হালুয়া গল্প (আমিন না লিখে যাবেন না)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০২:৩৩ রাত



মফিজ পেশায় পিওন। শিক্ষা দিক্ষা যা ছিলো তা কাজে লাগেনি। আশা ছিলো বড় চাকুরী করবে কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়নি। মফিজের তেমন টাকা নেই,তাই বিয়ে করতে পারেনি দীর্ঘদিন। যে প্রেম ছিলো সেই প্রেমের দাবী নিয়ে প্রেমিকার বাপের সামনে দাড়ানোর সাহস তার ছিলোনা, তবে চুরাই সাহস ছিলো। প্রেমিকাকে নিয়ে ভাগল এক রাতে। যদিও কন্যার বাপ/বৈধ অভিভাবকের অনুমতি/সম্মতি ছাড়া বিয়ে বৈধ হয়না, কিন্তু তারা এটাকে থোড়ায় কেয়ার করে। দিব্যি সংসার করতে থাকলো। ওদিকে কন্যার বাপের মুখে লোকে চুনকালী দিল। চুনকালীতে সহায়তা করল কন্যার সাবেক প্রেমিকবর্গ।

চলছিলো একরকম। পিওন মফিজ কাজ সেরে বাসায় ফিরে বৌয়ের সাথে টিভি সিরিয়াল দেখে কাটায়। বিড়ি ফুকতে ফুকতে বাজারে গিয়ে সস্তা মালপত্র ,খাবার দাবার,বাজার সওদা কিনে আনে, দুজনে খায়,দায় ঘুমায়। একেবারে খারাপ চলে তাও না। বেসরকারী অফিসের পিওনের দাম কম, কিন্তু তার স্ত্রীর কাছে কদর খারাপ না। শুক্রবারে পাঞ্জাবীতে আতর দিয়ে মফিজ মসজিদে যায়। কখনও বৌকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায়।

একদিন মফিজের বস তার ঘরোয়া পার্টিতে মফিজকে পরিবারসহ দাওয়াত করে। মফিজ নিজেকে সম্মানিত ভাবতে থাকে। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বৌসহ সেই পার্টিতে উপস্থিত হয়। সেখানে মফিজের বৌয়ের সাথে বসের পরিচয় হয়। এরপর থেকে মফিজের প্রতি বস অযথা খুশী হতে থাকে। মফিজ বসকে দাওয়াত করে খাওয়ায়। মফিজের তৃপ্তীময় জীবন চলতে শুরু করে কোনো এক মঙ্গলবার পর্যন্ত।

সেই মঙ্গলবারে অফিস থেকে বস আগেভাবে বের হয়ে যায়,আর ফিরবে না জানায়। মফিজ এমনিতেই খানিক ফাকিবাজ ধরনের। তার মন চাইলো আজ যেহতু তেমন কোনো কাজ নেই, বৌয়ের সাথে বাসায় বসে টিভি সিরিয়াল দেখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মফিজ বাসায় চলে গেল,, বাসায় পৌঁছেই মফিজ ভয়ঙ্করভাবে চমকে উঠলো....কারন বাসায় টিভি সিরিয়ালের শুটিং চলছে,বসের সাথে মফিজের বৌ গল্পরত। বেকুফ মফিজ প্রথম ধাক্কায় ভাবল,,,আরে অফিস ফাকি দিয়ে তো ধরা খেয়ে গেলাম.....সে দিলো দৌড়.....। খানিকপর বলল.....হায় হায় বৌ লুট হয়ে গেছে....!! সে প্রবল বেগে আবার বাড়িতে ফিরল....বেরুমের দরজায় লাথ্যি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল। কুত্তার বাচ্চা শব্দ উচ্চারণ করেই বেসামাল বসকে লাথি দিতে থাকলো। বস কোনোমতে নিজেকে সামলে পালালো। মফিজ বৌকেও দু,ঘা বসিয়ে দিল। বৌ ইনিয়ে বিনিয়ে বিষয়টাকে ধর্ষনের প্রচেষ্টা বলে চালাতে চাইলেও পারলো না কারন মফিজ বিষয়টা খানিক ভিডিও করেও রেখেছিলো। এদিক দিয়ে মফিজকে অতটা বোকাও বলা যাচ্ছেনা।

মফিজ রাগে ক্ষোভে চাকুরী ছেড়ে দিল এবং বসের প্রতি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠলো। স্ত্রীর সাথে কিছুদিন খুব খারাপ আচরন করলেও তালাকের দিকে গেলনা। আর স্ত্রীও তাকে ছেড়ে গেলনা,কারন সে সবকিছু ছেড়েই মফিজের সাথে এসেছে। এরপর মফিজ তার তথ্য প্রমান নিয়ে বসের বিরুদ্ধে মামলা করল। মামলা কোর্টে গেল। বিচারক সকল কিছু শুনে,দেখে বলল....যে আইনের আওতায় আপনি বিচার চেয়েছেন সেটা এখন আইন পরিষদের একটি বিলের কারনে আটকে আছে,,,সরকারের বিশেষ ঘোষনায়,,,,আইনটির ৪৯৭ ধারার বিষয়ে সংশোধনী আসবে,,,আপনি অপেক্ষা করুন। আগামী মাসে আপনার মামলার শুনানী হবে...।

উল্লেখ্য: ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা আর বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা হুবহু এক। আইনটি মূলত ১৮৬০ সালের। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তাদের ৪৯৭ ধারাকে বাতিল ঘোষণা করেছে। যেহেতু ভারত বলে থাকে তারা এ এলাকার সুপার পাওয়ার,উন্নয়েন তারা বিরাট উপরে,পারমানবিক ক্ষমতাধর,বিরাট তাদের জনশক্তি আর তার এই বয়ান দুনিয়ার কেউ না মানলেও একটি দেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে, তাদের সাথে সখ্যতার ফলে ভারতে পথ ধরে বাংলাদেশেও আইনটি সংশোধনের জন্যে আইন পরিষদে ভোটাভুটি চলছিলো,,,যখন মফিজ তার মামলা দায়ের করেছে।

ওদিকে পুলিশ মফিজের বসকে খুজছে, বস আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু গোপন স্থান থেকে মফিজকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। গুন্ডারা মফিজকে খুজছে। মফিজও বাড়ি ছাড়া,তবে প্রতিশোধের আগুন নেভেনি। স্বামীকে বাচাতে স্ত্রী মফিজের বসকে গোপনে ফোন করে দেখা করল তার সাথে। উদ্দেশ্য বসকে কোনোভাবে খুশী করে স্বামীর জীবনকে সহজ করতে সহায়তা করা। বিষয়টি মিটমাট করে অাবারও কর্মক্ষেত্রে তাকে পাঠানো। কিন্তু বসের কাছে সে তখন স্রেফ একটা ছোটলোক পিওনের বৌ। বসের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সে তখন মফিজকে ছাড় দিতে চায়না। নীচু শ্রেনীর একটা লোকের কাছে হারতে চায়না। মফিজের বৌ ব্যর্থ হল।

========================

অবশেষে বিলটি বিপুল ভোটে পাশ হল । সেখানে বলা হল-“যদি কোনও পুরুষ কোনও বিবাহিত মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। যে সব আইন ব্যক্তিগত মর্যাদায় আঘাত করে, মহিলাদের সমানাধিকারে বাধা দেয়, তা সাংবিধানিক হতে পারে না।"

মফিজ কোর্টে গেল তার বসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। মফিজকে বলা হল- আপনার মামলা খারিজ হল। এসব এখন অপরাধ নয়। মফিজ বিচারককে বলল,,, তাইলে আমি আপনার বৌয়ের সাথে প্রেম শুরু করলে,আপনার পরিবার লন্ডভন্ড করে দিলে অপরাধ হবেনা ?? বিচারক তাকে হুশিয়ার করে দিলে বলল-আপনি আদালত অবমাননা করলে শাস্তি হবে। আইন মানতে আপনি বাধ্য...। মফিজ অনুচ্চস্বরে এমন এক গালি দিল যে, তা যাদের কানে গেল তারা আর মফিজের দিকে তাকায়নি ভয়ে,,,যেন তা শব্দ বোমা।

মফিজ ফিরে এসে খুশী মনে সংসার করতে থাকলো যেন কিছুই হয়নি। বৌও খুশী। একদিন পত্রিকায় দেখলো অমুক বিশাল বিচারকের বাড়িতে দারোয়ান নিয়োগ দেওয়া হবে, বেতন ভালো। মফিজ আবেদন করলো। মফিজের শক্তপোক্ত শরীর,ব্যাচেলর ডিগ্রী কাজে আসলো। মফিজ অবাক হয়ে দেখলো ,,,এ হল সেই বিচারক যে তার মামলা খারিজ করেছিলো। পুরোনো রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সে দারোয়ান হিসেবে নিয়োগ পেল।

বিচারকের সুখের সংসার। বিশাল তার শানসওকত। গৃহে আয়া আছে বেশ কয়েকটা। ফুল বাগানের মালি, ৩ টা ড্রাইভার,,বিশাল বাড়ি। মফিজ ভাবতে থাকে ওই বেতনে এরকম শানশওকত কিভাবে আসে !! কিন্তু হিসাব মেলেনা,কারন মফিজ বরাবরই অংকে কাচা ছিলো। অংকে কাচা হলেও সে এবার ইতিহাসে পাকা হতে চায়। তার মনে হতে থাকে এরাই তারা,যারা অর্থের পাহাড় গড়ে সমাজে ধনী দরিদ্রের বিশাল ব্যবধান তৈরী করে এবং নীচু শ্রেনীকে শোষন করে। আর আরামে তাদের খায়েশ চরিতার্থ করার জন্যে বস্তাপচা আইন পাস করে। পুরো সমাজের নানান সব কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে মফিজ ভেতরে ভেতরে বিষিয়ে ওঠে। কি করবে তাও বুঝে উঠতে পারেনা। অন্তরের জালায় জ্বলতে থাকে। তার ঠিক কি করা উচিৎ তাও বুঝতে পারেনা। সর্ব প্রথম বাড়ির টিভিটা সে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল। সে এটা কেন করলো তাও সে জানেনা।

পরের দিনের ঘটনা- বাড়িতে তেমন কেউ ছিলোনা। মফিজ সুযোগ বুঝে বাড়িতে প্রবেশ করে বিচারকের বৌকে ধর্ষন করে গলা টিপে হত্যা করে। কাজটা করার পর তার বিবেক জাগ্রত হয়। বুঝতে পারে একাজটা সঠিক হয়নি। ক্রোধ দিয়ে সবকিছু সমাধা হয় না। হে ভেঙ্গে পড়ে। ওখানেই বসে পড়ে সে, পালানোর চেষ্টা করেনা।

পুলিশের কাছে অকপটে তার জীবনের প্রত্যেকটা বিষয় খুলে বলে সে। মফিজ এই উপলব্ধীতে আসে যে, তার জীবনের পতন শুরু হয়েছে সামাজিক অবক্ষয় থেকে। আর সমাজে সঠিক অনুশাসন,মোটিভেশন না থাকাতে সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। মফিজকে টিভি মিডিয়াতে আনা হয়, সে এসব কথা বলে। আর বলে-আমাকে শাস্তি দিয়ে সমাজের কোনো লাভ নেই। বরং সমাজকে রক্ষা করো, তবে আমার মত মফিজের পয়দা হতে কষ্ট হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০১৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385875
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ১১:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : ক্লাস ফাইভ পাশ করে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি চালক হওয়া যায় সেখানে কোন এক অফিসের পিওন কিংবা বিচারপতির বাড়ির দারোয়ান হতে গেলে ব্যাচেলর ডিগ্রী পাশ করা লাগে?
০৭ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:৩০
318081
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম আরও কত কি হবে :(
385883
০২ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ১২:৪১
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : গল্পের মাধ্যেমে মুদ্রার বিপরীত চিত্রটি তুলে ধরেছেন দারুন ভাবে।
০৭ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:৩০
318082
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহা ঠিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File