পৃথিবী (৮)ঃ পিপড়া

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:২৪:০২ সন্ধ্যা



মাসুম আয়নার সামনে দাড়িয়ে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। নামাজ পড়েছে কিছু আগে। বন্ধুরা চলে আসবে কিছু পরে পোস্ট অফিসের সামনে। তারপর মিছিল। স্বৈরাচারের দানব-দোসরদের সামনে দাড়িয়ে প্রতিবাদ। ২০১৫ এর জানুয়ারির ঢাকা। শীতে ঢাকা ঢাকা। রক্তে মাখা রাজপথ। অনেক মানুষ দিব্যি সে রক্ত মাড়িয়ে চলে। কার কিছু হল তাদের কিছু যায় আসে না। কিছু মানুষ পুলিশের সাথে দাড়িয়ে আরও রক্ত চুষতে চায়। কিছু মানুষ প্রতিবাদ করে যায়। মাসুম প্রতিবাদীদের দলে।

মাসুম আয়নায় নিজকে দেখছে। আলো-আধারে আয়নায় নিজকে অন্য কোন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। যে অনেক রহস্যময় - দৈত্যরা যার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর মনে হল তার প্রানটি যদি ওই মানুষটির কাছে গচ্ছিত রাখা যেত তবে সে একটি বটি হাতে নিয়ে সোজা রক্তচোষা হাসিনাকে মারতে বের হত। সে যদি উড়তে পারত - তবে তার প্রাণ গচ্ছিত রাখতে হত না।

"পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে

উড়িয়া উড়িয়া মানুষ দেখ - ও আহারে।"

সে কি পিপিলিকা? না কি হাসিনার দল পিপিলিকা?

সে আয়নার মানুষকে জিজ্ঞাসা করছে, তুমি কে?

আয়না বলছে: আমি মাসুম।

সে বলছে, ও তাহলে তুমি ই আমি|

আয়না বলছে: নাহ! আমি আরেকজন। তোমার মত ই দেখতে।নামও মাসুম।

সে বলছে: আমি তোমার কাছে আমার প্রাণ যদি গচ্ছিত রাখত পারতাম তবে স্বৈরাচারকে হত্যা করতে যেতে পারতাম।

আয়না বলছে: তুমি কি জান, তোমাকে মারার পর আমাকে হত্যা করতে এই আয়নাকে গুড়া গুড়া করে চুর্ন করবে স্বৈরাচারীর দল।

**

রাস্তায় পুলিশ নিয়ে মায়া দাড়িয়ে আছে। লুঙ্গি মায়া। তার জামাই নারায়নগঞ্জে ৭ জন আওয়ামী নেতাকে টাকার লোভে নির্মমভাবে হত্যার পর জনরোষ থেকে বাচতে সরকারের আদর আপ্যায়নে আদৃত হচ্ছেন জেলখানায়। শ্বশুর হেডম দেখাতে রাজপথে। লড়াকু সৈনিক। স্বৈরাচারের লড়াকুদের আজ রাজপথে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনেক। অর্জিত সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে তো! ছাত্রলীগের নেতা নাজমুল এসে হাজির।

নাজমুল: মায়া ভাই, কেমন আছেন?

মায়া: ভাল; তুমি কেমন? বিএনপির কোন টিকিটি নাই। ওদের কর্মীরা, জামায়াত শিবিরের লোকজন আন্দোলন করছে। কিন্তু বিএনপির নেতারা লুকায়া আছে। ধরাও খাবে জানান দিয়ে। ভাবে জেলে গেলে ই তো শান্তি; গতরে মাইর পরবে না। এজন্যই বৈলা দিসি কাউরে ধরলেই আগে ডিবি অফিসে পাঠাইতে। চিপা আগে। তারপর অন্যকথা।

নাজমুল (হাসি): ভাল করসেন।

নাজমুল (মনে মনে): বাইন... তুই নিজেরে কি ভাবস - ডিবি অফিস তোর বাপের? তোর গুষ্টিত শয়তানের জাত। তুই নিজরে ঢাকার মেয়র ভাবস? অথচ সবাই তোরে লুঙ্গি ভাবে তা জানস না?

মায়া (মনে মনে): কাইল্লা, তুই যে কার লোক তা কি জানি না? 'ক', 'খ' লিখতে পারবি কিনা সন্দেহ - গেসিলি জাতিসঙ্ঘে সরকারের সাথে। ফেইসবুকে চরায়ে দিসিলি সেই ছবি - ভাবছিলি বিরাট কিছু হইসস। হারামি, মেথরের বাচ্চা, টাকার বস্তা তো ব্যাঙ্কে আর পেটে ঢুকাইসস।

এক থানার ইনচার্জ আসছে।

পুলিশঃ স্যার স্লামালাইকুম।

মায়াঃ ওয়ালাইকুম। নাজমুল, দেখ দেখ; শুকনা টুটুইল্লা পুলিশের পোশাকে দেখ; এক বছরেই কি তরতাজা হইসে। বছর কয়েক আগেও আমাদের ঢাকা কাউন্সিলের মিটিঙয়ে দিন রাত কাজ করত। এখন দেশের জন্য দিন রাত কাজ করতেসে।

নাজমুল ভাবল বাঁশটা তাকে দেয় নাই তো! হারামি প্রায় ই বাঁশ দেয়। এজন্যই ভাগ্য এই বাইঞ্ছত্রে এত বড় বাঁশ দিসে। মেয়ের জামাই নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রমাণিত আসামী।

পুলিশঃ স্যার, কোন সমস্যা নাই। খালেদা জিয়ার আশেপাশে কেউ নাই। সব গা ঢাকা দিসে। তবে উপর থেকে নির্দেশ আছে যে, কেউ বাঁচার জন্য যোগাযোগ করলেও সহজে রেহাই পাবে না - ধরতে পারলে ই ডিবি অফিসে চালান।

উড়তে উড়তে কাকটা তখন ই মনের অজান্তে মলত্যাগ করল মায়ার গায়ে। গা ঝাড়তে ঝাড়তে মায়া বলল, 'ধুর, চড়ুই!'

"উড়িয়া উড়িয়া মানুষ দেখ - ও আহারে।"

**

পল্টন মোড়ে ২০ দলের মিছিল আসছে। একদল বিএনপির উত্তেজিত ট্রেইনার (এই প্রথম রাজপথে নামা) গাড়ি ভাঙ্গা শুরু করল। শিবিরের দলপতিদের থেকে ভাল বুদ্ধি আসলেও এরা তা নিল না।

মাগনা-চিনাবাদাম মাটিতে ফেলে ই ইন্সপেক্টর হারুন অর্ডার দিল -স্টার্ট শুটিং।

লীগের দামাল ছেলেরা পুলিশের বস্ত্রে আধুনিক অস্ত্রে নিরস্ত্রদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

মিছিল ভেঙ্গে যাচ্ছে। বাস পুড়ছে।

বাস পুড়ছে।

মানুষ জ্বলছে।

গুলি চলছে বুক বরাবর।

নগর পুরলে ও হাসিনা-ভবনে বাঁশির তান ফুরায় না। সে মধুর বাঁশির তান। আইন করে সে বাঁশির তান শোনা বাধ্যতামূলক কেয়ামত পর্যন্ত এই হীরক রাজার দেশে।

**

মাসুমকে পলটন থানায় সারা রাত নির্যাতন করা হয়েছে।

হারুন নামের চিনাবাদাম পুলিশ তার আঙ্গুল থেঁতলে দিয়েছে।

সে শুনছে অনবরত এক অন্ধ হয়ে যাওয়া ভাইয়ের তীব্র চিৎকার।

হারুন ওই ছেলের চোখ গেলে দিয়েছে।

চোখের ব্যথা মারাত্মক ব্যথা।

আর চোখ গেলে দেয়া - পায়ে শিকল বেধে রেখেছে - এক হাতে শার্ট খুলে চাপ দিয়ে রেখেছে তীব্র শীতের রাতে ছেলেটি।

রক্তের ছোপ জমে আছে এখান সেখান।

ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে গোপন অঙ্গে।

স্বাধীনতার সোল এজেন্ট - মুজিব ধর্ম-পূজারীরা সারারাত অত্যাচারের উপাসনা চালিয়েছে।

জিকিরে জিকিরে মুখ ভিজিয়ে রেখেছিল -

জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

সে যেন স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় দেখতে পাচ্ছে।

নাকি জীবন শেষ হয়ে যাবে সেই সূর্য দেখার আগেই - এমনটি তার মনে হচ্ছে।

কিন্তু কেন জানি তার কোন দুঃখ নেই। নেই চিন্তা।

নিজকে পিপড়া পিপড়া মনে হচ্ছেঃ

"পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে

উড়িয়া উড়িয়া মানুষ দেখ - ও আহারে।"

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299954
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File