স্বপ্নময় পবিত্র মরুর পথে…!

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৬:০৩:০৭ সন্ধ্যা



আকাশছোঁয়া আজন্ম লালিত স্বপ্ন যেন বাস্তবের সীমানায়! একেবারে কাছাকাছি, দ্বারপ্রান্তে! বাংলাদেশ বিমান থেকে ধীরে ধীরে আমরা সৌদি আরবের পবিত্র ভূমি জেদ্দা বিমান বন্দরে অবতরন করলাম। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার বইছে মন ও মননে। কাঙ্ক্ষিত মক্কা মোকাররমায় কখন পৌঁছাব সেজন্য উতলা নয়নে উন্মুখ হয়ে রইলাম। স্বপ্নের বায়তুল্লাহ্‌র বাগিচার স্পর্শ কখন ভাগ্যে জুটবে সেজন্য আনচান করে উঠলো মন। একটু দেরী যেন হাজারো বছরের সমান মনে হতে লাগলো। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসে পৌঁছানোর পর হজ্জব্রত পালনের মত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে আগত মানুষগুলোকে বেশ চিন্তিত মনে হল। এরই মধ্যে ঘণ্টা পেরিয়ে গেল ইমিগ্রেশনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত কার্যক্রমে। বিশেষ করে ভাষার সমস্যা আমার কাছে খুবই প্রকট ও দুঃসহ বলে মনে হল। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হজ্বযাত্রীগণের দুর্ভোগ ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কথা বিবেচনায় রেখে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার আপগ্রেট হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা ইমিগ্রেশনে কর্মরত অফিসারগণ আরবীতে কমিউনিকেশন করছিলেন সকল হজ্জ্ব যাত্রীগণের সাথে। ইংলিশ কিংবা অন্য কোন ভাষা উনারা বোঝেন না। আরবী না জানা বাংলাদেশী হজ্জ্বযাত্রী মানুষগুলোর অবস্থা তখন খুবই করুণ ও দুর্দশাগ্রস্থ বলে প্রতীয়মান হল। অফিসারগণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারার কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো বয়োবৃদ্ধ শিশুসহ সর্বস্তরের ক্ষুধাতুর ও পরিশ্রান্ত হজ্জ্ব যাত্রীগণকে।

অবশেষে ইমিগ্রেশন শেষে অন্তরে আবারো তীব্র খুশীর ঝড় উঠলো। পাসপোর্টকে তখন মনে হল এক টুকরো হীরকখন্ড! জীবনে এই প্রথম আমার পবিত্র মক্কা মরুর দেশে আগমন এক মহতী উদ্দেশ্যে। যেখানে মানবকূলের বন্ধু আমাদের প্রিয়তম রাসূল (সাঃ) মুক্তির বারতা নিয়ে একদিন আবির্ভূত হয়েছিলেন। মুসলমানদের জন্য কত জানা-অজানা ইতিহাসের পবিত্র স্বর্গরাজ্য, কত সুখময় এবং রোমাঞ্চকর কাহিনী যা মানুষকে ভাবায়-আবেগাপ্লুত করে সেই মক্কাকে ঘিরে। সেইসাথে সেখানে মিশে আছে অনেক শোকগাঁথা দুঃখময় ইতিহাস, কত অবর্ণনীয় কষ্টের উপখ্যান! আনন্দে-ব্যথায়, উচ্ছ্বাসে-কষ্টে ও গভীর রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে হৃদয়ে একধরনের তুফানী কম্পন বয়ে যাচ্ছিল। আর সেইসাথে আল্লাহর রহমতের শোকর ও কৃতজ্ঞতার আবেগ যেন হৃদয় হতে উপচে পড়ছিল। হে মহান মুনিব! আপনার দরবারে এই অধমার অশেষ শোকরিয়া হে দয়াময় আল্লাহ!

এরপর আমাদের শ্রদ্ধেয় গাইড বাংলাদেশীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে আমাদেরকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানালেন। আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত হয়ে যার যার মত গোসল-ওযু সেরে নামায আদায় ও দুপুরের আহার গ্রহণের পর বাসের জন্য অপেক্ষমাণ থাকলাম। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরই সৌভাগ্যবশতঃ হঠাৎ কর্ণে পৌঁছাল তিন জনের কোন গ্রুপ এখানে আছেন কী? আমরা “তিনজন” বিনয়ের সাথে জানালে আমাদেরকে বাসে তুলে নিয়ে সাথেসাথেই ড্রাইভার পবিত্র মক্কা-মোকাররমার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পথিমধ্যে সকলের হৃদয় নিংড়ানো বলিষ্ঠ উচ্ছ্বসিত তালবিয়া ধ্বনি তখন বাসের ভিতরে গম গম করে উঠলো। সকলের সমস্ত ক্লান্তি ক্লেশ যেন মুহূর্তেই পালিয়ে গেল। মুখরিত হয়ে উঠলো বুলন্দ আওয়াজের এক অভিভূত করা পরিবেশ! আর তালবিয়ার মাঝে মাঝে সন্মানিত গাইডের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য, দোয়া আর মোনাজাতে আরও জীবন্ত হয়ে উঠলো সবকিছু। মুহূর্তগুলোর অনুভূতি অপূর্ব শিহরণ জাগিয়ে তুললো অন্তরে!

জেদ্দা থেকে মক্কার দূরত্ব ৯০ কিঃমিঃ। বাস ছুটে চলছে বৃক্ষ ও তরুলতাবিহীন মরু দেশের বিশাল বিস্তৃত পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। চারিদিকে ছোট বড় পাহাড় আর পাহাড়। কৌতূহলী উৎসুক হজ্বযাত্রীগণ একটু পর পর গাইডকে জিজ্ঞেস করেই চলেছেন আর কত দূরে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের কাবা! সুদৃশ্য আলো ঝলমলে কোন বিশাল অট্টালিকা দৃষ্টিগোচর হলেই কেউ কেউ এক বুক আশা নিয়ে অস্থির হয়ে তাকাচ্ছেন! কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত খুব কাছাকাছি ভেবে সবাই শিহরিত হচ্ছেন! আর আমি কান পেতে খুবই মনোযোগ সহকারে অন্তরাত্মার নয়ন মেলে সবকিছু প্রত্যক্ষ করছিলাম।

পরম প্রতীক্ষিত মুহূর্তের প্রবল আবেগ আমাকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে রেখেছিলো। আমার নবীজি (সাঃ) এর পবিত্র ভূমির কোন ক্ষুদ্র দৃশ্যও যেন চোখের আড়াল না হয়ে পড়ে সেজন্য সদা আমি বেশ সতর্ক ও আন্তরিক। চলন্ত বাসের সাথে আমিও চলছি এক প্রতিযোগী হয়ে। পথে পথে যানজটের বিশাল বহর। এরই মধ্যে রাত্রির আঁধার নেমে এসেছে। পথের দু’ধার বর্ণীল আলোর আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত। আলো ঝলমল কোন বিশাল উচ্চ ভবন সামনে পড়লেই সবারই কৌতূহল বেড়ে যাচ্ছে। বাস হঠাৎ থেমে গেলো একটি বিল্ডিং -এর সম্মুখে। মনে হল হয়ত আমরা হোটেলে পৌঁছেছি। কিন্তু না অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবারের শুকনা প্যাকেট ও পানীয় নিয়ে হাযির হলেন বেশ কয়েকজন মুসলিম ভাই। সবার মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হল। সবাই খেয়ে বেশ পরিতৃপ্ত ও স্বস্তিবোধ করলেন। তারপর আবার বাস গন্তব্য অভিমুখী। ক্ষণে ক্ষণে আশ্চর্য এক প্রেম ব্যাকুলতায় অধীর হয়ে উঠছিলাম যেন……।



