শহীদ কামারুজজামান একটি অলৌকিক অবস্থান : কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন লিখেছেন শিক্ষানবিস ১২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৪:২৪:১৬ বিকাল

এক. বিচার শেষ হয়নি :

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল-কুরআনে কয়েকটি বিষয় এত বেশী আলোচনা করেছেন, তা দেখে অবাক লাগে। এ সকল বিষয়ের একটি হল, আখেরাত- শেষ বিচার ও প্রতিদান। আরেকটি হল, তাকওয়া- সব বিষয়ে আল্লাহর ব্যাপারে সাবধানতার নীতি অবলম্বন। আরেকটি হল, সবর।

একজন মুমিনের জীবনে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস হল, তার যতগুলো অপরিহার্য্ বিশ্বাস আছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্বাস। আর যে মুমিন নয়, আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস তার কাছে একটি বাজে ধারনা। বিজ্ঞান ও প্রগতি বিরোধী মতবাদ। বহু বুদ্ধিমান মানুষ আছেন যারা সৃষ্টিকর্তার অস্বিত্বে বিশ্বাসী, কিন্তু আখেরাত বিশ্বাস করেন না। সে দিকটা বিবেচনায় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের চেয়ে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন একটি কঠিন কাজ।

আমাদের সৌভাগ্য আমরা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখি। সে এক চরম ও প্রচন্ড বিশ্বাস। প্রগতিবাদী, বিজ্ঞানপুজারী, ভোগ-বিশ্বাসী ও ভোগবাদি উম্মাদেরা কিসের ভিত্তিতে কি ধরে আর কি ছাড়ে, কি মানে আর মানে না, তাতে আমাদের কী যায় আসে? আমরা আল কুরআন- মানব সমাজে সর্বাধিক পঠিক ও সর্বাধিক অনুসারিত গ্রন্থ- থেকে এ বিশ্বাস ধারন করেছি। আলহামদু লিল্লাহ!

এ তো গেল আখেরাত নামের একটি জগতের কথা। কিন্তু এ দুনিয়াতেও একটি আখেরাত আছে। আল-কুরআন ও হাদীসে তাকে অভিহিত করা হয়েছে আকেবাত নামে। মানে শেষ পরিণতি। জালেমরা যা কিছু অপরাধ করে আর মজলুমেরা যা কিছু বরদাশত করে তার কিছু পরিনাম ও প্রতিদান জালেম ও মজলুম সকলেই লাভ করবে এ দুনিয়াতে। যেমন হোসাইন রা. কে খুন করা হল। পরিণামে ইয়াযীদ ও তার বাহিনী লাঞ্জনা ও অভিশাপ বহন করল দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত। মরহুম সাদ্দাম হোসাইনকে ফাঁসী দিয়েছিল যে বিচারক, সে নর্তকীর পোশাক পরে পালিয়ে রেহাই পায়নি শেষ পরিণতি থেকে। কিন্তু জালেমদের দুর্ভাগ্য তারা যা করে সেটাকেই চুরান্ত ও চিরন্তন ভাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা জালেমদের সম্পর্কে আল্লাহকে গাফেল মনে করো না। তিনি তাদের অবকাশ দেন .....।’

‘তোমাদের যদি আঘাত লেগে থাকে তবে তাদেরও আঘাত লেগেছিল সে রকম। আর মানুষের মাঝে এই দিনগুলো আমি বদলে দিয়ে থাকি..... ।’

কথিত আছে, সুলতান মাহমূদ গজনভী তার এক সহচরকে বলেছিলেন, আমার এ আংটিতে এমন একটি কথা লিখে দেবে যে, দু:খের সময় পড়লে আনন্দ পাওয়া যাবে আর আনন্দের সময় পড়লে দু:খ চলে আসবে।

সহচর আংটির উপর লিখে দিয়েছিলেন, ‘এই অবস্থা বেশীক্ষণ স্থায়ী হবে না।’

হ্যা, বন্ধু বদলে যাবে এই দিন।

ফেরাউন কখনো ভাবেনি তার পরিনতির কথা। সে মূছা আ. এর অনুসারীদের বলল, আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক দিয়ে কেটে দেব। তোমাদের খেুজর বৃক্ষে শুলে চড়াবো। আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও স্থায়ী। তারা বলল, হে ফেরাউন! .... তুমি যা পারো করো। তুমিতো শুধু এই দুনিয়াতে কিছু করার ক্ষমতা রাখো। আর আমরাতো আমাদের প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে নিয়েছি। তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন...।

দুই : একটি অলৌকিক অবস্থান

একটি সময় ছিলো যখন আল্লামা সাঈদীর ওয়াজ শুনতাম কিন্তু তার অনেক কথাই পছন্দ হতো না। মনে করতাম লোকটি এইসব আজগুবী কথা কোথায় পায়? এরপর তিনি যখন জামাতের নায়েবে আমীর হলেন, দেখতে পেলাম তার সব কথাগুলো সুন্দর। কুরআন ও হাদীস অুনযায়ী আলোচনা করছেন। একটুও বাহিরে যাচ্ছেন না।

রায়ের পূর্বে সেই গঠিত আদালতে তিনি যে শেষ কথাগুলো বলেছিলেন, তা এখনো আমি মাঝে মাঝে পড়ি। কিন্তু একটি কথা আমার পছন্দ হয়নি। তিনি বলেছিলেন, আমি শহীদ হতে প্রস্তুত কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে মরতে রাজী নই। তিনি আদর্শ প্রতিষ্ঠিায় ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা নামে বই লিখেছেন। তিনি কি জানতেন না, যত নবী-রাসূল, সাহাবী, ইমাম, ইসলামী নেতাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে, সকলকেই এক বা একাধিক মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে খুন করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে সরাসরি ইসলাম লালন, অনুসরণ, প্রসার, প্রচারের অভিযোগ আনা হয়নি।

জানি না, হয়তো এ কারণে আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে শাহাদতের সৌভাগ্য দান করেও মাহরূম করলেন কি না।

কিন্তু অসাধারণ দৃঢ়তা দেখালেন শহীদ কামারুজ্জামান রহ.। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রতিটি ঈমানদারের কিছু কারামত থাকে। আর এই দৃঢ়তা, অবিচলতা শহীদ কামারুজ্জামানের একটি কারামত। তিনি একটি বারের জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাইতে রাজী হলেন না। আল্লাহ আকবর!

তিন. প্রতিশোধ প্রতিকার :

আল্লাহ তাআলা বলেন: অত্যাচারিত হওয়ার পর যে প্রতিশোধ নেয় তার কোন দোষ নেই। দোষতো তাদের যারা মানুষের উপর জুলুম করে, দেশে অন্যায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তবে যারা সবর করে আর ক্ষমা করে দেয়, তাতো হবে দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ।

এখানে আল্লাহ তাআলা ব্যক্তি, পরিবার ও সংগঠনকে প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। তবে আসল প্রতিশোধ হল, যাকে খুন করা হয়েছে, তার মত আদর্শিক ও যোগ্যতা সম্পন্ন আরো মানুষ তৈরী করা।

১৯৯৩-৯৫ সাল ছিল ইসলামপন্থীদের উত্তাল আন্দোলনের সময়। নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী প্রবল আন্দোলন চলছে। তখন এমনও দিন গেছে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামাত, দক্ষিণ গেটে শাইখুল হাদীসের ইসলামী ঐক্যজোট, আর মুক্তাঙ্গনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সমাবেশ। আমি প্রতিটা সমাবেশে শরীক হতাম। আর ভাবতাম, যদি এ তিন সমাবেশ একটি সমাবেশের রূপ লাভ করতো! জামাতের সবাবেশে কম যেতাম। তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের কিছুটা অবিশ্বাস ছিল। কিন্তু যখন কামারুজ্জামান বক্তৃতা দিতে দাড়াতেন, তখন উপস্থিত হয়ে যেতাম তার বক্তৃতা শোনার জন্য। এ জন্য তিনি অনেক আগ থেকেই টার্গেটে ছিলেন ইসলামের শত্রুদের। একাধারে সুবক্তা ও লেখক বেশী পাওয়া যায় না।

