শেষ জামানার ফিতনা থেকে কে বেশি নিরাপদ?- দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্ব

লিখেছেন লিখেছেন কায়সার আহমেদ (কায়েস) ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৭:৩৪:৫৪ সন্ধ্যা

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ) বলেছেন- “অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়ানো বক্তির চেয়ে এবং দাঁড়ানো ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে এগিয়ে যাবে সে ফিতনায় জড়িত হয়ে পড়বে এবং ধ্বংস হবে। আর যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে বাঁচার কোন আশ্রয় পাবে সে যেন তথায় আশ্রয় গ্রহণ করে”। -(বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, মুসলিম শরিফ, নুয়াইম বিন হাম্মাদ -৩৪২)

আমরা বলতে পারি এই যুগে, একজন ঘরে বা মসজিদে অবস্থানকারী ব্যক্তি, রাস্তা-বাজার-অফিসমুখী ব্যক্তি থেকে; অফিসে সময় কাটানো ব্যক্তি, শপিং মলে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তির চেয়ে; ঘরে অবস্থান করা ব্যক্তি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম বা ফিতনা থেকে বেশি নিরাপদ। এখানে উত্তম মানে ফিতনার ব্যাপকতা ও চাপ তার কাছে অপেক্ষাকৃত কম পৌছবে বা নিরাপদ থাকবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা পাহাড়ে হিজরতকারী, গ্রামে বসবাসকারী অপেক্ষা; এবং গ্রামে বসবাসকারী, শহরে বসবাসকারী অপেক্ষা ফিতনা থেকে অধিক নিরাপদ।

এভাবেই আমরা বলতে পারি, যে ব্যক্তি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না সে মোবাইল ব্যবহারকারী অপেক্ষা; আবার সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারী, এন্ড্রয়েড বা স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী অপেক্ষা; এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অপেক্ষা ফিতনা থেকে অধিক নিরাপদ থাকবে।

বর্তমান যুগে ইনেকটিভ বা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি, সক্রিয় বা একটিভ ব্যক্তি অপেক্ষা; সহজ সরল জীবন- যাপনকারীরা, ব্যয়বুহুল জীবন- যাপনকারীর চেয়ে উত্তম। অপেক্ষাকৃত অনাধুনিক ব্যক্তিরা, আধুনিক ব্যক্তি থেকে; সমাজে কম মেলামেশাকারীরা, বেশি মেলামেশাকারী ব্যক্তিদের চেয়ে; স্বল্প শিক্ষিতরা, দুনিয়াবী উচ্চ শিক্ষিতদের অপেক্ষা ফিতনা থেকে বেশি নিরাপদ। তথা যে যত বেশী দুনিয়াবী কর্মের প্রতি ক্রিয়াশীল সে তত বেশী ফিতনার নিকটবর্তী।

ফিতনার অনেক প্রকার রয়েছে এই যুগে প্রতিদিন নিত্যনতুন এক ফিতনারর আবির্ভাব ঘটে এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে পরে। মাস চারেক আগে Prisma নামে একটি ফোটো এডিটিং এপ্লিকেশন রিলিজ হয়েছিল, এবং প্রথম দুই সপ্তাহেই এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে বাংলাদেশের মত একটা দেশের সাধারণ মানুষরা তো বটেই এমনকি অনেক দ্বীনদার শ্রেনীর, আলেমরাও নিজের প্রোফাইল পিকে প্রিসমা ইফেক্ট ব্যবহার করে। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের প্রায় ৫০% কে দেখেছি একটি হলেও প্রিসমা ইফেক্টের ছবি আপলোড করতে। এটা ভালো-মন্দ সে বিতর্কে যাব না তবে এটা এক প্রকারের ফিতনা। এভাবেই আমাদের মাঝে সেলফি জনপ্রিয় হয়েছিল, এটার অবস্থায় নাই বা বললাম। খেয়াল করুন কিভাবে ফিতনা বৃষ্টির মত করে আমাদের উপর পতিত হচ্ছে এবং আমাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ফিতনা আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে।

পূর্বে, টিভিতে খেলা দেখার ফতোয়ার বিষয়ে শুধু খেলাকেই মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হত। বর্তমানে খেলার সাথে নাচ গান, চেয়ারিং গার্লস, খেলার মাঝে অশ্লীল বিজ্ঞাপন ইত্যাদি হাজারো জিনিস জুড়ে যাচ্ছে। এখন খেলা দেখা যাবে কি না এই ফতোয়া দিতে গিয়ে মুখ্য খেলা কেই গৌণ মনে করে, নাচ-গান, অশ্লীলতাকে প্রাধান্যদিয়ে খেলা দেখার ফতোয়া দেয়া হয়। এভাবে আমরা বুঝতে পারি কয়েক বছরের ব্যবধানেই ফিতনা আমাদেরকে কতটা গ্রাস করছে। কয়েকমাস যাবৎ একধরনের হেয়ার স্টাইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- মাথার উপরে চুল রেখে, পিছনে এবং কানের উপরে এই তিন দিক থেকে চুল ছোট করে ছাটাই করার। হাদিসের ভাষ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে এমন চুল কাটা হারাম স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও হাজারো তরুণ, যুবকরা নির্দ্বিধায় এই হেয়ার স্টাইল রেখে চলছে। বিভিন্ন নতুন নতুন নেশা এসে যুবকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পর্ণগ্রাফী আজ প্রতিটা ফোনের মাধ্যমে প্রতিটা কিশোরদের হাতে পৌঁছে গেছে। ১০ বছরের শিশু ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করছে।

এছাড়া বাস্তব জীবনে এমন লক্ষ লক্ষ জানা-অজানা ফিতনা আছে। অনেক গুলো আমারা ফিতনা হিসেবে চিনতেও পারি না। মানুষ সারাদিনে এইরকম ফিতনার মাঝে আবদ্ধ থাকে। কিছু থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কিছুতে তার অগোচরেই জড়িয়ে পরে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,নবী করীম (ﷺ) বলেন-“অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ক্রমাগত ফেতনা আসার আগে-ই যা আমল করার -করে ফেলো।! মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে,বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে,সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।-” (মুসলিম-৩২৮)

আজ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিরক'এ জড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ ভণ্ডামি বা অজ্ঞতার দরুন কেউ দুর্বল ইমানের কারনে। হালালাইজড এর যুগে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করা হচ্ছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যা হালাল করেছেন তা হারাম করা হচ্ছে। সুদকে হালাল করা হয়েছে। মিথ্যা মতবাদকে হালাল করা হয়েছে এমনকি মদকেও হালাল করা হচ্ছে, ব্যাভিচারকে বিয়ের নাম দিয়ে হালাল করা হচ্ছে। সহজ জান্নাত লাভের আশায় কোন খারেজীদলে যোগ দিয়ে সহজে জাহান্নামী হয়ে যাচ্ছে। সুদে জড়িয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লিখাচ্ছে। মানুষ ধর্মীয় আহকাম-ফরজ-ইমান-কুর’আন-সুন্নাহ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে-নাজেনে, সজ্ঞানে-অজ্ঞানে, ঠাট্টা-মশকরায় পরিহাস বা বিদ্রুপপূর্ণ কথা বলে নিজের অজান্তেই কাফির হয়ে যাচ্ছে।

কেন এমন হচ্ছে? আমরা কোথায় চলছি? এই ছোট ছোট ফিতনা আমাদের কি, বড় ফিতনার দিকে নিয়ে যাবে না? এগুলোতেই আমরা দুর্বল, কিভাবে ইমান ধরে রাখবো, যখন প্রকাশ হবে মহাফিতনার।

লেখাটি 'দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্ব পর্ব ১৪ এর অংশ' ১৩ নাম্বার পর্ব পরে দেয়া হবে।

বিষয়: বিবিধ

২১২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381720
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ১২:২১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। ব্লগটা এখন মৃতপ্রায় তবুও যদি একজনও এই লেখার দ্বারা উপকারিত হয়, তাও অনেক। জাঝাক আল্লাহ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০১:৫২
315621
কায়সার আহমেদ (কায়েস) লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম। হুম জানি এটা এখন বধিরদের স্থান। এই লেখাটি প্রায় ৬ মাস আগের আমি মূলত ফেইসবুকেই লিখি। অনেকদিন পরে ব্লগের কথা মনে পড়ল। তাই কিছু লেখা কোপি করে শেয়ার করেছি। আবার চলে যাব। ওয়া ইয়্যাকা
381760
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:০৭
হতভাগা লিখেছেন : প্রযুক্তির ব্যবহার নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিকতার উপর ।

মোবাইলকে কেউ ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ খবর আদান প্রদানের কাজে আবার কেউ ব্যবহার করে খাজুইরা আলাপে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File