ফ্যাক্ট# ৫ নির্বাচনে প্রার্থীদের সকলেই বাটপার,ক্রিমিনাল। কাকে ভোট দিবেন ? নাকি কাওকেই দিবেন না ?? আপনার ভোট কি নষ্ট হল ??

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৮:২৪:২৭ রাত



======================================

অনেকে ভাবেন ভোট মানেই গণতন্ত্র,আর গণতন্ত্র হারাম,ফলে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু ভোট হল মতামত প্রকাশের একটি মাধ্যম। এটি স্রেফ একটি টুলস, যার নিজস্ব ভালো মন্দ নির্ভর করে কি কারনে কাজটি করা হচ্ছে তার উপর। এটি মেশিনে হতে পারে,ব্যালটে হতে পারে, হাত তুলে সমর্থন জানানোর মাধ্যমেও হতে পারে, মুখে মুখে সমর্থন জানানোর মাধ্যমেও হতে পারে। মসজিদে ইমাম সাহেব যদি বলেন,, আজ আমি খুৎবা না দিয়ে অমুখ হুজুর দিবে,,কে কে রাজি আছেন হাত তুলেন,,,,এভাবে পক্ষে বিপক্ষে সমর্থন নেওয়াটাও ভোট,,,আবার পিতা বলল-আমরা সুন্দরবন ঘুরতে যাব নাকি কক্সবাজার, বাচ্চারা তোমরা কে কোনটার পক্ষে ?? এভাবে জানতে চাওয়াও ভোট। এবং এই পদ্ধতিটা মুবাহ,, এটি খারাপ অর্থে ব্যবহার করলে বিষয়টি খারাপ হয়, ভালোর ক্ষেত্রে ভালো।

এবার অাসি গনতন্ত্রে। গনতন্ত্র হল ক্যাপিটালিজম বা পুঁজিবাদের রাজনৈতিক টুলস, যার মাধ্যমে সাধারনত পুজিঁবাদী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। কাফিরদের দ্বারাই এর উৎপত্তি। এর সাথে মৌলিকভাবে ইসলামের পার্থক্য রয়েছে যা সকল ফকিহ জানেন। তবে এর অনেক বৈশিষ্ট্য ইসলামের সাথে মিলে যায়। (অবশ্য কমিউনিজমের সাথেও ইসলামের অর্থনীতির কিছু মিল আছে, রাজনীতিরও।) কিন্তু দুনিয়াতে গণতন্ত্র বেশী প্রচলিত হওয়ার কারনে অনেক ফকিহ এটার ভেতরকার কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য দূর করে এটাকে ইসলামিক গণতন্ত্র নামে চালিত করার চেষ্টা করেছেন এবং এর পক্ষে কুরআন,সুন্নাহর নানান ইতিবাচক দিক ব্যাখ্যা করেছেন। অপরদিকে অনেক ফকিহ বলেছেন এটার প্রয়োজন নেই, যেহেতু ইসলাম নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন । ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি হল খিলাফত,যা আল্লাহর রসূল(সাঃ) কর্তৃক পছনদনীয় ও পরিচালিত হয়েছিলো,পরে খুলাফায়ে রাশেদা কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিলো। ফলে আমাদের গণতন্ত্র শব্দটাই উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।

মজার ব্যাপার হল এ দুদল ফকিহ নিজেদের আদর্শ হিসেবে খুলাফায়ে রাশিদার অনুসৃত পদ্ধতি খিলাফতকেই নিজেদের মানদন্ড হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এটার ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে তারা ইজতেহাদী মতামত ব্যক্ত করে পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষে কিছু কট্টর লোক আছে যারা বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চায়না এবং নিজের মতের প্রতি অটল, অথচ বিষয়টি ইজতিহাদগত। একই রসূল এবং খুলাফায়ে রাশিদাকে মেনে নেওয়ার পর তারা রাজনৈতিক বিশ্লেষনে নিজেরা দলাদলিতে লিপ্ত হয়েছে। এদের কনসেপ্ট বিশ্লেষন করলে তেমন কোনো মত পার্থক্য দেখা যায় না। কিন্তু এদের ঐক্য প্রতিষ্ঠার অনিহা দেখলে হতাশ হওয়া লাগে। এরা ইচ্ছা করলেই এক হতে পারে, কিন্তু এরা দূর্বোদ্ধ আচরন করে শয়তানকে খুশী রাখে।

ভোট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এতদূর বললাম এই কারনে,যাতে ভোট বিষয়টা পরিষ্কার হয় এবং দায়িত্ব সম্পর্কেও অবহিত হতে পারি। পুঁজিবাদ,গনতন্ত্র এসব এর পক্ষে -বিপক্ষে আমার লেখা নয়,, ফলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ কমেন্ট না করলেই খুশী হই। বরং ঐক্যের কথা বলেন,,তাতে লাভ আছে। আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য ভিন্ন।

যদি আপনি আপনার জ্ঞান দিয়ে উপলব্ধী করে থাকেন যে,যারা নির্বাচন করছে এরা আল্লাহ বিরুদ্ধ আইন প্রনয়ন করবে,ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই, তাহলে ভোট দানে বিরত থাকাই আপনার উপর ফরজ দায়িত্ব। কারন আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন, এরকমটা জেনেও কেন তুমি কুফর প্রতিষ্ঠায় অংশ নিয়েছিলে ?

(অনেকে মনে করেন মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ট দেশমানেই ইসলামিক রাষ্ট্র,ফলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কিছু নেই। এরা অজ্ঞতার কারনে এটি বলেন। ইসলামিক রাষ্ট্র মানে হল যেখানে ব্যক্তিগত,পারিবারিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সামাজিক,পর-রাষ্ট্রীয়,বিচারিক প্রক্রিয়া,আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ সকল বিষয় শুধুমাত্র ইসলাম দ্বারা পূর্ণাঙ্গরূপে পরিচালিত হয়। এর মডেল হল খুলাফায়ে রাশিদা অর্থাৎ হযরত আবু কর(রাঃ),ওরম(রাঃ)ওসমান(রাঃ),আলী(রাঃ) দ্বারা পরিচালিত শাসন এর মত)

---------------------------

আর যদি আপনার জ্ঞানে মনে হয় কেউ না কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে, তাহলে আপনার উপর দায়িত্ব আপনার এই জ্ঞান অনুযায়ী সেসব মানুষকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করা। উভয় ক্ষেত্রেই আখিরাতে জবাবদিহিতা রয়েছে। আর আল্লাহ আমাদের প্রদত্ত জ্ঞানের উপরই প্রশ্ন করবেন।

এখন প্রশ্ন হল, অনেক জন প্রার্থী আছে, তাহলে কাকে ভোট দেব ?

===========================

আমরা সাধারণত: সমাজের প্রচলিত স্রোত দ্বারা খুব প্রভাবিত থাকি। আমার পরিবার,আত্মীয়,বন্ধু,প্রতিবেশীরা যার পক্ষে মত দেয়,তার প্রতিই আমাদের মন ঝুকে পড়ে। আমরা নিজেরা সাধারনত ভালো মন্দের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। আমাদের জ্ঞানের ও অভিজ্ঞতার অভাবে এরকম করে থাকি। আমরা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হই। স্বাধীন চিন্তা অনেক সময় স্বাধীন থাকেনা। ফলে আমরা অনেক সময় বেশী লোক যাকে চায়,তাকেই ভোট দেই। যার পরিচিতি নেই তাকে এড়িয়ে যাই।

# যার পরিচিত কম কিন্তু মানুষ ভালো, আদর্শও ভালো, তার ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি -তাকে ভোট দিলে আমার ভোটটা নষ্ট হবে। অথবা মানুষ বলে ওকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করিস না। অর্থাৎ আমার ভোটে কেউ যদি জিতে যায়, তবেই আমার ভোট দেওয়া স্বার্থক।

# আমরা নির্বাচনের পূর্বে নেতাদের আচরণ দেখে তাদের আদর্শের ভালো-মন্দ যাচাই করি। এক্ষেত্রে কেউ গরিবকে সাহায্য করলে,সুন্দর বক্তব্য প্রদান করলে, ইসলামিক লেবাস পরলে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। কিন্তু আদর্শের গভিরতা মাপতে পারিনা। কোন আদর্শ সেরা এবং কোনটা মানতে আমরা দুনিয়াতে এসেছি, এসব আমাদের মাথায় প্রবেশ করেনা, করলেও বের করে দেই সমাজের প্রচলিত স্রোতের কারনে। ফলে আমরা প্রতারিত হই।

# নেতারা নির্বাচনের সময় গরিবকে কিছু সাহায্য করে, কাওকে চা খাইয়ে,কাওকে সাহায্যের অাশ্বাস দিয়ে ভোট নেয়। এবং অনেকে ভাবে একটা মাত্র সিল দিয়ে কিছু সাহায্য তো পেলাম। সিল মারা তো কোনো কষ্টের কাজ নয়। এটা মূর্খতার কারনে হয়। দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারনে হয়।

# যখন একাধিক প্রার্থী থাকেন, তখন নিজের বুঝ অনুযায়ী অধিক যোগ্য মানুষকে ভোট দেওয়া উচিৎ। কিন্তু তার আগে নিজ দায়িত্বে প্রার্থীদের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাদের উদ্দেশ্য আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আদর্শিক কোনো প্রর্থী জনপ্রিয় না হলেও তাকে ভোট দেওয়াই শ্রেয়, কারন আমাদের আচরনসমূহ রেকর্ড হচ্ছে। আমাদের নিয়ত এবং কর্মকান্ড আল্লাহ দেখছেন।

#যারা মুসলিম তাদেরকে আখিরাতের স্বার্থে ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এবং যারা ইসলামের প্রকৃত কাজ করবে, বিবেক খাটিয়ে ভোট তাকে দিলেই তার কৈফিয়ত থেকে মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। নইলে শাসকের কাজের দায়ভার ভোটারদের উপরও পড়বে, কারন তারা তাকে নির্বাচিত করেছে।

# যদি প্রার্থীদের মধ্যে কারো যোগ্যতা কিছু কম থাকে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য আদর্শ মহান, তাহলে সেই ভোট পাওয়ার যোগ্য। যে লোকটির ব্যক্তিগত যোগ্যতা অনেক এবং ব্যক্তিগতভাবে সৎ,মহান কিন্তু তার রাজনৈতিক আদর্শ হল সমাজে রাষ্ট্রে কুফর প্রতিষ্ঠা করা, তাহলে সেই লোকটি ভোট পাওয়ার যোগ্য নয় মুসলিমদের থেকে। কারন সে নির্বাচিত হয়ে সততার সাথে কুফর প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।

#যখন সকল প্রার্থী ক্রিমিনাল, তখন ভোটদানে বিরত থাকাই শ্রেয়। ভোট নষ্ট হয়নি, কারন এর উপর কঠিন জবাবদিহী রয়েছে আল্লাহর কাছে। মানুষ আল্লাহর ভয়ে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাজ করলেই মানুষ প্রকৃতভাবে লাভবান হয়। আমাদের জ্ঞান,বিচক্ষনতা একটি বিরাট নিয়ামত। সূরা তাকাসূরের শেষ আয়াত...."অত:পর প্রদত্ত নিয়ামতের উপর হিসাব গ্রহন করা হবেই"

বিষয়: বিবিধ

৭৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385847
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ০৯:২০
হতভাগা লিখেছেন : গণ এর উপর নির্ভর করে কোন গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। এটার কোন সুদূর প্রসারী সুফল নেই। হিলারী-ট্রাম্পের খেলার ফলাফল এখনও আমরা টের পেয়ে যাচ্ছি। এই গণ এর ৫১% আপনার হলে আপনি জয়ী । তাহলে বাকী ৪৯% এর কি কোন মূল্যই নেই?

যারা এসব বিষয়ে সমঝদার তাদের একটা প্যানেল বানিয়ে তাদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত যে কে বা কারা ভালভাবে ও সঠিক পথে দেশকে ও সমাজকে পরিচালিত করতে পারবে।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:০৭
317947
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সঠিক পর্যবেক্ষন Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File