মুকুলের আম হওয়া থেকে মানুষও শিখতে পারে জীবনের প্রয়োজনে।

লিখেছেন লিখেছেন সায়িদ মাহমুদ ০৯ মার্চ, ২০১৪, ১০:২৩:২৯ রাত



চলছে ফাগুন, কোন ফাগুন? যে ফাগুনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে পাগল করে সুধার মত....” যদিও আজ ফাগুনের ২৫ তারিখ তবুও গাছে আম নেই, আছে আমের মুকুল। বিজ্ঞানিরা এর দায় চাপিয়েছেন জলবায়ু পরির্বতন বা ক্লাইমেট চেইনঞ্জের উপর। গ্রাম বাংলাদেশের এখনকার আকাশে বাতাসে চলছে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়

"আজি দোল্-ফাগুনের দোল্ লেগেছে

আমের বোলে দোলন-চাপায়।

মৌমাছিরা পলাশ ফুলের গেলাস ভরে মিউ পিয়ে যায়”

তবে রবীন্দ্রনাথের আম, এখনো গাছে না ঝুললেও “নজরুল বউয়ের” প্রিয় আমের মুকুলে বদলে গেছে আমার বাংলাদেশের রূপ, যে আমের মুকুলের জন্য, একসময়ের পৃথিবী শোসক “সাম্রাজ্যবাদি বৃটিশ” বিরোধী সাহসে দ্রোহের কবি নজরুলকে তার পিয়তমা “বউ” হুমকি দিয়ে বলেছেন

“কুসমী রং শাড়ি, চুড়ি বেলোয়ারি,

কিনে দে হাট থেকে, এনে দে মাঠ থেকে

বাবলা ফুল, আমের মুকুল

নৈলে রাধঁব না, বাঁধব না চুল।”



কোন এক বইতে পড়েছিলাম “আমের মুকুল হল বসন্ত দূত” তাই গাছে গাছে আমের মুকুল দেখে বুঝে গিয়েছিলাম বসন্ত চলে এসেছে। গাছগুলো যেভাবে ফুলে ফলে পল্লবে ভরে যাচ্ছে তাতে যে কেউ এর সত্যতা এতক্ষণে বুঝে নিয়েছেন। আমের বোল/মুকুল মানেই আর কয়টা দিন পর টকটকে রসালো ”ফজলি, ল্যাংড়া, গোলাপখাস, গোপালখাস, খিরাসপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর সহ নানান প্রজাতীর নানান স্বাদের আম”

আম যে শুধু ফল হিসেবে খাওয়া হয় তা নয়। তাইতো কবিদের কবি রবিন্দ্রনাথ লিখেছেন:

“ আম সত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলে দলি.......... “

আমকে দুধের সাথে মিশিয়ে হাতদিয়ে কচলে কচলে কিভাবে ভাতের সাথে খেতে হয়, সেই বিবরণই ঠাকুর সাহেব তার কবিতায় জানান দিয়েছেন।

আমের সাথে দুধ মিশিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলার কবি “নজরুল” কোন খাবার খেয়েছেন কি না জানিনা। তবে

“কচি আম-ঝোল-টক খাইয়া গিন্নি মায়,

বৌঝির সাথে করে টক্ষাই, টক্ষাই,

আইবুড়ো আইবুড়ি জল গেল ছ’গেলাস”

লিখে তার পরিচিত বৌঝিরা কি স্বাদ্, কি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা বর্ণনা করেছেন।

আম এবং আমগাছ যে শুধু রবীন্দ্র নজরুলের খোরাক হয়ে এসেছে তা নয়।

জীবনানন্দ দাশের কাছেও এসেছে তবে তা খাওয়া খাওয়িতে নয় পাখিদের সাথে, তাইতো তিনি লিখেছেন:

” দেখেছি হলুদ পাখি বহুক্ষণ থাকে চুপ করে,

নির্জন আমের ডালে দুলে যায়-

দুলে যায়-

বাতাসে বহুক্ষণ”

