আলোকিত এক ঝরণাধারা... আয়শা সিদ্দিকা আশা

লিখেছেন লিখেছেন আইশা সিদ্দিকি ০৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:২৩:৩০ দুপুর



অনেক দিন পর বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলাম। কি লিখব ভেবে পাচ্ছিনা। কোথা থেকে শুরু করব। বিষয়বস্তু ইবা কি? জানিনা, তার পর ও গন্তব্যহীন পথিকের মত লিখছি। লেখালেখির অভ্যসটা বাবার কাছ থেকেই ধার করা। অথচ বাবার মত করে এক বিন্দু ও লিখতে পারিনা। নিখুত, সুন্দর মার্জিত লেখার তেষ্টা আমার মনে হয় আজিবনই থেকে যাবে। তবু চেষ্টা করে যাচ্ছি বাবাকে অনুকরণ করে। আমার বাবা হারিস মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন সিলেটের সাংবাদিকতা জগৎ এর একটি উজ্জল নক্ষত্র। অনেকে যাকে নির্লোভ সাংবাদিক হিসেবে চেনেন। অতীত মানুষকে টানে। মানুষ যখন তার বাস্তবতার মোহ থেকে খানিকটা অবসর নেবার চেষ্টা করে তখনই তার কল্পনার সময়টুকু অতীতের সোনালী দিনগুলির কাছে ছুটে যায়। ফিরে ফিরে চোখে ভাসে জীবন্ত স্মৃতিগুলো। আজ প্রানবন্ত অতীতগুলো মাঝে মাঝে আমার চলার গতি থামিয়ে দেয়। থেমে যায় আমার কলমের প্রানবন্ত ছুটে চলা।

বাবা নেই আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর। এই তিন বছরের একটি দিন ও বাদ যায়নি বাবাকে অনুকরন করাটা। অনেকেই বলেন আমি পুরোটাই বাবার মত। ছেলে হলে অবিকল নাকি বাবার মতই লাগত। এসব কথা কতটুকু সত্য আমি জানিনা। তবে এটা জানি আমার বাবার মত পৃথিবীতে কোনো মানুষ হতে পারেনা। ছোট ছোট গল্প, হাসি, আনন্দ, দুঃখ-কষ্টের প্রায় সব টুকুতে মিশে আছে বাবা। নষ্ট পৃথিবীর শত আঘাত নিরবে নিভৃত্যে তিনি সয়ে গেছেন। সারাটা জীবন উপকার করে গেছেন মানুষের। আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার বাবা কখনও কোনো মানুষের ক্ষতি করেননি উপকার ছাড়া। দেশ দশের জন্য একজন নিঃ¯^ার্থ মানুষ হয়ে অকাতরে বিলীয়ে দিয়েছেন নিজেকে। নিজে জীবনে অনেক কষ্ট করেছন। যা নিজের চোখে ও অন্যের মুখে শুনেছি। নিজের জন্য বা পরিবাবরের জন্য কিছুই করেননি জীবনে , নিজের প্রিয় সন্তানদের জন্য তিল পরিমান মাথা গোজার স্থান ও রেখে যেতে পারেননি। কারন, তিনি অন্যের সন্তানের অন্ন কেড়ে নিয়ে কা’রো ক্ষতি করে বা অন্যায় করে বড় হতে চাননি। কিন্ত আজ আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে যারা রাতা রাতি আমার বাবার মত হাজারো মানুষের ক্ষতি করে, তাদের সর্বস্য লোট করে আজ বড় বড় টাওয়ার ও তথা কথিত বিভিন্ন সুউচ্চ বিলাস বহুল ভবনের বাসিন্ধা, যাদের আছে কালো টাকার শক্তি, যারা আজ সমাজে অন্যায় ও প্রতিপ্রত্তির দূগন্ধ মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কি আখেরাতের ভয় নেই। নাকি দুনিয়ার জীবনই তাদের জন্য বেহেস্ত। তাদের বংশধরের কথা চিন্তা করলে বড় আফসোস লাগে, টাকা গন্ধই তাদের বড় পরিচয়। তারা কি আমার মত তাদের বাবাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির সাথে বলে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ, তারা কি তাদের বাবাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে? আজ জানতে ইচ্ছে করে এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো।

কিছু কথা আসলে না বললেই নয়। বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন যাকে কেউ কখনও ধন সম্পদ দিয়ে কিনতে পারেনি। নিজেও ইচ্ছে করলে সম্পদ এর পাহাড় করতে পারতেন। বাবা তার জীবনে কখনই করো কাছে অন্যায় ভাবে হাত পাতেননি। তার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কিছু সার্থšে^ষি ব্যক্তি, মহল, প্রতিষ্টান তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে একটা খাম হাতে হারিস মোহাম্মদ সহ অন্যান্য সাংবাদিক এর স্ত্রী সন্তান দের সাথে ছবি পত্রিকার পাতায় পাতায় ছাপিয়ে। কেউ আবার ভরা মজলিশ এর মাধ্যমে ঘোষনা দিয়েছেন অনেক, যার পরিধি ব্যাপক। কিন্তু এত এত বিজ্ঞাপন এর ভিড়ে একজন হারিস মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন শীরু, ফতেহ ওসমানী, সি এম মারুফ... ও তাদের পরিবার কি পেল। কিন্তু জনসাধারন জানলনা কত টাকায় এক জন মৃত ব্যক্তি কত সহজে তাদের প্রতিষ্টানের বিজ্ঞাপন চিত্র হয়ে গেল। যে মানুষ টা মৃত্যুর সময় কারো কাছ থেকে সাহায্য তো দূরে থাক, যার কেউ খোজ ও নেয়নি, তার মৃত্যু পরবর্তি সময় কিভাবে মানুষ দান এর নামে তাদের অসম্মান করছে। দান তাকেই বলে, কাউকে কিছু ডান হাতে দান করলে, বাম হাত যেন টের না পায় । দান তাকেই বলে যেটা হয় সম্মান, ত্যাগ ও মহত্তের। সেই সব কুরুচিপন্য ব্যক্তিদের উদ্যেশে বলছি সত্যিকারের কোনো সাংবাদিককে আপনারা কখনই টাকার জোরে কিনতে পারবেননা। এরা তাদের সততার জন্যই আজীবন বেচে থাকবে মানুষের মনে। আমার অনুরোধ এই রকম দান নামক বিজ্ঞাপন চিত্রের মাধ্যমে আপনারা মৃত ব্যক্তির সম্মান হানি করবেন না।

মানুষ আসলেই বড় বিচিএ প্রাণী। ভাল মানুষের মুখোশে অনেক মানুষ নামের জন্তু আমাদের সমাজে বিচরণ করছে তা খালি চোখে দেখা যায়না। এই সমাজে আজ ভালো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। বাবা হীন পৃথিবীর আলো দেখার পর আমি আমার চোখে আজও কোনো ¯^ার্থহীন পরপকারী মানুষ দেখিনি। ভালো মানুষের খোলশে শকুনের দৃষ্টি যেন অবস করে দেয় আমাকে। আমি জানি পৃথিবীর কোনো কাজই সহজ নয়। এখানে খুব সহজেই খারাপ হওয়া যায়। শুধু কষ্ট করে যুদ্ধ করে বাচঁতে হয় তাদের যারা আমার বাবার মত সততার সাথে সম্মানের সাথে মৃত্যুতে বরন করতে চায়। মানুষ মরে গেলে তার প্রভাব, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, টাকা পয়সা কিছুই থাকে না। থাকে শুধু সম্মান ও সততা। আমার বাবা হলেন সেই সম্মান ও সততার এক জীবন্ত উদাহরন। আমার বাবার জীবনে দুঃখ, অভাব, অনটন ছিল নিত্য দিনের সঙ্গি। সারাটা জীবনই কেটেছে অনিশ্চয়তায়। বছরের পর বছর রোগে-শোকে কষ্ট করেছেন। জীবনের সিংহ ভাগ সময়ই বয়ে বেড়িয়েছেন কষ্ট নিয়ে। জীবনের সাথে সংগ্রাম করে পাড় করেছেন জীবনের ৫২ টি বছর। সুখী মানুষের কাছে পৃথিবীটা বড় আর জীবনটা খুবই ছোট। কিন্তু একজন দুঃখী মানুষের কাছে জীবনটা অনেক র্দীঘ একটি পথ, যে পথ পাড়ি দিতে করতে হয় অনেক সংগ্রামের সাথে যুদ্ধ।

