সালাতেই প্রশান্তি, সালাতেই তৃপ্তি, সালাতই আমার নিস্তব্ধ আত্মার প্রশমন- কিভাবে পাবো?

লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:০৬:০৯ সন্ধ্যা

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম



পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষ বহু ধরনের বহু যাত্রাই করেছে। আকাশে, মহাশুন্যে, চাঁদে, পানির নিচে, মাটির নিচে, কিছুই বাদ যায় নাই । কিন্তু এমন একটি ভ্রমন ছিল যা কোন মানুষ কোনোদিনও করতে পারে নাই।

একজন বাদে

এমন একটি বাহনে, যাতে কোন মানুষ কখনো চড়েনি। এমন একটি পথে, যে পথে কোন মানবসত্তা কোনদিন যেতে পারেনি। এমন একটি যায়গায় যেখানে কারোর পদচিহ্ন কোনোদিন পড়েনি। এটা ছিল একজন মানুষের সর্বোচ্চ জান্নাতে ভ্রমন। তিনি ছিলেন আল্লাহর শেষ নবী, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) ।

এটা ছিল Israa Wal Miraaj ( The Magnificent Journey)।



এখানে আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে নিয়ে গিয়েছিলেন সপ্তম জান্নাতে, যেখানে এমনকি ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আ) পর্যন্ত যেতে পারতেন না। মহানবীর পৃথিবীতে যে মিশন ছিল, সেখানে প্রতিটি নির্দেশ, প্রতিটি ওহী আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ে আসতেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ)| কিন্তু এমন একটা প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ আদেশ ছিল যা আল্লাহ ফেরেশতাকে দিয়ে পাঠান নাই। বরং তিনি নবী (স) কে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এই আদেশ ছিল নামায/ salah/ prayer. যখন মহানবী(স) কে প্রথম আল্লাহ নামাজের কথা বললেন, তিনি দিনে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দিলেন। মহানবী (স) তাঁর উম্মাতের কষ্টের কথা ভেবে বার বার তা কমাতে বললেন। অবশেষে আল্লাহ মাত্র ৫ বার নামাজ দিলেন, কিন্তু, পুরস্কার থাকবে ৫০ বারের-ই।

WITH THE REWARD OF FIFTY. CAN WE IMAGINE ?? SUBHANALLAH !

এই ৫০ থেকে ৫ এ কমিয়ে আনাকে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে এটি আল্লাহর একটি উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত ছিল মানুষকে নামাজের আসল গুরুত্ত বোঝানোর জন্য।

কল্পনা করুন দিনে ৫০ বার নামাজ পড়ার কথা। ২৪ ঘন্টায় ৫০ বার, মানে প্রতি ঘন্টায় ২ বারের ও বেশি। আমরা কি আর কোনকিছু করতে সক্ষম হতাম এই অবস্থায় ? না ? Exactly and this is the point- আর কি কোন মাধ্যম থাকতে পারে আমাদের জীবনের সত্যিকার উদ্দেশ্যকে সফল করার ? এভাবে যদি বলি, নামায আসলে আমাদের সত্যিকার জীবন, আর অন্য যা কিছু দিয়ে আমরা দিন ও রাতের বাকি সময়গুলো পূর্ন করি…those are only motions , nothing else.


কিন্তু তবুও, তবুও, তবুও, আমরা এমন ভাবে জীবনযাপন করি যেন ব্যাপারটা সম্পূর্ন বিপরীত। নামায এমন একটা ব্যাপার যেটা আমরা আমাদের জীবনে “কোনমতে ঢুকিয়ে ” দেই , যদি আমরা সময় “ম্যানেজ” করতে পারি। আমাদের মূল্যবান সময় ও জীবন নামাজকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না, আমাদের নামাজ আমাদের ব্যস্ত জীবনের আশেপাশে মাঝে মাঝে আসে যায়, বা যায় না।

Our “lives” don’t revolve around Salah, Salah revolves around our “busy lives” .

