পুরুষ কর্তৃক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৯:৩৭ দুপুর
পুরুষ কর্তৃক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান করার বিষয়টিকে সারা দুনিয়াতেই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে ধরা হয়, এবং হত। নারী মানেই লজ্জার আধার। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে প্রায় শতাব্দীকাল ধরে নারীরা বেহায়া হতে শুরু করেছে। এর আগে সেখানকার নারীরা অনেকটা মুসলিম নারীদের মতই হয়াবোধসম্পন্ন ছিলো। কিন্তু নারী কর্তৃক পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান করার বিষয়টি কি সত্যিই লজ্জাকর ? উত্তর হল: অবশ্যই নয়। নারী ও পুরুষ উভয়েই উভয়কে জায়েজের সীমারেখা বহাল রেখে বিয়ের প্রস্তাব করতে পারে। এটা পূর্ববর্তী সালফেসালেহীনদের সময়ে যথেষ্ট পরিমানে প্রত্যক্ষ করা গেছে।
আমরা প্রায় সকলেই জানি উম্মুশ মোমেনীন হযরত খাদিজা(রাঃ) রসূল(সাঃ)কে বিয়ের প্রস্তাব করেছিলেন। তাছাড়াও হযরত সাবিত আল-বানানী(রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আনাসের(রাঃ) সাথে ছিলাম এবং তার সাথে তার এক মেয়ে ছিল। আনাস(রাঃ) বলেনঃ একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে তাকে নিজের জন্য (বিবাহের জন্য) প্রস্তাব দিলেন।
মেয়েটি বলল, হে আল্লাহর রসূল, আপনার কি আমাকে স্ত্রী হিসেবে প্রয়োজন আছে? (অন্য বর্ণনায়, 'ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমাকে বিয়ে করে নিন')
এটা ছিলো সরাসরি প্রস্তাব।
আনাস কন্যা বললঃ ছি ! মেয়েটার বিনয়ের কত অভাব ! কত বেহায়া সে ! বিষয়টি কত লজ্জাজনক!
আনাস(রাঃ) বলল, সে বরং তোমার চেয়ে ভাল; সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বিয়ে করতে চেয়েছে, তাই নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। [বুখারী, হাদিস ৪৮২৮]
.......পরহেজগার সেই মেয়ে নিজে থেকেই পিতার কাছে মুসা (আঃ) কে বিয়ে করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।...
[সূরা কাসাসঃ২৬-২৭]
আরও বহু বাস্তব উদাহরণ রয়েছে সাহাবীদের সময়ে, যেখানে আমরা নারী কর্তৃক পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব করতে দেখী। কিন্তু এটা স্বাভাবিকতা নয়। স্বাভাবিকতা হল কন্যার পরিবার তার জন্যে বিয়ের প্রস্তাব আনবেন বা পাত্র দেখবেন। এরপর কন্যার মতামত গ্রহন করবেন। কন্যার মতামত এতই জরুরী যে, রসূল(সাঃ) কণ্যার মত না থাকাতে একটা বিয়ে বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। একইসাথে যদি পাত্রীর কোনো পছন্দ থেকে থাকে। কাওকে যদি তার কোনোভাবে পছন্দ হয়ে থাকে, সেটা তার পরিবারকে বা অভিভাবককে জানাবে। আর অভিভাবকদের উচিৎ কন্যার মতামতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনা করা। যদি অবস্থা এমন হয় যে, কন্যার অভিভাবকত্বে সমস্যা হয়েছে। অথবা কন্যা যথেষ্ট প্রজ্ঞাসম্পন্ন বয়ষ্কা, তাহলে কন্যার মতামতের প্রাধান্য বেশী।
কন্যার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার ছেলেমানুষী বা নির্বুদ্ধীতাকে গ্রহন করতে হবে। বরং বিষয়টি আপোষমূলক। আবার কন্যার মতামতটিকে উপেক্ষা করার প্রবনতাও ভয়াবহ। সমাজে বিয়ে নিয়ে বহু রকমের সমস্যা রয়েছে। পুরুষ ও নারী উভয়েই হারামে লিপ্ত হলেও চড়া মূল্য দিতে হয় নারীকে। নারীরা প্রলভনে পড়ে অন্যায় করে কখনও। কিন্তু বর্তমানকালে বড় একটি সমস্যা হল তালাকপ্রাপ্তা অথবা বিধবাদের বিয়ে। পুরুষরা এদের থেকে চান্স গ্রহন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে, কিন্তু বিয়ের কথা শুনলে পালায়। ঝামেলা মনে করে এদের বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায় অভিভাবকগনও। অনেকে এদেরকে পূর্বের সম্পর্কের বিষয়ে দোষারোপ করে উপক্ষো করে এবং অভিশাপও দিয়ে থাকে। অনেকে দায় অস্বীকার করে। অথচ আমরা উসলামের ইতিহাসে এই চিত্রের উল্টোটাই দেখেছি। সেখানে একাধীন সন্তানওয়ালা নারীরা বিয়ের ক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য পেত।
যে সমাজে বিয়ে কঠিন, সে সমাজে ব্যভীচারের উচ্চহার থাকবেই। আর সন্তানদের চারিত্রেক ত্রুটির জন্যে তার পিতা-মাতা,অভিভাবকরা কঠোর জবাবদিহী করবেন, এমনকি তাদের পাপের বোঝাও ওদেরকে বহন করতে হবে। ফলে বিয়ে সহজ করতে হবে। মানুষের অতীত নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করে তিক্ত না করে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে, ও সহানুভূতীশীল হতে হবে। আর যাদের বিয়ে হতে দেরী হচ্ছে তারা অবশ্যই ধৈর্য্য ধারন করবে।
যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্রই রাখেন।
যে ব্যক্তি কারো মুখাপেক্ষী হতে চায়না, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে তোলেন।
যে ব্যক্তি ধৈর্য অবলম্বন করতে চায়, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চাইতে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন জিনিস কাউকে দেয়া হয়নি"
[ বুখারী ১৪৬৯, মুসলিম ১০৫৩]
বিষয়: বিবিধ
১১৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রস্তাব ছেলেরাই দেয় এবং সেটা একসেপ্ট করবে কি করবে না সেটা মেয়ের এখতিয়ারে। মেয়ে দেখবে সেই ছেলের প্রস্তাব তার ডিমান্ড পুরোপুরি Fullfill করে কি না। ছেলের যথেষ্ট ক্যাপাবিলিটি আছে যে সে তাকে লাক্সারী দিতে পারবে কি না।
একজন ছেলে একজন মেয়েকে প্রস্তাব দেয় উপরোক্ত চ্যালেন্জ সে ফেস করতে পারবে বলেই। না হলে তাকে রাস্তা মাপতে হবে।
যে ভরণপোষন করবে প্রস্তাব তো তাকেই করতে হবে। মেয়েরা কি ভরণপোষন করবে এটা মাথায় রেখে পুরুষের বিয়ের প্রস্তাব দেয়? নাকি এটা ফ্যাশন কিংবা নিয়ম ভাঙ্গার একটা স্ট্যাটাস?
শুধু কাহিনী করার জন্য না বরং দায়িত্ব নেবার মানসিকতা ও তার কার্যকর পদক্ষেপ সবসময়ই বজায় থাকবে - এরকম মনোভাবসম্পন্ন হলে প্রস্তাব তারাও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পুরুষটিকে তার ইচ্ছেমত লাক্সারী দেবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে মেয়েটিকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন