আমার আশপাশের অসাধারণ বাঙ্গালী ভায়েরা !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:৪২:১৮ সকাল



আজ এক স্টোরে এক পরিচিত বাঙ্গালী ভায়ের সাথে দেখা। দেখা বলতে তেমন দেখা নয়। আমি দেখলাম উনি ঘুরে ঘুরে এটা সেটা দেখছেন। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম উনি আমার উপস্থিতি ভালই বুঝেছেন,যদিও আমি কিছুটা দূরে ছিলাম। কিন্তু চোখাচোখী হবার ভয়ে,কথা বলার ভয়ে,একটু উষ্ণ সৌহার্দ বিনিময়ের ভয়ে উনি পালালেন। অথচ এই ভাইটিকে মসজিদে দেখলেই আমি দূর থেকে ছুটে যাই এবং সালাম বিনিময় করে তার সকল বিষয়ের খোজ খবর করি। পূর্বেও স্টোরে উনার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু উনি পাশ কাটাতে চাইলেও আমি হতে দেইনি। দৌড়ে গিয়ে সালাম দেই,কথা বলি।

আরেকজন ভাই ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পি.এইচ.ডি করছেন স্ত্রীসহ। মসজিদে উনার দিকে তাকালেই উনি দৃষ্টি অবনত করে মৌন হয়ে পড়েন। আমি কয়েক কাতার পার হয়ে উনার কাছে এসে মোলাকাত করি,কথা বলি। উনিও কথা বলেন। কিন্তু যতবার দেখা হয়েছে,ততবারই দেখেছি এড়িয়ে চলেন। নিজের ইচ্ছায় কথা বলেন না। বাইরে কোথাও দেখা হলে আমার উপস্থিতি বুঝতে পারা সত্ত্বেও উপেক্ষা করেন। সেদিন উনি এক স্টোরে কেনাকাটা করছেন, আমি দূর থেকে দেখলাম উনি আমাকে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরয়ে চলে যাচ্ছেন। আমি এক দৌড়ে উনার কাছে গিয়ে হাসিমুখে সৌহার্দ বিনিময় করলাম।

আরেক ভাই মোটামুটি হেসে কথা বলেন,যদি মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়। উনি একবার আমাকে তার বাড়িতে দাওয়াত করেছিলেন, আমি বলেছিলাম ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ যাব। কিন্তু উনি উনার বাড়ির ঠিকানা দেননি, তবে ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন। আর নির্ধারিত দিনের আগে অথবা পরে কখনই ফোন করেননি। আমি মনে মনে হেসে খুন হলাম। অন্তত বিনোদনটা উপভোগ্য ছিলো। তবে উনি দেখা হলেই হাসেন,, আমিও হাসি। মধুর হাসি Happy

আরও দুজন ভাই আছেন উনারা চরম অমায়িক। আমাকে কয়েকবার দাওয়াত করেছেন। দেখা হলেই আগ্রহ সহকারে কথা বলেন। উপদেশ দেন। আমার বিষয়ে অন্যদের সাথে গল্পও করেন। এদের একজন বড় ব্যবসায়ী। আরেকজন ওরেগন স্টে ইউনিভার্সিটির ইলেটট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে প্রফেসর। বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিতেও উনি খন্ডকালীন বক্তৃতা করেন,শিক্ষা দেন। উনারা একেবারে মন উজাড় করে কথা বলেন। আমার মনে হয়েছে অত্যন্ত জ্ঞানী ও সম্মানিত লোকেরাই অন্যকে সম্মান করতে বোঝে। আর হীন প্রকৃতির লোকেরাই আন্তকেন্দ্রীক হয়ে থাকে এবং স্বার্থপর হয়ে থাকে, অন্যকে মূল্যায়ন করতে পারেনা। এটা জ্ঞানেরই স্বল্পতা।

