তাড়াতাড়ি ইফতার ও দেরিতে সাহরির সঠিক সময় কোনটি ? সতর্কতামূলক ৩ মিনিট অপেক্ষা করা কি ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি নাকি আল্লাহর নির্দেশ ? দলিলসহ জানুন।

লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ১৯ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:০২:৩৪ রাত

আমরা এই আর্টিকেল থেকে জানবো..

১. তাড়াতাড়ি ইফতার ও দেরিতে সাহরি করার হুকুম

২. ইহুদি খ্রিস্টানরা কখন ইফতার করতো ?

৩. ইফতার ও সাহরিতে সতর্কতামূলক কয়েক মিনিট বিরত থাকা কি ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি নাকি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এর নির্দেশ ?

৪। সময় হওয়ার পূর্বে ইফতার করার জন্য হাদিসে বর্ণিত কঠিন শাস্তি।

৫। দ্বীনের ব্যাপারে মনগড়া কথা বলা ব্যক্তিদের ব্যাপারে রাসুল সা. এর সাবধান বাণী।

তাড়াতাড়ি ইফতার করার ব্যাপারে হাদিস

১। "সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা যতদিন যাবৎ দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।"

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ ‏"‏‏.‏

( সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৮৩৩, সহিহ মুসলিম-২৪২৫, এছাড়াও হাদিসের প্রায় সকল কিতাবে অনুরুপ বর্ণনা রয়েছে।)

২। "আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ দীন ততদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ইফতার অধিক বিলম্বে করে।"

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ ‏"‏ ‏.‏

( সুনান আবূ দাউদ, হাদিস নং-২৩৪৫, মানঃ হাসান )

দেরিতে সাহরি খাওয়া

অর্থ- ইবনে জারির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. এর সাহাবিগণ তাড়াতাড়ি ইফতার গ্রহণ করতেন এবং দেরিতে সাহরি খেতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-৮৯৩২)

حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَمْرٍو يَعْنِي ابْنَ جَرِيرٍ، قَالَ: «كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَعْجَلَ النَّاسِ إِفْطَارًا، وَأَبْطَأَهَمْ سُحُورًا»

তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব

তাড়াতাড়ি ইফতার করা একটি সুন্নাত আমল যা মুস্তাহাব পর্যায়ের তথা এর উপর আমল করা উত্তম। এ বিষয়ে উম্মতের ইমামদের মাঝে কোনো মতভেদ নেই। এ ব্যাপারে উম্মতের মুহাদ্দিস, ফকিহ ইমাম ও আলিমগণের কিছু বক্তব্য পেশ করছি।

১। ইমাম মুসলিম রাহ. সহিহ মুসলিম 'কিতাবুস সিয়াম' এ একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন,

باب فَضْلِ السُّحُورِ وَتَأْكِيدِ اسْتِحْبَابِهِ وَاسْتِحْبَابِ تَأْخِيرِهِ وَتَعْجِيلِ الْفِطْرِ ‏‏

অর্থাৎ "সাহরির ফযীলত, সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব, সাহরি বিলম্বে খাওয়া এবং ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব"

অধ্যায়: ১৪/ সিয়াম (রোজা) (كتاب الصيام), ৯ নং পরিচ্ছেদ।

২। ইমাম আবু দাউদ রাহ. সুনান আবু দাউদের 'কিতাবুস সিয়াম' এ একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন,

باب مَا يُسْتَحَبُّ مِنْ تَعْجِيلِ الْفِطْرِ

অর্থাৎ দ্রুত (সূর্যাস্তের পরপরই) ইফ্তার করা মুস্তাহাব।

অধ্যায়: ৮/ সওম (كتاب الصوم ), ২১৩ নং পরিচ্ছেদ

৩। সহিহ মুসলিমের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি রাহ. বলেন,

«والمستحب ان يعجل الفطر إذا تحقق غروب الشمس»

«المجموع شرح المهذب» (6/ 359 ط المنيرية):

"আর মুস্তাহাব হচ্ছে সুর্যাস্ত নিশ্চিত হলে দ্রুত ইফতার করা।" (আল মাজমু' শারহুল মুহাযযাব, ৬/৩৫৯)

৪। ইমাম শাফেয়ি রাহ. এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সউদি আরবের প্রখ্যাত সালাফি আলিম শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফি. বলেন,

قَالَ الشَّافِعِيّ فِي " الأُمّ " :

"تَعْجِيل الْفِطْر مُسْتَحَبٌّ" اهـ .

অর্থ: "ইমাম শাফেয়ি রাহ. তার 'আল-উম' কিতাবে বলেন, ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব।"

https://islamqa.info/ar/answers/50019/

৫। প্রখ্যাত আহলে হাদিস আলিম আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (১৮৬৫-১৯৩৫ খ্রি.) রাহ. সুনান তিরিমিযির ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'তুহফাতুল আহওয়াযি' তে আল্লামা মুল্লা আলি কারি হানাফি রাহ. (মৃত্যু-১৬০৫ খ্রি.) এর বক্তব্য উদ্বৃত করে বলেন.......

"হাদিসের বাক্য (তিনি অর্থাৎ রাসুল সা. নামাজ পড়ার পূর্বে ইফতার করতেন) অর্থাৎ মাগরিবের পূর্বে। আর এতে ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ইঙ্গিত রয়েছে । আর উমর রা. ও উসমান রা. থেকে যে বিশুদ্ধ বর্ণনা এসেছে যে, তারা রমযানে কালো অন্ধকার হলে মাগরিব পড়তেন অতঃপর ইফতার করতেন। এটি এজন্য যে, দেরিতে ইফতার করাও জায়েয আছে তা বুঝানোর জন্য, যাতে মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করাকে ওয়াজিব মনে না করে। আর এই অবস্থা একারণেও হতে পারে, রাসুল সা. ঘরে ইফতার করে মাগরিবের নামাজের জন্য বের হতেন। আর উমর রা. ও উসমান রা. মসজিদে ছিলেন এবং তাদের কাছে ইফতার করার মতো খেজুর বা পানি ছিল না। " (সুনান তিরিমিযির ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'তুহফাতুল আহওয়াযি' - ৩/৩১১)

.

মুহাদ্দিস, ফকিহ ইমাম ও আলিমগণের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, তাড়াতাড়ি ইফতার করা একটি মুস্তাহাব আমল। এটি কোনো ফরজ,ওয়াজিব বিষয় নয়।

ইহুদি-খ্র্রিস্টানরা বিলম্ব করে কখন ইফতার করত ?

১। হাদিস:

«مصنف ابن أبي شيبة» (2/ 277 ت الحوت):

8947 - حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ ثَرْوَانَ بْنِ مِلْحَانَ التَّيْمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِعَمَّارٍ: إِنَّ أَبَا مُوسَى، قَالَ: «لَا تُفْطِرُوا حِينَ تَبْدُو الْكَوَاكِبُ، فَإِنَّ ذَلِكَ فِعْلُ الْيَهُودِ»

অর্থ: "এক ব্যক্তি আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. কে বললেন, নিশ্চয়ই আবু মুসা রা. বলেছেন, তোমরা এমন সময় ইফতার করো না যখন তারকা উদিত হয়। কেননা এটি ইহুদিদের অভ্যাস।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-৮৯৪৭)

.

২। হাদিস:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَزَالُ أُمَّتِي عَلَى سُنَّتِي مَا لَمْ تَنْتَظِرْ بِفِطْرِهَا النُّجُومَ» ، " «هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ بِهَذِهِ السِّيَاقَةِ»

অর্থ: "হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, "আমার উম্মত সর্বদা সুন্নতের উপর থাকবে, তারা তারকা উদয়ের জন্য (ইফতার করতে) অপেক্ষা করবে না।" হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ। (আল মুসতাদরাক আলাল হাকিম, হাদিস নং-১৫৮৪, ১/৫৯৯, এছাড়াও হাদিসটি সহিহ ইবনে হিব্বান-৪১২৩, সহিহ ইবনে খুযাইমা-২০৬১ সহ আরো বহু কিতাবে রয়েছে।)

.

