"কর্পোরেট লাইফ (৪)

লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:৩৫:২৯ রাত



"বাবাকে কখনো সহ্য করতে পারতাম না। কাছে পেলেই ধর্মের বাণী শুনাতো । প্রচণ্ড ধার্মিক -বা- ধর্মভীরু হলে যা হয়! প্রচণ্ড অসন্তুষ্ঠ ছিল আমার প্রতি। আমার কর্পোরেট লাইফ ষ্টাইলটা পছন্দ ছিলোনা বাবার। খুব বিরক্ত লাগতো বাবার ধর্মান্ধ মৌলবাদী আচরণ। প্রায়ই মনে মনে বলতাম।- উফ! বাবা। উফ মা- তোমাদের জন্মটা আফগানীস্তানে বা ফিলিস্তিনে হলে বেশ যুৎসই হতো। আধুনিক বাবা মা হও। ইতিমধ্যে বাবাও জেনে গেছে ইরীনার সাথে লিভ-টুগেদার সম্পর্ক বিষয়টা। ফোনের উপর ফোন দিচ্ছে বাবা। খানিকটা লজ্জা ও ভয়ে রিসিভও করিনা। এদিকে ইরীনাও প্রেগন্যান্ট। কতবার বলেছি বুঝার চেষ্টা করো গ্লোবালাইজেশনের যুগে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে অবিবাহিত মেয়েরা প্রেগনেন্ট হওয়া আনকমন কিছুনা। বিভিন্ন বাম ছাত্র/ছাত্রী সংগঠনের দিকে তাকাও। লিভটুগদার-প্রেগন্যান্ট- এভরেশন-এগুলা নারী স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ অংশ। স্মার্ট তরুণীদের জন্য ফ্যাশন।

" ততবারই ইরীনার জবাব:- বাচ্চা হচ্ছে হোক। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে কী বিয়ের আগে বাচ্চা হয়না?। নাকি আমাকে ভালবাসোনা? বিয়েও করবা না? আমাকে শুধুই ইউজ করলা? ইরীনার কথা কখনো এড়িয়ে যেতাম। কখনো ইরীনার বিপরীতে হুঁ হুঁ করে যেতাম। বাবার উপর্যুপরি ফোনে বাধ্য হয়ে রিসিভ করি:-আসসালামু আলাইকুম, বাবা কী অবস্থা?

-হ্যাঁ এখনো মরিনাই। ছিঃ ছিঃ নোংরামী করার আগে একবারও ভাবলানা তুমি আমার ছেলে? তুমি আমার ছেলে হইয়া এমন ঘৃণ্য অ-কাজ করতে পারলা?। তোমারে কী জন্ম দিছিলাম জাহান্নামের আগুনে পোড়ার জন্য। মা-বাপরে জাহান্নামী করার জন্যে?। যদি মাইয়া রাজী থাকে আর যদি নিজের ভাল চাও আজই বিয়া করে বাড়িতে নিয়ে আসবা। অন্তত পাপের ওজন কিছুটা হলেও কমবে। আমার কথা না শুনে যদি আবারো নোংরামী করো। তবে

আমার সমস্ত সম্পত্তির আশা ছেড়ে দিয়ে করো।-

-ধার্মিক বাবার কঠোর নির্দেশ। সম্পত্তির হারানোর ভয়।

"বিয়ে করি। জন্ম হয় এক ফুটফুটে শিশু তাসনোভার। ইরীনাও গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট। বাবার ইচ্ছা ছিলো স্টাডি শেষে উনার ব্যাবসার হাল ধরবো। কিন্তু আমার স্বপ্ন কর্পোরেট অফিসে জব করবো। বহু খুঁজেছি। পাইনি। তাসনোভার জন্মের পরদিন সকালে বাবা আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বলেন: ঠিকানা মত চলে যাও। যদি চাকরী পছন্দ হয় বলবা। বাবার তদবিরে চাকরীও পাই। মফস্বল ছেড়ে শহরে আসি। সেটেল বাড়িতে যাই। ইরীনাকে আনতে। ভোরে শহরে ফিরবো অফিস আছে। রাতে মায়ের রুমে যাই। বিষণ্ণ মুখে মা-বাবা বসে। যেতেই আমার কপালে চুমু খেতে খেতে কান্না করেছিলো:। বিদায়ে আগ মুহুর্তে মা-বাবার ধর্মের বাণী।

