কাঠুঁরিয়া রাজা ও এক বৃদ্ধা পাগলিনী মা।

লিখেছেন লিখেছেন জারা ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৪৮:০৭ রাত



চোখজুড়ানো কোমল নরম স্নিগ্ধ সবুজ মনোরম এক স্বপ্নের দেশে এক অত্যাচারী রানী রাজত্ব করতো। তার সুকঠিন অত্যাচারে ও নিষ্ঠুর পৈঁশাচিক শাসনের ভারে প্রজারা সবাই ভয়ে উৎকন্ঠায় দিনগুজরান করতো। প্রজা সকলের রানীর নিষ্ঠুর অত্যাচার সহ্য করতে করতে তাদের বাকশক্তি একসময়ে রোধ হয়ে গেলো। তারা প্রতিবাদের ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেললো অবশেষে ।

প্রজারা তাদের স্বর্নালী অতীতের কথা ভেবে ভেবে কষ্ট পেতো সারাটা ক্ষন। কি চমৎকার দিনগুলোই না ছিলো সেই সূবর্ন দিনগুলোয়। কিন্তু আলাদিনের চেরাগের মতো তারা এমন কাউকে পেলো না। যার দ্বারা তাদের মনে শান্তি এনে দিতো। প্রতিদিন রানী তার মনের খায়েশ ও নিষ্ঠুর কার্যাবলী পূরন করার জন্য পাইক পেয়াদা পাঠিয়ে দেশের তরুন প্রজাদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যেতো। আর সদ্য তরুন যুবকরা যদি তার কথা ঠিকমতো না শুনতো তবে সেই তরুন যুবকদের মৃত্যু অবধারিত ছিলো।

আর তাই অভিভাবক প্রজারা বিশেষ করে মায়েরা শোকে চিন্তায় তাদের যুবক ছেলেদেরকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতো। অনেক সময় লুকিয়ে রেখেও পার পাওয়া যেতো না। অত্যাচারী রানীর লোকজন তাদেরকে ঠিকই খুজেঁ বের করে ধরে নিয়ে যেতো। কখনও সখনও বা ওই সব যুবকদের আধ খাওয়া শবদেহ পাওয়া যেতো ঝোপঝাঁড় অথবা জঙ্গলের ধারে। তখন আর ওই মৃত দেহকে সনাক্ত করার উপায় থাকতো না। কি আর করা, ওই তরুন যুবকদের বৃদ্ধ পিতা-মাতারা প্রচন্ড শোকে দুঃখে একসময়ে পাথর বনে যেতো।

কেউ কেউ বা সন্তান খোয়ানোর শোক সামলাতে না পারলে পাগলীনির বেশে পথে পথে ঘুরে বেড়াতো। এই ছিলো ওই সুন্দর দেশটির প্রতিদিনের চিত্র। একদিন তেমনি এক সদ্য সন্তানকে হারিয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো এক পাগলিনী মা। এমনি করে ঘুরতে ঘুরতে সে তার দেশ ছেড়ে অন্য এক দেশে চলে আসলো। ওই দেশটির রাজা ছিলেন ভীষন সৎ প্রকৃতির এবং ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবে সে তার রাজত্ব চালিয়ে রাজকোষ থেকে একপয়সাও গ্রহন করতো না।

সে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটেঁ বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যা পেতো, তাই দিয়ে সে তার জীবিকা নির্বাহ করতো। বৃদ্ধা মা,পাগলিনীটি গভীর জঙ্গলের পথ ধরে চলছিলো আর রাজা তখন সেই জঙ্গলেই কুঠার দিয়ে কাঠ কাটায় ব্যস্ত। মা পাগলীটি কাঠুরিয়া রাজাকে দেখে একটু খাবার চাইলো। তখন কাঠুরিয়া রাজা কাঠ কাটা থামিয়ে, নিজ হাতে বৃদ্ধা মা পাগলিনীকে খাবার খাইয়ে দিলো পরম মমতায়। এবং খাবার খাওয়ানো হলে বৃদ্ধা মা পাগলিনী কে প্রশ্ন করলো তার এই দূরবস্থা কেনো? বৃদ্ধা মা,টি তার আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ঝরঝর করে কাদঁতে কাদঁতে কাঠুরিয়া রাজাকে সবকিছু খুলে বললো।

কাঠুরিয়া রাজা বৃদ্ধা পাগলিনী মায়ের দুঃখ গাঁধা কাহিনী শুনে তাকে আশ্বস্থ করলো এই বলে যে, এর ন্যায়বিচার সে করবে। আর তখন দেরী না করে কাঠুরিয়া রাজা তঃক্ষনাৎ প্রাসাদে ফিরে সেনাপ্রধানকে তলব করে পাশ্ববর্তী দেশের রানীর প্রাসাদ আক্রমন করার পরিকল্পনা করলো। সেনাপ্রধান কাঠুরিয়া রাজার আদেশে সমস্ত সেনাবাহিনীকে নিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ আক্রমন করার পথ ধরলো। কাঠুরিয়া রাজা নিজেও এ যুদ্ধে শরীক হলো। একসময় অত্যাচারী রানীর বিশাল এলাকা জুড়ে প্রাসাদটি ঘেরাও করে ফেললো ,কাঠুরিয়া রাজার সৈন্য সামন্তরা একজোট হয়ে।

অত্যাচারী রানী আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে প্রতিরোধ করার আর সময় পেলো না। তার আগেই ধরা পড়লো কাঠুরিয়া রাজার হস্তে। এবং কাঠুরিয়া রাজার ধারালো কুঠারের এক আঘাতে অত্যাচারী রানীর জীবনপ্রদীপ নিভে গেলো। প্রজারা সব মুক্ত হলো সেদিন থেকে।

তাদের জীবনে সুদিন ফিরে আসলো। আর কখনও কোন বৃদ্ধ পিতা-মাতার তরুন যুবক সন্তানকে আর কেউ ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলো না। চারদিকে একপ্রকার না বলা শান্তির বার্তা বয়ে চললো।

বিষয়: বিবিধ

২৫৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File