"আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত তারা আপনার রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ কোরআনকে সত্য জ্ঞান করে এবং তা প্রবল প্রতাপশালী, সর্ব গুনান্বিত আল্লাহর পথ প্রদর্শণ করে৷"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:২১:২৪ সকাল
(৩৪) সুরাতুস সাবা মক্কী, রুকু সংখ্যা ৬ আয়াত ৫৪টি
শুরু হতে যাচ্ছে মক্কী মাদানী মিলিত সুরার পঞ্চম গ্রুপ৷ এ গ্রুপে রয়েছে একাধারে তেরটি মক্কী ও তিনটি মাদানী সুরা৷ মদানী এ সুরা গুলি সবই আয়তনে ছোট৷ বড় থেকে ছোট হিসেবে মাদানী সুরা গুলি সাজালে হয়, সুরা বাক্বারা, সুরা আনফাল, সুরা আলে ইমরাণ, সুরা নিসা, সুরা আযাব, সুরা নূর ও সুরা মাঈদা৷ কিন্ত কোরআনের বিন্যাস ভিন্ন৷
ছোট মাদানী সুরা গুলি প্রায়ই বড় গুলির সমসাময়িক সময়েই নাজিল হয়েছে, যেমন, সুরা সাফ সুরা আহযাবের সমসাময়িক, সুা মোহাম্মদ সুরা বাক্বারার সম সাময়িক৷ বদর যুদ্ধের আগে নাজিল হয়৷
আমরা দেখেছি কোরআনের শুরু ও কম বেশী সাত পারা পর পর কোন সুরা ‘আল হামদু’ দিয়ে শুরু হয়েছে৷ এই তালিকায় রয়েছে, সুরা ফাতেহা, সুরা আনআম, সুরা কাহাফ ও এখনের সুরা সাবা৷ অবশ্য পরের সুরা ফাতিরও আল হামদু সহযোগে শুরু হয়েছে এবং এ দুটি সুরায় বেশ মিলও রয়েছে৷
সুরা সাবায় রুকু আছে ৬টি ও আয়াত রয়েছে ৫৪টি৷
সুরাতুস সাবা রুকু;-১ আয়াত;-১-৯
الرَّحِيمِ الرَّحْمـَنِ اللّهِ بِسْمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي الْآخِرَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ
অর্থ;-সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নভোমণ্ডলে যা আছে এবং ভূমণ্ডলে যা আছে সবকিছুর মালিক এবং তারই প্রশংসা পরকালে, তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ৷
# ইহকালেতো তাঁর প্রশংসা আছেই, পরকালেও থাকবে তাঁর প্রশংসা বা হামদ৷ আর সেই হামদের পতাকা থাকবে মোহাম্মদ সঃ এর হাতে৷ আর এজন্যই তিনি মোহাম্মদ বা আহমদ৷ আর তাঁর কওম হাম্মাদুন৷ তিনি বলেছেন যে সেদিন তিনি আল্লাহর যে প্রশংসা করবেন তা বলে বোঝানো যাবেনা৷
২/يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ السَّمَاء وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ الرَّحِيمُ الْغَفُورُ
অর্থ;-তিনি জানেন যা ভূগর্ভে প্রবেশ করে, যা সেখান থেকে নির্গত হয়৷ আর যা কিছু আকাশ হতে বর্ষিত হয় এবং যা আকাশে উত্থিত হয়৷ তিনি পরম দয়ালু ক্ষমাশীল৷
৩/وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
অর্থ;-কাফেররা বলে, তাদের উপর কেয়ামত আসবে না৷ আমার রবের শপথ-অবশ্যই আসবে৷ তিনি অবৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞিাত৷ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে অনু পরিমানও তার অগোচরে নয়, তদপেক্ষা ক্ষুদ্র ও নয়, তদপেক্ষা বৃহৎও নয়৷ সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে৷
# ‘সায়া’ ও কেয়ামতের পার্থক্য আগেই বলা হয়েছে৷ এখানে ‘সায়া’ বা বিপর্যয়ের সময়ের কথা বলা হয়েছে৷ কাফেররা কেয়ামতে বিশ্বাস করেনা, তাই তারা পৃথিবীর ধ্বংসের কথায় মানেনা৷ যিনি গায়েবের বিষয়ে জানেন তিনি বলেন তা অবশ্যই ঘটবে৷ রের দু আয়াতে তার কারণ বা প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে৷ এক সময় মানুষেরর ধরণা ছিল যে এ বিশ্ব ধ্বংস হবার নয়৷ কিন্তু বর্তমানে সে ধারণা বদলে গেছে৷ মানুষ বিশ্বাস করে, এ বিশ্ব ধ্বংস হবে আর তা সম্প্রসারণের বিপরিতে গিয়ে৷
৪/لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُوْلَئِكَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
অর্থ;-কেননা যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ তাদেরকে প্রতিদান দেবেন৷ তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সন্মানজক রিজিক৷
৫/وَالَّذِينَ سَعَوْا فِي آيَاتِنَا مُعَاجِزِينَ أُوْلَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مِّن رِّجْزٍ أَلِيمٌ
অর্থ;-আর যারা আমার আয়াত সমুহকে ব্যর্থ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি৷
# দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, মুমিনদের জন্য চাষআবাদের জমি বা পরীক্ষার কেন্দ্র৷ এখানে যে যেমন বপন করবে পরকালে তেমন ফষল পাবে৷ অথবা যেমন পরীক্ষা দেবে, পরকালে তার ফলাফল তেমনই পাবে৷ যারা আ্লাহর হুকুম মোতাবেক জীবন কাটাল, ভোগ বিলাস, সহায় সম্পদের, প্রতিষ্ঠিত কারবার, উত্তম ক্যারায়ারের তোয়াক্কা না করে কায় ক্লেশে সৎ জীবন যাপন করল, মানুষকে সৎ পথের সন্ধান দিল, অবশ্যই পরকালে তার কিছু পাওনা হল৷
আবার যারা ঠিক এর উল্টোটা করলল, পৃথিবীতে ন্যায় অন্যায় বিবেচনা না করে, অন্যের হক মেরে আরাম আয়েশে জীবন কাটাল, তার কিছু জেল জরিমানা অবশ্যই পাওনা হল৷ এদের প্রতিদান বা প্রাপ্য প্রদান করার জন্যই কেয়ামত প্রয়োজন৷ অন্যথায় অবশ্যই বে ইনসাফী হবে, আ্লাহ বেইনসাফী করেন না৷
প্রাসঙ্গীক ভাবে বলতে হয়, এক সময় মানুষ এ বিশ্বকে চিরস্থায়ী ভাবত৷ বর্তমানে ধারণা পাল্টেছে, মানুষ জানে ও মানে যে, একদিন এ বিশ্ব ধ্বংস হবে, আর তা সম্প্রারণের বিপরিতে গিয়ে৷ কোরআন ১৪০০ বছর আগেই তা বলে দিয়েছে৷
৬/وَيَرَى الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ الَّذِي أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِي إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
অর্থ;-আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত তারা আপনার রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ কোরআনকে সত্য জ্ঞান করে এবং তা প্রবল পতাপশালী, সর্বগুনান্বিত আল্লাহর পথ প্রদর্শণ করে৷
৭/وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ نَدُلُّكُمْ عَلَى رَجُلٍ يُنَبِّئُكُمْ إِذَا مُزِّقْتُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّكُمْ لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ
অর্থ;-কাফেররা বলে, আমরাকি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে যখন তোমরা সম্পূর্ণ রূপে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে তারপর আবার তোমরা নুতন রূপে সৃজিত হবে৷
# ঠাট্টা মশকরা করে কাফেররা রসুলের ব্যাপারে এমন কথাই বলত, কারণ তারা কেয়ামত, পুণরুত্থান, হিসাব নিকাশে বিশ্বাস করতনা৷
৮/أَفْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَم بِهِ جِنَّةٌ بَلِ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ فِي الْعَذَابِ وَالضَّلَالِ الْبَعِيدِ
অর্থ;-সেকি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে? নাকি সে উন্মাদ হয়েছে! ববং যারা আখেরাতে ইমান রাখেনা তারাই রয়েছে আজাবে ও ঘোর পথভ্রষ্টতায়৷
# সমাজে এমন কিছু মানুষ ছিল যারা ভাবত, এইতো সেই মোহাম্মদ সঃ যিনি আমাদেরই মাঝে চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন৷ তিনি মিথ্যাবাদী, শঠ, প্রতারক, অসৎ নন৷ আমরাই তাকে ‘আল আমিন’ ‘আল সাদিক’ উপাধী দিয়েছি৷ তবেকি তিনি এখন মিথ্যা কথা বলছেন, না তার মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে৷ বরং তারাই ঘোর পথভ্রষ্টতায় রয়েছে, যারা আখেরাতে বিশ্বাস করেনা৷
৯/أَفَلَمْ يَرَوْا إِلَى مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُم مِّنَ السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِن نَّشَأْ نَخْسِفْ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ نُسْقِطْ عَلَيْهِمْ كِسَفًا مِّنَ السَّمَاء إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِّكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيبٍ
অর্থ;-তারাকি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করেনা? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমী ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খণ্ড তাদের উপর পতিত করব৷ আল্লাহ-অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শণ রয়েছে৷
# সামনের জিনিষ বলতে আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ, যাকে ‘আলাইল্লাহ’ বলা হয়েছে আর পিছনের আকাশ বলতে ইতিহাস, যা ঘটেগেছে, যাকে ‘আইয়ামুল্লাহ’ বলা হয়েছে৷ সবের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর নিদর্শণ, আল্লাহর সন্ধান৷
আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিমেষেই কোন জনপদকে ধ্বংস বা বিলীন করতে পারেন৷ ইচ্ছা করলেই আসমান থেকেও বজ্রপাত বা অন্যকিছু নিক্ষেপ করতেও পারেন আর তার মাঝেও রয়েছে তার নিদর্শণ৷ যা তাঁর পথের পথিকদের জন্য হয় শিক্ষনীয় বিষয়৷
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ এই আংশটুকু থেকে আমি যা জানলাম যা শিখলাম আমাকে সেটুকু আমল করার তৌফিক দিও আমার চাচাজান যিনি কষ্ট করে আমাকে জানালেন তাকে তুমি উত্তম প্রতিদান দিও দুনিয়া ও আখিরাতে ।
অনেক ধন্যবাদ চাচাজান ।
May Allah (swt) accept our deeds and forgive us!
জাযাকুমুল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন