ঘুষ ও সুদ- বর্তমান সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী

লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০২:৩৫:৫৬ রাত

ইসলামে ঘুষ দেওয়া নেওয়া উভয়ই হারাম। বর্তমান সমাজে ঘুষ বিরোধী মানসিকতা গড়ে উঠেছে এটা অবশ্য ভালো। অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসন বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সবাই ঘুষ আদান-প্রদানের প্রতি ব্যক্তিগত বা সামাজিক ভাবে নিরুৎসাহিত করছে। ঘুষের ভয়াবহতা বুঝাতে আমরা যেমন সামাজিক ও মানবিক কারন তুলে ধরি ঠিক আরও গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় কারন উল্লেখ করি। কারোর মনে ভয় জাগাতে শেষ বিচারের কথা মনে করিয়ে দেয়, যে ঘুষ নিলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে পাকড়াও করবেন। যদিও সমাজে ঘুষ কমছে না তবুও ঘুষ একটি খারাব জিনিস- কমপক্ষে এই মানসিকতা সবারই গড়ে উঠেছে।

কিন্তু সমাজে আরেকটি বড় অন্যায় ও পাপ রয়েছে তা হল সুদ। ইসলামে সুদ আদান-প্রদান, সুদের হিসাব রক্ষণ এবং সুদের সাক্ষী দেওয়া সবই হারাম। হ্যাঁ ঘুষ একটি কবিরা গুনাহ কিন্তু সুদ ঘুষের চাইতেও বড় কবিরা গুনাহ। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন- "সুদের ৭০ টি গুনাহ। তন্নধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো নিজ মাকে বিয়ে করার পাপের সমান।" ঘুষের প্রতি সমাজের যে মানসিকতা সুদের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো । ঘুষের ফলে সমাজ ও মানবতার যে ক্ষতি হয় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি ক্ষতি হয় সুদের জন্যে। অন্তর্দৃষ্টির অন্ধ সেকুলার মানসিকতার লোকেরা এটা বুঝবে না। বরং যেখানে তারা ঘুষকে বর্জন করতে উপদেশ দিচ্ছে অন্যদিকে সুদের প্রতি উৎসাহিত করছে। সবাই সুদের জন্য মার্কেটিং করছে, যেন এরা সুদের ফেরিওয়ালা, সুদের দালাল। কেউ সুদের বিরুদ্ধে বললে সমাজে তার নিন্দা করা হয়, কেউ ব্যাংকে জব করতে না চাইলে, তাকে পাগল মনে করা হয়। ঘুষের জন্য যদি আল্লাহর ভয়কে মনে করিয়ে দেয়া হয় তবে সুদের জন্য আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিতে হয়।

সমাজে ঘুষ গ্রহীতাকে খুব খারাব ভাবে দেখা হয় কিন্তু সুদ গ্রহীতাকে খুবই সম্মান করা হয়, যার ফিক্সড ডিপোজিট যত বেশি সে তত বেশি সম্মানের পাত্র। শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ করে বিজিনেস শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেন, সরকারি চাকরি করলে ঘুষ থেকে সাবধান থেকো, আর প্রাইভেট চাকরি করতে চাইলে প্রথমেই ব্যাংক জব কে প্রাধান্য দিও। ঘুষের টাকায় বাড়ি গাড়ি হলে তা অন্যায়, আর সুদের টাকায় বাড়ি গাড়ি হলে তা ন্যায় এবং সম্মানের ইনকাম। মানুষ বলে সে তো সরকারি চাকরি করে, অর্থাৎ নতুন কেনা গাড়িটি ঘুষ দিয়ে কিনেছে নিশ্চয়। প্রক্ষান্তরে সুদের মাধ্যমে গাড়ি কিনলে সে ইস্টাব্লিসড ম্যান। ছেলে ঘুষ খায় তার কাছে বিয়ে দেওয়া যাবে না, ব্যাংকে জব আছে এমন ব্যক্তিকেই বিয়ে দিতে হবে। কি নব্য জাহিলিয়াতে আমরা বসবাস করছি। এদের উপর শয়তানের আছর পড়েছে। আল্লাহ পবিত্র কুর'আনে বলেছেন- "যারা সুদ খায় (কিয়ামতের দিন) তারা কেবল সে ব্যক্তির মতো দণ্ডায়মান হয় যাকে শয়তান নিজের স্পর্শ দ্বারা মাতাল বানিয়ে দিয়েছে" (সুরা বাকারা), এই সেকুলার সমাজ নিজ স্বার্থদেখে ইসলামকে ব্যবহার করে।

ঘুষ ও সুদ উভয়টি বর্জনীয়। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ঘুষখোর, ঘুষদাতা (উভয়কেই) অভিশাপ করেছেন। অন্যদিকে আল্লাহ পবিত্র কুর'আনে ইরশাদ করেছেন, "অতঃপর যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও।" (সুরা বাকারাহ- ২৭৯)

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381707
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৭:৩১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ্‌
লেখাটি খুবই ভাল লেগেছে।
আমার এখন স্ট্রাগলিং সময় চলছে। তবে ব্যাংক জবের ব্যাপারে কখনই উতসাহী ছিলাম না। তবুও মাঝে মাঝে করার এক আধটু চিন্তা আসলেও একবার সামনে আগাই তো তিনবার পিছিয়ে যাই।
আর ঘুষ দেওয়ার তো প্রসঙ্গই আসেনা। আমি হালাল উপায়ে আয় করার জন্য খুব নিম্ম মানের কাজ করতে রাজি, তবু দুনিয়ার ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় বিধানকে তুচ্ছ করতে পারব না।
আল্লাহ্‌ সবাইকে বুঝার তাওফীক দিন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
315604
কায়সার আহমেদ (কায়েস) লিখেছেন : দুয়া করি আল্লাহ আপনাকে এতটা শক্তি ও সাহস দান করুক যাতে শয়তান প্ররোচনা করেও আপনাকে আল্লাহ ও তার রাসুল সা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে শয়তানের দলে শামিল না করতে পারে। আমিন
381708
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ দুপুর ১২:২২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : সুন্দর লিখা কিন্তু বর্তমান সমাজে যেসব যুবকেরা এসব এড়িয়ে হালাল পথে উপার্জন করতে চান, তাদের আয়ের পথ কি হওয়া উচিৎ? এব্যাপারে লিখা আশা করছি। আমি নিজেও বিবিএ-Finance and Banking এর স্টুডেন্ট ছিলাম আর বিজনেসের ছেলে-মেয়েদের দেখেছি, তাদের প্রধান পছন্দই থাকে ব্যাংক। আর এখন ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য বিভাগে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদেরও দেখছি ব্যাংকে চাকরির আশায় এমবিএ করছে কারণ সমাজে বিশ্বাস জন্মে গেছে, ব্যাংক মানেই বেশি বেতন, বিনা ইন্টারেস্টে গাড়ি-বাড়ির লোন, সামাজিক সন্মান। আমার বিবিএ লাইফটা খুবই বিরক্তি নিয়ে কেটেছে। আমার ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার কিন্তু যখন সেটা হলোনা তখন বিজনেসে আসা। আমি কখনো মনোযোগ দিতে পারতাম না পড়াশুনায়। হয়তো ক্লাসে টিচার এসে রিস্ক-রিটার্ণ-ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে লেকচার দিচ্ছেন- আমার মাথায় ঘুরছে: আল্লাহ কি পড়ছি আমি! যে শিক্ষা আপন মাকে বিয়ে করার মত জঘন্য গোনাহ। সুদ দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী ও লেখক সকলেই সমানভাবে দোষী এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী। হয়ত ক্লাসে ট্যাক্স নিয়ে লেকচার হচ্ছে: আমি ভাবছি ঈসা (আঃ) এসে ট্যাক্স উঠিয়ে দিবেন। শেয়ার, ডলার কেনা বেঁচা নিয়ে ক্লাস হচ্ছে আমি দেখছি কিভাবে তারা মুদ্রাব্যবস্হায় ধোঁকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে ইন্টার্ণি করার সময়: ট্রেনিং ক্লাসে আমি আইবিটিআরএ এর শরীয়াহ বোর্ডের একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম: ইসলামীক মুদ্রাব্যবস্হার ভিত্তি হল সোনা ও রুপার দিনার দিরহাম কিন্তু ইসলামী ব্যাংক দিনার-দিরহামের পরিবর্তে পেপার মানিকেই ভিত্তি ধরছে যা ডলার এর উপর নির্ভরশীল আর ওয়াল্ড ব্যাংকের আন্ডারেই ইসলামিক ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন পরিচালনা করতে হচ্ছে। আমার বিসনেস ইসলামিক প্রিন্সিপালস এর উপর নির্ভরশীল অথচ আমি কার্যত ডলার নির্ভর সুদী অর্থনীতির উপরেই নির্ভরশীল। তিনি আমার প্রশ্নে যথেষ্ট রেগে গিয়েছিলেন। এসব কথা এজন্যই বলা আমি একজন দ্বীনি ভাই এর কথা জানি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে Finance and Banking এ বিবিএ- এমবিএ করেছেন কিন্তু এসব হাজার প্রশ্নের জন্য তিনি পড়াশুনা নিয়ে হতাশায় ভুগতেন রেজাল্ট খুব খারাপ নিয়ে বের হলেন। হালাল বেটার জবের চেষ্ট করেও ব্যার্থ হচ্ছিলেন বারবার। শেষ পর্যন্ত তার কথা হয়ে গেল এমন: এই হালাল-হারাম বাছতে গেলে ২টা মাত্র পথ খোলা ১. বণে থাকতে হবে ২. গ্রামে গিয়ে হালচাষ। আমি কোনটাই চাইনা কারণ অন্যরা ভাল অবস্হায় থাকবে আমাকে নিয়ে কটাক্ষ করবে আর আমি তা দেখব সম্ভব না। শেষমেষ তিনিও গতানুগতিক পথেই হাটা শুরু করলেন। তাই দাজ্জালীয় পৃথিবীতে একজন যুবকের সঠিক আয়ের উৎস কি হওয়া উচিৎ? এটা নিয়ে লেখা হওয়া উচিৎ।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:২৮
315603
কায়সার আহমেদ (কায়েস) লিখেছেন : এটাই দুঃখ ও আফসোসের বিষয় আমার কাছে তেমন ভালো কোন আইডিয়া নেই। আমিও বিজিনেস ব্যাকগ্রান্ডের। BBA MBA করেছি। এখন CMA করছি। কেন পড়ছি নিজেও তা ভালো করে জানিনা তবে এই প্রফেশনের কোণ জব করার ইচ্ছে আমার নেই। যাইহোক, আমি মনে করি সবচেয়ে উত্তম হল কান্ট্রি সাইড গ্রামে হিজরত করা খেত খামার ইত্যাদির মাধ্যমে সারভাইভ করা। আর যদি তা না পারে তবে অল্পে তুষ্টি নিয়ে একটি হালাল জব করা বা ছোট ব্যবসায় করা যায়। হালাল ভাবে সেখানে অবশ্যই লাভ সীমিত হবে। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অবশ্যই সমাজ আমাকেও তাদের মতই জম্বি বানিয়ে দিবে হারামে নিয়ে যাবে। সমাজ বা সিস্টেম থেকে বাহিরে থাকা উচিত। নিজের জীবন থেকে নিজে খুশী থাকলেই হল কে কি বলল তা বিবেচ্য নেই। রাসুল সা বলেছেন একসময় ইসলামি আবার অপরিচিত হয়ে যাবে তখন এমন কিছু লোক থাকবে যারা স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে সঠিক ইসলামের কথা বলবে, এদের কে গুরাবা বল হয়। রাসুল সা এর প্রাথমিক জীবন থেকেই আমরা শিক্ষা পাই আল্লাহ যা বলেছেন তাই করতে হবে সমাজ বা সব জাহিলিয়াত আমাকে সেকেলে, অনাধুনিক, জঙ্গি যাই বলুক না কেন। ফিতনার সময় চলছে নিজেকে বাঁচানোই জরুরি। ফিতনার দিকে তাকালেও ফিতনা আমাকে গ্রাস করতে পারে।
381761
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:২০
হতভাগা লিখেছেন : আমরা কি সুদের সিস্টেমের বাইরে যেতে পারছি ?

ব্যাংকে টাকা রাখার ব্যাপারে বলেন কিংবা বাড়ি গাড়ি কিনতে বা যেখানে পড়াশুনা করছেন বা যেখান থেকে কেনাকাটা করছেন ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File