আমরা যখন ক্লাসে থাকি, আযান দেয়। আমরা বসেই থাকি, ভাবি, বাসায় যেয়ে পড়ব। সবাই হয়ত ভাবিও না। যখন আমরা বসুন্ধরা সিটিতে যাই সিনেপ্লেক্স এ হালের Latest 3D Movie দেখতে, সে এক অদ্ভুত শব্দ, আলো ও বিনোদনের জগত। সেখানে আযান ঢুকতে পারে না Dolby Digital Surround system এর জন্য। ঢুকে না আমাদের মনে। Animated Minions দের নিয়ে আমরা গভীর সুখের সময় পার করি, চেক ইন দেই ” লাইফ ইস সো গুড- জীবন কত মধুর ” . নামায ? ধুর ভাই, ৩০০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটেছি না ! বাসায় যেয়ে পড়ে নিব।

আমরা যখন বিশ্বকাপের ম্যাচের টিকেট কাটতে যাই, আমরা আগের রাত থেকে লাইন দেই। যদি লাইন থেকে একটুও সরে যাই কোনভাবে, আমাদের জীবন যেনো এলোমেলো হয়ে যায় মুহুর্তেই। ভোরে আযান হয় – হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ- এসো নামাজের দিকে, এসো কল্যানের দিকে। মাথা খারাপ ভাই ?? এই লাইন ছেড়ে বের হলে আমি শেষ। কি যে কন !

একি ভাবে চ্যাম্পিয়নস লীগের এল ক্লাসিকো দেখা, কোচিং এ প্রচণ্ড ইম্পরট্যান্ট ক্লাস করা, প্রিয়জনের সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, ভোরে উঠে ক্লাবের প্র্যাক্টিসে যাওয়া, সবকিছুই আমাদের কাছে জরুরী। একটা জিনিস বাদে। PRAYER।





কেউ কেউ আমরা নামাজ পড়ি, মাঝে মাঝে। যেটা ভালো লাগে বা যখন মন চায়। ৫টা থেকে ২-১ টা বেছে নেই। কেউ কেউ আমরা শুধু যে নামাজ মিস করি তাই না, আমরা এটাকে COMPLETELY ABANDONED FROM OUR LIFE করে ফেলেছি। এটার কোন অস্তিত্ব নাই জীবনে। এটা যে পড়তে হয় এটা আমি ফিল ও করিনা এখন আর। আমার অনেক অনেক কাজ, আমি অনেক ব্যস্ত। আমার বয়স বিশ বাইশ পচিশ, আমার ফ্রেন্ডস, UNI, LIFE, HANGOUT,

এখানে খুব মনোযোগ দিবেন। আমরা যেটা বুঝিনা নামায পরিত্যাগ করার ব্যাপারে- কোন আলেম কখনো বলেন নাই যে ব্যাভিচার ( Fornication/Zina) করলে কেউ মুসলমান থাকেনা। কেউ বলেন নাই যে চুরি, মদ্যপান, মাদক বা এমনকি হত্যার মতন অপরাধ করলেও কেউ আর মুসলমান থাকবে না।

কিন্তু, নামাজের ব্যাপারে এমন কথা সরাসরি বলা হয়েছে, যে নামাজ ত্যাগ করল, সে ইসলাম ত্যাগ করল।



“The covenant between us and them is prayer, so if anyone abandons it, he has become a disbeliever.” [Ahmad]

” What is Between a person, and Islam and Imaan and Kuf’r, is the leaving of Salah ( Sahih Muslim)”

হযরত মুহাম্মদ (স) পৃথিবীর সবচে দয়ালু মানুষ। চরম অত্যাচারের মুখেও তিনি কোনদিন কারোর জন্য অভিসম্পাত করেননি। এই মানুষটি যখন এহেন একটি নির্মম সত্য বলেন, ব্যাপারটার গুরুত্ত কি আমরা কল্পনা করতে পারি।

শয়তান কি করেছিলো মনে আছে ? সে কিন্তু আল্লাহ কে অস্বীকার করে নাই কোনোদিন-ও, করবেও না। কারন সে ছিল জীনদের মধ্যে অত্যন্ত ধার্মিক এক জীন, সে ছিল আল্লাহর অত্যন্ত অনুগত একজন, আল্লাহর অত্যন্ত কাছের একজন। কিন্তু সে খালি একটি সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল আদম(আ) কে । একটি সিজদা, বেশি নয়। আমরা কতগুলো সিজদাকে অগ্রাহ্য করি প্রতিদিন, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, বলতে পারেন ??? IMAGINE ALL THE SAJDAHS WE REFUSE TO MAKE .