তাই কামারুজ্জামানের মত আরো নেতা তৈরী করাই হবে আসল প্রতিশোধ।

চার. লাভ-ক্ষতির হিসাব নিকাশ :

যত মহৎ উদ্দেশ্যে খুন করা হোক। খুন, খুন হিসাবেই খ্যাতি পায়। কসাই ও জল্লাদদের প্যানেল যত দীর্ঘ ও প্রতাপশালী বা চৌকষ হোক, তারা খুনী। কিন্তু তারা কে কি পেয়েছে জানি না। হয়ত বিদেশী প্রভূদের থেকে কিছু আর্থিক সুবিধা, নাস্তিক-মুরতাদ, শাহবাগী দুর্বিত্তদের বাহবা বাহবা, কিছুটা প্রমোশন। কিন্তু তারপর সারা জীবন তাকে একটি ভয় ও মানসিক শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াবে। তার বিবেক তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। তার সন্তানেরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের কাছে খুনীদের সন্তান হিসাবে পরিচিতি পাবে। অপরদিকে পরিবার হিসাবে নিহতের পরিবার শহীদি পরিবারের সম্মান পাবে। সংগঠন হিসাবে জামাত-শিবির সারা বিশ্বের সহানুভুতি লাভ করবে। এমনকি দেশে যে সকল ইসলামপন্থীরা এতদিন জামাতকে সুবিধাবাদি রাজনৈতিক দল বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছিলো, যারা বলতো জামাত সব সময় গা বাচিয়ে চলে, তারাও এখন বলতে শুরু করছে, আমরা ভুলের মধ্যে ছিলাম। প্রমাণিত হয়েছে, জামাত সুবিধাবাদি নয়, আত্নত্যাগী।

এগুলো হলো দুনিয়াবী দৃষ্টিভংগিতে করা হিসাব। আর আখেরাত বা শেষ বিচারে যা কিছু আছে তার হিসাব করার মত ক্যালকুলেটর কোনো মানুষের কাছে নেই। এ ছাড়াও এই সকল খুনীদের জন্য আছে দুনিয়াতে অনেক বিপদ-আপদ, রোগ-শোক। যাতে তারা আপতিত হবে- মজলুমের আহাজারী আর্ত-চিৎকার যখন মেনে আসবে গজবরূপে। কেহ কেহ করবে আত্নহত্যা। আমাদের কাছে সে খবর কখনো পৌছবে, কখনো পৌছবে না। তবে ঈমানের দাবী অুনসারে আমরা নিশ্চিত, মহান আল্লাহ আল-আযীয, আল-জব্বার, আল-কাহহার, আযীযুন জুনতিকাম খুনীদের পাকড়াও করবেনই। জানি, খুনীরা অনেক অনেক শক্তিশালী। তারা আমাকেও খুন করার ক্ষমতা রাখে যে কোন অজুহাতে। কিন্তু তারা মহান আহকামুল হাকেমীন আল্লাহকে কখনো পারস্ত করতে পারবে না। মজলুমদের দুআ কবুল আর জালেমদের পাকড়াও করাটা তার ওয়াদা। তিনি কখনো ওয়াদার খেলাফ করেন না।

খুনীদের আরো বড় পরাজয় হল, তারা যে আদর্শকে টার্গেট করেছে সে আদর্শকে কখনো নির্মূল করতে পারবে না। খামাখা ক্ষণিকের চুলকানি থেমে যাওয়ার স্বাদ উপভোগ করল মাত্র।

