এই তো ভালবাসা...

লিখেছেন লিখেছেন আইশা সিদ্দিকি ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৫৭:১১ রাত

পূর্নতা নামের মেয়েটি কখনও জীবনে তার নামের অর্থতা বুঝতেই পারেনি। নিজের মধ্যে কখনও কোন কিছুর পরিপূর্নতা সে পায়নি। সয়ং বিধাতা তাকে নিয়ে পরিহাস করেছেন। সে ভাবে তাই যদি না হয় তাহলে কেন তার জীবনটা এমন অভিসপ্ত হয়ে গেল। খুব ছোট বেলা বাবা তার মা কে ডির্ভোস দিয়ে অন্য একজন কে বিয়ে করে দূর দেশে পাড়ি জমান। ধনীর একমাত্র দুলারী কেয়া রহমান তার মা। পূর্নতার নানা অনেক সম্পত্তির মালিক। যার সব কিছুর মালিক কেয়া রহমান। পূর্নতার নানা আবার তার মাকে বিয়ে দেন তারই বন্ধুর এক ছেলের সাথে। অনেক বড় ব্যবসায়ী অনেক বড় মাপের মানুষ হলেন পুর্ণতার এই বাবা জীবন আহমেদ। পূর্নতার মায়ের সাথে যখন তার বিয়ে হয় তখন পূর্নতার বয়স মাত্র ৬ বছর। অনেক আদর, ভালবাসা পেয়েছে পূর্নতা তার বাবার কাছ থেকে। পূর্নতা কখনই অনুভব করতে পারেনি যে জীবন আহমদ তার নিজের বাবা না। বাবার পৃথিবী ছিল পূর্নতা। বাবার একমাত্র মেয়েটি কখনই বাবার অবাধ্য হয়নি। পূর্নতাকে ঘিরে বাবা মা দুজনার ¯^প্নের শেষ ছিলনা। মেয়ের অর্জন করা এক একটা সাফল্যে মা বাবা দুজনের মুখ উজ্জল হয়ে উঠত।

এভাবেই দিন কাটতে লাগল। পূর্নতা স্কুল, কলেজ এর গন্ডি পাড় করল। কলেজ থেকেই পূর্নতা একটি ছেলেকে মনে মনে ভালবাসত। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার থেকে দু বছরের সিনিয়র সজীব কে তার খুব ভাল লাগে। সজিব ও তাকে প্রান দিয়ে ভালবাসে। কিন্তু পুর্নতা কোনো ভাবেই তার ভালবাসার কথা তার মা বাবাকে বলতে পারেনি। কিন্তু সজীব কে ছাড়া পুর্নতা আর কাউকেই কখনও ¯^ামী হিসেবে ভাবতে পারবেনা। এমতাবস্তায় পুর্নতাকে এক অগ্নি পরিক্ষার সম্মুক্ষীন হতে হয়। বাবারই পছন্দ করা তার এক বন্ধুর ছেলের সাথে পূর্নতার বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়। একদিন ছেলে পক্ষ এসে পুর্ণতা কে দেখে আংটি পড়িয়ে বিয়ের চুড়ান্ত দিন ক্ষন ঠিক করে যায়। এখন কি করবে পূর্নতা তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সব কিছু অন্ধকার যায় পুর্নতার। একদিকে তার ভালবাসা, অন্যদিকে মা, বাবা ভালবাসা কোনটা ত্যাগ করবে সে। জীবনের হিসেবের খাতা খুললে মা, বাবার ঋণ শোধ করার মত নয়। তার জীবনের সাদ আল্লাদ্ থেকে মা, বাবার সম্মান টাই বড়। তাই পূর্নতা তার ভালবাসা, শখ, ¯^প্ন সব কিছুকেই বুকে কবর দিয়ে দেয়। সজীব এর কাছে শেষ একটি চিঠি লিখে পুর্নতা। তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। পুর্নতাকে না পাওয়ার যন্ত্রনায় সজীব পাগলপ্রায়। ধীরে ধীরে গড়ে উঠা শত শত মূহূর্তের ভালবাসার অনূভুতি কে কখনই ভুলা যায়না। দুজন দুজনকে কখনই ভুলতে পারেনা। যত ভুলতে চেষ্টা করা ততই যেন আরো ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। এই কষ্টের চেয়ে মরনও হয়ত অনেক ভাল। পূর্নতা সজীবকে কখনই ভুলতে পারেনা। জীবনের চেয়ে ও অনেক দামী এই অমুল্য ভালবাসা। একটু একটু ভালবাসা দিয়ে তৈরী এই মালা কি এত সহজেই ছিড়ে ফেলা যায়। বিচ্ছেদ এর আগুনে প্রেম পুড়ে আরো বেশী খাটিঁ হয়। কিন্তু পুর্নতা আর সজীব তাদের নিয়তি কে বদলাতে পারেনা। পুর্নতার বিয়ে হয়ে যায়।