সিলেট প্রেসকাব ও একটি ¯^প্নের অপমৃত্যু:

হয়ত ভাবছেন এটি কেন লিখলাম। আসলে মানুষ যখন তার দুঃখ কষ্ট কারো সাথে ভাগ করতে চায় তখন তার পুরোটাই ভাগ করা উচিত। আমি যখন অনেক ছোট তখন থেকেই সাংবাদিকদের কাতারে দাড়াতাম। কখনও প্লেকার্ড হাতে, কখনবা রাস্তায় বাবা ও পরিচিত কোনো আংকেল হাত ধরে মানববন্ধনের সারিতে আমাকে দেখা যেত। আজকের বড় বড় সাংবাদিকদের সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। অনেকের নিয়মিত যাতাযাত ছিল আমাদের বাসা। আমার বাবা সেই সব সাংবাদিকদের খুব ভালবাসতেন, আর ভালবাসতেন সিলেট প্রেসকাবকে। কিন্তু আজ কিছু ¯^ার্থšে^সী সাংবাদিক আর সিলেট প্রেসকাবকেই আমি মনে করি আমার বাবার হন্তারক। যে সব কারণে আমার সহজ সরল নিরপরাদ বাবা তিলে তিলে যন্ত্রনায় মৃত্যুকে বরন করে আজ কবরে ঘুমিয়ে আছে এর মূল নেপ্যথে রয়েছে সিলেটের কতিপয় মুখোশধারী, কালোবাজারী, সাংবাদিক নামিয় জন্তুরা।

ঐতিহ্যবাহী সিলেট প্রেসকাবের সাধারণ সদস্য হিসাবে আমার বাবা হারিস মোহাম্মদ প্রায় ২০ বছর ধরে জড়িত ছিলেন। এক জীবনে ২০ বছর অনেক সময়। জীবনের প্রায় ৩২ বছর ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন দু মুঠো ভাতের জন্য। বয়সে বড়দের শ্রদ্ধা বা ছোটদের আদর ভালোবাসা দিতে কখনো কার্পন্য করেননি আমার বাবা। প্রেসকাবের বা সংবাদপত্র-সাংবাদিকদের সার্থের জন্য বহু শ্রম দিয়েছেন তিনি। সিলেটসহ দেশের সকল নির্যাতিত সাংবাদিকদের পে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। এরশাদের জর“রী অবস্থা ভঙ্গ করে দেশের কোথাও মিছিল সমাবেশ না হলেও ৯০-এর নবে¤^রের চূড়াš— সময়ে আমার বাবার প্র¯—াবের প্রেেিত সিলেটের সাংবাদিক সমাজ বন্দুকের মুখে মিছিল-সমাবেশ করেছিলেন। আমার বাবা সিলেট প্রেসকাবের সদস্য হওয়ার বিনিময়ে প্রতিদান চাননি কখনও। একজন ভূমিহীন হিসাবে অন্যান্য সাংবাদিকদের জন্য একখন্ড ভূমি পাওয়ার জন্য প্রায় ১৬ বছর ধরে বহূ চেষ্টা করেও তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই জমি দেয়ার কথা বলে এবং দু:স্থ সাংবাদিকদের কল্যাণের নামে বিভিন্ন সময়ে কাব কর্মকর্তারা নিরবে চাঁদাবাজি করেছেন। কয়েকজনতো প্রায় ‘জিরো থেকে হিরো’ বনে গেছেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কয়েকজন সাংবাদিক কোটিপতি হলেন কি ভাবে? এসব সিলেটের প্রায় সকল সাংবাদিকেরই অজানা নয়।

আমার বাবা সিলেটের মাটি, সিলেটের মানুষকে খুবই ভালবাসতেন। ভালবাসার বিনিময়ে অনেক ভালবাসা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু যাদের জন্য আমার বাবার এত ত্যাগ, এত সংগ্রাম, সেই সাংবাদিক সমাজই আজ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। বাবার শিক্ষা, দীক্ষায় আজ যারা প্রতিষ্টিত এমন কেউই কখনও আমাদের খোজ রাখেনি। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আমার বাবা, আমাদের পরিবার কারো দান বা দয়া চায়নি কখনও। এই সমাজে আজ সুদৃষ্টির বড়ই অভাব। সিলেট প্রেসকাব আমার বাবার জীবনকে মৃত্যুমুখে পতিত করেছিল। ২০০৫-২০০৬ সেসনে বাবা প্রেসকাবের কোষাধ্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ভোটের প্রতিদ্বন্ধিতায় ‘ সহ-সভাপতির্’ নির্বাচিত হয়েছিলেন আমার বাবা । কিন্তু তাকে সহ সভাপতির মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েও আমার বাবা দায়িত্ব পাননি। থলের বিড়ালের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে, ধরা পড়ে যাবেন সবাই, ঠিক ভয়টা ছিল এখানেই। যার কারণেই আমার বাবাকে সরানোর জন্য অনেকেই উঠে পড়ে লেগেছিলেন। যাতে তারা সব লুটে পুটে খেতে কোনো অসুবিধা না হয়। অতি তুচ্ছ পরিমানে এত সমান্য ঘটনা সাজিয়ে তারা পথের কাটা এত সহজে উপড়ে ফেলতে পারবে হয়ত তা কল্পনাও করেনি তারা। এটা শুধু মাত্র সম্ভব হয়েছে হারিস মোহাম্মদ সত্যিকারের একজন সুশিক্ষত, গণতš,¿ ও গঠণতন্ত্রে দীক্ষিত, সুবিচক্ষন মানুষ হওয়ার কারণে। বাবা যখন যা বলতে তা সামনা সামনিই বলতেন। প্রেসকাবের একজন সদস্য তার কোনো কথায় ক্ষদ্ধ হয়ে প্রেসকাবের নেতৃবৃন্দের নিকট কঠিন সাজা কামনা করেছিলেন। কিন্তু অনবিজ্ঞ গঠণতন্ত্র সর্ম্পকে অজ্ঞ তৎকালীন প্রেসকাবের মহোদয়বৃন্দরা বি¯—ারিত ঘটনা না জেনে বা তদš— না করেই আমার বাবাকে কাবের পিয়নের প থেকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল ! যা সম্পূর্ণই ছিল প্রেসকাবের গঠনতান্ত্রিক বা সাধারণ নিয়মে ইস্যুও বাইরে। এ কারণের বাবা সেই নোটিশ গ্রহণ করেননি। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমার বাবাকে প্রেসকাব থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া। এই সিলেট প্রেসকবের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। হয়ত বাবার কারণে এক সময় ছিল। আগে শুনেছিলাম সিলেট প্রেসকাবের গঠনতন্ত্র জাতীয় বা চট্টগ্রাম প্রেসকাবের গঠনতন্ত্রের হুবহু মিল রয়েছে। জানিনা হয়ত এখন ¯^ার্থšে^সী নেতাদের সুবিধার জন্য গত কয়েক বছরে সিলেট প্রেসকাবের গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা সংযোজন বা সংশোধন হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু গঠনতন্ত্রের কোথাও খুঁজে পেলাম না কারো মুখের কথার উপর ভিত্তি করে কাবের কোনো সদস্য তথা প্রথম সহ-সভাপতির নামে নোটিশ জারি হতে পারে। শুনেছিলাম নোটিশ জারির সঙ্গে সঙ্গে ৩ সদস্যের একটি তদš— কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সত্যি এসব বিষয় হাস্যকর তো বটেই মানহানিকরও মনে হয়েছিল। এত কিছুর পরও আমার বাবা কারো নিকট অভিযোগ বা বিচার প্রার্থী হতে যাননি। শুধু মাত্র নিজের সম্মানটা বাচাবার জন্য সিলেট প্রেসকবের প্রতি, সাংবাদিকদের প্রতি সুদীর্ঘ ২০ বছরের ভালবাসা আর সম্মান নিয়ে তিনি ¯ে^চ্ছায় কাবের নির্বাহী কমিটির প্রথম সহ-সভাপতির পদসহ কাবের সাধারণ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সেদিন হয়েছিল একটি জীবন আর কিছু ¯^প্নের অপমৃত্যু। যে দিন বাবা পদত্যাগ করেছিলেন তারিখ টা ছিল ত্রিপল লাকি সেভেন ০৭.০৭.০৭। আসলে অনেক ভালবাসলে পরিনতি মনে হয় এমনই হয়। সেই ব্যাথা আমার বাবা কখনও ভুলতে পারেননি। আমি জানি এই কষ্ট, এই যন্ত্রনা তাকে অনেক ভুগিয়েছিল। সেই সব মানুষ নামের অমানুষদের কথা ভাবলেই সত্যি বড় আফসোস লাগে। সত্যিকারের একজন ভালো মানুষকে তারা তিলে তলে শেষ করে দিয়েছে। শেষ বিচারে হয়ত এর ফল তারা পাবেই ।

মাঝে মাঝে দেয়ালে ঝুলে থাকা জড়পদার্থ ছবি টাকে ঝাপসা চোখে দেখি। মনে হয় বাবা সামনেই দাড়িঁয়ে আছে। সময়ের কাজ হল সামনে ছুটে চলা, কত অপেক্ষা প্রহর কেটেছে মনে হয়েছে একদিন বাবা হয়ত ফিরে আসবেই। বলবে হয়ত আমি মরিনি, আমি আছি থাকব আজিবন। মুহূর্তেই চুপসে যায় মনের ভেতরের অজানা ত্রীর্ব হুংকার। যখন ছবির মানুষটি অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে চোখে চোখ রেখে। তুমি বাবা তাই বলে কি পেরেছ এমন করে না বলে চলে যেতে। এখন রাস্তার ভীড়ে, লোকালয়ে, কীংবা আমার পথ চলার মাঝে আসে পাশে হাজারো মানুষের মাঝে আমি সেই বাবাকে খুজি যাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি , কিন্তু আমি খুজে পাইনা আমার সেই মিষ্টি মুখের বাবাটাকে। আমার গর্ব হয় আমি এমন বাবার সন্তান। বাবা কত কষ্ট করেছেন আমাদের জন্য। আমাদের লালন-পালন, লেখা পড়ার খরচ ও সহ গোটা সংসার চালাতে অনেক হিমসিম খেতে হত আমার বাবাকে। তারপরও নিজের বিবেক, শ্রম, মনুষ্যত ও সততার মহৎ গুনে তিনি গড়েছেন তার বর্নাট্যময় জীবনের ইতিহাস। সদা হাস্যজ্জল, বিনয়ি ছিলেন আমার বাবা। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন জীব, জগৎ, অন্যায়, অবিচার, এবং নিত্য দিনের মানুষের দূর্ভোগ এর কথা।মানুষ মরে গেলে রেখে যায় তার কর্ম ও সৃষ্টি। যদি কর্ম ভাল হয় মানুষ তার কর্মের মধ্যেই বেচে থাকে যুগ যুগ। জগৎ সংসার এর মায়া জাল এমনই এক জিনিস যা থেকে কখনও কেউ নিজেকে আলাদা করতে পারেনা। আমার বাবা নামের মানুষটি কে নিয়ে আমি প্রায়শ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাই। যার জীবনের মানে হল কষ্ট, দারিদ্রতা ও সংগ্রাম করে বেচে থাকা, কিভাবে একজন মানুষ সব ভুলে একটি কলমের শক্তিতে পাড় করে দিল জীবনের সমস্ত পথ। কত ঝড় এসেছে জীবনে হয়ত, সকল প্রতিকুলতা, দারিদ্রের কষাঘাতের দেয়াল চূর্ন করে আগুনে পুড়ে. প্রচন্ড রোদে, বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে একজন সোনার খাঁটি মানুষে রুপান্তরিত করছেন।বাবার হাসি মাখা মুখটা দেখলে মনে হতনা তার বুকের ভেতর কষ্টগুলো তাকে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে। সারাটা জীবন ছুটে বেরিয়েছেন এখানে ওখানে, দেশ থেকে দেশান্তরে।

