বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা ......

লিখেছেন লিখেছেন আইশা সিদ্দিকি ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:১৫:৫৭ রাত

আয়শা সিদ্দিকা আশা

নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে । প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা ও প্রতিকুলতায় পতিত হতে হয় নারী সমাজকে। কখনও ঘরে, কখনও বাইরে অনেক ধরনের সমস্যার শিকার হন নারীরা। ধর্ষণ, যৌতুক এর নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাস, ইভটিজিং, এর শিকার নারীদের সংখ্যা অগনিত। এদের মধ্যে কেউ কিশোরী, কেউ যুবতি, কেউ বা ঘরনী। আমাদের এই সমাজের কিছু নিকৃষ্ট মানুষ আছে, যারা মা জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক একে দিতে ও দ্বিধা বোধ করে না। আমরা এ কোন বরবর যুগে বাস করছি ? প্রতিদিনের পত্রিকার খবর পড়লে গা শিউরে উঠে। ডিজিটাল এই যুগে ডিজিটাল পদ্ধতি অবল¤^ন করে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার ছাত্রী ধর্ষণ করে তা ভিডিওতে ধারণ করে বাজারে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। প্রেমের অভিনয়কে সত্য মনে করে অনেক নারী তার জীবনের সর্ব¯্র হারান প্রেমিক ছদ্দবেশী প্রতারকের হাতে। অনেক সময় প্রতিবন্ধীরা দুবৃত্তদের শিকার থেকে বাধ পড়েনা। কেউ বা নিজের সন্তানের পিতৃ পরিচয় না পেয়ে আতœহত্যা করে। মেয়েদের সাফল্য এসেছে। কত পরিসংখান তাই বলে। অনেক মেয়েই আজ পরগাছা নয়। কিন্তু গোড়ার সেই গলদ থেকেই গেল , নারীকে সুরা করতে যেয়ে করা হয়েছে অরতি। পূর্বে ¯^ামী তাকে অসম্মান করত, বর্তমানে গলির চা বিক্রেতা, বাসের হেলপার, ফুটপাতের ছেলে, অফিসের বস, ¯^ামীর বন্ধু, যতো শ্রেনীর পুরুষ লোক আছে সকলে তাকে অসম্মান করে।

মেয়েদের স্কুলে যাবার সংখ্যার তাল মিলিয়ে বেড়েছে বখাটে ছেলেদো গলির মোড়ে দাড়িয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার ধারণ জন্য গিলতে হয় এই অশ্রাব্য কথাবার্তা। কখনও লজ্জা, কখনও ঘৃনা, কখনও বা মৃত্যু নামক যন্ত্রনায় এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অসহায় নারীরা। এই যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পৃথিবী থেকে চলে যায় সিমি, রুমি, তৃষার মত কোমলমতি উজ্জল মেয়েরা । প্রতি ২১ মিনিটে একটি মেয়েকে আজ এই জাতীয় লাঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। তাদের কষ্টের কথা বলার মত জায়গা থাকে না। অনেক সময় দেখা যায়, যৌতুকের কারণে নিজ গৃহে ¯^ামী, শশুড়-শ্বাশুড়ি, দেবর, ননদের হাতে খুন বা নির্যাতিত হন অনেক নারী। কত নারী যে লজ্জা অপমান ও ঘৃনায় আতœহত্যা করেছে তা হিসেব করার মত নয়। দুবৃত্তদের হাতে ধর্ষিত বা লাঞ্চিত হয়ে ক্ষোভে আতœহত্যা করতে হয় আমাদের গৃহবধু, বোন, বা মা কে। তাদের কপালে বিচার জোটে না। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘোরে যখন তারা নিরাশ হয়ে ফিরে আসে, তখন তাদের সামনে আতœহত্যা ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা প্রমান করে যে ঘরে বাইরে কোনো স্থানেই এখন নারীরা নিরাপদ নয়। প্রতিদিন পত্রিকায় পাতায় পাতায় কমপে ৩ জন নারীর ধর্ষনের রিপোট ছাপা থাকে।

পারিবারিক নির্যাতনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে এখনো নারীরা নিগৃহীত হচ্ছেন। এর ফলে বাড়ছে এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও। চলতি বছরের শুরুর দিকে সিলেটের বিভিন্ন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ছিল ২শ’ ৯৮টি। যা ২০১২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩১ টি মামলা বেড়েছে। নির্যাতিত নারীদের সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকারের ঘটনায় সিলেটের বিভিন্ন আদালতে (গত ১ জানুয়ারী পর্যন্ত) ২শ’৯৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১২ সালে পারিবারিক মামলার সংখ্যা ছিল ২শ’ ৬৭টি। ২০১১ সালে এর সংখ্যা ছিল ২শ’ ৬৩ টি এবং ২০১০ সালে বিচারাধীন পারিবারিক মামলা ছিল ২শ’ ৩৪টি। গত পয়লা জানুয়ারী পর্যন্ত পারিবারিক আপীল মামলা (বিচারাধীন) ছিল ৩টি। একই সময়ে ২য় বিবাহ সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪টি। ২০১২ সালে ছিল এর সংখ্যা ৩, ২০১১ সালে ২ ও ২০১০ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩টি। চলতি বছরের শুরুর দিকে বিচারাধীন মোহরানার মামলা ছিল ৪০টি। ২০১২ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩টি। ২০১১ সালে একই বিষয়ে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ছিল। চলতি বছর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১২টি। ২০১২ সালে এর সংখ্যা ছিল ২০টি। ২০১১ সালে ১০টি ও ২০১০ সালে একই বিষয়ে ১৯ টি মামলা বিচারাধীন ছিল। ব্লাস্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপরোক্ত মামলা সমূহে সংশ্লিষ্ট নারীদেরকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দিচ্ছে ব্লাস্ট।

নারী নির্যাতনের ব্লাস্টের একটি তথ্যে দেখা যায়, ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের চিত্র গত বছর, ২০১২ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৮ জন, এসিড নিপে করা হয়েছে ৪৯ জনকে, অপহরণের শিকার ২ হাজার ৭৭ জন, ধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৮৬৯ জন, ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে ১৩ জনকে, হত্যা ১১৬ জন, শারীরিক নির্যাতন ৬৩ জন, অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৩৯৪ জন নারী ও শিশু। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৮৮৯ জন। যার মধ্যে যৌতুকের কারণে নির্যাতন ৭ হাজার ৭৯ জন, এসিডের শিকার ৮৮ জন, অপহরণ ৪ হাজার ১০৯ জন, ধর্ষণ ৩ হাজার ৬৩৮ জন, খুন ২৮০ জন, ধর্ষণের পর খুন ২৮ জন, শারীরিক নির্যাতন ১৩৯ জন এবং অন্যান্য নির্যাতনের শিকার ৪ হাজার ৫২৮ জন। ২০১০ সালে ১৬ হাজার ৩৫৩ জন নির্যাতনের শিকার হন। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯২৭ জন, ২০০৮ সালে ১৪ হাজার ২৭৯ জন, ২০০৭ সালে ১৪ হাজার ২৫০ জন, ২০০৬ সালে ছিল ১১ হাজার ৬৮ জন। ১৯৯৭ সালে ধষিত হয়েছিল ৭৫৩ জন, ১৯৯৯ সালে যা বেড়ে ১২৩৮ জন। এর মধ্যে আমরা জানি প্রকৃত সংখ্যা আর অনেক বেশী।

ক্রমেই বাড়ছে নারী খুন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, লাঞ্চিত, পর্নোগ্রাফি ধারণে বাধ্য করা, এসিড সন্ত্রাস, আগুনে পুড়িয়ে মারা, অপহরণ, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ,সহ নানা রকম শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন। এর মধ্যে আতœাধিক শহর সিলেটে ও নারীর সহিংসতার ঘটনা প্রচুর। প্রতি দিন খবরের কাগজ, টেলিভিশন খুললেই চোখে পড়ে এসব দূর্ঘটনার খবর গুলো। ভারতে চলন্ত বাসে ছাত্রী ধর্ষণ এর ঘটনাটি বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে অনেক আলোচনা ঝড় উঠলে ও আমাদের দেশে প্রতি নিয়ত নির্যাতিত নারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এর কোন প্রভাব পড়ে না। কোন ধরনের আইনী সহায়তা তারা পায়না। আইনী সহায়তার বদলে নির্যাতিত নারীরা আরোও বেশি নির্যাতনের শিকার হন। অনেকে ¯^ামীর ঘর করা হয়না। কেউ আবার লাল বেনারশী পড়ে ¯^ামীর ঘরে যাবার আগেই দুবৃত্তদের শিকারে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় মনের সাজানো ¯^প্ন গুলো। পরিবার, সমাজ থেকে তারা হয় বিতাড়িত। খুবই করুণ জীবন তাদের যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠে। অথচ যারা দোষী তারা বুক ফুলিয়ে হাটে। এই সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছে একটাই প্রশ্ন এই নির্যাতিত নারীরা কি কখনও সুবিচার পাবেনা ? নাকি তারা আতœহত্যার পথ বেছে নেবে। প্রশাসন কি তাদের পক্ষ নিয়ে তাদের পাশে দাড়াবে ? নাকি দোষি ব্যক্তিরা পাড় পেয়ে যাবে। এই নিকৃষ্ট কাজ যারা করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার হউক। এই সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র নির্যাতিত নারীদের পাশে দাড়াঁক। আইনে তাদের প্রত্যেকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হউক, যাতে এমন লোমহর্ষক এবং পাশবিক কাজ আর কেউ করতে না পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

202592
০৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:২২
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
203085
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৫৩
আইশা সিদ্দিকি লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File