তুই..ই..একা থাক রাজ্য নিয়ে, আমরা চললাম এ দেশ ছেড়ে!!!!!!!!

লিখেছেন লিখেছেন জারা ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৭:৫২ দুপুর

ছোট্র একটি রাজ্যের একমাত্র অধিপতি মহামান্যবর রাজা দুঃশাসন। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো অহঙ্কারী,হিংসুক এবং অতিমাত্রায় দাম্ভিক ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির।ও দাড়ান দাড়ান বলতে ভুলে গেছি সে অবশ্য সর্বদাই নিজের প্রশংসাটা বেশী মাত্রায় পছন্দ করতো। প্রজাবর্গদের সুবিধা অসুবিধা তার আমলের মধ্যেই ধরতেন না।

তার রাজদরবারের উপস্থিত আমলাদের চাটুকারিতা এবং তোষামোদ খুব রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে বেশ ভালোবাসতেন । আর সন্ধ্যায় নাচের জলসায় নর্তকীদের মোহনীয় উদ্দাম নৃত্য দেখতে দেখতে শরাবের নেশায় চূর হয়ে থাকতে ভালোবাসতেন।

এদিকে রাজা থাকতেন তার আমোদ প্রমোদ নিয়ে ব্যস্ত আর ওদিকে রাজ্যের প্রজাদের ঘরে ঘরে ছিলো অন্ন সঙ্কট, বস্ত্র সঙ্কট। প্রজারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ছিলো না তাদের সন্তানদের জন্য কোন বিদ্যা অর্জনের বালাই। বলা যায় একপ্রকার মূর্খ হয়েই প্রজারা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাটিয়ে দিতো।

একদিন রাজা দুঃশাসনের শখ জাগলো মনে, একটু রাজপথে ঘুরে ফিরে তার প্রজাবর্গদের নিজের শানশওকত মানমর্যাদা দেখাবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ , প্রধানমন্ত্রীকে বলা হলো তার ইচ্ছার কথা। তঃক্ষনাৎ প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের নগরপালকে ডেকে রাজপথগুলো এবং রাজ্যের নগরটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে আদেশ দিলো। এবং সেই সাথে নগরীটাকে একটু সাজাতে গোছাতেও বলা হলো। নগরপাল তখনই ছুটলো এই হুকুম তামিল করতে। হাজার হলেও রাজা রাজ্যে পরিদর্শন করবেন বলে কথা।

কথামত দিন ক্ষন ঘনিয়ে আসলো দুঃশাসন রাজার রাজ্যে ঘুরে দেখার দিন। সকাল বেলাতেই হাতিশাল থেকে সবচেয়ে তাগড়াজোয়ান হাতিটাকে বের করে তার পিঠে চড়ে বসলো রাজা। সঙ্গী হলো প্রধানমন্ত্রী ও পিছনের সাড়িতে অন্যান্য রাজন্যবর্গরা। রাজকীয় হাতির পিঠে চড়ে মহান রাজা দুঃশাসন খুব মনের আনন্দে হেলেদুলে চলছেন। চারদিকে একটু উৎসব উৎসব ভাব। পথ চলতে চলতে একসময়ে দেখা হলো একপাল প্রজার সাথে , তারা রাজার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। দুঃশাসন রাজা এগুলো দেখে প্রথমেই তার প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন এই লোকগুলো কি বলছে? প্রধানমন্ত্রী অতি বিনয়ের সাথে উত্তর দিলো -মহামান্য অধিপতি, আপনি একটি বিশাল রাজ্যের সবচেয়ে প্রতাপশালী মহারাজ, এইসব লোকের কথায় কান দিবেন না, আমি দেখছি এদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী তখনই ওই প্রজাগনকে ধরে বেধেঁ কারাগারে নিক্ষেপের আদেশ দিলেন সেনাপতি মহাশয়কে। সেনাপতিও প্রধানমন্ত্রীর আদেশ তামিল করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

রাজা দুঃশাসন তার রাজকীয় হাতির মুহিষকে আরও সামনে এগোনোর ইংগিত দিলেন। কিছুদূর এগুনোর পরে দেখলেন একদল ভুখা নাংগা প্রজারা রাজপথের দুপাশে দাড়িয়ে আছে মাথা নিচূ করে। রাজা দুঃশাসনের ভীষন গোস্বা হলো এসব দেখে। পূনরায় প্রধানমন্ত্রীকে বললেন এসব কি হচ্ছে মন্ত্রী মশাই?

প্রধানমন্ত্রী তখনই ওইসব প্রজাদেরকে ওখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য আদেশ দিলেন। এবং তার আদেশে পুরো রাজপথই ফাঁকা জনশূন্য হয়ে পড়লো। রাজা দুঃশাসন হাতির পিঠে চড়ে মুগ্ধ নয়নে তার রাজ্যেটা দেখছেন আর ভাবছেন। আহ! এই না হলে রাজ্যে! আহা রাজা হয়েও কত সুখ!!

একসময় তার মনে হলো পথের দুধারে প্রজারা বিনীত মস্তকে তাকে যদি কুর্নিশ করতো বেশ ভালো লাগতো। যেই ভাবা সেই কাজ তখনই প্রধানমন্ত্রীকে তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলেন। প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষন ইতস্তত করে পরে বললেন- মহামান্য রাজা, প্রজাদেরকে তো তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওদের পড়নে পরিধেয় কোন বস্ত্র নেই বলে। সবশুনে রাজা দুঃশাসন ক্রোধে ফেটে পড়লেন। বললেন এসব প্রজাদেরকে এখনই আমার রাজ্যে থেকে বের করে দেয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী রাজার আদেশে সেদিনই দেশের সমস্ত প্রজাদেরকে ডেকে দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। বেচারা সরলপ্রান প্রজাদের আর কি বা করার ছিলো। তারা একরাশ ঘৃনা আর বুকভরা ক্ষোভ নিয়ে রাজার সামনে এসে বললো তাহলে তুই..ই.. থাক একা রাজ্যপাট নিয়ে , আমরা সকল প্রজারা দেশ ছেড়ে চললাম!!!!!!!

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File