এইরকম একটা জিনিস জানার পর-ও কিন্তু আমরা নামাজ কে হাল্কাভাবেই নেই, আমরা এর প্রতি উদাসীন-ই থাকি। শেষ বিচারের দিনে নামাজ হবে প্রথম জিনিস যেটা দিয়ে হিসাব শুরু হবে, কিন্তু তারপরো কেন জানি এটা আমাদের To Do List এ একেবারে শেষের দিকে থাকে। যেটার গুরুত্ত সবচে বেশি, সেটার চিন্তা আমাদের সবচে কম। কত অদ্ভুত না ব্যাপারটা? অদ্ভুত এবং দুঃখজনক এবং ভীতিকর।

The Prophet said: “The first thing which will be judged among a man’s deeds on the Day of Resurrection is the Prayer. If this is in good order then he will succeed and prosper but if it is defective then he will fail and will be a loser.” [Tirmidhi]

সেদিন, যারা আল্লাহর দয়ায় জান্নাত লাভ করবে, তারা জাহান্নামীদের জিজ্ঞেস করবে ” কেন তোমরা আজ এখানে এসেছ ? কি তোমাদেরকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে” তারা বলবে ” আমরা নামাজ পড়তাম না (Qur’an 74:42-43)

ভাই ও বোনেরা, সেদিন, আমরা কতজন থাকব যারা বলতে বাধ্য হব ” আমরা নামাজ পড়তাম না, বা পড়লেও সময় মতন পড়তাম না, বা ইচ্ছা করে মিস করতাম, বা এটাকে কোন গুরুত্ত-ই দিতাম না। “

কেনো আমরা নামাজের সময় বের করতে পারি না ? যদি আমরা ক্লাসে বা অফিসে বা ফজরের সময় ঘুমেও থাকি এবং তখন যদি আমাদের টয়লেট লাগে, আমরা কি তার জন্য সময় বের করি ? এটা কি জিজ্ঞেশ করা লাগে ? সময় না বের করাটাই তো অত্যন্ত অস্বাভাবিক, তাইনা ? আমরা যদি খুব গুরুত্তপুর্ন একটা পরীক্ষাতেও থাকি আর আমাদের খুব টয়লেট পায়, আমরা যাই। কারন আমাদের যেতেই হয়। না যেয়ে আমরা পারি না।



আমরা অনেকেই বলি যে আমরা অফিস বা স্কুল বা কলেজ বা বাইরে থাকার কারনে নামাজ পড়তে পারি না, কিন্তু আমরা কখনোই বলি না যে , অফিসে থাকার কারনে আমি টয়লেট এ যেতে পারি নাই। ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে এই অজুহাতে কি আমরা টয়লেট আটকে রাখি এবং বিছানা ভিজিয়ে দেই। না । সত্য কথাটা হচ্ছে, আমরা বাথরুমে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা, ক্লাস, বা কাজ মিস করব, কিন্তু আমরা নামাজ পড়ার জন্য এইসব মিস করব না।

এটা শুনতে খুব-ই হাস্যকর ও আশ্চর্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই হয় আসলে। একটা জিনিস কি জানেন,
আমাদের সত্তা দুইভাগে বিভক্ত। একটি আমাদের শরীর, আরেকটি আমাদের আত্মা। আমরা আমাদের শরীরকে খাওয়াই, কারন নয়ত সেটি মারা যাবে। আমরা আমাদের শরীরের চাহিদাগুলোকে পূরন করি, নয়ত আমাদের নানারকম অসুবিধা হবে। কিন্তু আমরা দিনের পর দিন আমাদের আত্মাকে না খাইয়ে ( নামায না পড়ে) অনশন করিয়ে রাখি, এবং একদিন এটাও ভুলে যাই যে আত্মাটা মরে গেছে।


