ভূখণ্ড বিজিত থাকলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখনো পরাজিত

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৫৫:৫৭ বিকাল

একটা স্বাধীন ভূখণ্ড প্রত্যেক জাতির জন্য অপরিহার্য। যুগে যুগে শাসক ও জনগণের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বৈপরিত্যের কারণে বিভিন্ন স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছে।এই উপমহাদেশে দুইশত বছর ইংরেজরা শাসন করেছে। ইংরেজরা কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীকে দাস-দাসীর মত শাসন করত। এই ধারা বজায় রাখতে তাদের শাসনের মূলমত্র ছিল ডিভাইড এন্ড রুল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। বৈদেশিক শাসন উপমহাদেশের জনগণ মেনে নেয়নি।১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্র ভারত এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ পায়। তখন বাংলা ভাগ হয়ে পশ্চিম বাংলা ভারতের একটি অংশ এবং পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত হয়।এই ভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে জন্ম নিতে পেরেছে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুই রাষ্ট্র।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভারতকে অনেকটা দ্বিখন্ডিত করলেও সিলিগুরি দিয়ে ভরতের পশ্চিম অংশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রয়েছে পূর্ব অংশের। যার কারণে ভারত এখনো একক রাষ্ট্র হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এরপরও অখণ্ডতা টিকিয়ে রাখতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে সদা তৎপর থাকতে হচ্ছে।দমন করতে হচ্ছে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের।মহারাষ্ট্র ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে স্বাধীনতা আন্দোলন।এই স্বাধীনতাকামী জনগণকে ভারত বলছে বিচ্ছিন্নবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী।একদিন ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই উপমহাদেশে জন্ম নিতে পারে আরো কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

ভৌগোলিক খন্ডতা ও ভাষাগত কারণে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটা শাসনগত বৈষম্য এমনিতে সৃষ্টি হয়েছিল। তার উপর পাকিস্তান সামরিক জান্তা সরকারের অপশাসন ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি প্রভু সূলভ আচরণ। আর এই সবই কারণে তৈরি হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধের মূল পেক্ষাপট। মূলত সামরিক জান্তা সরকার জণগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্থান্ততর না করাই মুক্তিযোদ্ধের মূল কারণ। সেইদিন সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ইতিহাস ভিন্ন হতে পারত। সেই দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্র হলেও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে বাংলাদেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্র বানানো। প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধ কোন আদর্শিক লড়াই ছিল।না ছিল ইসলামের জন্যে যুদ্ধ না ছিল ইসলামের বিপক্ষে যুদ্ধ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে করা হত বিপদগামী ও রাষ্ট্রদ্রোহী। রাজাকাররা ছিল দেশপ্রেমিক।কিন্তু সামরিক জান্তার ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাজয় মেনে নিলে তখন মুক্তিযোদ্ধারা এই ভূখণ্ডের শ্রেষ্ঠ সন্তানে পরিনত হলেন। পাকিস্তান সামরিক জান্তা আর তাদের এই ভূখণ্ডের সহযোগীরা রাতারাতি বনে গেলেন ভিলেন। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।মুক্তিযুদ্ধ হয়ে রইল বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসের গৌরবময় অংশ।

কিন্তু কতিপয় অতি উৎসাহী মহল মুক্তিযুদ্ধকে তাদের নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত ও বিতর্কিত করেছে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে।ফলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্র বানাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দাঁড়ি টুপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।আওয়ামী অপশাসন ও মিথ্যাচারের সমালোচনা করায় খেতাবপ্রাপ্ত কিছু মুক্তিযুদ্ধাকে রাজাকার তকমা দেয়া হচ্ছে। স্বার্থ হাসিলের জন্যে বইয়ে লেখা ইতিহাসকে অস্বীকার করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সামরিক জান্তার অপশাসন ও অগণতান্ত্রিক স্পৃহা এর বিরুদ্ধে হলেও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষ আস্তিক-নাস্তিক বা রাজাকার-শাহবাগী দুইটি ভাগে বিভক্ত। এই বিভক্তি দিন দিন বাড়ছে।

একটি রাষ্ট্রে যখন জাতিগত বিভক্তি তৈরি হয় তখন স্বাধীনতার দাবি উঠে। আর একটা জাতি যখন স্বাধীনতা পায়, সেই জাতির প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা। কিন্তু আমাদের দেশে এখন ঘটছে ভিন্ন চিত্র। জাতিকে বিভক্তি ও অনৈক্যের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা কিছু গোষ্ঠী মহলের স্বার্থ রক্ষা হলেও জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আইনের শাসন বিনষ্ট হচ্ছে। একটি মহল ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভিন্নমতালম্বীরা হত্যা-গুম-অন্যায় জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ, আলেম-উলামা্রাও শিকার হচ্ছেন হত্যা-যুলুম-নির্যাতনের। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে।জঙ্গিবাদের প্রসার গড়ছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেছে, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল কিছু ইসলামপন্থি, উদারপন্থী দল ও ব্যক্তিবর্গ।এমনকি কিছু বামপন্থি ও হিন্দু বৌদ্ধও বিরোধিতা করেছিল।তাই স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এই দেশে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির নামে দেশের জনগণকে আস্তিক-নাস্তিকে বিভক্ত করা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও রাজনৈতিক। এমনটা হতে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরো বিকৃত হবে। দেশে অস্তিরতা বাড়বে। ফলে দেশের একটা গোষ্ঠি চরম্পন্থা দিকে এগুবে। আজকে যে পাকিস্তানকে আমরা ঘৃণা করছি তেমন একটি দেশে পরিনত হতে পারে বাংলাদেশ।

আজকে দেশের সকল নাগরিক এই স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তারাও স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরাও যখন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালনঈকরে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা গেল আরো বেড়ে।জাতির জন্যে এটা ভাল দিকও বটে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে। যার ফলে দেশে কোন বিচ্ছিন্নবাদী তৈরি হয়নি।তৈরি হয়নি জঙ্গিবাদ।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

354274
১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File