শায়খ আব্দুল্লাহ নাছের রহমানীর সাথে সাক্ষাৎ

লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ ফিসাবিলিল্লাহ ২৬ জুন, ২০১৪, ০৬:২৩:১১ সন্ধ্যা



৫ জুন ২০১৪। তাপদগ্ধ গ্রীষ্মের আরো একটি দিনের শেষ বিকেল। কারেন্ট চলে যাওয়ায় হোস্টেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মারগালা পাহাড়ের বৈকালিক সৌন্দর্য দেখছিলাম আর আফগানী ও চীনা দুই বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম। হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার। পাকিস্তানে আসার পর আমার বিজি ফোনটা একেবারে নীরব হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কর্মহীন ফোনটা হঠাৎ জেগে উঠলে তাই বিশেষ কিছুই মনে হয়। তার উপর অপরিচিত নাম্বার। বেশ আগ্রহ নিয়ে রিসিভ করলাম কলটা। ওপার থেকে বেশ ভারী কণ্ঠের আওয়াজ 'মে আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী বোল রাহা হো'। কিছুক্ষণ কথা বলার পর উর্দূতে আমার পারদর্শীতার নবীনতর স্টেজ বিলক্ষণ টের পেয়ে পরিষ্কার আরবীতে কথা বলা শুরু করলেন।

শেখ আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী পাকিস্তানের একজন সুপরিচিত আহলেহাদীছ আলেম এবং দাঈ। বাংলাদেশে ৫/৬ বার রাজশাহীর ইজতেমাতে যাওয়ার সুবাদে তিনি আব্বার খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু। ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ যখন উনি বাংলাদেশে যান তখন আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র। ফলে উনার সাথে বিশেষ কোন স্মৃতি আমার নেই। তবে তাঁর ব্যক্তিত্বের সাথে খুব সুপরিচিত ছিলাম। পাকিস্তানের আসার পর যাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী ছিলাম, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন তিনি। কিন্তু আমি যেখানে থাকি তথা ইসলামাবাদ থেকে তাঁর অবস্থানস্থল তথা করাচী প্রায় ১৫০০ কি.মি. দূরে। ফলে পাকিস্তানে আমার আসা প্রায় ৭ মাস হয়ে গেলেও তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাইনি।

মাঝে দেশে ফেরার পথে করাচীতে একদিন ট্রানজিট নিয়েছিলাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য, দুই সপ্তাহ পর দেশ থেকে পাকিস্তানে পুনরায় ফিরে আসার সময়ও উনার জন্যই করাচীতে স্টে করলাম। কিন্তু উনার অসুস্থতা এবং ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে সাক্ষাৎ হয়নি কোনবারই। যদিও উনি এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন, একবার জামেআ রহমানিয়াতে এসে নিজেই দেখা করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু করেননি। সেজন্য একটু অভিমানও বোধহয় দানা বেঁধে উঠেছিল উনার উপর। আমীরুল ভাইয়ের কাছে ক্ষোভটা প্রকাশও করেছিলাম। পরে জানলাম উনি সেটা আমীরুল ভাইয়ের কাছে জানতেও পেরেছেন এবং বলেছেন পরবর্তীবার ইসলামাবাদ গেলে উনি অবশ্যই দেখা করবেন।

আজ তিনি ফোন দিয়ে জানালেন আগামী ৭ জুন বিকালে উনি আমার সাথে দেখা করবেন। সেই সাথে জানালেন উনি করাচীতে কেন আমার সাথে দেখা করেননি সেটাও সাক্ষাতে বলবেন। উনার কন্ঠে অভিভাবকসূলভ উঞ্ষতা খুব পরিষ্কার। মনের অজান্তে যা একরাশ প্রশান্তি ও ভরসার স্পর্শ দিয়ে যায়। উনার ফোনটা পেয়ে আগামীদিনের পরীক্ষার চাপটাও যেন হালকা হয়ে এল।

৭ তারিখ বিকেলে সেমিস্টার ফাইনালের সর্বশেষ পরীক্ষাটা দিয়ে এসে উনাকে ফোন করলাম। উনি বললেন, বর্তমানে সারগোদা আছি, আগামীকাল তোমার সাথে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমি ইসলামাবাদে উনার সাথে দেখা করার স্থান জানতে চাইলাম। উনি বললেন তার দরকার হবে না আমি নিজেই আসব তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পরের দিন ৮ তারিখ সন্ধার পূর্বে উনি ফোন করে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি আসছেন আমাকে নেয়ার জন্য, তারপর রাওয়ালপিণ্ডিতে একটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন। মাগরিবের পরপরই উনি উনার গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে আমার হোস্টেল পার্কিং-এ উপস্থিত হলেন। আমি আগেই রেডি হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রাইভেট কারটি এসে দাঁড়ানো মাত্র উনি দরজা খুলে বের হয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। দীর্ঘদেহী মানুষটির স্নেহ আলিঙ্গনে বেশ কিছুক্ষণ আটকা পড়ে রইলাম। সেই মুখভরা দাড়ি, প্রশস্ত মায়াময় চেহারা এবং দিলখোলা ব্যবহার, ১৫/১৬ বছর দেখা মানুষটি একই রকম রয়ে গেছেন। কেবল বয়সের ছাপটাই একটু চোখে পড়ছে।

তারপর গাড়িতে উঠে রওয়ানা হলাম রাওয়ালপিণ্ডির বেশু রোডে আল-হামারাইন আহলেহাদীছ মাদরাসার (মুহতামিম : মাওলানা গুলওয়ালী) উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে নানা বিষয়ে দীর্ঘদিনের জমানো কথাবার্তা হল। বাংলাদেশের খবরাখবর বিস্তারিত জানতে চাইলেন। জানতে চাইলেন পরিচিতজনদের কথা একে একে নাম ধরে। হোস্টেলে আমার থাকা-খাওয়ার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না, ভাত-মাছের মত বাঙালী খাবার ঠিকমত পাচ্ছি কিনা ইত্যাদি। মানুষটা ঠিক আগের মতই খুব রসিক এখনো। তাঁর ড্রাইভার এবং খাদেম দু'জনই তাঁর সাথে এত সহজভাবে হাস্যরস করছিল, মনে হচ্ছিল তাঁরা পরস্পর বন্ধু।

রাওয়ালপিণ্ডি পৌঁছার পর মাদরাসার অফিসে বসে আব্বার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিলাম। প্রায় ৫/৭ মিনিট কথা হল। তারপর উনি বক্তব্য দেয়ার জন্য মসজিদে গেলেন। উনার পূর্বে বক্তব্য রাখছিলেন শায়খ ড. ফযলে এলাহী। বক্তব্য শেষে বের হওয়ার সময় মসজিদের শেষ মাথায় দেখা হল উনার সাথে। প্রতিবারের ন্যয় স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে কুলাকুলি করতে করতে বললেন, 'বেটা ঘোরাঘুরি বেশী করো না, মন দিয়ে পড়াশোনা কর'। এই মহান মানুষটা সেই প্রথমদিন থেকেই দেখা হলে নিয়মিত এই উপদেশটি দেন। জানিনা পথের প্রতি আমার গভীর টানটা উনি কিভাবে ধরতে পেরেছেন, আর কিভাবেই বা প্রতিবার আমাকে দেখলে প্রথম পলকেই তার সেটা মনে পড়ে। প্রথম প্রথম কথাটা নিছক কৌতুকচ্ছলে নিলেও এখন বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যাই। বলতে দ্বিধা নেই, উনার মত খ্যাতনামা পণ্ডিত ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি এখন শুধুমাত্র এই কারণেই। উনার কোন প্রোগ্রামে গেলেও দেখা না করেই চলে আসি পারতপক্ষে। জানি না এর ফলে হয়তবা উনার ইলমের সাগর থেকে মণি-মুক্তা আহরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি অনেক। আল্লাহ মাফ করুন।

শায়খ আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী প্রায় দেড় ঘন্টা টানা বক্তব্য রাখলেন। প্রথমদিকে কণ্ঠের আওয়াজে বয়সের ছাপ অনুভব হলেও ধিরে ধিরে সেই বজ্র কণ্ঠের উত্তাপ টের পেতে শুরু করলাম। মূলত: ব্রেলভীদের ভ্রান্ত আক্বীদা প্রসঙ্গেই কথা বললেন। বলছিলেন, অধিকাংশ মুসলমান এখন কালেমার প্রথম অংশটির কথা ভুলে গেছে, তারা কেবল ধরে আছে কালেমার ২য় অংশটি। অথচ একজন পূর্ণাঙ্গ তাওহীদবাদী হতে গেলে 'লা ইলাহা' তথা মানহাজুন নাফী (গাইরুল্লাহকে অস্বীকৃতি) এবং 'ইল্লাল্লাহ' তথা মানহাজুল ইছবাত (আল্লাহকে স্বীকৃতি) উভয়টির উপরই সমানভাবে কায়েম থাকতে হবে, নতুবা সে তাওহীদের পূর্ণ হক্ব আদায় করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, আক্বীদার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভারী আমল 'তাওহীদ' এবং আমলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভারী আমল 'সুন্দর আচরণ'। তিনি অসার যুক্তিবাদীদের সমালোচনা করতে গিয়ে বলছিলেন, আমরা সবচেয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি কুরআন ও হাদীছের মাজাযী তা'ভীল তথা রূপক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। এই রূপক তা'ভীল করতে গিয়ে নিজের খুশী মত আল্লাহকে আমরা নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান বানিয়ে দিয়েছি, আর রাসূল (ছাঃ)কে পরিণত করেছি নূরে মুজাস্সাম, মুশকিল কুশা কিংবা হায়াতুন্নবীতে। অথচ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এইসব মাজায বা রূপক কাল্পনিক কথাবার্তা বা কাজকর্মের কোন স্থান ছিল না। 'মাজায' জিনিসটা আবিস্কার হয়েছে ছাহাবায়ে কেরামের যুগের অনেক পরে মুশরিক ও বিদআতীদের হাতে। রাসূল (ছাঃ)-এর আনীত দ্বীন ছিল অতি সুস্পষ্ট ও সহজ-সরল। মাজাযপন্থীরাই দ্বীনের ব্যাখ্যায় মস্তিষ্কপ্রসূত নানা যুক্তির সাহায্যে কাল্পনিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে এবং দ্বীনকে ধ্বংস করেছে'।

রাত ১২টার দিকে প্রোগ্রাম শেষ হল। পার্শ্ববর্তী এক বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। উনি আমার হাত ধরে বললেন, বক্তৃতা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছো? আমি বললাম, শেইখ! সারাংশটা বুঝেছি, তবে তার চেয়ে ভাল লাগছিল আপনার দরাজ কণ্ঠটা, যেই কন্ঠের বজ্র আওয়াজে জনতার অন্তর বিপুল আবেগে আন্দোলিত হয়েছিল রাজশাহীর ইজতেমার ময়দানে। আমি যেন সেই ১৫ বছর পূর্বে ফিরে গিয়েছিলাম। উনি উচ্চস্বরে হাসলেন।

খাওয়ার সময় উনার পাশেই বসালেন। মেজবানদের বললেন আমার জন্য ভাত নিয়ে আসতে। তারপর নিজ হাতে মুরগী, দুম্বার গোশত আমার প্লেটে তুলে দিলেন। খাবার শেষ করে উঠার সময় আবার প্লেটে কয়েক পীস গোশত ঢেলে দিলেন। পেটে জায়গা একটুও নেই তা সত্ত্বেও আমি বাঁধা দিলাম না। কারণ এটা তাঁর নিছক বৈঠকী ফর্মালিটি নয়, বরং সত্যিকারের ভালবাসা ও আন্তরিকতার প্রকাশ; আব্বার প্রতি, সর্বোপরি বাঙালী ভাইদের প্রতি। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে সে ভালবাসার উত্তাপটুকু গ্রহণ করলাম।

তারপর ইসলামবাদ ফেরার পথে উনি বললেন, 'তোমাকে মাছ খাওয়ানোর দরকার ছিল, আমি আগে বুঝতে পারিনি এরা এখানে রাতের খাবারের আয়োজন করেছে'। তারপর আমার আপত্তি সত্ত্বেও বিভিন্ন সুস্বাদু ডেজার্টের জন্য বিখ্যাত 'তাহযীব'-এর একটি আউটলেটের সামনে গাড়ী দাঁড় করালেন এবং কুলফী আইসক্রিম ও ম্যাংগো শেক খাওয়ালেন। রাত তখন প্রায় দেড়টা বাজে।

সেখান থেকে ক্যাম্পাসে আসতে আসতে রাত প্রায় দু'টো। মেইন গেটে নামিয়ে দিয়ে উনারা চলে গেলেন। গাড়িতেই উনার সাথে কথা বলে নিলাম যে, মাসিক আত-তাহরীকের জন্য একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই। উনি আন্তরিকভাবেই সাড়া দিলেন এবং পরের দিন দুপুরে উনার হোটেল রুমে বসতে চাইলেন।

পরদিন ৯ তারিখ দুপুর গড়িয়ে গেল। কিন্তু উনি কলও করলেন না, গাড়িও পাঠালেন না। ভাবলাম উনি বোধহয় ব্যস্ত কিংবা বিশ্রামে আছেন। তাই আমিও আর কল করলাম না। আছরের ছালাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর উনাকে রিং করব ভাবছিলাম। কিন্তু সে পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হল না, ছালাত শেষ হতে না হতেই উনি রিং করে জানালেন উনি আসছেন আর আমাকে বললেন তৈরী থাকতে।

দ্রুত রেডি হয়ে হোস্টেল পার্কিং-এ দাঁড়ালাম। মিনিট দশেকের মধ্যে উনি আসলেন। গাড়িতে উঠার পর বললেন, কাল রাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। করাচী বিমানবন্দরে বোমা হামলার ঘটনায় আমার এক প্রতিবেশী নিহত হয়েছেন, তার খবরাখবর নিয়ে টেনশনে ছিলাম। ফলে সকালটা ঘুমে কেটে গেছে। আজকের প্রোগ্রাম শেষে সাক্ষাৎকারের জন্য তোমার সাথে বসব ইনশাআল্লাহ।

ইসলামাবাদ থেকে রাওয়ালপিণ্ডি রওনা হলাম আমরা। তারপর মাগরিবের পূর্বে রাওয়ালপিণ্ডি বিমানবন্দরের পার্শ্বে মুসলিম টাউনের তৃতল আহলেহাদীছ মসজিদ ‌'জামে মসজিদ মারওয়া'তে উপস্থিত হলাম। মাগরিব পর প্রোগ্রাম শুরু হল। যথারীতি শেইখ হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য রাখলেন আক্বীদা বিষয়ে। প্রায় শ'খানিক মুছল্লী উপস্থিত ছিলেন এখানে।

এশার ছালাত আদায় করে আমরা বের হলাম। রাত তখন ৯টা কি সাড়ে ৯টা বাজে। ভাবলাম ১০টার মধ্যে ইসলামাবাদে পৌঁছতে পারলে নিতে পারব সাক্ষাৎকারটা। কিন্তু মেইন রোডে উঠার পর শায়খ ড্রাইভার কে কি যেন বলে দিলেন। ড্রাইভার সোজা রাওয়ালপিণ্ডি স্টেডিয়ামের পার্শ্বে অবস্থিত বিশাল রেস্টুরেন্টপাড়ায় নিয়ে হাজির হল। এই এলাকায় কেবলই রেস্টুরেন্ট, অন্য কোন দোকান নেই। সংখ্যায় কম করে হলেও শ'খানিক হবে। আমরা পাকিস্তানী 'বায়তুল মুকাররাম' মসজিদের পার্শ্বে শাহানশাহ নামক এক রেস্টুরেন্টে বসলাম। ঐতিহ্যবাহী আফগানী কায়দায় বসার বিলাসী সিস্টেম আর খানা-দানাও সব আফগানী এবং কাশ্মীরী পদের। শেইখ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এক দুম্বা থেকে ৪ কেজি গোশত কাটালেন এবং একটা বড় মাছের অর্ডার দিলেন। পুরা ঘন্টাখানেক সময় লাগল দুই প্রকার গোশত ও মাছের ফ্রাই হতে। এত সময় লাগবে বুঝতে পারিনি। দীর্ঘ সময় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। সেই সাথে একটু অস্থিরও লাগছিল সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় চলে যাচ্ছে দেখে। অবশেষে শেইখকে বললাম, রাত তো বেশ হয়ে গেল, মনে হচ্ছে আজ নতুন করে বসার আর সময় হবে না, আমরা কি এখানেই সাক্ষাৎকারের কাজটি শুরু করতে পারি? উনি হাসতে হাসতে বললেন, 'এক কাজের মধ্যে আরেক কাজ ভালভাবে হবে না, খাওয়া-দাওয়া সেরে নেয়া যাক আগে'। ওয়েটার প্রথমে বিভিন্ন ফল ও আর দইয়ের শেক দিয়ে তৈরী সুস্বাদু একপ্রকার সালাদ দিয়ে গিয়েছিল। এবার ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে আনল সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে বারবিকিউ করা গোশত, তারপর হালকা মসলায় রান্না করা রোস্ট। একটু পরে মাছে আস্ত ফ্রাই। আফগানী রুটি দিয়ে গোশত ভাজা এবং রোস্ট দুটোই অসাধারণ টেস্ট লাগছিল। দুম্বার বাজে গন্ধটাও আজ আর নাকে লাগছিল না, রান্নার বিশেষ পদ্ধতির কারণে। আমার জন্য ভাতেরও অর্ডার দিয়েছিলেন শেইখ, তবে সেটা খেতে পারিনি। কিন্তু এক কেজি ওজনের মাছটা প্রায় পুরোটাই খেতে হল। উনারা কেউ হাতই দিলেন না। যেন নষ্ট না হয় এজন্য রুটি বাদ দিয়ে শুধু মাছ খেতে লাগলাম। তবুও শেষ করতে পারলাম না। খাবার শেষে দেখলাম ৪ কেজি গোশত আমরা চারজনেই খেয়ে সাবাড় করেছি। আর আমার পেটে মাছটাতো এক্সট্রা গেছেই। গলা থেকে যখন এক ফোটা পানি পর্যন্ত নামছে না এমন অবস্থা, তখন শায়খ অনুযোগ করে বললেন, 'তুমি তো তেমন কিছুই খেলে না, মাছটাও শেষ করতে পারলে না'!! 'ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি' এই যখন অবস্থা তখন এ কথা শুনে আমি কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না, আর পেলেও ভরা পেটে সে কথা বেরও হতে পারত কি না সন্দেহ। কেবল অসহায় চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম।



খাওয়াদাওয়ার পর গাড়ি যখন ইসলামাবাদে এসে আমার ইউনিভার্সিটির দিকে টার্ন নিল, তখন বুঝলাম এ দফায় আমার এ্যাসাইনমেন্টটা আর পূরণ হচ্ছে না। শায়খকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনিও বললেন, রাত তো অনেকটা হয়ে গেল, কি করা যায়! একটু ভেবে বললেন আমি রামাযানে আসছি, এ সময় ইনশাআল্লাহ তোমার সাথে বসব। আই-১০ সেক্টরে ক্যাম্পাসের পিছনের গেটে উনারা আমাকে নামিয়ে দিলেন। বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও আজীজ ভাই শায়খের নির্দেশে আমার পিছু পিছু এসে একেবারে গেটে ঢুকিয়ে গেলেন। এভাবেই শায়খের সাথে চমৎকার দুটো স্মরণীয় দিন কাটল।

আল্লাহ উনার মোঙ্গল করুন।

মনের মধ্যে একটু খুতখুতি অবশ্য থেকে গেল এ্যাসাইনমেন্টটা ফেইল করায়। আসছে রামাযানের ৩ তারিখে উনি আবার ইসলামাবাদ আসছেন। আশাকরি তখন সেটাও দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239243
২৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুরা পোষ্টটাই সুন্দর হলেও শেষের খাবারের বর্ননা বাকি পোষ্টটাকে সম্পুর্ন ভুলিয়ে দিয়েছে।
২৭ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৮
185761
আহমাদ ফিসাবিলিল্লাহ লিখেছেন : হাহা....ভাইজান খাবার জিনিসটা বোধহয় এ রকমই..ওটা সামনে থাকলে আর কিছু মনে থাকে না...Tongue Winking
239258
২৭ জুন ২০১৪ রাত ১২:৩৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
২৭ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৮
185762
আহমাদ ফিসাবিলিল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ার জন্য..Happy
268482
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৫৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অসাধারন স্মৃতি। লেখাটা ঝরঝরে। আর শেখতো দেখছি আমার মত ভোজন রসিক । ভাল লাগল। পুরোই পড়লাম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File