আম গাছে কি শুধু হলুদ পাখিরাই দোল খায়? না, তা কেন হবে? নজরুল বলেছেন আম গাছে

”মুহু মুহু বোলে কুহু কুহু কোয়েল

মুকুলিত আমের ডালে, গাল রেখে ফুলের গালে”

এতক্ষণে ভাবছেন “আম” বুঝি শুধু খাওয়ার জন্য এসেছে? “আমের” ডালে পাখিরা সব চুপি চুপি দোল খাবে কোকিলের কুহু কুহু সূরে সূরে? না, না, তা কেন হবে? এসব কিছুর চেয়েও আম মানুষের ভীষণ উপকারি:

আম একটি পুষ্টিকর ও অতি উপাদেয় ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আম থেকে ৮০ ক্যালোরি পুষ্টি পাওয়া যায়। সব জাতের আমেই প্রচুর পরিমাণ ভিটামিণ এ, বি, সি এবং ডি থাকে, ক্যারোটিনও থাকে প্রচুর পরিমাণে। সব বয়সেই আম খাওয়া যায়। তবে ডাক্তাররা বলেছেন বেশি না খেয়ে পরিমাণ মতো খেতে।

শুধু যে ভিটামিনের জন্য আম তাও কিন্তু নয়। আমে হয় আম সত্ত্ব, আমচুর, আচার, টক, পানীয়, জুস, জেলী, জ্যাম ইত্যাদী।

আমে এত স্বাদ এত ভিটামিন কেমনে হয়েছে ভাবছেন? হুম! >:( আমের এই স্বাদ, এই ভিটামিন, অর্জনের পেছনে আমের বোলকে সইতে হয়েছে কনকনে শীতের কুয়াশা, কাল বোশেখীর কঠিন শিলাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা, তারপরই ছোট্ট মুকুল থেকে সুস্বাদু রসে ভরপুর ভিটামিন যুক্ত আমে পরিণত হয়েছে।

তেমনিভাবে আমাদের জীবনেও যদি সুস্বাদু সুমধুরতা আনতে চাই, তাহলে আমের বোলের মত আমাদেরও পাড়িদিতে হবে, জীবনের রৌদ্র খরা, কাল বৈশাখীর শীলা বৃষ্টির মতো ভয়ঙ্কর সব লোভ, লালসা, অলসতার এই কঠিন জীবন । তারপরেই আমরা ছুটতে পারবো সাফল্যর দিকে ছুইতে পারব আখিরাতের কাঙ্খিত সফলতা ।

[এমনি এমনি সাফল্য যে ধরা দেয়না সেটি আমের বোল থেকে সুস্বাদু ভিটামিন যুক্ত আম হয়উঠার ভিতরে যে কঠিন সময় সংগ্রাম তারা পার করে সেখান থেকেও আমরা শিখতে পারি। ]

বিষয়: সাহিত্য

২৪৩০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

189612
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:২৫
মিডিয়া ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:০১
140750
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : হুম, ধন্যবাদ ফর ইন্সপিরিশন।
189622
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৪৪
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আসলেই শিক্ষনীয় , ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:০৩
140754
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : শুকরিয়া It's My Pleasure.
189625
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৪৭
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভালো লাগলো
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:০৪
140755
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : হুম ধন্যাবাদ ভাইয়া।
189665
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে বসন্ত নয় আমার পছন্দ গ্রিষ্ম মানে জৈষ্ঠ মাস। কারন তখন আমে থাকে স্বাদ। খাওয়া যায় মন ভরে। বরং এই মাসই একটু কষ্ট আমের মুকুলের কারনে একটু এলার্জি হয় আমার। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আম হচ্ছে সবচেয়ে সাস্থকর ফল। প্রয়োজনিয় ভিটামিন এবং রসা তৃষ্না নিবারন করে।
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৩
140858
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : কালকে খাওয়ালাইন ডিম পরটা আর চা, আর এখন আমের গান গা-চ্ছেন। কিচ্ছু কইতাম না "সবুজ" বদ্দা আ্পনি যে আমার উঠোনে এসেছেন এতেই আমি খুশি। "আলহামদুলিল্লাহ"
১০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:২৫
141018
আহমদ মুসা লিখেছেন : ভাই আমরা তখন কোথায় ছিলাম? খাওয়ার সময় একটা কাঠাও বিধলো দুজনের কারো গলায়! আসলে আমার কপালটাই মন্দ। খাওয়ার সময় খবর পাই না। যদি একটু সুগ্রাণও পেতাম তবে বুঝাইয়া দিতাম চুপি ‍চুপি দু’জনের খাওয়ার মঝা কারে কয়।
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৪৬
141106
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ডিম বা পরটা কোথাও কাঁটা থাকেনা...
189749
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:০৭
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : এখন যে আমার কাঁচা আমের ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে। সেটার কি হবে?
সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১১
140856
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : আমার নানুর বাড়িতে ১১টা আমের গাছ আছে। সেই গাছগুলোর সাথে আমার আমর ভাব অন্য ২১ জন নাতিনাতনিদের চেয়েও বেশি। আমার সাথে নানুবাড়ি গিয়ে ইচ্ছে মিঠাইতে পারেন ভাইয়া।
১০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৭
141047
ইকুইকবাল লিখেছেন : আমার বাসায় চলে আস খাওয়াব প্রিয় ভাই তোমাকে। একদম নিজ হাতে ভর্তা বানিয়ে বোঝলে? এত খাওয়ার প্রতি লোভ কেন!!! ভয় পেলে নাহ তোমাকে আবার পিটিয়ে ভর্তা বানাব ভাবছ? মোটেও না। তুমি আমার অনেক প্রিয় ব্লগার। বিশেষভাবে ছোটদের মাঝে। তোমার লেখা আমার ভাল লাগে। নতুন লেখলে লিংক দিবে। আর সায়িদ ভাই কিন্তু চাটগাইয়া। হিসেব করে খেতে চাইবে। কিপটা কিন্তু সে বোঝতে হবে
189801
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:২১
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল পিলাচ।
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৪
140860
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : আপনার মন্তব্যটিও আমার ভাল লেগেছে তাই আপনাকেও "পিলাচ"
190005
১০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আম! আম!! আম!!! এতো সুস্বাদু একটি বহু রকমের, বহু গুনের ফলকে জাতীয় ফল হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে কাঠাযুক্ত কাঠালকেই জাতীয় ফল হিসেবে কেন গ্রহণ করা হলো মুই বুইঝবার হারছিনে। আসলে আমাগো পলিসি মেকারদের মাথায় বোধ হয় কাঠালের চামড়ার মত ফুটো করা আছে।
190010
১০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৬
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : হুম, ধারুণ একটা প্রশ্ন করেছেন। যদি সময় পাই আম এবং কাঠাল দুটির তুলনা করে আরেকটি পোষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো ”গ্যাঞ্জাম” ভাইজান।
190039
১০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
ইকুইকবাল লিখেছেন : পিলাচ পিলাচ পিলাচ
১০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
141064
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান ভাইয়া।
এ ভালোবাসা রবের দান.........
ভালোবাসার বন্ধন আরো অটুট হোক। Happy Happy
আমিন
১০
190046
১০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৭
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : এটা আবার কোন শব্দের অংশ “ইকু” বদ্দা?
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:২৬
141143
ইকুইকবাল লিখেছেন : হাহ হা সাইদ সাহেব কে পেয়ে গেছি। ভালই লাগছে। বুঝে নিতে হয় অনেক কিছুর মর্মার্থ!!!
১১
190180
১০ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৫৪
১২
190339
১১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫১
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : আমাকে গুলাপ দিলেন কিন্তু আপনাকে দেওয়ার মতো তেমন কিছুই আমার নেই। যদি চট্রগ্রাম আসেন তাহলে চট্রগ্রামের অলি/গলি দেখিয়ে দিবো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File