Rose Rose “শিশুশিক্ষা” - অফোঁটা স্বপ্নকুঁড়ি Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৫:৫৯:০৭ বিকাল



আজও খুব মনে পড়ে চটি ছোট্ট একটি শিশুশিক্ষা বই যার প্রতিটি কথা ছিল অনেক অর্থবোধক, রুচিপূর্ণ এবং আবেদনময়ী। কচি মনে কথাগুলো দারুনভাবে রেখাপাত করতো। যেমন “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভালোভাবে চলি”। “উঠো শিশু মুখ ধোও পরো নিজ বেশ, আপন পাঠেতে মন করো হে নিবেশ” ইত্যাদি। যা শিক্ষণীয় এবং হৃদয়স্পর্শী। একজন অবুঝ মনের কচি পাঠককে ভাবতে শেখাতো সকালে ঘুম থেকে উঠে তার কী করণীয়। প্রতিদিনের কাজের তালিকায় তার হৃদয়ে সেগুলো গেঁথে থাকতো। যা একটি নরম শিশুর মন এবং মননশীলতাকে বিগলিত করে ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত পথে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করতো। দিনের শুরুতেই সুন্দর সুন্দর কথা ও ভাবের সুরগুলো মনে দোলা দিতো তাদের। অথচ আজকের শিশুদের জন্য যে পাঠ্যপুস্তক তৈরী করা হয়েছে তা পূর্বের আদর্শ এবং লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিষয়গুলো গভীরভাবে অনুধাবনের জন্য উদাহরণস্বরূপ বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তার কিছু নমুনা পেশ করা হলো। প্রসঙ্গত বলতে হয় কয়েকদিন আগে আগামী দিনের ভাবনাকে সামনে রেখে নিজেদের পরবাসী আপনজনদের জন্য কিছু বাংলা বাল্যশিক্ষা বই সংগ্রহ করতে হয়েছিলো। এই আশায় যে তারা ছোটবেলা থেকেই বাংলার সাথে পরিচিত হবে এবং বাংলাভাষা তথা সংস্কৃতিকে ভালবাসতে শিখবে। কিন্তু বইয়ের পাতা খুলে তিন বছরের শিশুটি যখন প্রথমেই জানতে চাচ্ছিল “অজগর” এবং “অলস” এর অর্থ। কারণ প্রথম স্বরবর্ণ ‘অ’ – তে ঊল্লেখ করা হয়েছে শব্দগুলো। শুধু তাই নয় সাথে একটি অলস বালকের ছবিও এঁটে দেয়া হয়েছে, যেখানে বইয়ের উপর মাথা রেখে ক্লান্ত অলস বালকটি ঘুমাচ্ছে। ছবিটি দেখে সেই শিশুটি নিজেও বই বিছানায় রেখে তার উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো আমিও অলস হবো। আমি তাকে যতই বলছিলাম অলসতা ভাল নয় সে কর্ণপাত না করে চোখ বুঝেই শুয়ে থাকলো।

পরবর্তীতে একই অবস্থার মুখামুখি হতে হয়েছে সেই কচি মনের মেয়েটির কাছে। যখন লক্ষ্য করলাম ‘ও – তে’ ওয়াদাভঙ্গ ছবিতে একটি ছেলে তার দুই কান ধরে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে, ‘ছ – তে’ ছলনা করা নাকের ডগায় ছোট্ট বল আটকিয়ে এবং মাথার হ্যাট ঊল্টো দিকে পরে বিস্ময়সূচক ভঙ্গীতে তাকিয়ে আছে, ‘ঝ – তে’ ঝগড়াতে একটি মেয়ে দুই কান ধরে আছে অপরাধীর হালতে। ‘ঠ – তে’ ঠাট্টার ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি মেয়ে তার দুই হাতের দুই আঙুল মুখের ভিতর পুরিয়ে দিয়ে দুদিক থেকে সজোরে টানছে। সাথে সাথে সেও দু হাতের আঙুল মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে টানা শুরু করে দিলো। আমি এ দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বইয়ের পাতা জুড়ে অসংখ্য নেগেটিভ শব্দের সাথে সাথে শিশুদের জন্য বৈসাদৃশ্যমূলক আপত্তিকর ছবি দেয়া হয়েছে যা শিশুটি দেখার সাথে সাথে নিজেও সেগুলো অনুশীলন করছিলো আর তাকে অনুসরণ করছিলো তারই দু’বছর বয়সী ভ্রাতা। পাশাপাশি আমাকেও করতে তারা উদ্বুদ্ধ করছিলো। অবশেষে পড়ানো বাদ দিয়ে অনেকক্ষণ আমি ঝিম মেরে তাদের অভিনয় দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণদের কথা!

মিডিয়াতে, চায়ের দোকানে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ অনেক মুখরোচক আলোচনা হলেও আমাদের আগামী দিনের প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য যে বিশুদ্ধ মুক্ত আলো বাতাস, পরিবেশ, শিক্ষা ও খাদ্য পাণীয় দরকার তা থেকে আমরা সম্পূর্ণ উদাসীন। শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যদানের অবস্থা এবং পরিবেশও তথৈবচ। এ যেন একই বৃন্তে অনেক অফোঁটা কুঁড়ি। আকাশের ঊজ্জ্বল নক্ষত্ররা এভাবেই আমাদের অলক্ষে খসে পড়ছে অযত্নে অবহেলায়। অঙ্কুরেই ধূলিসাৎ হচ্ছে আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নরা।

শিশুরা আগামী দিনের উজ্জ্বল অনাগত ভবিষ্যৎ একথা অনেকেই বিভিন্ন সভা সেমিনারে হরহামেশা বললেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা অবর্তমান। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা স্বপ্নটি স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। জীবনাদর্শের যে প্রকৃত প্রত্যাশা তাওহীদ এবং আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয় তা কোনভাবেই অর্জিত হচ্ছে না সঠিক পাঠ্যসূচীর অভাবে। সবর, সংযম, আদর্শ, ধৈর্য এসবের পরিবর্তে শেখানো হচ্ছে নাচ এবং গান। আসর জমানো হচ্ছে নৃত্য, বাদ্য বাজনা, অঙ্কন প্রতিযোগিতার। পাঠ্যসূচীতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে ইতিহাস বিকৃত ইসলামিক তথ্য অত্যন্ত জঘন্য ও আপত্তিকরভাবে। এভাবে শিক্ষার শুরুতেই নির্মল নিখুঁত আনন্দময় শিক্ষার পরিবর্তে কচি মনের অন্তরাত্মা ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে ভয়ংকর অজগরের ভয়ে। কচিপ্রাণ শিশুরা আসলে শিক্ষার নামে কোনপথে কোথায় যাচ্ছে ?! অত্যন্ত নরম কাঁদা মাটির মত তুলতুলে কোমল শিশু মনে আমরা কী বপণ করছি? ছোটবেলায় এ শিশুমনে আমরা কীসের আঁচড় দিচ্ছি যা আগামীর জন্য স্থায়ী, গাঢ় এবং মজবুতভাবে আসন গেড়ে থাকবে তাদের হৃদয়ের গভীরে?!

মাতাপিতা, শিক্ষক ও রাষ্ট্রের অভিভাবকসহ সকল সচেতন মহলের বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সাথে ভেবে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। আমরা কোনভাবেই এই স্বপ্নের কুঁড়িদেরকে দু’পায়ে দুমড়ে মুচড়ে পিষ্ট করতে পারিনা। চাইনা সমাজের পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট কিংবা আপদ হিসাবে নিজেদের আপনজনকে দেখতে কিংবা ভাবতে। অমিত সম্ভাবনাময় অনাগত শিশু সন্তানদের জন্য উত্তম শিক্ষার বীজ এখনই রোপণ করতে হবে আর এটা তাদের জন্মগত অধিকার।



বিষয়: বিবিধ

১৬৯৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299953
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
এইভাবেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন তার মৃত্যুর মুখে পেীছে গিয়েছে। তাই দেশের এই পরিস্থিতিতেও মানুষ নিরব রয়ে গেছে যথাযথ শিক্ষার অভাবে।
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:২২
242793
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ সবুজ ভাইয়া। । আমাদের সবাইকে যেকোন মূল্যেই হোক এই মৃত্যুপ্রায় শিশুদেরকে বাঁচাতে হবে অন্যথায় আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে দুনো কালেই। পরিত্রাণের একটি উপায় সামর্থ্য অনুযায়ী সচেতনতা গড়ে তোলা এবং অশুভ চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও কষ্ট করে পড়ে উৎসাহ এবং প্রেরণাময় অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
299955
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
নোমান২৯ লিখেছেন : লজ্জার লজ্জা শিরোনামে কিছু লিখতে চাইছিলাম এ অসংগতিগুলো নিয়ে ।আপনি লিখে ফেললেন Happy।আমাকে আর লিখতে হলো না Angel
এগুলো হচ্ছে কি সাম্রাজ্যবাদী/দাতাদেশগুলোর মাথায় পরিচালিত ।আর থার্ড ওয়ার্ল্ডের দেশগুলোর বুদ্ধিজীবীরা তো কিভাবে একটু এমেরিকায় স্যাটেল হবে অই ধান্ধায় থাকে সবসময় Time Out
ধন্যবাদ আপনাকে Rose
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৩৬
242794
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ নোমান২৯ ভাইয়া। আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর লিখার আন্তরিক সদিচ্ছা ও আগ্রহের কথা জেনে খুবই ভালো লাগলো। অনেক কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় লিখার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাদ দিতে হয়েছে লিখাটি দীর্ঘ হবে এই ভাবনা থেকে। তাই আমার মনে হয় আপনার লিখাটি আরও অন্যান্য অনেক দিক থেকে উপস্থাপিত হতে পারে।
বাহিরের দাতাদেশগুলোতো আমাদেরকে গিলে হজম করতে চাইবে কিন্তু আমাদের দেশ আমাদের প্রিয়জনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদেরকেই আগে ভাবতে হবে। তা না হলে তথাকথিত গোলাম মানসিকতার বুদ্ধিজীবীরা দেশকে বিক্রি করে দিতেও এতটুকু দ্বিধা করবে না।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও কষ্ট করে পড়ে উৎসাহ এবং প্রেরণাময় অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
299980
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৩
হককথা লিখেছেন : জনগুরুত্বসম্পন্ন পোষ্ট। ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৭
242809
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ হককথা ভাই। জাজাকাল্লহু খাইর আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
299998
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৪:১০
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হলে একটা জাতির ধ্বংসের জন্য আর কিছু লাগবে না !

ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।
১১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৩৩
242889
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ ভাইয়া। সেজন্যই তো পরিকল্পিত আয়োজন। আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

মঙ্গলময় সর্বাবস্থায় আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখুন এই কামনা করি। আমাদের সকলের এহজীবন এবং আখেরাত অনাবিল সুখ আর শান্তিময় হোক পরম করুণাময়ের নিকট এই প্রার্থনা রইলো।
Good Luck Good Luck Good Luck
300002
১০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:২৮
কাহাফ লিখেছেন :
আস্ সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ... শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!
অতীব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে দরদময় দৃষ্টি আকর্ষণ ভাবতে বাধ্য করবে সচেতন সমাজকে কিছুটা হলেও! জাযাকিল্লাহু খাইরান আপনাকে!
শুধু একটা প্রবাদ বাক্যই কানে বাজছে যেন-"কাঁচায় না নোয়ালে বাশ, পাকলে করে ঠাশ ঠাশ!"
কাঁদা মাটির নরম শিশু মনে চির কল্যাণের সমূহ সম্ভাবনার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে না পারলে ধ্বংশের অতলে তলিয়ে যাবেই সমাজ-সংসার!
সুমতি হোক সকলের-এই প্রার্থনা খোদার কাছে!

(শুরুতেই 'চটি ছোট্ট' সমার্থকের চটি শব্দ ব্যবহার আপনার লেখার সাথে মানানসই মনে হয়নি!স্যরি,মুহতারামা আপুজ্বী হিসেবেই বললাম!)
১১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৪০
242890
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ কাহাফ ভাইয়া। আপনার অসাধারণ মূল্যবান মন্তব্য আমার লিখাকে আলোকিত ও অনুপ্রাণিত করে সবসময় আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আপনার অতুলনীয় চমৎকার প্রবাদ বাক্যটি খুবই অর্থপূর্ণ। জাজাকাল্লহু খাইর।
আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সাথে উত্তম শব্দ ব্যবহারের নমুনা দিলে খুবই উপকৃত হতাম ভাইয়া।
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন।
Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
300079
১১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:০৬
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : ভাল লাগলো। বারাকাল্লাহু ফীক
১১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৪২
242891
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..............শ্রদ্ধেয় সুহৃদ মা. স. আযহারী ভাইয়া। আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File