বিষয়: বিবিধ

১৩৫৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381133
০৪ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:১৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশাআল্লাহ আপনার লেখা পড়তেই মন ছায় চমৎকার লেখা কাঙ্ক্ষিত মক্কা মোকাররমায় কখন পৌঁছাব সেজন্য উতলা নয়নে উন্মুখ ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:২৫
315302
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


প্রেরণা ও উৎসাহব্যঞ্জক মতামতসহ মূল্যবান প্রথম উপস্থিতির জন্য আন্তরিক মুরাকবাদ।


জাজাকাল্লাহু খাইর।
381139
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৯:০৬
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : হজ্ব নিয়ে আপনার অপার্থিব অনুভূতিগুলো আপনি খুবই আন্তরিকতার সাথে বলতে পারছেন|আমিও যেন অনুভব করছি! বিউটিফুল!
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:২৯
315303
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় তবুও আশাবাদী ভাইয়া।


আপনার সুন্দর হৃদয়গ্রাহী, প্রেরণাপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক মতামত লিখার কাননে পাথেয় হয়ে থাক।


বোনের জন্য দোয়ার আবেদন রইলো।


ভালো থাকুন। খুব ভালো।
381145
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০১:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। চলতে থাকুক। অত্যন্ত ভাল লাগল।
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৩২
315304
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় সবুজ ভাইয়া।


প্রেরণাপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক মতামত এবং মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক মুরাকবাদ।


সর্বাবস্থায় সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। খুব ভালো।
381147
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০১:২০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : মাশাআল্লাহ!সুন্দর স্মৃতিচারণ। আপনার বর্ণনার সাথে সাথে আমার মনেও সেইসব আলোড়ন সৃষ্টিকারী দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। জাযাকাল্লাহ...
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
315305
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় মিনহাজ ভাইয়া।


আপনার সুন্দর হৃদয়গ্রাহী, প্রেরণাপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক মতামত এবং মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক মুরাকবাদ।


সর্বাবস্থায় সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। খুব ভালো।
381204
০৮ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:১৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম আপি।
০৯ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ১০:৫৪
315329
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু স্নেহাশীলা ছোট বোন।


এতদিন পর? কেমন আছো? পড়ালেখাসহ সবকিছু ঠিক আছে তো?


দাওয়াত দিতে ভুলিও না কিন্তু!


সর্বাবস্থায় সুস্থ থাক, ভালো থাক। খুব ভালো। এই প্রার্থনা।


বোনের জন্যও দোয়ার আবেদন রইলো।


জাজাকাল্লাহু খাইর।
381207
০৯ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ১২:২৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ,আস সালামুআলাইকুম। আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।সম্মানিতা সিস্টার আমার খুব মারাত্মক একটা দরকারে আপনাকে শ্মরন করছি। আমি লন্ডনের SAIKH আব্দুস সালাম আজাদী ভায়ের সাথে খানিক আগে কথা বললাম। কিন্তু উনি প্রবল প্রচেষ্টার পরও সমাধান করতে পারলেন না। আপনার হালকা সাহায্য প্রয়োজন।যদি আপনি দয়া করে আমাকে একটা মেইল করতেন কৃতজ্ঞ থাকতাম।

০৯ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ১১:০৩
315330
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু সুপ্রিয় ছোট ভাই।


শ্রদ্ধেয় ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী ভায়ের সাথে একটু আগে আমারও কথা হয়েছে। আপনার সাহায্যে আসতে পারলাম না বলে খুবই দুঃখিত।
তবে সাহস, মনোবল ও ধৈর্য হারাবেন না কিছুতেই। আল্লাহ্‌ পাক যা করবেন আপনার মঙ্গল ও কল্যাণের জন্যই করবেন ইনশাআল্লাহ্‌।

ছোট ভাইয়ের এতটুকু উপকারে আসতে পারলে আমারও অনেক ভাল লাগতো ছোট ভাই।

আমারও ভীষণ খারাপ লাগছে!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File