দ্যা শ্যাডো কমান্ডার ফ্রম পার্সিয়া( পারস্যের সেই শ্যাডো কমান্ডার)

লিখেছেন লিখেছেন বশর সিদ্দিকী ০৮ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৪৮:১৭ দুপুর



সময়টা তখন ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ এর মাঝামাঝি যে কোন একটা বছর। আমেরিকা এবং তার পা চাটা কুকুর রেজা শাহ পাহলভির হাত থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত একটি রাস্ট্র গঠিত হয়েছে। এখনো পুরোপুরি ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি রাস্ট্রটি। ঠিক সেই মুহুর্তে সাদ্দাম নামক এক নরপিচাশ-এবং স্রেফ পাগল তার তৎকালিন প্রভু আমেরিকা এবং ইসরায়েলের নির্দেশে ইরান-ইরাক সিমান্তে শুরু করলো এক অস্বাভাবিক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের নাম ইরান-ইরাক যুদ্ধ।

সাদ্দাম এতটাই পাগল ছিল যে একের পর এক রাসায়নিক বোমা হামলা করে গ্রামের পর গ্রাম উজার করেদিচ্ছিল। উদ্যেশ্য তার একটাই ইরান দখল করা।

এই ধরনের এক কঠিন মুহুর্তে ইরানের তৎকালিন শাষক ইমাম খোমেনি ইরানের সামরিক বাহিনি আইআরজিসি কে নির্দেশ দেন নতুন আর একটি বাহিনি তৈরি করার জন্য। তাদের কাজ হবে ইরানের বাইরে। তারা সারা বিশ্বের সকল স্থানে কাজ করবে। যেখানেই সাধারন মুসলমানেরা নির্যাতন এবং অযথা হত্যাকান্ডের শিকার হবে এবং যদি সেখানে ইরানের কোন স্বার্থ থাকে তবেই তারা সেখানে ইন্টারফেয়ার করবে। প্রয়োজনে ফিজিক্যালি যুদ্ধ করবে সেই ফোর্স।

তাদের প্রথম টার্গেট ছিল ইরাকে কুর্দি জনগোস্ঠিকে অস্ত্র এবং সামরিক ট্রেনিং দিয়ে সাদ্দামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করানো এবং ইরানের সিমান্তে অবস্থিত সাদ্দামের সেনাবাহিনিকে হামলার পর হামলা করে বিপর্যস্ত করে তোলা। তারা যে কতটুকু সফল সেটা পরবর্তিতে ১৯৮৮ সালে সাদ্দামের লেজগুটানো দেখেই বুঝা যায়। তবে আমার ধারনা সাদ্দাম লেজ গুটানোর পর পরই কুর্দিদেরকে সহোযোগিতা করা বন্ধ করে দেয় কুদস ফোর্স। ফলে তারা আবার সাদ্দামের হাতে বেদম মার খায়। ইরান যদি সামান্য একটু চেস্টাও করত তাহলেও সাদ্দামকে ক্ষমতা থেকে সরতে হত না। কিন্তু তারা সেটা করবে না কারন সাদ্দাম ইরানের সাধারন মানুষের সাথে যেই অমানবিক আচরন কাজ রেছে রাসায়নিক বোমা হামলা চালিয়ে তাতে তার এবং তার সেনাবাহিনির এটাই প্রাপ্য ছিল।

কুদস ফোর্স পরবর্তিতে লেবাননে শিয়া জনগোস্ঠিকে একত্রিত করে একটা প্লাটফর্মে আনার চেস্টা চালাতে থাকে। এ কাজে তাদের সহোযোগিতা করে সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদ। তারা তাদের কর্মকান্ড বিস্তৃত করে পাকিস্তানের তালেবান হতে শুরু করে হামাস, হিজবুল্লাহ, বসনিয়া সহ পৃথিবির অনেক দেশের তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে।



তবে তাদের একটি বিশেষ শাখা কাজ করে শুধু মাত্র ফিলিস্তিনের হামাসকে নিয়ে। এই শাখাটির একমাত্র কাজ হচ্ছে হামাসকে সর্বরকম সহযোগিতা করা। সেটা অস্ত্র হোক, সামরিক সরঞ্জামাদি হোক বা ট্রেইনিং হোক। ইরানের যত রকম সামরিক সরঞ্জামাদি আছে তার ফিল্ড টেস্ট করার একটা প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে হামাস এবং হিজবুল্লাহ

যার সম্পর্কে কথা বলার জন্য এত কিছু তিনি হচ্ছে মেজর জেনারেল কাশেম সুলাইমানি। তিনি বর্তমানে এই কুদস ফোর্সের প্রধান। এই ভদ্রলোককে আমেরিকা, ইসরাইল সহ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক এবং বেসামরিক সংবাদ সংস্থা গুলো শ্যাডো কমান্ডার হিসাবে ডাকে। এটার একটা প্রধান কারন হচ্ছে তার কাজের স্ট্রাটেজি এবং সাফল্য।

কুদস ফোর্সের বেশ কয়েকটি শাখা আছে। এর মেধ্য মধ্যপ্রাচ্য শাখাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কাশেম সোলাইমানির সাফল্য শুরু হয় সাদ্দাম হোসেনের পতনের মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানই একমাত্র দেশ যারা সাদ্দামের পতনের জন্য আমেরিকাকে এক্টিভলি সহোযোগিতা করেছে। সেখানে এই সোলাইমানি ছিলেন প্রধান অস্ত্র। তিনি প্রথমেই সেখানকার শিয়া এবং অল্প কিছু সুন্নি জনগোস্ঠির প্রধান সব নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে আমেরিকান বাহিনিকে সহোযোগিতা করতে উদ্ধুদ্ধ করেন। এই মানুষ গুলো সাদ্দামের অপশাষেনের ভিক্টিম ছিল। তাই তারা খুব সহজেই সাদ্দামকে ছুরে ফেলে দেয়। পরবর্তিতে ইরাকে শিয়া পন্থি একটা সরকার বসানো এবং সেটাকে পুতুলের মত ইরান থেকে কন্ট্রোল করাও এই সুলাইমানির আর একটা মারাত্মক স্ট্রাটেজি এবং সফলতা



আমার কাছে মনে হয় কাশেম সুলাইমানির ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে হিজবুল্লাহ। খুব ছোট একটা সামান্য বিদ্রোহি দলকে তিনি আস্তে আস্তে ট্রেনিং, অস্ত্র, রসদ সহ সবকিছু দিয়ে তিলে তিলে একটা আস্ত সেনাবাহিনি হিসাবে গরে তুলেন। দেয়া হয় বিপুল পরিমানে অস্ত্র এবং আরো দেয়া হয় অস্ত্র তৈরির জন্য সামরিক কারখানা নির্মানের ব্যাবস্থা।

২০০৬ সালে ইসরাইলি সামরিক বাহিনি লেবানন দখল করতে গেলেই সারা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় সামান্য একটা জঙ্গি গোস্ঠি পৃথিবীর সবচেয়ে মডার্ন মিলিটারি ফোর্সকে মরুভুমির বালু খাওয়াইয়া আবার ফেরত ডেরায় পাঠিয়ে দেয়। ধারনা করা হয় হিজবুল্লাহর অভিনব বাংকার আইডিয়াটা এই জেনারেল সাহেবের মাথা থেকে এসেছে। হিজবুল্লাহকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে লেবাননে হালকার উপরে ঝাপসা একটা এসাসিনেশন চালানো হইছিল। সেটাও করা হয়েছে এই লোকে পরামশ্যে। আসলে হিজবুল্লাহকে ইরান মধ্যপ্রাচে নিজেদের একটা প্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনি হিসাবে ব্যাবহার করতে চাইছিল।

২০০৯ সালে ইসরাইল যখন গাজায় আক্রমন শুরু করে। ইসরাইলের ধারনা ছিল খুব সহজেই এই জঙ্গি গোস্ঠিকে গুরিয়ে দেবে। কিন্তু সেখানেও বাধার দেয়াল হয়ে দারান এই কাশেম সোলাইমানি। তার অসাধারন মিলিটারি ট্যাকটিস সবসময় হামাস পুর্নাঙ্গরুপে অনুসরন এবং অনুকরন করে। ফলে পৃথিবীর সেরা একটা মিলিটারি ফোর্স আবারও ফেরত ডেরায় যেতে বাধ্য হয়।



২০১১ তে সিরিয়াতে ইসরাইল এবং তার দোষর সৌদি আরবের পালিত কুকুর বাল-কায়দা এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনির কিছু সদস্য যুদ্ধ শুরু করলে প্রথমে কুদস ফোর্স পুরো বিষয়টি নিবির পর্যবেক্ষন চালায়। কিন্তু সিরিয় সেনাবাহিনি আস্তে আস্তে প্রচন্ড মার খেতে থাকে। বাশার আল আসাদের অবস্থা যখন বেগতিক হয়ে যায় তখনই আবার ফিল্ডে নামে জেনারেল সুলাইমানি। প্রথমেই তিনি সিরিয় সেনাবাহিনিকে পুনর্গঠন করান। বিষয়টা ছিল খুবই জটিল এবং ঝামেলা পুর্ন। এর পরই তিনি তার প্রধান অস্ত্র হিজবুল্লাহকে ব্যাবহার করেন। সিরিয়ার কুশাইর শহর দখল করার জন্য শহরের এক প্রান্ত থেকে সিরিয় বাহিনি এবং অন্য প্রান্ত থেকে হিজবুল্লাহ আক্রমন চালায়। তবে বাল-কায়দা কোন ভাবেই আন্দাজ করতে পারে নাই হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে জরিয়ে পরবে। এক ধাক্কায় সিরিয়ার এক সাইড বিদ্রোহি এবং বাল-কায়দা মুক্ত করে ফেলেন সুলাইমানি। আস্তে আস্তে সিরিয় সেনাবাহিনি পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রন নিতে সামর্থ্য হয়।

২০১২ সালে ইসরাইলি বাহিনি দ্বিতিয়া বারের মত গাজায় আগ্রাসি হয়ে উঠে। কিন্তু এইবার সুলাইমানি তার কাজ আগে সেরে ফেলেছেন। তিনি খুব কৌশনে ইরানে তৃতীয় শ্রেনির গাদর শ্রেনির কিছু মিসাইল হামাসের হাতে তুলে দেন। মুলত লক্ষ ছিল আয়রন ডোম এর লক্ষ ভেদ করা। মজার বিষয় হচ্ছে ইসরাইল যুদ্ধ বিরতিতে যাওয়া আগের দিন অনেক গুলো মিসাইল ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত করে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি তেলআবিব এ গিয়ে পরে। এগুলো সবই ছিল ইরানি সেই মিসাইল। এবং ভতি সন্ত্রস্ত ইসরাইল তার নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে খুব দ্রুত যুদ্ধ বিরতিতে চলে যায়।

গত কয়েকদিনের চলমান গাজার যুদ্ধে সুলাইমানি আবার প্রমান করলেন কেন তাকে শ্যাডো কমান্ডার ডাকা হয় এবং কেন তিনি সর্বসেরা। ইরানের তৈরি সাইদাদ শ্রেনির স্নাইপার রাইফেল তিনি হামাসের হাতে তুলে দেন এবং তাদেরকে ট্রেনিং এর জন্য কুদস ফোর্স থেকে সহোযোগিতা করানোর ব্যাবস্থা করেন। ফলাফল হাতে নাতে পাওয়া গেল। হামাসের এক একটা স্নাইপার বুলেট যখন ইসরাইলি সৈন্যদের বুকে বিদ্ধ হচ্ছিল তখন সেটা সৌদি রাজা হয়ে বাল-কায়দার প্রধান এবং আইএসআইএল এর খলিফার বুকে বিদ্ধ হচ্ছিল। কারন সবগুলা তো একই সুতায় বাধা।

আমি মনে করি সুলাইামানির সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা হচ্ছে আইএসআইএল। ইরাকে এই শয়তানের দলের কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনি ইরাকি বাহিনিকে সেই ভাবে সতর্ক করতে পারেন নাই। যার ফলে ইরাকি বাহিনি হঠাৎ করে আসা এই ইসরাইল বেইজড দলটারে সামাল দিতে পারে নাই। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল আইএসআইএল যে ইসরাইলের সরাসরি সহোযোগিতা নিয়ে সাদ্দামের সেই সামরিক কর্মকর্তগুলারে নিয়া মাঠে নামছে সেটাই কেউ বুঝতে পারে নাই প্রথম দিকে। এবং আমার মনে হয় এটাই তার ক্যারিয়ারের একটা ব্যার্থতা হিসাবে থাকবে। তবে যদি ইরাকি বাহিনি এই কুকুরের খামারটিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎখাত করতে চায় তবে আমার মনে হয় তাদেরকে অবশ্যই কুদস ফোর্স এবং তার কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলাইমানির পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় ব্যার্থ হয়ে ফেরত আসতে হবে।



সুলাইমানি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় আধুনিক এই বিশ্বে ইরানকে বৈশ্বিক ভাবে সামরিক দিক দিয়ে একটি শক্তিশালি রাস্ট্র হিসাবে দার করানোর জন্য তিনি ইরানের একটি অস্ত্র। তার অসাধারন মেধা, নিবিড় পর্যবেক্ষন এবং মুল্যবান পরামর্শ মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি, তাদের দোসর চোউদিআরব এবং তাদের পালিত কুকুর বাল-কায়দাকে ব্যাপক ব্যাকফুটে ফেলে দিছে। এছারা ইসরাইলের মধ্রপ্রাচ্য নিতির সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে এই কুদস ফোর্স এবং জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। তাকে হত্যা করার জন্য সমগ্র বিশ্বের কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টার উপরে বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থা মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। এর মধ্যে আছে সিআইএ, মোসাদ, সৌদি আরব, এমআইসিক্স এবং অবশ্যই ইসরাইল-সৌদির পোষা কুকুরের খামার বাল-কায়দা। আর এখানেই তার নামের আসল তাৎপর্য। অনেক অনেক বার গোয়েন্দা সংস্থা গুলো তারে মৃত্যু কনফার্ম করে শ্যম্পেইনের বোতল খুলছে। অনেক বার মোসাদ স্পেশাল অপারেশন চালাইছে এবং বাল-কায়দা আত্মঘাতি গারি বোমা হামলা চালাইছে। কিন্তু ঠিকই তিনি কিছুদিন পরে এমন সব প্রতিউত্তর দিছেন তাদেরকে যে সেই উৎসব উপহাতে পর্যবাসিত হইছে ইসরাইরের জন্য।

বিষয়: বিবিধ

২৮৫৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252302
০৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : একজন ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম আপনার লেখায়; তবে যুদ্ধের সমীকরণ বুঝতে এখনো সমস্যা থাকায় বিভিন্ন দলের সাথে এর এবং ইরানের সম্পর্ক কিভাবে আচ করতে পারলাম না খুব একটা। সেটা নিয়ে আরেকটা পোষ্ট দিয়েন সম্ভব হলে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File