মাহে রমজানের এক বিশেষ আমল তারাবীহ সালাত

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ২৯ জুন, ২০১৪, ০৭:৪৯:২৬ সকাল

মাহে রমজানের এক বিশেষ আমল তারাবীহ সালাত। ছোট-বড় সবাই চেষ্টা করে জামায়াতের সাথে তারাবীহ সালাত আদায় করতে। কোন মাসজিদে তারাবীহ পড়া হবে সে নিয়ে চলে বন্ধুদের সাথে পারস্পরিক আলোচনা। অধিকাংশ সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান্য টা এমন হয়, যে মাসজিদে সালাত তাড়াতাড়ি পড়া হয়, এসি ওয়ালা মসজিদ, হাফেজদের কন্ঠ সুন্দর ইত্যাদি। কেউ কেউ খুঁজে বেড়ায় কোন মাসজিদে আট রাকায়াত তারাবীহ আদায় করা হয়। কেউবা খোঁজে ৩০ তম পারার ছোট সূরা গুলো দিয়ে কোন মাসজিদে সালাত আদায় করা হয় এমন মাসজিদ। এতে করে প্রকৃত অর্থে তারাবীর উদ্দেশ্য হাসিল হয়না। কষ্ট করে মাসজিদে গেল, সময়ও অতিবাহীত হলো কিন্তু কাজের কিছুই হলো না। তাই গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই জরুরী। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স.বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ রমযানের রোযা ফরজ করেছেন। আমি কিয়াম (তারাবীহ)-কে সুন্নত করেছি। ফলে যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখবে এবং ঈমান ও ইহতেসাবের (সওয়াবের আশায়) সাথে দাঁড়াবে (তারাবীহ পড়বে ) সে সদ্য প্রসূত শিশুর মত গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যাবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। রাসূল স. আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী (সগীরা) গুনাহগুলো মাফ করে দিবেন। (বুখারী ও মুসলিম)।

তারাবীহ শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। প্রতি চার রাকায়াত শেষে একটু বিশ্রাম গুহণ করতে পারে সে জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ। এটি দীর্ঘায়িত একটি সালাত। মহানবী স. তারাবীর সালাত আদায়ে রাতের দুই-তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহীত করতেন। তারাবীহ হলো প্রভূর সামনে দাঁড়ানোর একটি মৌসুম। বাংলাদেশে রমজান ব্যতীত অন্য কোন সময় সালাতে কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগ নেই বিধায় তারাবীহ সালাতে মুসুল্লীদের আগ্রহ বেশী দেখা যায়।

কখনো দেখা যায়, ইমাম কিরাত পড়তে থাকেন আর মুসুল্লীরা পেছনে বসে গল্প করেন, ফ্লোরে বসে-শুয়ে বিশ্রাম করতে থাকেন। যখন ইমাম রুকুতে যান তখন ইমামের সাথে রুকুতে চলে যায়। এভাবে পুরো রমযান জুড়ে তারাবীহ সালাত আদায় করে নিজেকে খুব ভাল মোত্তাকীন দাবি করে। অথচ কোরআন শোনার প্রতি মনোযোগ নেই। কেউ হয়তো বলবেন, আমরা আরবী বুঝিনা তাই সালাতে কোরআন পড়ার আগ্রহ বাড়েনা। অথচ আরবী না বোঝার সেই লোকগুলো মক্কা-মদীনাতে তারাবীহ আদায় করতে গোটা রাত দাঁড়িয়ে থাকে। সেটা কি করে সম্ভব ? হ্যাঁ সম্ভব, আরবী না বুঝলেও যদি সালাত আদায়ের পরিবেশ থাকে, ইমামদের তিলাওয়াত যদি ভাল ভাবে কানে শোনা যায় তাহলেও দীর্ঘ সময়ও সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতে ভাল লাগে। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, রমযানে মাসজিদে হাফেজ নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় কমিটির লোকেরা বলে থাকেন, যে বেশী দ্রুত তেলাওয়াত করে তাড়াতাড়ি সালাত শেষ করতে পারবে তার অগ্রাধিকার।

যে সালাত মুমিনের জন্য মি’রাজ স্বরুপ সে সালাত এভাবে আদায় করলে হক আদায় হয়না। শৈথিল্যভাবেসালাত আদায় করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কুরআন সহীহভাবে পড়তে পারে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কোরআন শেখার অন্যতম সুযোগ এ রমযান মাস। রমযানের ফজিলত এত বেশী পবিত্র কোরআন নাযিল হওয়ার কারনে। কিন্তু সে কোরআন থেকে আমরা আজ দূরে সরে গেছি। আমরা শুধু ফজিলত বলতে ও শুনতে ব্যস্ত থাকি। কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করিনা। তাই আমাদের উচিৎ ভালো ভাবে কোরআন শেখা ও মনোযোগের সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করা।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

বিষয়: বিবিধ

১১৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

242056
০৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:২৬
জাকির হোসাইন লিখেছেন : আপনার সাথে একমত!
১৯ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৩১
191059
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী লিখেছেন : thanks

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File