বাবা মার পছন্দে বিয়ে করে মা বাবার ¯^প্ন পূরণ করে পূর্নতা। পুর্নতার ¯^ামী আকাশ চৌধুরী। বিরাট ব্যবসায়ী। জীবনের সব ¯^প্ন আকাক্সখা কে পাথর চাপা দিয়ে বুক ভরা যন্ত্রনায় ভেসে যেতে থাকে পুর্নতা। এক একটি রাত র্নিঘুম দুঃ¯^পে বিভোর থাকে পুর্নতা। সজীব কে ভুলতে পারেনা পুর্নতা। পৃথিবী কোনো ঐশ্বর্য তাকে আর্কষন করেনা। কিছুতেই আকাশ কে সে ¯^ামী হিসেবে মানতে পারেনা। এদিকে আকাশ পুর্নতার অ¯^াভাবিক আচরন গুলো আর এড়িয়ে চলতে পারেনা। সে পুর্নতার মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে পারিবারিক চিকিৎসক এর সাথে আলোচনা করেন। ডাক্তার পরিবেশ পরিবর্তন এর পরামর্শ দেন। ডাক্তার এর পরামর্শ মত আকাশ কিছু দিনের জন্য কক্সবাজার যাবার জন্য পুর্নতাকে অনুরোধ করে। পুর্নতার ইচ্ছে না থাকা ¯^ত্তেও রাজী হতে বাধ্য হয়। পুর্নতা ভাবে হয়ত পুরোনো দিনের স্মৃতি গুলো তাকে সারা জীবনই তাড়িয়ে বেড়াবে। আর ভালবাসার এই আগুনে সে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। ¯^ামী অনুরোধ আর মানসিক প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠতে পূর্ণতা আকাশের সাথে যায়। আকাশ পূর্ণতাকে নতুন জীবণের ¯^প্ন দেখায়। পূর্নতা বুঝতে পারে আকাশ তাকে চায়। সে কেন আকাশ কে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করছে। তার পরও কিসের একটা সংকোচ পূর্ণতাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

একদিন পূর্ণতার কাছে কাছে আকাশ প্রশ্ন রাখে কেন তাকে নিববে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে। সবার জীবনেই কিছু পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে। আকাশকে তার পছন্দ না হলে বিয়েতে রাজী হওয়ার কারণ সে জানতে চায়। পূর্ণতার কাছে আকাশে এসব প্রশ্নের কোন উত্তর জানা ছিলনা। কিন্তু আকাশকে তার অতিত জীবনের কথা বলা প্রয়োজন। কিন্তু যত বার ই পূর্ণতা আকাশকে তার ভালবাসার কথা বলতে যায় ঠিক তত বাড়ই পূর্ণতা আটকে যায়। কোথা থেকে সে শুরূ করবে। আর এসব শুনে আকাশ এর মনের অবস্থা কি হবে। এসব ভাবতে ভাবতে পূর্ণতার মনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। আস্থে আস্থে পুর্ণতার শারিরিক অবস্থা খুবই সংকটময় হয়ে দাড়ায়। হাসপাতালে পুর্ণতাকে ভর্তি করা হয়। অনেক পরিক্ষা নিরিক্ষার পর পুর্নতার ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ক্ষনজন্মা পুর্নতা একদিন সবাইকে না জানিয়ে দূরদেশে পাড়ি জমায়। কাদিয়ে যায় সবাইকে। আকাশের সব শেষ হয়ে যায়। পুর্নতাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আকাশের জীবনের সব রংধনু ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পূর্ণতার ¯^ৃতি বুকে নিয়ে আকাশ বেচে ছিল সারা জীবন। পূর্ণতা তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিল। কিন্তু কখনও বলতে পারেনি। পূর্নতার জীবনের ডায়রীতে অনেক সজতনে আকাশ এর প্রতি ভালবাসার কথা লিখে রেখেছির পূর্নতা। যে ভালবাসা কখনও আকাশ বুঝতে পারেনি। অভিমানি মেয়েটি অভিমান আর ভাংঙ্গাতে পারেনি আকাশ। আকাশের বুকে সারা জীবন চাঁদ হয়েই যেন পূর্নতা রয়ে যায়। কিছু কিছু অব্যক্ত ভালবাসার পরিনতি হয়ত এমই হয়।

বিষয়: সাহিত্য

১৫০৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

204156
০৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৩২
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : সুন্দর লিখেছেন Good Luck Rose
204160
০৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৩৭
লোকমান লিখেছেন : এটিই আপনার প্রথম পোস্ট যা আমি পড়লাম। সত্যিই আপনার সাহিত্য শৈলি প্রশংসার দাবিদার। তবে মনে হয় লেখিটি অন্য ফন্টে লিখে কনভার্ট করা হয়েছে। মাঝে মাঝে কেমন যেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা মনে হচ্ছে।
204205
০৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:৫১
ভিশু লিখেছেন : Rose Rose Rose
204424
০৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার গতিশিল একটি লিখা।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর হৃদয়স্পর্শি গল্পটির জন্য।
204824
০৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৩২
আইশা সিদ্দিকি লিখেছেন : ধন্যবাদ
222886
১৮ মে ২০১৪ সকাল ০৮:২৬
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : আসলেই অভিমান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File