৩। সহিহ বুখারির প্রখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. (১৩৭২-১৪৪৯ খ্রি.) সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাতহুল বারি' তে লিখেন,

زَادَ أَبُو هُرَيْرَةَ فِي حَدِيثِهِ لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ أَخْرَجَهُ أَبُو دَاوُدَ وبن خُزَيْمَةَ وَغَيْرُهُمَا وَتَأْخِيرُ أَهْلِ الْكِتَابِ لَهُ أَمَدٌ وَهُوَ ظُهُور النَّجْم وَقد روى بن حِبَّانَ وَالْحَاكِمُ مِنْ حَدِيثِ سَهْلٍ أَيْضًا بِلَفْظِ لَا تَزَالُ أُمَّتِي عَلَى سُنَّتِي مَا لَمْ تَنْتَظِرْ بِفِطْرِهَا النُّجُومَ»

অর্থ: "আবু হুরাইরা রা. তাঁর বর্ণিত হাদিসে আরো বর্ণনা করেছেন, কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা দেরিতে ইফতার করে। হাদিসটি ইমাম আবু দাউদ, ইবনে খুযাইমা ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। আর আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) দেরিতে ইফতার করার সময় হচ্ছে তারকা প্রকাশিত হওয়া। ইবনে হিব্বান ও হাকিম হযরত সাহল রা. থেকে (হাদিসে) আরো বর্ণনা করেছেন, আমার উম্মত সর্বদা সুন্নতের উপর থাকবে, তারা তারকা উদয়ের জন্য (ইফতার করতে) অপেক্ষা করবে না।" (ফাতহুল বারি, ৪/১৯৯)

.

৪। আল্লামা মুল্লা আলি কারি হানাফি রাহ. (মৃত্যু-১৬০৫ খ্রি.) মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'মিরকাতুল মাফাতিহ' তে বলেন.......

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: " لَا يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا ") أَيْ غَالِبًا وَعَالِيًا أَوْ وَاضِحًا وَلَائِحًا " مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ " أَيْ مُدَّةَ تَعْجِيلِهِمُ الْفِطْرَ " لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ " أَيِ الْفِطْرَ إِلَى اشْتِبَاكِ النُّجُومِ وَتَبِعَهُمُ الْأَرْفَاضُ فِي زَمَانِنَا»

অর্থ: "হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেন, "দ্বীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে" অর্থাৎ দাপুটে, সুউচ্চ, সুস্পষ্ট ও প্রভাবশালী থাকবে "যতক্ষণ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে" অর্থাৎ তাদের ইফতারের সময় যত দ্রুত হবে। "কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা দেরিতে ইফতার করে" অর্থাৎ তারকা প্রকাশের সময়ে তারা ইফতার করে। আর বর্তমান সময়ে রাফেযিরা (চরমপন্থী শিয়াদের একটি দল) এক্ষেত্রে তাদেরকে অনুসরণ করে থাকে।" (মিরকাতুল মাফাতিহ-৪/১৩৮৭, হাদিস নং-১৯৯৫)

.

উপরে বর্ণিত হাদিসসমূহ ও মুহাদ্দিসিনে কিরামের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট হলো যে, ইহুদি-খ্রিষ্টানরা সুর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতের অন্ধকার হয়ে আকাশে তারকা উদিত হলে তারপর ইফতার করতো। আর আকাশে তারকা উদিত হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার কমপক্ষে ২৫-৩০ মিনিট পর। বর্তমানেও শিয়ারা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো রাতের অন্ধকার হলে সূর্যাস্তের ২৫-৩০ মিনিট পর ইফতার করে।

সাহরি ও ইফতারে সতর্কতা অবলম্বন করা আল্লাহ ও রাসুল সা. এর নির্দেশ

.

আল্লাহর নির্দেশ:-

আল্লাহ তা'আলা সুরাহ বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে ইরশাদ ফরমান,

"আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য বর্ণনা করেন, যাতে তারা বাঁচতে পারে।"

উপরোক্ত আয়াতে সুবহে সাদিক তথা সাহরির শেষ সময়, সূর্যাস্ত তথা ইফতারের সময় এবং ইতিকাফের সময় স্ত্রী সহবাস না করাকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা বলে উল্লেখ করে এগুলোর কাছে যেতেও নিষেষ করা হয়েছে। এসব সীমারেখা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করাতে আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতে হুশিয়ারি দিয়েছেন। সুতরাং সাহরি ও ইফতারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা আল্লাহ তা'আলা আদেশ।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের বক্তব্য....

১। ইমাম বায়যাভি রাহ. (মৃত্যু ১৩১৯ খ্রি.) সুরাহ বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের তাফসিরে বলেন,

অর্থ: "এসব হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার সীমা অর্থাৎ যেসব হুকুম উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এখানে আল্লাহ তা'আলা হক ও বাতিলের মাঝে সীমারেখার কাছে যেতে নিষেধ করেছেন, যাতে বাতিলের নিকটবর্তী না হয়ে যায়। বাতিলের সীমা অতিক্রম করাতো দূরের কথা। রাসুল সা. বলেছেন, প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল আল্লাহর হারামকৃত বিষয়সমূহ। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমারেখার আশেপাশে নিশ্চিন্তে ঘুরাফেরা করবে, আশঙ্কা রয়েছে যে, সে তাতে পড়ে যাবে। " (তাফসিরে বায়যাভি-১/১২৬)

«تفسير البيضاوي = أنوار التنزيل وأسرار التأويل» (1/ 126):

تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ أي الأحكام التي ذكرت. فَلا تَقْرَبُوها نهى أن يقرب الحد الحاجز بين الحق والباطل لئلا يداني الباطل، فضلاً عن أن يتخطى عنه. كما قال عليه الصلاة والسلام «إن لكل ملك حمى وإن حمى الله محارمه فمن رتع حول الحمى يوشك أن يقع فيه»

২। আরবের প্রখ্যাত সালাফি আলিম ও মুফাসসির আল্লামা রশিদ রিজা রাহ. (১৮৬৫-১৯৩৫ খ্রি.) তার বিখ্যাত তাফসির "আল-মানার" এ সুরাহ বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের তাফসিরে লিখেন,

«تفسير المنار» (2/ 144):

«كَانَ فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى اسْتِحْبَابِ الْإِمْسَاكِ الِاحْتِيَاطِيِّ قَبْلَ الْفَجْرِ وَبَعْدَ الْغُرُوبِ»

অর্থ: "এই আয়াতে ফযরের পূর্বে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সতর্কতামূলক কিছু সময় পানাহার থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল রয়েছে।" (তাফসিরুল মানার, ২/১৪৪)

৩। সুরাহ বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরিফুল কুরআনে বলা হয়েছে,

"রোযার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশ :

সর্বশেষ আয়াত تِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا বলে ইশারা করা হয়েছে যে, রোযার মধ্যে খানা-পিনা এবং স্ত্রী-সহবাস সম্পর্কিত যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এগুলো আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা, এর ধারে কাছেও যেয়ো না। কেননা, কাছে গেলেই সীমালঙ্ঘনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। একই কারণে রোযা অবস্থায় কুলি করতে বাড়াবাড়ি করা, যদ্দরুন গলার ভেতরে পানি প্রবেশ করতে পারে, মুখের ভিতর কোন ওষুধ ব্যবহার করা, স্ত্রীর অতিরিক্ত নিকটবর্তী হওয়া প্রভৃতি মাকরুহ। তেমনিভাবে সময় শেষ হওয়ার সম্ভাবনা এড়ানোর জন্য সময়ের কিছুটা আগেই সেহরী খাওয়া শেষ করে দেয়া এবং ইফতার গ্রহণে দু'চার মিনিট দেরী করা উত্তম। এসব ব্যাপারে অসাবধানতা এবং শৈথিল্য আল্লাহর এই নির্দেশের পরিপন্থী।" (সংক্ষিপ্ত তাফসির)

সতর্কতা অবলম্বন করতে রাসুলের নির্দেশ:-

১। পরিচ্ছেদঃ ১৫. হালাল গ্রহন ও সন্দেহজনক সবকিছু বর্জন করা

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছিঃ (অর্থাৎ তিনি বলেন) আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রাবী বলেনঃ এ সময় নু’মান তাঁর দুই আঙ্গুল দ্বারা কানের দিকে ইঙ্গিত করেন, (নিশ্চয়ই) হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এ সব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দুরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত (সরকারী) চারণভূমির আশ-পাশে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে সে পশু তার অভ্যন্তরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল আল্লাহর হারামকৃত বিষয়সমূহ.....। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩৯৪৯)

২। অর্থ- "আবূ মূসা আনসারী (রহঃ) .... আবুল হাওরা সা’দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললামঃ আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি কি বিষয় স্মরণ রেখেছেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্মরণ রেখেছি যে, যাতে তোমার দ্বিধা আছে তা পরিত্যাগ করে যাতে তোমার দ্বিধা নাই তা গ্রহণ কর। সত্য হল প্রশান্তি আর মিথ্যা হল দ্বিধা।"

>সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং-২৫২০

عَنْ أَبِي الْحَوْرَاءِ السَّعْدِيِّ، قَالَ قُلْتُ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ مَا حَفِظْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ ‏.‏ قَالَ وَأَبُو الْحَوْرَاءِ السَّعْدِيُّ اسْمُهُ رَبِيعَةُ بْنُ شَيْبَانَ ‏.‏ قَالَ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏

সময় হওয়ার পূর্বে ইফতার করার শাস্তি

হাদিস:-

"রাসুল সা. একদল লোককে (স্বপ্নে) দেখলেন যে, তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের চোয়ালগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং চোয়াল বেয়ে রক্তও ঝরছে। রাসুল সা. বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা ?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হল তারা; যারা সময় হওয়ার পূর্বে-পূর্বেই ইফতার করে নিত---।"

(সহিহ ইবনে খুযাইমাহ-১৯৮৬, সহিহ ইবনে হিববান-৩০১৯, বাইহাকির সুনানুল কুবরা- ৮০০৬, আল-মুসতাদরাক- ১৫৬৮)

আহলে হাদিসের সাহরি-ইফতারের সময়সূচীর পর্যালোচনা

আহলে হাদিস মতাদর্শের সকল ক্যালেন্ডারে ইফতারের ক্ষেত্রে সতর্কতাস্বরুপ কোনো সময় রাখা হয়নি। আর সাহরির ক্ষেত্রে সাহরির সতর্কতা স্বরুপ ৩ মিনিট এবং সুবহে সাদিক থেকে ফজরের সতর্কতাস্বরুপ ৩ মিনিট এই মোট ৬ মিনিট সময় বাদ দিয়ে আজানের সময়কে সাহরির শেষ সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

এই লিংকে আহলে হাদিস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাহরি-ইফতারের সময়সূচী দেওয়া আছে....

https://justpaste.it/iftartime

অর্থাৎ আহলে হাদিসের সময়সূচী অনুযায়ী সাহরি ও ফজরের মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। পক্ষান্তরে রাসুল সা. এর আমল দেখুন............

রাসুল সা. এর সাহরি ও ফজরের মধ্যে ব্যবধান

আমর ইবনু আসিম (রহঃ) ..... "যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাহরি খেয়েছেন, তারপর ফজরের সালাতে দাঁড়িয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ দু’য়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াত করা যায়, এরূপ সময়ের ব্যবধান ছিল।"

(সহিহ বুখারি-৫৪৮)

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... "যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাহরি খেয়ে সালাতে দাঁড়ালাম। [রাবী আনাস (রাঃ) বলেন] আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সাহরি ও ফজরের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়ের। " (সহিহ মুসলিম-২৪২৩)

রাসুল সা. এর সাহরি ও ফজরের মধ্যে ব্যবধান হওয়া সঠিক ? নাকি আহলে হাদিসের সাহরির শেষ সময় ও ফজর একই সময় হওয়া সঠিক ?

ইফতারের সময় নিয়ে মনগড়া বক্তব্য

আহলে হাদিস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ ৩ মিনিট পরে ইফতার করাকে ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি আখ্যা দিয়ে উক্ত সিয়াম রেখে কোনো লাভ হবে না একথা বলেছেন।

তার বক্তব্য...... "তারপরে আবার ৩ মিনিট দেরি, নিশ্চিত নির্ঘাত এটা হচ্ছে রাসুলকে অপমান করা।এসব সিয়াম রেখে কোনো লাভ হবে না। এসব সিয়ামের আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। পরে একটু আসছে, যতই ভালোবাসা দেখিয়ে আপনি করেন না কেনো এসব ইবাদতের কোনো প্রয়োজন নেই। এসব সিয়ামের কোনো প্রয়োজন নেই।"

২:১০ মিনিট থেকে ২:৩৫ পর্যন্ত......

এই বক্তব্যের সরাসরি লিংক.... (ইউটিউব).... https://tinyurl.com/53uybnk2

.

তিনি আরো বলেছেন, "আর যদি সতর্কতার জন্য ৩ মিনিট দেরি করেন,যেমনটা নাচোলবাজারে, যেমনটা চাপাইনবাবগঞ্জ বাজারে, তাহলে এটা হয়ে যাবে ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি। আমার কিছু করার নেই।"

৫৫ সেকেন্ডের পর ..... (ইউটিউব) ..... https://tinyurl.com/3uaefwye

.

আমাদের প্রশ্ন .....(১)

আমরা সরাসরি হাদিস থেকে জেনেছি যে, ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি হচ্ছে রাতের অন্ধকার হয়ে আকাশে তারকা দেখা গেলে (সূর্য অস্ত যাওয়ার কমপক্ষে ২৫-৩০ মিনিট পর) তারা তাদের ইফতার করতো, আর আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলছেন, ৩ মিনিট পর ইফতার করা হচ্ছে ইহুদি খ্রিস্টানদের নীতি !!

তাহলে হাদিসের বক্তব্য সঠিক না আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এর বক্তব্য সঠিক ???

১। হাদিস: "এক ব্যক্তি আম্মার রা. কে বললেন, নিশ্চয়ই আবু মুসা রা. বলেছেন, তোমরা এমন সময় ইফতার করো না যখন তারকা উদিত হয়। কেননা এটি ইহুদিদের অভ্যাস।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-৮৯৪৭)

.

২। হাদিস:

অর্থ: "হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, "আমার উম্মত সর্বদা সুন্নতের উপর থাকবে, তারা তারকা উদয়ের জন্য (ইফতারের করতে) অপেক্ষা করবে না।" হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ। (আল মুসতাদরাক আলাল হাকিম, হাদিস নং-১৫৮৪, ১/৫৯৯, এছাড়াও হাদিসটি সহিহ ইবনে হিব্বান-৪১২৩, সহিহ ইবনে খুযাইমা-২০৬১ সব আরো বহু কিতাবে রয়েছে।)

উপরে আরো বিস্তারিত দলিলগুলো দেওয়া আছে।

.

আমাদের প্রশ্ন.....(২)

যেখানে উম্মতের সকল মুহাদ্দিস ও ফকিহ ইমামগণ তাড়াতাড়ি ইফতার করাকে 'মুস্তাহাব' বলেছেন, সেখানে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলছেন, তাদের মনমতো তাড়াতাড়ি না করলে সিয়াম রেখেই কোনো লাভ হবে না অর্থাৎ সিয়াম হবে না !!!

মুস্তাহাবের জন্য কোনো ফরজ ইবাদত বাতিল হওয়ার এই নীতি তিনি কোথায় পেয়েছেন ??? এধরণের কথা ইসলামের মধ্যে কেউ দেখাতে পারবে না।

তাহলে ইসলামের মূলনীতি একটি, আর আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবদের মূলনীতি আরেকটি ? আমরা কোনটি মানবো ???

আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবের এই বক্তব্যের মাধ্যমে যেটি দাঁড়ায়......

১। তার দেওয়া তাড়াতাড়ি ইফতারের ব্যাপারে বক্তব্য সরাসরি হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক।

২। কুরআনের সুরাহ বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের বিপরীত।

৩। সন্দেহযুক্ত বিষয়ে সন্দেহ দূর করার রাসুল সা. এর নির্দেশনার বিপরীত।

৪। মুস্তাহাবকে ফরজ বানিয়ে ফেলেছেন। কারণ ফরজ লঙ্ঘন না হলে রোজা বাতিল হয় না।

৫। মুসলিমদের সিয়ামকে বাতিল হওয়ার মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন।

মনগড়া ব্যাখ্যাকারীদের ব্যাপারে রাসুল সা. এর হুশিয়ারি

অর্থ: সাহাবি আওফ ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত। নবি সা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার উম্মত সত্তরেরও অধিক ফিরকা বা দলে বিভক্ত হবে। তার মধ্যে আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে জঘন্য ফিতনা সৃষ্টিকারী ফিরকা বা দল হবে যারা দ্বীনের বিষয়ে মনগড়া কথা বলবে। অতঃপর তারা হারামকে হালাল বানাবে আর হালালকে হারাম বানাবে। [হাদিসটির সনদ ইমাম বুখারি রাহ. ও মুসলিম রাহ. এর শর্ত অনুযায়ী সহিহ।] (আল মুসতাদরাক আলাস-সহিহাইন, হাদিস নং-৬৩২৫, ৩/৬৩১)

তাবারানির 'আল-মু'জামুল কাবির' এ বর্ণিত অন্য হাদিসে আছে, "তোমাদের মধ্যে উত্তম ও আলিমদের পরে একদল লোকের আবির্ভাব হবে যারা দ্বীনের ব্যাপারে মনগড়া কথা বলবে, ফলে ইসলাম ধ্বংস ও ছিন্নভিন্ন হবে " (তাবারানি, হাদিস নং-৮৫৫১)

«المستدرك على الصحيحين للحاكم - ط العلمية» (3/ 631):

6325 - عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى بِضْعٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، أَعْظَمُهَا فِتْنَةٌ عَلَى أُمَّتِي قَوْمٌ يَقِيسُونَ الْأُمُورَ بِرَأْيِهِمْ فَيُحِلُّونَ الْحَرَامَ وَيُحَرِّمُونَ الْحَلَالَ»

«المعجم الكبير للطبراني» (9/ 105):

8551 - وَلَكِنْ ذَهَابُ خِيَارِكُمْ وَعُلَمَائِكُمْ، يَحْدُثُ قَوْمٌ يَقِيسُونَ الْأُمُورَ بِرَأْيِهِمْ فَيَنْهَدِمُ الْإِسْلَامُ وَيَنْثَلِمُ»

অত্র আর্টিকেলের সারাংশ

১। তাড়াতাড়ি ইফতার করা ও দেরিতে সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব।

২। ইফতার ও সাহরির ক্ষেত্রে কিছু সময় সতর্কতা অবলম্বন করা আল্লাহ তা'আলা ও রাসুল সা. এর নির্দেশ ।

৩। রাতের অন্ধকার হয়ে তারকা উদিত হওয়ার সময় ইহুদি-খ্রিস্টানরা ইফতার করে। বর্তমানে শিয়ারাও এটি করে।

৪। সাহরি ও ইফতারে আল্লাহ তা'আলা ও রাসুল সা. এর নির্দেশ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করা না হলে ফরজ সিয়াম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন ফরজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করবে।

৫। আল্লাহ তা'আলা ও রাসুল সা. এর নির্দেশ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করে ইফতার করাকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের নীতি বলা সম্পূর্ণ মনগড়া ও সরাসরি হাদিসবিরোধী বক্তব্য।

৬। আল্লাহ তা'আলা ও রাসুল সা. এর নির্দেশ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন না করে মনগড়া তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে হাদিসে বর্ণিত কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

.

পরিশেষে আরজ করবো, আমরা কুরআন- সুন্নাহ ও সালাফে সালিহিনের অকাট্য সব দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে উপরে দেখিয়েছি সাহরি ও ইফতারের সঠিক সময় ও বিধান কোনটি। আশা করি, কোনো মুসলিমের এ নিয়ে দ্বিমত থাকবে না। সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিল দেখার পরেও যারা মানুষের মনগড়া কথার অনুসরণ করবে তারা যেনো কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

আর কীভাবে মনগড়া বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের অকাট্য প্রমাণিত বিষয়ও বদলে যায়, মুস্তাহাব বিষয় ফরজের মতো হয়ে যায়, আল্লাহ তা'আলা ও রাসুল সা. এর নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করা হয়ে যায় ইহুদি-খ্রিস্টানদের নীতি (ইন্নালিল্লাহ) তার প্রমাণও দেখালাম। যারা কুরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা দিবে তাদের ব্যাপারে রাসুল সা. এর উপরোক্ত সাবধান বাণীটি সবাই খেয়াল রেখে দ্বীন গ্রহণ করবো। অন্যথায় এই চরম ফিতনার যুগে আমাদের ঈমান-ইসলাম-আমল ধ্বংস হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে দ্বীন মানার তাউফিক দান করুন।

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

৪৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File