বাঘ মামাদের নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ৩০ জুলাই, ২০১৫, ১১:২৩:১৯ রাত

সুন্দরবন এলাকায় বাঘের আক্রমণে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ২৫০ মানুষ। সেদিন এক ডকুমেন্টারিতে দেখলাম এক মহিলার স্বামীকে বাঘ ধরে নিয়ে যায়। পরে দেবরের সাথে সেই মহিলার বিয়ে হয়। দূর্ভাগ্যবশত সেই স্বামীকেও ধরে নিয়ে যায় আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা। বর্তমানে মহিলার ছেলে সুন্দরবনে কাজ করছে পেটের জ্বালায়। হয়তো তাকেও কোনও একদিন ধরে নিয়ে যাবে।

সুন্দরবনে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের থাবায় বিধবা হয়ে আছেন শত শত মহিলা। রয়েল বেঙ্গল টাইগারই একমাত্র মানুষ খেকো বাঘ। অন্যান্য বাঘেরা মানুষকে আক্রমণ করলেও তারা মানুষের মাংস খায়না। আমাদের এই বাঘ মানুষ খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই বার বার শিকারের টানে লোকালয়ে হানা দেয়। তবুও আমরা এই বাঘটাকে ভালবাসি। এদের রক্ষা করার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটা করার জন্য আন্দোলন করি। ভাল কথা।

অনেকের হয়তো খারাপ লাগবে। তবুও এই প্রশ্নটা করতে হয়, "মানুষের জীবনের চেয়ে কি বাঘের মূল্য বেশি?"

উত্তরটা কি হতে পারে?

একজন মানুষ হিসেবে অবশ্যই "না" ই হবে যথাযথ উত্তর।

তাহলে সমাধান কি?

মানুষ বাঁচাতে হলে সব বাঘ মেরে ফেলতে হবে?

জ্বী না। বাঘ মারতে হবে না। বাঘ আছেই মাত্র ১০৬ টা। কিছু মেরে সাফ করে দেয়া হয়েছে, কিছু না খেয়ে মারা গেছে আর কিছু ভারতে বেড়াতে গেছে।এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের বনসম্পদ।

বনের ভেতর পর্যাপ্ত খাদ্য না পেয়েই লোকালয়ে হানা দেয় বাঘ। ধরে নিয়ে যায় মানুষ। এই মানুষ গুলোর যাওয়ারও যায়গা নেই। আয় উপার্জনের একমাত্র ভরাসা এই সুন্দরবন। অথচ সরকার চাইলেই বনের বিপদজনক এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে এই মানুষদের পূনর্বাসন করতে পারে। আয় উপার্জনের জন্য কিছু চাকুরীরও ব্যবস্থা করতে পারে যাতে বনও বাঁচে, বাঘও বাঁচে আর মানুষও বাঁচে।

বন মন্ত্রণালয় যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করতো তাহলে আজকে এই বাঘের সংখ্যা অনেক বেশি থাকতো। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌবাহন চলাচল করে মালামাল নিয়ে। কিছুদিন আগেই তেল ভর্তি একটি ট্রলার ডুবে পুরো নদীটাই তৈলাক্ত করে দিয়েছে যা আমরা সবাই দেখেছি। এই এক ট্রলারডুবির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে হাজার হাজার জীবকূল। অথচ প্রশাসন বরাবরের মতোইই উদাসীন। এর উপর এখন তৈরি করা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার জ্বালানির মূল উপাদান কয়লা বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সুন্দরবনের ঠিক মাঝখানের নদীটি দিয়ে। ধীরে ধীরে নদীর পানি নষ্ট হতে থাকবে, মরতে থাকবে বনটি। বন্যপ্রাণী একদিনেই বিলুপ্ত হয়ে যায়না। বনের ভেতর জীবন ধারন বিরূপ হয়ে পড়লে, খাদ্যের অভাব দেখা দিলে, বন কেটে ছেটে ছোট হয়ে আসলে, বসত বাড়ি বেড়ে উঠলে ধীরে ধীরে বন্যপ্রাণীরা বিলুপ্ত হতে থাকে। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররাও এভাবেই বিলুপ্ত হচ্ছে।

বাঘ দিবসে অফিসে বসে বাঘ বাঁচাও, দেশ বাঁচাও মার্কা সমাবেশ করলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা গল্পের বাঘ মামার মতো আচরণ শুরু করে সুন্দরবনে ফিরে আসবেনা।

বনমন্ত্রণালয়কে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে আরও কার্যকর হতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

332826
৩১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৫:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জিব বৈচিত্র রক্ষা করা অবশ্যই জরুরি। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়াতে তাসমানিয়ান টাইগার নামে পরিচিত কুকুর জাতিয় এপেক্স প্রিডেটর জাতি টি গত শতাব্দির মাঝামাঝি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে এই দ্বিপটির পরিবেশ এর ভারসাম্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File