"মা বলেছিলো:- বাবা বউকে নিয়ে যাচ্ছিস। যা। বউকে আগলে রাখিস। বউ- আর বই। নিজের এ-দুইটা জিনিস পরের হাতে গেলে ফেরত আসেনা। যদিও আসে আগের মত থাকেনা। বইয়ের সুরক্ষার জন্যে যেমন মলাট লাগে।জীবনের সুরক্ষার জন্য ধর্মের বিকল্প নাই। নিজের ধর্ম ভুলিস না বাপ...

"বাবা বলেছিলো: বাপধন শুনো। আমি জানি আমার কথা তোমার কাছে ভাল্লাগেনা। তবুও বলি। "মহান আল্লাহ স্পষ্ট বলেছে। "তোমাদের স্ত্রী তোমাদের কাছে শস্যক্ষেত্র" মনে রাখবা সশ্যক্ষেত্রে গেরস্থরা বেড়া না দিলে "গরু-ছাগলে"মন ভরে খায়। বউ নিয়ে যাচ্ছো যাও। ধর্ম কর্ম ভুইলো না বাপধন...

"মা-বাবার সামনে হুঁ হুঁ পর্যন্তই ছিলো আমার জবাব।

"কে শুনে কার কথা। লাগামহীন ঘোড়ার মতো চলছিল যান্ত্রিক নগরীর যান্ত্রিক জীবন। অফিস-টু-বাসা-টু- অফিস। যান্ত্রিক নগরীতে রোবটিক জীবন চক্র। দিনশেষে স্ত্রী-কন্যার মুখের হাসিতে রাজ্যের সুখ। ইরীনার আবদার রাখতে রাজ্যজয়ের আনন্দ পেতাম। তেমনি এক সন্ধ্যায় ইরীনা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী ভঙ্গীতে বলেছিলো:- ওগো..একটা আবদার রাখবা?

-তোমার আবদার কখনো ফালাইছি?

-তাসনোভার মাথায় হাত রাইখা প্রমিজ করো।

-মেয়ের মাথায় হাত রাখার কী আছে? যা বলবা বলো।

-তবুওও...

-হুম.. রাখলাম। কী বলবা বলো..

"-ইয়ে মানে... তোমায় না বলে পেপার চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখে সিভি জমা দিয়ে এপ্লাই করেছিলাম। আগামীকাল তারা ইন্টার্ভিউর জন্য ডেকেছে। জব কনফার্ম হলে নিষেধ করবানা প্লীজ...

-কিন্তু ইরীনা তাসনোভাকে দেখবে?

-ঐ যে... মর্জিনার মা, বিকেলে তো আমরাই...

"হুম, তোমার ইচ্ছা। তোমার স্বাধীনতা।- বলে অনুমতি দিয়ে দিই ইরীনাকে। যান্ত্রিক নগরীতে তখন দুজনই রোবট। প্রতিযোগীতাময় কর্পোরেট জীবন যেনো রেসের ঘোড়া। এখন দিনশেষে স্ত্রীর চুম্বনের সুখ খুঁজা যেনো অমাবস্যায় পুর্ণিমার চাঁদ খুঁজা। উপায় কী? এটাই কর্পোরেট লাইফ। মনে মনে ভাবি পরকিয়া মন্দ কিসে? রিসিপশনের দীয়া মেয়েটাও ইরীনার চেয়ে কোনো অংশে কম না। স্মার্ট ওয়াল্ডে পরকিয়ার চেয়ে মজাদার ফ্যাশন আর কিছু আছে বলে মনে হয়না। দিয়ার সাথে পরকিয়ায় সুখ নিতে থাকি। অবৈধ সুখ। হঠাৎ একদিন অফিসে যেয়ে শুনী আমি বরখাস্ত। বুঝতে বাকী নেই। এম-ডি সাহেব জেনে গেছে বিষয়টা। এম-ডি সাহেবও প্রচণ্ড ধার্মিক ছিলেন। আর কর্পোরেট জবই সাপ-লুডুর মতো। সকালে মই বেয়ে উপরে উঠো। বিকালে সাপের মুখে পরে নিচে নামো। উপায় নাই। এটাই জীবন। এতদিন লাগামহীন ঘোড়ার মতও ছুটতে ছুটতে ভুলে গিয়েছিলাম বাড়ির কথা। একবার ভুল করেও মনে করিনি বাড়িতে দু-জন "ফেরস্তা" আছে। চাকরী চলে যাওয়ার ৫-দিনের পর একভোরে এক ফোনকলে মনে পড়ে জনক-জননী নামক ২-জন ফেরেস্তার কথা। রিসিভ করতেই ভেজা ভেজা কন্ঠে:- তোর বাবা আর নাইরে...