আরেক ভাই আমাকে শ্মরণ করেন। উনার যখন অর্থনৈতিক সমস্যা হয়, তখন উনি আমার ফোনে মেসেজ পাঠান। আর আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি ...জি, অবশ্যই,,আপনি সন্ধ্যায় আসুন আমি টাকা উঠিয়ে রাখব ইনশাআল্লাহ। জীবনেও আমি না বলিনি। উনি বারবার ওয়াদা করে তা পালন করতে পারেন না। যদি বলেন আগামী মাসে ফেরত দেব,,,,তাহলে ওটা অন্তত ৩/৪ মাস যাবে। ৪ মাস পূর্বে উনি বেশ কিছু ডলার নিয়েছিলেন গাড়ি ঠিক করার জন্যে। সময়টা ছিলো এমন যে, আমার টানাটানি অবস্থা। তারপরও আমি তাকে না বলিনি। সেই টাকা আজও ফেরত দিলনা। তবে ২ মাস পূর্বে একদিন বলেছিলেন,,,সরি টাকাটা এখনও দিতে পারিনি। আমি বলেছিলাম---আরে কোনো সমস্যা নেই। এটা তো আমি করজে হাসানাহ হিসেবে দিয়ে থাকি। এটা করলে আল্লাহ অনেক নেকী দান করেন,সে জন্যেই করি। এটার মানে হল মুসলিম ভাইকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া,আর আমি তো বিনা শর্তে দেই। আপনার যখন প্রয়োজন হবে, অবশ্যই আমাকে বলবেন।

এখন মনে হচ্ছে উক্ত ভাই এই করজে হাসানায় সুযোগ নিচ্ছে। আজ দুপুরে উনি আমাকে মেসেজ দিলেন যে উনার কিছু টাকা দরকার। সঙ্গে সঙ্গে বললাম, জি অবশ্যই, আপনি রাত ৮টায় আসুন। রাত ঠিক ৮টায় আমি ফিরে দেখলাম উনি বাসার সামনে। আমি কেবল ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুলে ফিরলাম। উনাকে টাকা দিয়ে বাসায় ঢুকলাম। জানতে চাইনি টাকা কবে দিবে। পূর্বেও কখনও জানতে চাইনি। এটাও কখনও বলিনি যে,আমারও টাকা প্রয়োজন। কখনই নিজের অভাব প্রকাশ করিনি। জীবনেও হাসি মুখ ছাড়া অসন্তষ্টির মুখ দেখাইনি। আচরনেও সামান্য বিরক্তভাব প্রকাশ করিনি।

যখনই আমার কোনো ক্ষতি হয়, তখন সেই হাদীসটা মনে পড়ে....মুমিনের পায়ে কাটা ফুটলেও তার সম্মান বাড়ে, পাপ মাফ হয়,,,রহমত করা হয়...। আর যখনই এই ভাইকে টাকা ধার দেই তখনই আল্লাহর কাছে এটাকে উপলক্ষ বা ওছিলা করে অনেক কিছু চাই। এর বেশীরভাগই আখিরাত সংক্রান্ত। আমার বিশ্বাস আল্লাহ আমাকে তা প্রদান করবেন এবং আমার চিন্তার চাইতেও বিশাল হবে তা ইনশাআল্লাহ। আর আমার মনের ভেতর এমন এক প্রশান্তি দেওয়া হয়,,যার মূল্য সারা পৃথিবীর চাইতেও বেশী। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভেতর থেকে সুখী !

আল্লাহ আমাকে সক্ষমতা দান করুন ! আমাকে,পরিবারকে,উত্তম বন্ধুবান্ধবকে তার শাস্তি থেকে মুক্ত করুন ! আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করুন ! হালাল রিজিক বৃদ্ধি করুন ! উত্তম মানুষের সংস্পর্শে ধন্য করুন ! পরিক্ষা সমূহ সহজ করে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন !

বিষয়: বিবিধ

৯৫০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384374
০৪ নভেম্বর ২০১৭ দুপুর ০১:০৭
শেখের পোলা লিখেছেন : আমারও কিছু টাকার খুব দরকার ছিল। কখন আসলে পাওয়া যাবে? পাঠিয়ে দিলে ডবল হাসানা হবে। ধন্যবাদ
০৪ নভেম্বর ২০১৭ বিকাল ০৫:১১
317053
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এতদিন কোথায় ছিলেন!!!
০৭ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:২৭
317063
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওরে এযে চাচা ভাই,,,আছেন কেমন বলেন ?? মহা খুশী আমি। আরে ভাই টাকা ব্যাপার না....যত চান ততই পাবেন,,,স্বয়ং আমিই সার্ভিস দেব ইনশাআল্লাহ Happy
384376
০৪ নভেম্বর ২০১৭ বিকাল ০৫:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উনরা মনে হয় আপনাকে দাওয়াত দিতে ভয় পান তাই এড়িয়ে যান!!! আপনি একবার শুরু করলেতো উনাদের সারা মাসের রেশন শেষ!!!
০৭ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:২৮
317064
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে....এটাও একটা দারুন কারন হতে পারে Happy
384378
০৪ নভেম্বর ২০১৭ বিকাল ০৫:২১
আকবার১ লিখেছেন : আপনার হৃদ্ধয়টা অনেক প্রশস্ত। আমি আগামী মঙ্গল বার Anaheim CA তে যাচ্ছি। ওখান থেকে North Hollywood যেতে চাই। Metro Link, Subway use করে যাওয়া যাবে নাকি।

০৭ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:২৯
317065
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে....জি যাবে যাবে....আর হ্যা,,, ওখানে আলী আকবর ভায়ের বাসায় গিয়ে গরুর গোস্ত রুটি দিয়ে খেতে ভুলবেন না। এটা খেলেগান গাইবেন.....ডিজনিল্যান্ড কো গোলি মারো,,,গরুর গোস্ত হামারি হে....গরুর গোস্ত হামারী হে... Happy
০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ রাত ০১:৪৮
317177
আকবার১ লিখেছেন : Hollywood গিয়েছিলাম, আমার কাছে ভালো লাগেনি। Metro Link, Subway,Amtrack use করেছিলাম। এবার ওরাগনে গিয়ে আপনার খোজ নিব।
১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সকাল ০৮:২৪
317195
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি বড় ভাই,,,,আপনাকে দাওয়াত Happy Happy
384380
০৪ নভেম্বর ২০১৭ বিকাল ০৫:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : দেশে টাকা পাঠান তো ?
০৭ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:৩০
317066
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি, আলহামদুলিল্লাহ পাঠাই
384381
০৪ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৮:১৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপনার লেখা থেকে ,বাইরে কোথাও দেখা হলে আমার উপস্থিতি বুঝতে পারা সত্ত্বেও উপেক্ষা করেন, আপনার ঈমান খুব শক্ত। আমেরিকার বাংলাদেশী সবাই এ রকম। প্রায় প্রতি বছর দু'চার জন বাংলাদেশের প্রকৌশলী ভাইদের সাথে দেখা হয়। তাদের ধারনা আমি জব ম্যানেজ করে দিতে পারবো। তাদের জন্য। অনেক বলতেন,দেশে Chief Engineer, Executive Engineer ছিল। এমন কি কানাডা থেকে Degree নিয়ে , আমেরিকায় এলেও জব পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। Professional boards Except করে না,পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। এখানে(USA) সব প্রফেশনের বোর্ড রয়েছে। এমন কি নাপিত এরও। বাংলাদেশের মত মামা, খালু নেই। যার যার যোগ্যতার নিরিখে জব পেয়ে থাকে। আমি জব পাওয়ার জন্য , প্রাইমারী সাহায্য করি, একাডেমিক ও প্রফেশনে ঢোকার জন্য,। এখানে বুয়াও এবং পিয়ন নেই। সবাই নিজের কাজ, নিজে করে। এই জন্য সবাই পাশ কাটাতে চায়। কোন ঝামেলা নিতে চায় না।
০৭ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৪:৩৩
317067
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তবে আমি ২ জনের জন্যে সুপারিশ করেছিলাম, এতে কয়েক ঘন্টার ভেতর ইন্টারভিউ হয়েছিলো আর ১ জনের জব হয়েছিলো। তবে এখানে দেশের মত সুপারিশ নয়। .যোগ্যতাটা আসল। সঠিক বলেছেন। মানুষ আমাকে এড়িয়ে গেলেও আমি যেচে কথা বলি,সটা এই কারনে যে এর ভেতর দিয়ে বেশী নেকী হবে। আখিরাতে সর্বোচ্চ জান্নাত চাই,,কিন্তু মাল নেই সেখানে যাওয়ার। তাই এভাবে নির্লজ্জের মত যদি কিছু মাল কামানো যায় আর কি Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File