সব শেয়ালের এক রা!!

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০২:৩৩:৪৬ দুপুর

ঢাকার দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র দখল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোট জালিয়াতির ছবি তোলায় সাংবাদিকদেরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা, ধানের শীষের ভোটারদের আঙ্গুলে ছাপ রেখে নৌকায় ভোট দেয়া, ধানের শীষের ভোটারদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, দলীয় সমর্থক ও ভোটর নয় এমন ছেলে-মেয়েদেরকে এনে লাইনে দাড় করিয়ে রাখা, বুথের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ও সর্বশেষ ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার অনুগত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ও সচিব আলমগীর।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, দুই সিটিতে গড়ে ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশ। ঢাকা উত্তরে আলীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এখানে সঠিক তথ্য হলো, ৮-১০ শতাংশ ভোটার নৌকায় ভোট দিয়েছে। বাকী ৫ শতাংশ ভোট জালিয়াতি করে বাড়ানো হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণে আ.লীগের ফজরে নুর তাপস ১৭ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু, এখানের সঠিক তথ্য হলো ১০ শতাংশ ভোটার নৌকায় ভোট দিয়েছেন। বাকি ৭ শতাংশ ভোট নেয়া হয়েছে ডিজিটাল জালিয়াতি করে।

দেখা যাচ্ছে, এভাবে ভয়াবহ ভোট ডাকাতির পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ও ইসি সচিব আলমগীর নির্লজ্জভাবে সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও মাইলফলক হিসেবে আখ্যাদিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি শেখ হাসিনা এই ভোট চুরিকে সরকারের পক্ষে মানুষের রায় বলে দাবি করেছেন।

ভোটের পর শনিবার রাতে শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের জনপ্রিয়তা ও ইভিএমে ভোটের পরীক্ষা হয়ে গেল। আমরা যে এত কাজ করলাম মানুষের জন্য তাহলে মানুষ আমাদের কতটুকু আস্থায় নেয়, বিশ্বাস করে এবং ভোট দেয় কি না সেটারও একটা টেস্ট হয়ে গেল। নগরবাসী ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে পুনরায় তাঁদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। এ বিজয় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।

নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা যেসব দাবি করেছেন সবই ভিত্তিহীন। প্রকাশ্যে দিবালোকে কেন্দ্রদখল করে ভোট ডাকাতি করে শেখ হাসিনা বলছেন-জনগণ নাকি তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। হ্যাঁ, দুই সিটিতে গড়ে ১০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনা ও তার কথিত উন্নয়নকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তারপর, ভোট ডাকাতির এই নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতির উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনার অনুগত প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। সাংবাদিকরা কেন্দ্রদখল, এজেন্টদেরকে বের করে দেয়া, হামলা-মারধর, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে নৌকায় সিল মারা, বুথের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি করা, ধানের শীষের ভোটারদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ার প্রমাণ পেশ করার পরও নুরুল হুদা বললেন-আমি সন্তুষ্ট। আসলে শুধু সিটি নির্বাচন নয়, গত ৩০ ডিসেম্বরের ব্যাপক ভোট ডাকাতির পরও নুরুল হুদা বলেছিলেন-আমি সন্তুষ্ট। নির্বাচন কেমন হলো সেটা নুরুল হুদার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট রাখা। চেয়ার ধরে রাখতে হলে তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সব কিছু করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখন আর স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়। এটা এখন শেখ হাসিনার অধীন একটা নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান।

এরপর, সিটি নির্বাচন নিয়ে আরেক হাস্যকর তথ্য দিয়েছেন শেখ হাসিনার আরেক ইসি সচিব আলমগীর। বুধবার আলমগীর দাবি করেছেন, নির্বাচনের ৯৯.৯৯ শতাংশ পরিবেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে ছিল। বাকি পয়েন্ট জিরো জিরো নিয়ে যদি আপনারা কিছু বলতে পারেন। নির্বাচনের পরে শুনেছি যে, একই দলের মধ্যে হয়তো বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, তারা হয়তো হাতাহাতি করেছে। তবে এ কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি।

দেখা গেছে, দেশের সব গণমাধ্যম ভোটকেন্দ্র দখল, ধানের শীষের এজেন্টদেরকে বের করে দেয়া, ভোটারদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্রের মধ্যে কৃত্রিম লাইন তৈরি করে রাখা, হামলা, মারধরের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এমনকি বিবিসি ও ডয়েচে ভেলেও সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটি কেন্দ্রেও বিএনপির এজেন্টরা থাকতে পারেনি। তাদেরকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। এরপরও ইসি সচিব আলমগীর বললেন-সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

ইসি সচিবের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই বলছেন-একজন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ কখনো এসব ভিত্তিহীন কথা বলতে পারেন না। ইসি সচিবের মানসিক সমস্যা আছে। তার দালালি সীমার বাইরে চলে গেছে।

উৎস :অ্যানালাইসিস বিডি

বিষয়: বিবিধ

৬৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File