করোনা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ মার্চ, ২০২০, ০৯:৫৮:০৬ সকাল
রোগ মুক্তির জন্যে কেবল দোয়াই যথেষ্ট্য, নাকি চিকিৎস্যাও ?
--------------------------------------------------------------------
রসূল(সাঃ) আমাদেরকে অনেক রকমের দোয়া শিখিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে সেসব দোয়া পড়তে বলেছেন। আপনারা দোয়াগুলোর বাংলা তরজমা পড়ে বুঝতে পারবেন যে, প্রত্যেকটি দোয়াতেই আল্লাহর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মনের আকুতি প্রকাশ করে,নিজের অপরাধের মার্জনা চেয়ে,আল্লাহর বিশালত্বকে উপস্থাপন করে প্রার্থনা করা হয়। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন, তবে তিনি সেসব অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন, আর যদি নাও করেন তবে এর উৎকৃষ্ট বিনিময় আখিরাতে দিবেন, অথবা দুনিয়া-আখিরাত উভয় স্থানেই দিবেন। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধীর জন্যেও নানান দোয়া রয়েছে। নানান ক্ষেত্রে রুকিয়া বা ঝাড়ফুঁক রয়েছে। এগুলো রসূল(সাঃ)এর জীবদ্দশায় চর্চা হয়েছে ব্যপক। রসূল(সাঃ) আমাদেরকে এগুলো করতে বলেছেন।
কিন্তু এসব দোয়াসমূহ হল বিশ্বাসীদের জীবনের নিয়মিত আমল। দোয়া মানে হল আল্লাহর কাছে আবেদন । কবুল করা না করার মালিক আল্লাহ। এসব দোয়ার ফলে কখনও কখনও মানুষ অলৌকিকভাবে রোগ মুক্ত হয়েছে, আবার কখনও কখনও সবচেয়ে সেরা নেক ব্যক্তিও আরোগ্য লাভ করেননি,এমনও হয়েছে বা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রসূল(সাঃ) রোগ-ব্যাধীতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎস্যকের কাছে যেতে বলেছেন আবার একই সাথে দোয়া দুরুদ,ঝাড়ফুঁকের কথাও বলেছেন। ফলে আমাদেরকে সুন্নতের পুরোটাই নিতে হবে।
সহি বুখারী বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে কোনো এক সফরে রসূল(সাঃ) একটি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে এক বেদুইন গোষ্ঠী বসবাস করত। গোত্রপতিকে বিষধর সাপে কাটলে সে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে,তখন ওই গোত্রের একজন এসে একজন সাহাবীকে সাহায্য করতে বলে। এই সাহাবী ছিলেন একেবারে সরলমনা অতি সাধারণ। উক্ত সাহাবী কিভাবে সাহায্য করবে ভেবে না পেয়ে সূরা ফাতিহা পড়ে ফু দেয়। এরপর উক্ত গোত্রপতি হঠাৎই সুস্থ্য হয়ে ওঠে। উক্ত সর্দার তখন সাহাবীকে উপহার স্বরূপ বেশ কিছু বকরী প্রদান করে। রসূল(সাঃ) বকরীগুলো দেখে জানতে চান এগুলো কোথায় পেলে ? জবাবে সে পুরো ঘটনা বলে। তখন রসূল(সাঃ) হেসে উঠে বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতেহা হল "আশ শিফাহ" ? জবাবে সাহাবী বলেন যে, তিনি কেবল এই একটি সূরাই জানতেন।
রসূল(সাঃ) সূরা ফাতিহা পড়ে পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি খেতে বলেছেন। শরীরে ফু দিতে বলেছেন। কিন্তু একইসাথে অসুস্থতার জন্যে চিকিৎস্যকের কাছে যেতে বলেছেন। হিজামা বা ওয়েট কাপিং পদ্ধতির চিকিৎস্যা অনেক হাজার বছর পূর্ব থেকে পৃথিবীতে চালু ছিলো। এটা নিয়ে অনেক হাদীস আছে। স্বয়ং রসূল(সাঃ) এই চিকিৎস্যা গ্রহন করেছেন এবং আমাদেরকে করতে বলেছেন। আল কুরআনে সরাসরি ও ইঙ্গিতপূর্ণ প্রায় ১ হাজার আয়াত রয়েছে যা বিজ্ঞান-ভিত্তিক,যদিও এটি বিজ্ঞানের কিতাব নয়। আল্লাহ মানুষকে গবেষনা-চিন্তা করতে বলেছেন অনেক বার। পরবর্তীতে যখন ইসলামের বিজয় হয়েছিলো, তখন থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যপক চর্চা হয়েছিলো। পুরো ইউরোপ ছিলো অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। মুসলিমরা তাদেরকে আলো দেখিয়েছে জীবনের সকল ক্ষেত্রে। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানে মুসলিম বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণা,অবদান বিশ্বজুড়ে এখনও স্বীকৃত। গোটা মধ্যযুগ ইউরোপের ক্ষেত্রে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ হিসেবে চিহ্নিত হলেও ইসলামী সভ্যতা ছিলো গোটা বিশ্বের জন্যে আলোকবর্তীকা। বাগদাদ,সেভিলসহ ইরাক,সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে আধুনিক হাসপাতাল ছিলো। স্পেনেও একই অবস্থা। চিকিৎস্যা ছিলো সম্পুর্ণ ফ্রি এবং রোগীদের পোষাক,খাওয়া,থাকা ফ্রি ছিলো। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সময় নানান উপহার সামগ্রীও দেওয়া হত। অথচ সেই একই সময়ে ইউরোপে নানান সব অন্ধবিশ্বাস-কুসংষ্কার চালু ছিলো,তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে ভন্ডামী চলত। তাদের নারীদের পড়াশুনা করার অধিকারও স্বীকৃত ছিলোনা, অথচ একই সময়ে মুসলিম নারীরা বড় বড় স্কুল,ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করে তা সফলতার সাথে পরিচালনা করতেন। এ সম্পর্কে ইতিহাস পাবেন আপনারা, কিন্তু আমার আলোচনার বিষয়বস্তু হল এই যে, রসূল(সাঃ) আমাদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে মানুষকে সেবা করতে বলেছেন। আল কুরআন মানুষকে জ্ঞান চর্চার জন্যে আদেশ করেছে। জ্ঞান চর্চা ফরজ করা হয়েছে।
চিকিৎস্যা বিদ্যা সে সময়েও ছিলো,যদিও তা আজকের পর্যায়ে ছিলোনা, কিন্তু ধারা অব্যাহত ছিলো। ওহুদের যুদ্ধে রসূল(সাঃ) মারাত্মক আহত হলে তার(সাঃ) কন্যা ফাতিমা চট পুড়িয়ে তার ছাই দিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেন। মেয়েরা যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবা করত তখন এবং তাদের প্রাথমিক ও জরুরী স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করতে হত। স্বয়ং রসূল(সাঃ) এর কন্যা'ই এই কাজ করেছেন। কোনো জরুরী অবস্থায় বা কারো স্বাস্থ্যহানীতে রসূল(সাঃ) অথবা পরবর্তী যুগের সালফে সালেহীনগন কেবল ঝাড়ফুঁক করতেই বলেননি, তাদেরকে চিকিৎস্যকের শ্মরনাপন্ন হতে বলেছেন। এবং মুসলিমরা চিকিৎস্যা বিদ্যায় ব্যপক পারদর্শিতা অর্জন করেছিলো। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানকে পূর্বের অবস্থা থেকে বের করে আনুনিকায়ন করেছিলো, নানান জটিল রোগের চিকিৎস্যা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলো, সার্জারীর নানান যন্ত্রপাতি তৈরী করেছিলো,চিকিৎস্যা পদ্ধতি,ওষুধ,যন্ত্রপাতি,চিকিৎস্যালয় এসবে মুসলিমরা ছিলো ইউনিক। জাতি ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে সেবা করেছে মুসলিমরা। কিন্তু ইতিহাস ঘেটে কখনই এই দৃশ্য পাবেন না যে, কোনো আলিম ঝাড়ফুঁককে একমাত্র চিকিৎস্যা পদ্ধতি হিসেবে প্রচার করেছে অথবা এটাকে সিক্রেট কোড বানিয়ে মানুষকে কেবল সেটাতে ঝুঁকে পড়তে বলেছে।
ইসলাম সদা সুস্পষ্ট। হাদীসে অনেক রোগের উপশমকারী হিসেবে কিছু পথ্যের কথা বলা হয়েছে, কিছু দোয়ার কথা বলা হয়েছে, এবং সেসব দোয়াগুলো স্পষ্ট। এগুলো অন্যকে বলার সময় কোনো ব্যক্তি নিজের ক্রেডিট নিতে পারেনা। কারন এখানে অহংকার প্রকাশের কিছু নেই। আল্লাহর যে কথা,আদেশ,উপদেশ,নিষেধ তার রসূলের(সাঃ) কাছে এসেছে,সেটা দ্রুত সুন্দর উপায়ে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ। সহজ বিষয়কে কঠিন কোনো রূপ দিয়ে মানুষের কাছে দূর্বোধ্য করার একটাই কারন থাকতে পারে, সেটা হল- "আমি অনেক বেশী জ্ঞানী, অনেক কষ্টে এসব শিখেছি, সহজে তোমরা শিখতে পারবে না, আমাকে অতিরিক্ত কদর করো, সম্মান করো, অথবা পয়সা দাও, ধীরে ধীরে জানাবো..." ঠিক এরকমই।
রসূল(সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ দুনিয়াতে এমন কোনো রোগ তৈরী করেননি,যার প্রতিষেধক তিনি দেননি। অর্থাৎ সকল রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে, কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তা খুঁজে দেখবে। আর খুজঁতে থাকলে আল্লাহ রাস্তা দেখিয়ে দেন। সকলের উচিৎ যে কোনো রোগ ব্যধী থেকে সতর্ক থাকা,নিরাময়ের চেষ্টা করা। বিজ্ঞানীদের উচিৎ সেসব রোগের চিকিৎস্যা আবিষ্কার করা। আর যেসব রোগ একজনের থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে সেসব রোগের বিষয়ে রসূল(সাঃ) বলেছেন, যে এলাকায় এরকম হবে, সে এলাকায় তোমরা গমন করবে না, আর ওই এলাকার লোকও বাইরে যাবেন না। এটা তিনি বলেছেন,যাতে ওই রোগটি ছড়িয়ে না পড়তে পারে। তবে ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে রসূল(সাঃ) বলেছেন, আসলেই ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই। তখন সাহাবী প্রশ্ন করলেন, কিন্তু আমরা তো দেখী রোগ একজনের থেকে আরেক জনে ছড়াচ্ছে ? জবাবে রসূল(সাঃ)বলেন-"তাহলে প্রথম যে ব্যক্তিটি উক্ত রোগ/জীবানু পেয়েছিলো, সে কোথা থেকে সেটা পেয়েছিলো ? "
মূলত: আল্লাহ মানুষকে একদিকে সর্তকতা অবলম্বন করতে বলেছেন, অপরদিকে তিনি রোগ,জীবানু দিয়ে মানুষকে পরিক্ষা করেন অথবা তাদের পাপের শাস্তি হিসেবে প্রদান করেন। এ কারনে দেখা যায়- একই পরিবারে একজন ছোয়াচে রোগী থাকা সত্ত্বেও ওই পরিবারের সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেনা, আবার দেখা যায় সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে, আবার দেখা যায় কেউ সেবা করতে এসে আক্রান্ত হয়েছে, আবার অনেক সেবক আক্রান্ত হয়নি। অনেকে অনেক প্রটেকশন নিয়েও আক্রান্ত হচ্ছে,আবার কোনো প্রটেকশনই নেয়নি, কিন্তু আক্রান্ত হয়নি, এসব ঘটনা দেখা যায়। নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারেনা কে আক্রান্ত হবে আর কে হবেনা। আল্লাহ যাকে আক্রান্ত করবেন, সেই'ই আক্রান্ত হবে। আল্লাহ বলেছেন, আমি বিপদাপদ দেই ,যাতে সে সংশোধিত হয়ে আমার দিকে ফিরে আসে।
আমাদের উপর নির্দেশ হল নিরাপদ থাকার জন্যে ব্যবস্থা গ্রহন করা,চিকিৎস্যা নেওয়া এবং আল্লাহর উপর সর্বদা নির্ভর করা। প্রত্যেকটি মুহুর্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা। আল্লাহ ক্ষুধা,ভয়,জীবন ও সম্পদে ক্ষতি সাধন করে পরিক্ষা করেন। আমরা কেমন আচরণ করি সেটা তিনি দেখতে চান। আবার তিনি সুখ,সমৃদ্ধী দিয়েও পরিক্ষা করেন। ফলে সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপরই নির্ভর করব,ক্ষমা চাইব এবং সুন্নাহ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করব। আল্লাহ যে বিধান,আদেশ,নিষেধ আমার কাছে এসেছে সেটা মানুষের কাছে বিনামূল্যে প্রদান করব। সহজ সরলভাবে প্রকাশ করব। দূর্বোধ্যতা তৈরী করে মানুষের থেকে সম্মান লাভের চেষ্টা করব না। নইলে আমাদের ভেতর অহংকার তৈরী হবে এবং আমরা সকল ভালো কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে না করে নিজেদের নফসের উদ্দেশ্যে করে বসতে পারি,আর তা হলে পুরো আমলটাই বরবাদ হয়ে যাব,আখিরাতে কোনো অংশ থাকবে না। করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কিন্তু ঘাবড়ানো যাবেনা। আর রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, তবে অবশ্যই নিয়মিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে রোগ মুক্তির। নিয়মিত দোয়াসমূহ পড়তে হবে। আরও গভীরভাবে,আরও বেশী আবেগ নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে শরীর ও মনের সকল রোগ ব্যাধী থেকে মুক্তি দান করুন !
বিষয়: বিবিধ
১০৬০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন