হজে যাওয়ার আগে যা জানা ও করা প্রয়োজন

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:১১:৪৮ বিকাল

প্রকাশিত : 2014-08-22 সময় : 00:00

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী

হজ মুসলমানদের জন্য একটি মৌলিক ইবাদত। এটি আল্লাহর মনোনীত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। হজ শব্দটি আরবি ভাষার একটি শব্দ হওয়ায় বাংলাতে এর উচ্চারণ লিখতে গিয়ে বিভিন্ন শব্দরূপ ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন: হজ/হজ্জ/হজ্ব/হাজ্জ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ। হজ একমাত্র ইবাদত, যা একই সঙ্গে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। হজ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সৌভাগ্যের মিলনমেলা। ধনী-গরিব সবারই পবিত্র হজ পালন করার নেক আশা থাকে। কারো আশা পূরণ হয় আর কারো আশা অপূর্ণ থাকে। শারীরিক শক্তি থাকা অবস্থায় আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার সাথে সাথেই পবিত্র হজ আদায় করা উচিত। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। তিরমিযি ও মাসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে: যার বায়তুল্লাহর হজ করার সামর্থ্য ও সংগতি আছে কিন্তু সে হজ করল না, রাসূল (স.) তার সম্বন্ধে বলেছেন: সে ইয়াহুদি কিংবা নাসারা হিসেবে মারা গেলে তাতে কিছু আসে-যায় না। কেননা আল্লাহ বলেছেন, বায়তুল্লাহ শরিফ যাওয়ার সামর্থ্য আছে তার আল্লাহর উদ্দেশ্যে সে গৃহের হজ করা অবশ্য কর্তব্য। (মিনহাজুস সালিহীন, পৃ. ১৭৯)। উল্লেখ্য যে, কুরআনে ১০ বার হজ, ১ বার হিজ্জ ও ১ বার হাজ্জু ব্যবহূত হয়েছে। আর উমরা শব্দটি ২ বার কুরআনে এসেছে। (কুরআনের পরিভাষা)।

কতিপয় পরিভাষা ও এর বর্ণনা: ক. ইহরাম: মূলত হজের নিয়ত করা। পুরুষের জন্য দু’খানা সেলাইবিহীন চাদর পরিধান করা এবং মাথা ও মুখমণ্ডল খোলা রাখা হয়। মহিলাদের জন্য মুখ ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখতে হয়। খ. দম: হজ বা উমরাহ আদায়ে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে অথবা ইহরাম নষ্ট হয় এমন কাজ করলে হারাম এলাকার ভেতরে একটি পশু কোরবানি করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়। গ. সায়ী: সাফা ও মারওয়াহ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে সায়ী বলা হয়। ঘ. হাদী: হজের কুরবানি (তামাত্তু ও ক্বেরান আদায়কারীদের ওপর ওয়াজিব)। ঙ. তাওয়াফ: পবিত্র কাবা ঘরকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলে। চ. তাওয়াফে ইফাদা/জিয়ারাহ: হজের ফরজ তাওয়াফ যা আরাফাত, মুজদালিফা ও মিনার প্রথম দিনের কাজ শেষে মক্কায় এসে সম্পন্ন করতে হয়। ছ. বিদায়ী তাওয়াফ: হজ বা ওমরাহর যাবতীয় কাজ শেষে মক্কা ত্যাগের পূর্বের তাওয়াফ। জ. ইজতেবা: পুরুষের ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে দিয়ে এনে বাম কাঁধে রেখে ডান কাঁধ খালি রাখা। ঝ. রমল: মক্কায় পৌঁছে প্রথম তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে পুরুষগণ ছোট ছোট পদক্ষেপে সামান্য দৌড়ের ভঙ্গিতে দুই হাত দুলিয়ে চলা। ঞ. হাতীম: কাবা ঘরের রোকনে ইরাকী ও রোকনে শামী’র মাঝে দেয়াল ঘেরা অর্ধচক্রাকৃতি অংশ, যা পূর্বে কাবা ঘরের অংশ ছিল। চ. রমি: রমি অর্থ কঙ্কর নিক্ষেপ। জামরাতে হাজি সাহেবগণ ১০ জিলহজ বড় জামরাতে ৭টি এবং ১১ ও ১২ জিলহজ ৩টি জামরাতে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছ. মাবরুর হজ: যে হজে হাজিকে কোনো গোনাহ স্পর্শ করে না এমন হজকে মাবরুর হজ বলে।

হজে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি: সবার আগে মনোবল দৃঢ় করা। শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল চেকাপ করিয়ে নেয়া। কমপক্ষে হজ ফ্লাইটের ৩০ দিন পূর্বে ম্যানেনজাইটিস ইনজেকশন ও ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের টিকা দিয়ে তার সার্টিফিকেট কপি ট্রাভেলস অফিসে জমা দেয়া। হজের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত হওয়া। নিজ জেলার থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ছাড়পত্র এবং পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং, মহিলা হজযাত্রীদের মোহরেমাত এফিডেভিট, মেডিকেল কার্ড, টিকিটসহ যাবতীয় অফিসিয়াল কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা। বায়তুল্লাহ ও মদীনা মুনাওয়ারার অত্যন্ত কাছে সুন্দর পরিবেশে হোটেল বা বাড়িতে থাকা ও দেশীয় রান্নায় খাওয়ার সুব্যবস্থা বিষয়ে ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চূড়ান্ত করে নেয়া। একাধিকবার হজ করেছেন এমন বিজ্ঞ আলেম বা প্রশিক্ষকের নিকট থেকে হজের কার্যাদি ভালোভাবে অবগত হওয়া। হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা ট্রাভেলস কর্তৃক হজ বিষয়ক যে সকল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নন এমন ব্যক্তিরা সম্ভব হলে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে নিতে পারলে ভালো হয়। পবিত্র মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক পুণ্যময় জায়গাসমূহ এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হওয়ার যে স্থানগুলো রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত হওয়া। প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকার কাঁটাবন মসজিদসংলগ্ন দোকান বা স্থানীয় নির্দিষ্ট দোকান থেকে হজবিষয়ক বই, বিগত হজের অডিও ও ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে জ্ঞানার্জন করা। (চলবে)

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট



http://dailybartoman.com/details.php?id=15753

বিষয়: বিবিধ

১১৯৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257163
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো।জাযাকাল্লাহ খাইর।
257170
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৫৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : হজ্ব নিয়ে অনেক পড়েছি, সেও অনেক আগের কথা, প্রায় ভুলেই গেছি। আপনি আবারো স্বরণ করিয়ে দিলেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। ধন্যবাদ
257175
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০৩
কাজি সাকিব লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File