দুঃখ এখানেই যে, যে শরীরটা কে নিয়ে এত মাতামাতি করি আমরা, সেটাকে এই পৃথিবীতেই ফেলে রেখে যেতে হবে, আর যে আত্মাটাকে যত্ন নিলাম না, সেই মৃত আত্মা নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে অসীমের পথে, সৃষ্টিকর্তার কাছে, আল্লাহর কাছে।



এটি আমার লেখা একটি অনুবাদ।

মূল লেখা- Yasmin Mogahed. Book “Reclaim Your Heart” , Chapter 4 , Topic One.

মূল লেখা থেকে থিম- নিয়ে আমি আমার মতন করে লিখেছি এবং কয়েক বছর ধরে চারপাশ দেখে আমার নিজের যা মনে হয়েছে তা তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা করেছি। বইটি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিন এবং আমাদের মূল্যবান জীবনগুলোর উদ্দেশ্য দেখিয়ে দিন।



এটি একটি লেখার প্রথম পর্ব। তিনটি পর্বই পড়ুন, আপনার ভেতরে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে অনেক বড় ইন শাআ আল্লাহ।

বাকী দুটি

সালাত(২য় পর্ব) : ১০ মিনিটে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়লোক হওয়ার সহজতম উপায়

http://tinyurl.com/q9fes9n

সালাত(৩য় পর্ব) : উমার (রা) এর জীবনের শেষ দিন

http://tinyurl.com/pgncobr

এই সালাতে এত প্রশান্তি এইতো মাত্র কিছু দিন আগে বুঝতে শুরু করি।

আমরা কিছুটা চেষ্টা, কিছু প্র্যাক্টিস করে এত গভীর সুখ অনুভব করতে পারব যা হয়তো ভাবতেও পারিনি কখনই।

সাথে এই লেকচারগুলো ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে নিন, দেখুন। সালাতের সেই রাসূল সা এর মত, সাহাবাদের মত তৃপ্তির আত্মার প্রশমন আসবে ইন শা আল্লাহ।

Literary Gems of Prayer - By Shaykh Abudn Nasir Jangda

Practical Steps to Develop Khushoo in Salah Meaningful Prayer By Shaykh Abudn Nasir Jangda

Meaningful Prayer Linguistic Beauty By Shaykh Abudn Nasir Jangda

Sweetness in Prayer (Salah) - Moutasem Al-Hameedi


বিষয়: বিবিধ

১২১৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255266
১৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫১
বুড়া মিয়া লিখেছেন : তিনটা পর্বই সুন্দর হয়েছে, বিশেষ করে দ্বিতীয়টা! সুন্দর অনুধাবন, সুন্দর আবেদন!
255267
১৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : একজন চাকুরে যেভাবে

*তার অফিসে যাবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে
* সঠিক সময়ে পৌছার জন্য যেরকম চেষ্টা চালায় , *অফিসের কাজগুলো সে যেভাবে করে যার ফলে সে রিওয়ার্ড আশা করে
*যে ভাবে সে তার উর্ধতন কর্মকর্তা ও বসকে মান্য ও সমীহ করে চলে

০ টাইম মত না গেলে বা কাজে ফাঁকি দিলে বা বসের সাথে ঝামেলা করলে যে চাকরি খোয়ানো বা শাস্তির ভয় করে


সেরকম ভয় কি সে আল্লাহকে করে শরিয়তের হুকুম আহকাম পালনের ব্যাপারে যেগুলো আল্লাহর নির্দেশ তার প্রতি ?

আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ দেখান - আমিন ।
255281
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:২৫
বাজলবী লিখেছেন : গুরুত্তপূর্ণ লেখা। কাফের অার মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য হল নামায। অাল্লাহ ভীতি থাকলে নামায সময় মত পড়া যায়। পড়ে ভালো লাগলো। জাযাকাল্লাহ খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File