মহানবী (স.) সর্বপ্রথম পরিচিত লোকদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ০৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৪৪:৫৮ রাত

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী

আরবি তাবলিগ শব্দের অর্থ প্রচার, ঘোষণা, দ্বীনী দাওয়াত ইত্যাদি। সব নবী ইসলাম প্রচারে দাওয়াতি কাজ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর নবুওয়্যাত লাভের পর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হওয়ার আগে গোপনে তিন বছর ইসলাম প্রচার করেন। মহানবীর নিকটাত্মীয়, ঘনিষ্ঠজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, চেনাজানা পরিচিত লোকদের সর্বপ্রথম দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ মহানবী (স.) সম্পর্কে তার প্রতিবেশীরা ভালো জানেন। প্রত্যেক দায়ীর উচিত নিজ নিজ এলাকা থেকে দাওয়াতি কাজ শুরু করা। অথচ আমাদের সমাজের দায়ীরা নিজ এলাকার পরিবর্তে অন্য এলাকাতেই দাওয়াত দিয়ে থাকেন, যা অনুচিত।

প্রতিবেশীর হককে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। মহানবীর দাওয়াতের ফলে একত্ববাদে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ার ফলে তত্কালীন কুরাইশ বংশসহ ইসলামের বিরোধীরা রাসূলের তীব্র সমালোচনায় মেতে উঠল। অমানুষিক নির্যাতনের পথ বেছে নিল। আল কুরআনের ৫৫টির অধিক নামের একটি নাম আল ফুরকান (সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী)। কুরআন থেকে তাবলিগ করলে নিশ্চয়ই বাতিলের সাথে বিরোধ লাগবেই। যে কারণেই নবী-রাসূল, সাহাবী, মুমিন, ইসলামী দলগুলোর কর্মী, সাধারণ মুসলিমদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, জেল-জরিমানা ইমানী পরীক্ষার অংশমাত্র। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রচলিত তাবলিগ জামায়াত কিংবা শুধুই মসজিদভিত্তিক তাবলিগ জামায়াত। তাদের বৃহত্ একটি জনগোষ্ঠী গোটা বিশ্বে তাবলিগের কাজ করলেও বাতিলের সাথে কেন সত্যের লড়াই হচ্ছে না। বাতিলের সাথে কেন আপস করা হচ্ছে? লক্ষণীয় যে, ইসলামী আন্দোলনের পথ তো ফুলের বিছানা নয়! বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবছর দেশি-বিদেশি লাখ লাখ লোক জমায়েত হয়। অথচ ইসলামের ওপর আঘাত আসার পরেও তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা তো দূরের কথা, সামান্য সমালোচনা কিংবা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, তাবলিগ জামায়াত যদি পরিপূর্ণ সত্যের ওপরই থেকে থাকে তাহলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততা নেই কেন? কেন তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না? ইসলামবিরোধী সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে নস্যাত্ করার জন্য নবী-রাসূলদের উত্তরসূরি হিসেবে একটি দলকে দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক হোক, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সত্ কাজের আদেশ দেবে এবং অসত্ কাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম। (আল ইমরান -১০৪)

আদেশ এবং অনুরোধ দুটি পৃথক শব্দ। কুরআনে বার বার বলা হয়েছে, অন্যকে সত্ কাজের আদেশ এবং অসত্ কাজের নিষেধ করার জন্য। অথচ যারা নবীওয়ালা কাজ করেন বলে দাবি করেন, তারা কেন আদেশের পরিবর্তে অনুরোধ করছেন? আদেশ করতে হলে ক্ষমতার প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা না থাকলে আদেশ ও নিষেধ করার অধিকার থাকে না। মহানবী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনরা ৩০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ইসলাম রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছে, অথচ এক শ্রেণির মানুষ তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলামে রাজনীতি নেই বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তাবলিগ হবে ইসলামের দিকে, কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে। কুরআন সুন্নাহকে দাওয়াতের মূল গাইডলাইন মনে না করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো অসংখ্য জাল ও দুর্বল হাদিস নিয়ে শুধু ফজিলতকে সামনে রেখে রচিত বই দিয়ে দাওয়াতি কাজ করলে তা কখনোই হকের পথে পরিচালনা করতে পারে না। কুরআন দিয়ে তাবলিগ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ (কুরআন) হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন তবে আপনি তার পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। (সূরা মায়েদাহ: ৬৭)।