বাবার খুব আফসোস করতেন একটা স্থায়ী ঠিকানার জন্য। এই জীবনে তো বাবা পাননি একটা কুড়ে ঘরের ও ঠিকানা করতে, তবে দিন জাহানের মালিক হয়ত তাকে পরজনমে একটা সুখের ঠিকানা দেবেন। কত পরম নিশ্চিন্তে আমার সরল সোজা বাবাটা কবরে ঘুমিয়ে আছে। মিথ্যে এই পৃথিবীটা আমার বাবাটাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিলনা। বড় ¯^ার্থপর এই পৃথিবী সেই সাথে মানুষ গুলোও। আমরা এখানে কিছু মানুষ দেখি যারা জীবনে শুধু দিয়েই গেল, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পেলনা। না পাবার ঝুলি তে আমার বাবার ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই জমা হয়নি। খুব মনে পড়ে প্রতিনিয়ত বাবাকে যখন শেষ দেখি সেই ক্ষনটির কথা। বলে বুঝাতে পারব না যে কষ্টের কত বড় ক্ষত আজ আমি বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। যাকে জীবনে প্রতি টা ক্ষন কাছে পেয়েছি, যে পরম মমতা দিয়ে ভালবাসায় আমাকে বড় করেছে, যে আমার সত্তার ¯^ত্বধিকারী, যার রক্ত আমার দেহে বয়ে বেড়াচ্ছে, সে কিভাবে সকল সর্ম্পক ছিন্ন করে সারা জীবনের জন্য আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এও কি সম্ভব ! বার বার মনে হয়েছিল বাবাকে কি আর কখন ও বাবা বলে ডাকতে পারবনা। বাবা কে কি আর কখন ও কিছু আবদার করতে পারনা। আর কখন আমার বাবা আমার কপালে চুমু দেবেনা। আমার বড় কষ্ট লাগে যখন অন্যদের বাবাদের কে দেখি। কেমন জানি তখন আমার নিজের কথা মনে হয়ে যায়, মনে হয় অদের কাছে সব চেয়ে বড় ঐশ্বর্য আমার দিকে চেয়ে জ্বল জ্বল করছে। নিজেকে নিঃ¯^ মনে হয় খুব।

বাবা তোমার সেই চলে যাওয়াই শেষ যাওয়া নয়। আমি আমার চারপাশে তোমাকে প্রতিনিয়ত অনুভব করি।তুমি আমার হৃদয়ে মিশে আছ। ঘরের প্রতিটি কোনে আমি তোমাকে আবিষ্কার করি। তোমার কাপড়ে আজ আমি তোমার দেহের গ্রাণ খুজিঁ। তোমাকে আড়াল করলে কি আমি বাচব। কিন্তু তোমার শুন্যতা আমি অনূভব করি যখন আমার খুব কষ্ট লাগে।রাতে ঘুমাতে গেলে মনে করি তুমি বাইরে কাজে ব্যাস্ত, অনেক রাত হবে আসতে। আর সকাল মনে করি তুমি তো পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে আছ । এভাবেই আমাদের দিন, মাস, বছর চলে যায়। যত বার আমি শ্বাস নেই ঠিক তত বারই তোমার কথা মনে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠা স্মৃতি গুলোই আজ আমার শেষ স¤^ল। আজ জীবনের এই র্দীঘ পথ পাড়ি দেবার জন্য বাবার মত বড় বন্ধুর বড় প্রয়োজন। এই র্দুগম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেত হোচঁট খেতে হচ্ছে। বাবা তার সব দায়িত্ব্য আমাকে দিয়ে গেছেন। আমি জানি না কতটুকু দায়িত্ব্য পালন করতে পারব। তবে আমার বাবার দোয়া আমার সাথেই আছে। আজ তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি জীবন হল কাটাঁযুক্ত কষ্টের দূর্গম সিড়িঁ। যা আমাকে ভেদ করে উপরে উঠতেই হবে। সবার দোয়া চাই জীবনে । ##

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

202106
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
ফেরারী মন লিখেছেন : পড়ে রীতিমত কষ্ট লাগলো অনেক। মানুষের চলে যাওয়ার জন্যই আসা। তারপরও কিছু কিছু প্রিয়জনকে চলে যেতে দিতে মন চায় না। হে আল্লাহ তুমি সকল বাবা মাকে বেহেশত নসিব করো। আমিন Praying Praying Praying

এমন করে লিখলে তো চোখের পানি আটকানো যায় না আপু Sad Sad
202108
০৩ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:১৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
203086
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৫৬
আইশা সিদ্দিকি লিখেছেন : আমি তো বাবা কে হারিয়ে আজ চুখের পানি ফেল, বাবা ভীষণ ভালবাসি তুমাকে..ধন্যবাদ সবাইকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File