"ইরীনা অফিসে। একা একাই দ্রুত ছুটে চলি বাড়িতে। চারপাশে স্বজনের আহাজারী। বারান্দায় শুয়ে আছে সাদা শুভ্র দাড়িওয়ালা নুরানী চেহারার মহান পুরুষ।- যার কথা জীবনেও আমলে নিইনি। ইচ্ছে হচ্ছিলো প্রচণ্ড জোড়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলি কখনো তোমার কথার বরখেলাপ করবো না, বাবা..

"দাফন-কাফন সম্পন্ন করি। শোকে আশপাশ ঝিমিয়ে গেছে। শান্তনা দিতে মায়ের রুমে প্রবেশ করি। মায়ের চেহারায় শোকের ছাপও দেখেনি। হয়তো কিছুক্ষণ আগে নামাজে কেঁদেছে। রুমে পা রাখতেই মায়ের জিজ্ঞাসা:- তুই একা? বউ কই?

মাকে-ইরীনা অফিসে বলার আগেই মা ঠাস! ঠাস!! করে আমার গালে...

"চলবে...

"পর্ব (১)

পর্ব (২)

পর্ব (৩)

বিষয়: রাজনীতি

১৯৩৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380570
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : কর্মজীবী স্ত্রীরা সংসারে টাকা খরচ করে না ।

তাই স্বামী কামাই করে এমন কোন স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া মানে ৪/৫ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটা পরিবারের পেটে লাথি মারা ।

আমাদের সরকারী বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানেরই উচিত এটা ভেবে দেখা যে ,

তারা যে চাকুরি দিচ্ছে , লোক নিচ্ছে , বেতন দিচ্ছে -- তাদের এটাও ভেবে দেখা উচিত যে এই টাকা তার এমপ্লয়ি পারিবারিক/সাংসারিক কাজে ব্যয় করছে কি না ?

কারণ আধুনিকতার নামে , নারী স্বাধীনতার নামে তারা যে তাদের প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে সে সব নারীদের >৯৫% এর স্বামী/বাবারা চাকুরী বা ব্যবসা করে , ফলে বেতনের এই টাকা ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহার হয় না ; সাংসারিক বা পারিবারিক কাজে তো দূরের কথা ।

যেখানে সংসারের দেখভাল করাই একজন স্ত্রীর মূল দুনিয়াবী দ্বায়িত্ব সেখানে সে আরেকজনের দ্বায়িত্ব পালন করছে !

স্ত্রীদেরকে বলা আছে স্বামীর অনুগত থাকতে কারণ স্বামী তার জন্য ব্যয় করে । এখন স্ত্রী যদি ইনকাম করে তাহলে স্বামীর সংসারের দেখভালও হয় না আর চাকরি করলেও তো সে স্বামীর সংসারের টাকা দিচ্ছে না ।

ফলে সব দিক দিয়েই স্বামী হয় লুজার।

চাকরি করা স্ত্রী স্বামীকে পাত্তাই দেয় না আর বেকার স্বামীকে তো গনাতেই আনবে না ।

কর্পোরেট জগতে মেয়েরা নিয়োগ পায় বা টিকে থাকে যে পন্থায়, সেটা পুরুষদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

মুসলমানদের দাম্পত্য , সাংসারিক ,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা আনতেই এই কর্পোরেট চাল বিধর্মীদের । আর ধর্মীয় বিধি নিষেধকে ভাঙ্গতে নারীদেরকেই বেশী উৎসাহী/আগ্রহী দেখা যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File