বিশ্ব ইজতেমা থেকে আমাদের অর্জন কি? তাবলিগ জামায়াতের সফলতা কি শুধুই বিশ্ব ইজতেমা? নবীদের তাবলিগ ও প্রচলিত তাবলিগ জামায়াতের মিল-অমিল আমাদের খুঁজে দেখা দরকার। আল কুরআন দিকে দাওয়াত দেয়া প্রয়োজন। অনুরোধ নয়। ‘সত্ কাজের আদেশ, অসত্ কাজে নিষেধ’ করার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মুসলিমরা ফিরে পাক এটাই বিশ্বমানবতার স্লোগান।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, গজমহল ট্যানারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজারীবাগ, ঢাকা - ১২০৯

http://dailybartoman.com/details.php?id=13045

বিষয়: বিবিধ

১২৬২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252394
০৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪১
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ইসলামের দুষমণদের সহযোগীতা, খাওয়া, দেশ বিদেশে চিল্লার নামে ঘুরে বেড়ানো। এসব মজা ছেড়ে বাতিলের সাথে সংঘর্ষ কেন করবে?
252396
০৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫০
কাজি সাকিব লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تُتْرَكُواْ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللّهُ الَّذِينَ جَاهَدُواْ مِنكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُواْ مِن دُونِ اللّهِ وَلاَ رَسُولِهِ وَلاَ الْمُؤْمِنِينَ وَلِيجَةً وَاللّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
16

তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
কোরানের সরাসরি যখন নির্দেশনা হচ্ছে এমন তখন যুদ্ধতো বহু দুরের কথা আমার সাথে কাফের,বেইমান,মুশরিক,মুনাফিকদের কোন মনোমালিন্যও হবে না এটা কিভাবে সম্ভব? ধরুন একজন লোক নামাজ পড়ে,রোজা রাখে,হাজ্জ করেছে,যাকাতও দেয়,পোষাক-আষাকেও মাশাল্লাহ বেশ সুন্নাতী কিন্তু তিনি এর বাইরে আর কিছুই করেন না ভয়ের জন্য কিংবা শারীরিক দুর্বলতার জন্য!ঠিক আছে মেনে নিলাম!কিন্তু তিনি যদি তার বাইরে আর কিছু না করাকেই ইসলাম মনে করেন এবং কেউ করতে গেলে তাকে নিরুতসাহিত করেন তবে সেটা অবশ্যই ভয়ানক! তাবলীগ অনেকাংশেই আজ এমনটা করছে!,

রাষ্ট্র নিয়ে তিনার কোন চিন্তা নেই,অর্থনীতি নিয়ে তিনার কোন চিন্তা নেই(টাকা জমা রাখেন আবার সূদী ব্যাংকে),সংষ্কৃতি নিয়ে কোন চিন্তা নেই(যার ফলে ইসলামী সংষ্কৃতির বদলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ নোংরা সষ্কৃতি ঢুকে গেছে),রাজনীতি সম্পর্কে কোন চিন্তা নেই(ফলে হয় ভোট দেনই না যার কারণে ইসলামের পক্ষের কোন ব্যক্তি ভোটটি পাচ্ছেন না এবং ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তির কেউ ক্ষমতায় গিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে লাগলো),শিক্ষানীতি নিয়ে কিছু ভাবেন না(যার ফলে বিজ্ঞানের সকল শাখায় আজ মুসলিমদের অনুপস্থিতি যদিও বিজ্ঞানের সূচনাই করেছিল মুসলমানেরা,ধর্মীয় শিক্ষার বিদায়ের ফলে আজ ছেলেমেয়েরা ধর্মী মূল্যবোধ না শিখে শিখছে পাশ্চাত্য নোংরামী)

এভাবে সমাজের সকল সেক্টরগুলোতে তিনাদের অবহেলা এবং যার বদৌলতে আজ সকল সেক্টরগুলো চলে গিয়েছে মুনাফিক আর মুশরিকদের হাতে!তবুও সমস্যা ছিল না যদি উনারা নিজেরা তা না করতে পারলেও যারা সেগুলো করতে চায় তাদের সহযোগীতা করলে কিন্তু তিনারা সেটা করছেন না!ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবণ ব্যবস্থা শুধুমাত্র মসজিদে আসা যাওয়াই নয়!মুসলমানদের আসল উদ্দেশ্য থেকে সরিয়ে দিয়ে ঐ পোপ আর ধর্মযাজকদের ন্যায় শুধুমাত্র মসজিদের কোণামুখী করে রাখার এই অপপ্রয়াসই আজ মুসলমানদের ধ্বংস করে দিচ্ছে!
252474
০৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
প্রতিবেশিদের প্রতি আমরা এখন উদাসিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File