খ্রিস্টান হতেন তাহলে আপনাকে কি বিশ্বাস করতে হতো দেখুনঃ প্রথম মানুষ আদম, খোদার নির্দেশ অমান্য করে এমন এক মহা পাপ করেছিলেন যে, তার পাপের জন্য তার পরে সমস্ত মানুষ জন্ম নিয়েছে পাপী হয়ে, এমনকি আপনিও জন্ম হয়েছেন এক বিরাট পাপ নিয়ে। হাজার বছর ধরে সেই পাপ জমতে জমতে এতো বিশাল হয়ে গিয়েছিল যে, সেই মহাপাপ থেকে মানব জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে মানুষ রূপে পৃথিবীতে এসে মানুষের হাতেই জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে! এখন যদি প্রশ্ন করেন – “আদম পাপ করেছে বলে আমাকে কেন তার পাপের বোঝা নিতে হবে? আমি কি দোষ করেছি?” অথবা “পাপ তো করা হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা কি শুধু বলতে পারতেন না, ‘হে মানব জাতি, যাও, আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিলাম’, ব্যস! কি দরকার ছিল তাঁর মানুষ হয়ে পৃথিবীতে এসে মানুষের হাতেই মার খাওয়ার?” – আপনি কোনো উত্তর পাবেন না।

চিন্তা করে দেখুন আমাদের ইসলাম ধর্ম কত সহজ, কত যৌক্তিক। আমরা সমগ্র বিশ্ব জগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছে সরাসরি প্রার্থনা করি, কোনো মাধ্যম, কোনো ধরণের তদবির ছাড়া। তাঁকে ছাড়া আমরা আর কোনো মানুষ, কোনো দৈব সৃষ্টির কাছে কোনো প্রার্থনা করি না। আমরা প্রত্যেকে জন্ম হয়েছি নিষ্পাপ হয়ে এবং আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ কাজের পরিণাম পাবো। আমাদের পরম প্রভু আমাদেরকে সন্মান দিয়েছেন যেন আমরা সরাসরি তাঁর সাথে যেকোনো সময় কথা বলতে পারি, সরাসরি তাঁর কাছেই চাইতে পারি। তিনি এতই পছন্দ করেন যে আমরা যেন সরাসরি তাঁকেই ডাকি, সে জন্য তিনি গভীর ভালবাসায় বলেছেন -

আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে (মুহম্মদ) আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে (তাদেরকে বল) – নিশ্চয়ই আমি কাছেই আছি! আমি তাদের প্রার্থনায় সারা দেই যখন সে সরাসরি আমাকেই ডাকে। তাই তাদেরকে আমার প্রতি সারা দিতে দাও এবং তাদেরকে আমার উপর বিশ্বাস রাখতে দাও, যাতে করে তারা সঠিক পথ পেতে পারে। [বাকারাহ ২:১৮৬]


তাঁর সাথে কথা বলার জন্য আমাদের কোনো অর্ধ নগ্ন মানুষের কাছে যাওয়ার দরকার পরে না, আমাদেরই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ অনুসারে অশ্লীল কোনো মূর্তির সামনে আগুন ঘুরিয়ে তাঁকে ডায়াল করতে হয় না, কোনো পাদ্রীর কাছে গিয়ে তদবির করতে হয় না। আমরা যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন করার সন্মান পেয়েছি। আমাদের সুখ দুঃখের কথা সরাসরি তাঁকে বলার সুযোগ পেয়েছি। শুধু তাই না, তিনি নিজেই বলেছেন, আমাদের যত অভিযোগ, যত দুঃখ, সব যেন আমরা শুধু তাকেই বলি, মানুষের কাছে যেন অভিযোগ না করি, কারণ তিনি আমাদের সকল আকুল অভিযোগ শোনেন এবং সেগুলো তিনি তাঁর মহাপরিকল্পনা অনুসারে সমাধান করবেন, সেই প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন! এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে? এর চেয়ে সহজ, যৌক্তিক ধর্ম আর কি হতে পারে?

ইসলামে সৃষ্টিকর্তার মূল ধারণাকে মাত্র চারটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে সূরা ইখলাসেঃ

বল, তিনিই আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়! অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই!


সূরা ইখলাসের প্রতিটি শব্দের গভীরতা, যৌক্তিকতা এবং প্রভাব নিয়ে এক একটি রিসার্চ পেপার লেখা যাবে। এখানে সংক্ষেপে কিছু চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলঃ

১) قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ কু’ল হুয়া ল্লা-হু আহাদ

প্রথমে কু’ল শব্দটি নিয়ে বলি। কু’ল (গলার ভীতর থেকে কু বলা) অর্থ “বল।” সাবধান থাকবেন, শুধু ‘কুল’ অর্থ কিন্তু ‘খাও।’ নামাযে সূরা ইখলাস পড়ার সময় ভুলে বলবেন না, “খাও, তিনি আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়!”

এখন কেন আল্লাহ্‌ ﷻ এখানে বললেন, “বল”? কেন তিনি শুধু বললেন না, “তিনি আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়?” আপনাকে যদি জিগ্যেস করা হয়, “আপনি কে?”, আপনি কি তার উত্তরে বলবেন, “বল, আমি কুদ্দুস, মানুষ।” নিশ্চয়ই না। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন “বল” দিয়ে শুরু হল?

একদিন কয়েকজন খ্রিস্টান এসে নবী মুহম্মাদ ﷺ এর সাথে ইসলাম নিয়ে কথা বলছিল, ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছিল। নবী ﷺ তার স্বভাবগত হাসি মুখে সুন্দরভাবে তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা জিগ্যেস করলো, “তোমাদের সৃষ্টিকর্তা কে? সে কি দিয়ে তৈরি?” এই পর্যায়ে হঠাৎ করে নবীর ﷺ চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। স্বয়ং আল্লাহ্‌ ﷻ তার শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার মুখ দিয়ে বলালেন – “বল, তিনিই আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়! অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই!” তারপর নবী ﷺ আবার আগের মতো হাস্যজ্বল, স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। এই অভাবনীয় ঘটনায় লোকগুলো হতবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারলো এই মুহূর্তে আসলে কি ঘটে গেল। তারা বুঝতে পারলো এইমাত্র তাদেরকে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্বয়ং আল্লাহ! [সুত্রঃ আহমেদ দিদাতের লেকচার]

এবার আসি দ্বিতীয় শব্দ “হুয়া” – “তিনি।” কেন শুধুই, “বল, আল্লাহ্‌ ﷻ অদ্বিতীয়”, হলো না, কেন এখানে “তিনি” যোগ করা হল? “তিনি” যোগ করার উদ্দেশ্য হল যখন নবী(সা)কে খ্রিস্টান, ইহুদী, মুশরিকরা সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে জিগ্যেস করেছিল, আল্লাহ্‌ ﷻ তাদেরকে উত্তরে বলেছেন যে তিনি কোনো নতুন সৃষ্টিকর্তা নন। ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয় যে এখানে কোনো এক নতুন সৃষ্টিকর্তার ধারণা দেওয়া হয়েছে। বাকি সব ধর্মগুলোর বেশিরভাগই দেখবেন নতুন নতুন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আসে। কিছু ধর্ম বিকট আকৃতির হাজার খানেক হাত-পা সহ এক মানুষরূপী প্রাণীকে সৃষ্টিকর্তা বলে দাবি করে। কিছু ধর্ম কোনো এক দাঁড়ি ওলা ভদ্রলোককে সৃষ্টিকর্তা বলে দাবি করে। আবার কিছু ধর্ম দাবি করে সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ। কিন্তু সমগ্র সৃষ্টি জগতের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা যে এক, তিনিই যে আল্লাহ্‌, সেটাই এখানে “তিনি” ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলাম কোনো নতুন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আসেনি। ইহুদী, খ্রিস্টান, আরব মুশরিকরা যেই সর্বোচ্চ “প্রভু”কে ইতিমধ্যেই “এল্লাহি”, “এলোহিম”, “আল্লাহ্‌” ইত্যাদি বলে জানতো, ইসলাম যে তাকেই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে দাবি করে, সেটাই এখানে “তিনি” এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ﷻ তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

আপনি যদি আফ্রিকার আদি বাসি জুলু সম্প্রদায়ের কাউকে জিগ্যেস করেন তাদের সৃষ্টিকর্তা ‘ম্‌ভেলিঙ্কাঙ্গি’ কে , সে বলবেঃ

হাউ উম্নিমযানি! উয়েনা, উময়া, অইংগসঅয়েলে। আকাযালি ইয়েনা, ফুতহি আকাযালঅয়াগ্না; ফুতহি, আকুখো লুতমো অলু ফানা নায়ে!


এর বাংলা অনুবাদ হচ্ছেঃ

তিনি পবিত্র এবং পরমাত্মা। তিনি কাউকে জন্ম দেন না, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার মতো আর কিছুই নেই।


সুরা ইখলাসের সাথে খুব একটা পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন?

এরপর এই আয়াতে “আল্লাহ্‌” শব্দটি দিয়ে আল্লাহ্‌ ﷻ সবাইকে ঘোষণা দিলেন যে তাঁর নাম হচ্ছে “আল্লাহ্‌।” আল্লাহ্‌ ﷻ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে। অনেকে মনে করেন এটি আসলে কোনো নাম নয়। বরং আল-ইলাহ থেকে ‘আল্লাহ্‌’ এসেছে। কিন্তু তার বিপক্ষে যুক্তি হচ্ছে তাহলে “ইয়া আল্লাহ্‌” বললে সেটা আরবি ব্যাকরণ অনুসারে ভুল হবে, কারণ আমরা কখনও “ইয়া আর রাহমান”, “ইয়া আল ওয়ালাদ” বলতে পারি না। সেটা ব্যাকরণ গত দিক থেকে ভুল। বলতে হবে “ইয়া রাহমান”, “ইয়া ওয়ালাদ।” সুতরাং “ইয়া আল্লাহ্‌” কখনও শুদ্ধ হবে না যদি সেটা আল-ইলাহ থেকে আসতো। সুতরাং আল্লাহ্‌ ﷻ শব্দটি আল-ইলাহ থেকে আসেনি, এটি একটি বিশেষ নাম। এছাড়াও আরেকটি প্রমাণ হল, সাধারণত আরবি ব্যাকরণ অনুসারে আলিফ এর পড়ে লাম আসলে সেটার হালকা উচ্চারন হয়। সুতরাং প্রচলিত আরবি অনুসারে আল্লাহ্‌ ﷻ শব্দটির উচ্চারণ হবে হালকা। কিন্তু আল্লাহ্‌ ﷻ শব্দটিতে “লা” উচ্চারণ করা হয় ভারী স্বরে – “আলল-হ”, যা প্রচলিত আরবিতে কখনও করা হয় না। আল্লা-হ শব্দটি উচ্চারণ করার সময় আমরা প্রচলিত আরবির সব নিয়ম ভাঙছি। সুতরাং এটি আরেকটি প্রমাণ যে “আল্লাহ্‌” শব্দটি কোনো প্রচলিত আরবি শব্দ নয়, এটি একটি বিশেষ শব্দ, একটি নাম, যা অন্য কোনো শব্দ থেকে আসেনি। এমন কি আরব দেশের খ্রিস্টান এবং ইহুদীরাও, যাদের ভাষা আরবি, তারাও তাদের সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তাকে “আল্লাহ্‌” বলেই ডাকে।

