বিএনপি কী ভাবছে!!!!!

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ০৭:০৬:৫৪ সকাল

শনিবারের হামলা: তারপর কি? বিরোধী

দল ইলেকশন করতে পারবে তো।

গত ২৮ অক্টোবর শনিবার কক্সেসবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর এবং সাংবাদিকদের গাড়ি বহরে একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। আজকের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক কম করে হলেও ৩৫ টি মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট কারের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। কারা এই হামলা করেছে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা হামলা করেছে তারা সমস্বরে শ্লোগান দিয়েছে “জয় বাংলা”। একেক স্থানে হামলায় অংশ নিয়েছিল অন্তত ৫০ ব্যক্তি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক ফেনীতে এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন মেয়র আলাউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নিজাম হাজারি। হামলার সেনাপতি ছিল নিজাম হাজারির ঘনিষ্ঠ এবং ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গনি রিগ্যাল। অবাক লাগে যখন দেখি যে ওবায়দুল কাদেরের মত এমন দায়িত্বশীল একজন নেতাও মন্ত্রী বলেন যে, বিএনপিই নাকি এই হামলা করিয়েছে।

যারা বাংলাদেশ তথা পাকিস্তানের রাজনীতি দেখে অভিজ্ঞ তারা ওবায়দুল কাদেরদের এই উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টাতে অবাক হন না। কারণ শুধু এখন কেন, এই বাংলাদেশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে তারা বহু সভা এবং মিছিল মিটিংয়ে হামলা করেছেন। হামলার পর বলেছেন যে ঐসব হামলা ছিল নাকি জনতার রুদ্র রোষের বহিঃপ্রকাশ। এই তো সেদিন কক্সেসবাজারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছিল বিএনপির একটি টিম। সেখানেও ওরা হামলা চালায়। সেই হামলায় আমির খসরু মাহমুদ সহ কয়েকজন নেতা ও কর্মী আহত হন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে সরাসরি তার গাড়িতে আক্রমণ করা হয়। সেটিও কি করেছিল বিএনপি? প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলেও ওপর তাদের ঝটিকা বাহিনীর আক্রমণের ক্যাটালগ দিতে গেলে তালিকা অনেক বড় হয়ে যাবে।

কিন্তু অবাক লাগে যখন ওবায়দুল কাদের সহ আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন যে বেগম জিয়া ত্রাণ দিতে যাবেন, তো সড়ক যোগে যাবেন কেন? তিনি তো বিমানে গেলেই পারতেন। বড়ই তাজ্জবের ব্যাপার। বেগম জিয়া বিমানে যান, কি ট্রেনে যান, কি গাড়িতে যান, কি গরুর গাড়িতে যান, সেটি একান্তভাবেই তার নিজস্ব এবং দলীয় ব্যাপার। এটি নিয়ে শাসক দল মাথা ঘামাবে কেন?

এসব হামলা এবং মামলার খবর পত্র পত্রিকায় আপনারা আগেও পড়েছেন এবং আজও পড়লেন। এটিই তো শেষ নয়। এই ধরণের হামলা অতীতে হয়েছে, গতকাল হলো এবং ভবিষ্যতেও হবে। তাই হামলার খবরের বিবরণে না যেয়ে আমি বিএনপি সহ বিরোধী দল সমূহের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই।

এই ধরণের হামলা অতীতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তাহলে এমন ভীতিকর এবং সন্ত্রাসী পরিস্থিতিতে আপনারা ইলেকশনে যাবেন কিভাবে? কেন যাবেন? এই সরকার থাকবে, বর্তমান সংসদও থাকবে এবং সেনাবাহিনীও মোতায়েন হবে না- এমন একটি পরিস্থিতিতে আপনারা কি মনে করেন যে নির্বাচনে গেলে আপনারা জয়লাভ করতে পারবেন? ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে ভয় এবং আতঙ্কে কর্মীরা কেন্দ্রের আশে পাশে দাঁড়ায়নি। ২০১৪ সালের কথা আরো করুণ। সারাদেশ জুড়ে তথাকথিত ভোট হলো। ভোট কেন্দ্র ফাঁকা। কোন কোন কেন্দ্রে কুকুর বেড়াল বিশ্রাম নিয়েছে। তারপরও গড় ভোট প্রদান দেখানো হলো ৪০ শতাংশ। অথচ বাস্তবে ৫ শতাংশও ভোট দেয়নি। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে ২০১৮ সালে ঘটবে না সে ব্যাপারে গ্যারান্টি কে দেবে?

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে রাস্তার দুই সারি দিয়ে লক্ষ মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়েছেন বেগম জিয়াকে দেখতে এবং অভিনন্দন জানাতে। সেখানে ৫০/৬০ জন লাঠিধারি ব্যক্তি হামলা করল। তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন? আমি বলব না, আপনারাও লাঠি সোটা নিয়ে ওদের ওপর হামলা করুন। কিন্তু গণপ্রতিরোধ বলে তো রাষ্ট্র বিজ্ঞানে, গণতন্ত্রে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে একটি কথা আছে। সেদিন যদি বিএনপির নেতৃত্বে জনতা প্রতিরোধ করতো তাহলে ওদের পালাবার পথ থাকতো না। এভাবে বিএনপি কতদিন রাজনীতি করবে? এই রকম দুর্বল মেরুদন্ড নিয়ে ইলেকশন করতে গেলে সেখানেও তো ভোটের ফলাফল হবে গতবারের মত। জনগন যে বিএনপির সাথে আছে সেটা কি সেদিন বিমান বন্দরে বেগম জিয়ার সংবর্ধনা এবং সড়ক পথে কক্সেসবাজার গমনে প্রমাণিত হয়নি? তারা যদি মনে করে থাকেন যে প্রতিরোধের প্রয়োজন নাই, জনগন এমনিতেই তাদের ভোট দিয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছেন। দেখা যাবে, জনগন ভোট কেন্দ্রে যেতেই পারেননি। আর যা কিছু ভোট ধানের শীষে পড়বে, গননার সময় দেখা যাবে, সেগুলির মার্কা বদলে গেছে।

এখনও সময় বয়ে যায়নি। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে বাংলাদেশ আমেরিকা বা বৃটেন হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ বাংলাদেশই আছে। সেই বাস্তবতা তাদের বুঝতে হবে।

বিষয়: রাজনীতি

৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File