পাঁচ. অপরাধ থেকে দায়মুক্তি

যখন বিশ্বের কোথাও কোন অপরাধ, অন্যায় সংঘটিত হতে দেখা যায়, তখন একজন ঈমানদারের দায়িত্ব হল, সেই অন্যায় থেকে নিজেকে দায়মুক্ত রাখা। এ জন্য আল্লাহ তাআলা প্রতিবাদ, নিন্দা প্রকাশের ব্যবস্থা দিয়েছেন আল-আমর বিল মারুফ ওয়ান নাহী আনিল মুনকার নামে। যদি কেহ এটা করে তবে সে সেই অপরাধ থেকে আল্লাহর কাছে দায়মুক্তি পেতে পারে। আর যদি সে অপরাধকে সমর্থন করে বা দেখে নীরবতা পালন করে তবে সে সেই অপরাধে জড়িত বলেই ধরা হবে।

অবাক করার মত বিষয় হল, যারা ইসলাম বুঝে না সেই জাতিসংঘ, সেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সে মানবাধিকার সংগঠন এই হত্যাকান্ড বন্ধ করতে বলল। তারা বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করল। কিন্তু আমাদের দেশের সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, আলেম-উলামা, পীর মাশায়েখ, ধর্ম যাজকেরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল। আমি জানি না, তারা কিভাবে দায়মুক্তির প্রমাণ দেবেন শেষ বিচারে। আমার ভয় হয়, এই অন্যায় তাদেরকে আক্রান্ত করে কিনা।

ছয়. লড়াই চলবে, চলবে ফাসীর উৎসব

পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্য্ন্ত আল্লাহর দেয়ার ধর্মের অনুসারী ও সমাজের দুষ্ট শ্রেণীর সাথে সংঘাত অব্যাহতভাবে চলে আসবে, চলতে থাকবে। ইতিহাসের দু একটি অধ্যায় বাদ দিলে সব রাষ্ট্রে ধর্মের অনুসারী ও সরকারের মধ্যে সংঘাত ছিল এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা হল, এক দল তার দীন-ধর্ম অনুসরণ করবে আর অন্য দল -যারা শয়তানের অনুসারী- তাদের বাধা দেবে, অত্যাচার করবে, জেলে পুরবে, শুলে চড়াবে, ফাসি দেবে, খুন করবে। যারা অত্যাচারিত বা নিহত হবে, তিনি তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও পুরস্কারে ভুষিত করবেন। তাদের দুনিয়াতে অমর করে রাখবেন।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে ফাসী দেয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে পেশওয়ার মহাসড়কে একটি গাছও বাকী ছিল না যেখানে এক বা একাধিক স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে ফাসীতে ঝুলানো হয়নি। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে সাত শত আলেমকে গাছে ঝুলিয়ে ফাসী দেয়া হয়েছিল। তখনকার সময়ের সরকার ও তাদের চাকর-বাকরবৃন্দ তাদেরকে দুস্কৃতিকারী, নাশকতাকারী হিসাবেই চিন্হিত ও অভিযুক্ত করেছিল। কাজেই সরকার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি, সরকার পক্ষের স্বাক্ষী, সরকার পক্ষের বিচারক ও সরকারের চাকর-চাকরানীবৃন্দ কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করলেই সে ইতিহাসে অপরাধী হয়ে যায় না। সে মহান আল্লাহর কাছে অভিযুক্ত হয় না। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষের ইতিহাস তো তা-ই বলে।

বিষয়: বিবিধ

২০৩৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

314540
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:০৬
সাদামেঘ লিখেছেন : অসাধারণ দৃঢ়তা দেখালেন শহীদ কামারুজ্জামান রহ.। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রতিটি ঈমানদারের কিছু কারামত থাকে। আর এই দৃঢ়তা, অবিচলতা শহীদ কামারুজ্জামানের একটি কারামত। তিনি একটি বারের জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাইতে রাজী হলেন না। আল্লাহ আকবর! সহমত
314550
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৩
আশাবাদী যুবক লিখেছেন : মুমিনরা এমনই নির্ভীক হয়
314581
১৩ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৫৬
ইয়াফি লিখেছেন : তাঁর দৃঢ়তা, অবিচলতা মজবুত ইমানের লক্ষণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদ কামারুজ্জামানকে উত্তম পুরুস্কার দিবেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File