এই আয়াতের শেষ শব্দটি হচ্ছে ‘আহাদ’ যা এক অসাধারণ শব্দ। প্রচলিত বাংলা অনুবাদ হল – “এক” বা “একক।” কিন্তু সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ “এক” বলতে আমরা অনেক সময় বুঝি “অনেক কিছুর সমষ্টি।” যেমন এক দেশ, এক জাতি। কিন্তু আল্লাহ্‌ ﷻ সৃষ্টি জগত এবং সৃষ্টি জগতের বাইরে যা কিছু আছে সবকিছুর সমষ্টি নন। আবার সংখ্যাগত দিক থেকে একের সাথে অন্য সংখ্যা যোগ করা যায়, যেমন ১+১=২, এক-কে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন ১ = ০.৫ + ০.৫; সুতরাং সৃষ্টিকর্তার জন্য “এক” শব্দটি ব্যবহার করা সঠিক হবে না, কারণ তিনি মানুষের ধারণা অনুসারে মোটেও এক নন। মানুষ যতই কল্পনা করুক না কেন, তারা কখনই এক বলতে এমন কিছু কল্পনা করতে পারবে না, যা পরম অসীম “এক”, যাকে কোনো ছোট ভাগে ভাগ করা যায় না, যার কোনো তুলনা হয় না, যা ‘অদ্বিতীয়।’

এছাড়াও ভাষাগত দিক থেকে “এক” সংখ্যাটির আরবি হচ্ছে “ওয়াহিদ”, আহাদ নয়। কিন্তু আল্লাহ্‌ ﷻ ওয়াহিদ নন, তিনি আহাদ। তাকে কোনো সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়াও আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হল, কু’রআনের আগে কোনদিন কোনো আরব ‘আহাদ’ শব্দটিকে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করেনি। এটি মুলত ব্যবহার হতো না-বাচক বাক্য তৈরি করতে। কু’রআন হচ্ছে প্রথম কোনো আরব সাহিত্য, যেখানে আহাদ শব্দটিকে একটি বিশেষণ হিসেবে প্রথম বারের মতো হা-বাচক বাক্যে ব্যবহার করা হয়েছে। একারণেই আল্লাহ্‌ ﷻ অতুলনীয়, অদ্বিতীয়। তিনি শুধু নিজেই অতুলনীয় নন, তিনি সূরা ইখলাসে যেভাবে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন, সেটাও আরবি ব্যকরণ অনুসারে অতুলনীয়।

সবশেষে দেখুন আয়াতটির আরবি শেষ হয়েছে একটি নুন দিয়ে, “আহাদুন।” এটি করা হয় যখন বাক্যে কোনো জোর দেওয়া হয়। বাংলায় আমরা যেরকম বিস্ময় চিহ্ন ব্যবহার করি, সেরকম আরবিতে নুন দিয়ে বাক্য শেষ হয়। একারণে আয়াতটি শেষ হবে “!” দিয়ে -”বল, তিনিই আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়!” আমরা বাংলায় যদি ঠিকভাবে বলতে যেতাম, তাহলে আমাদেরকে গলা উঁচু করে, টেবিলে চাপড় মেরে বলতে হতো “আহাদ!!!”



২) اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লা-হু স্‌সামাদ


আস-সামাদ আরেকটি অদ্ভুত শব্দ যেটা পুরো কু’রআনে মাত্র একবারই এসেছে। এর অর্থগুলো হলঃ

১ - বিপদে পড়লে আপনি যার কাছে যান।

২ - যার কাউকে দরকার নেই, যিনি অমুখাপেক্ষী।

৩ - যার উর্ধে কেউ যেতে পারে না।

৪ - যার কোনো ত্রুটি নেই।

৫ - যাকে আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করেছেন।


এই সামাদ শব্দটির সবগুলো অর্থ ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা অনেক ধরণের শির্‌ক থেকে দূরে থাকতে পারি। প্রথমত, সামাদ আমাদেরকে বলে যে বিপদে পড়লে আমরা যেন কোনো মূর্তি, দেবতা, পীর, শেখের কাছে না যাই, কারণ তারা সামাদ নয়। বরং আল্লাহ হচ্ছেন আস-সামাদ। দ্বিতীয়ত, আপনাকে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বা চাকরি-ব্যবসা আরও ভালো করার জন্য আপনার গায়ে কোনো তাবিজ, ব্রেসলেট, পৈতা লাগানোর দরকার নেই। আল্লাহ যদি চান, তিনি আপনাকে এগুলো সবই দিতে পারেন ওই সব জড় বস্তুর সাহায্য ছাড়াই। আপনার ভাগ্য তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে দিতে ওইসব জড় বস্তু আল্লাহ্‌কে ﷻ বাধ্যও করতে পারে না, এবং তারা কোনো ভাবে আল্লাহ্‌কে ﷻ সাহায্যও করতে পারে না। আল্লাহ্‌র ﷻ কোনো সৃষ্টির কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার কোনোই দরকার নেই। তৃতীয়ত, আল্লাহর উর্ধে কেউ নেই। কখনও বলবেন না, “ডাক্তার সাহেব! আমাকে বাঁচান!” কারণ ডাক্তার সাহেব আল্লাহ্‌র ﷻ উপরে নন, তিনি আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না। শুধুই আল্লাহ ﷻ পারবেন আপনাকে বাঁচাতে।



৩) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ


এর অর্থ “তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি।” খ্রিস্টানদের জন্য এই আয়াতটি বিশেষ ভাবে দরকার, কারণ তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা মানুষ রূপে জন্ম নিয়েছিলেন, যাকে তারা যীশু ডাকে, যাকে তিনি পরে তাঁর কাছে তুলে নিয়েছেন। যীশু এখন সৃষ্টিকর্তার ডান পাশে বসে আছেন, অপেক্ষা করছেন মানব জাতির বিচার করার জন্য। এগুলো সবই যে ভুল, সেটা এই আয়াতটি প্রমাণ করে।

এছাড়াও অন্য ধর্মের অনুসারীদের মাঝে সৃষ্টিকর্তার জন্ম নেওয়ার নানা ধরণের রুপকথার গল্প শোনা যায়। সেগুলোও যে সবই ভুল, তা আল্লাহ্‌ ﷻ এখানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। প্রথম দিকের মুসলমানরা যারা হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদী ইত্যাদি ধর্ম থেকে এসেছিল, তারা তাদের মাথায় তাদের আগের ধর্মের অনেক ধারণা বয়ে নিয়ে এসেছিল। যদিও তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তারপরেও বহু বছরের ভুল ধারণা, ভুল প্রশ্ন তাদের মাথায় তখনও ঘুরাঘুরি করতো। সূরা ইখলাস হচ্ছে তাদের কলুষিত মন এবং মগজকে পরিস্কার করার জন্য এক চমৎকার নিরাময়।

কিন্তু তারপরেও দেখবেন অনেকেই প্রশ্ন করে, “যদি সবকিছুর সৃষ্টি হয়, তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করলো?” উত্তর, লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ – কেউ না। কিন্তু কেন কেউ না? যদি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা থাকে, সবকিছুরই যদি একজন স্রস্টা থাকে, তাহলে তো সৃষ্টিকর্তাকেও কারও না কারও সৃষ্টি করতে হবে, তাই না?

এটা একটি ফিলসফিকাল প্যাঁচ। এর জন্য আমার এই আর্টিকেলটি দেখুনঃ blog.omaralzabir.com/2012/09/16/can-allah-do-everything/

৪) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ওয়া লাম ইয়াকু ল-লাহু কুফুওয়ান আহাদ!



কুফু শব্দটির অর্থ সমকক্ষ, যার সমান পদ রয়েছে। যেমন বিয়েতে স্বামী স্ত্রী হচ্ছে একজন আরেকজনের কুফু, কারণ তারা সমান। যুদ্ধ ক্ষেত্রে একই পদের যারা থাকে, তারা একে অন্যের কুফু। আল্লাহ্‌ ﷻ এখানে আমাদেরকে বলছেন যে তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। এই আয়াতটি ওই সব মূর্খদের জন্য উত্তর যারা বলে – “আচ্ছা, আল্লাহকে কেউ জন্ম দেয় নি ঠিক আছে, মানলাম তিনি এখনও কাউকে জন্ম দেন নি। কিন্তু তার মানে তো এই না যে ভবিষ্যতেও কেউ তাঁর সমান হতে পারবে না।” এর একটা চমৎকার উত্তর আছে আরেকটি সুরায়ঃ



… কিভাবে তাঁর সন্তান হতে পারে যেখানে তাঁর কোনো সঙ্গীই নেই, যেখানে তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছুর ব্যপারে সব জানেন? [সূরা আনাম ৬ঃ১০১]


উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল কুফু শব্দটি আস-সামাদের মতো পুরো কু’রআনে মাত্র একবারই এসেছে। সূরা ইখলাসে এরকম দুটি শব্দ আমরা পাই যা পুরো কু’রআনে মাত্র একবার করে এসেছে, শুধুমাত্র সূরা ইখলাসে। এই দুটি শব্দ আল্লাহ্‌র ﷻ সম্পর্কে আমাদেরকে এমন দুটি ধারণা দেয় যার কোনো তুলনা হয় না। কু’রআনে আর কোনো কিছুর বেলায় এই শব্দ দুটো ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহ্‌ ﷻ এই শব্দ দুটিকে তাঁকে ছাড়া আর কারও বেলায় ব্যবহার করার যোগ্য মনে করেননি।

আরবিতে এই শেষ আয়াতটির বাক্য গঠন অদ্ভুত। প্রচলিত আরবি ব্যাকরণ অনুসারে বাক্যটি হওয়ার কথা – “ওয়া লাম ইয়া কুন আহাদুন কুফুওয়ান লাহু।” কিন্তু আল্লাহ্‌ ﷻ শেষের তিনটি শব্দকে ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি লাহু অর্থাৎ “তাঁর সাথে” কে আগে নিয়ে এসেছেন। আরবিতে এটা করা হয় যখন কোনো কিছুকে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়। যেমন “হামদুন লাহু” অর্থ “প্রশংসা তাঁর”, কিন্তু “লাহু ল-হামদ” অর্থ “প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই।” একইভাবে “লাহু কুফুওয়ান আহাদ” ব্যবহার করে এই আয়াতটিতে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে - “শুধুমাত্র তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই।” এখানে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌ ﷻ ছাড়া আর সবকিছুর সমকক্ষ থাকতে পারে, কিন্তু একমাত্র তাঁর বেলায়, শুধুই তাঁর বেলায় কোনো সমকক্ষ নেই এবং থাকতে পারে না! (আহাদুন!!!)

মূল লিংক - http://quranerkotha.com/ikhlas/

সাইট নিয়ে রিভিউ দেখতে পারেন -

কোরআনের কথাঃ আল-কোরআনের উপর বাংলা ভাষায় অসাধারণ আলোচনা; আধুনিক, প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক, যুক্তিখন্ডন, যুগোপযোগী, গভীর ও পূর্ণ কোরআনেই মুজিজার অসংখ্য দৃষ্টান্ত - http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/7762/alsabanow13/48613

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

256669
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
কাহাফ লিখেছেন : যৌক্তিক বিশ্লেষণ মুলক আলোচনার জন্যে জাযাকাল্লাহ ভাই......
256681
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
Rose Rose Rose Rose
জাজাকাল্লাহু খাইরান।

256697
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:১১
বুড়া মিয়া লিখেছেন : লেখাটা খুবই সুন্দর, শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File