বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের নমুনাঃ ২৯ দিনে ২৯ শিশু হত্যা

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২১:০২ রাত

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে একটি করে

শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১ জানুয়ারি থেকে ২৯

জানুয়ারি পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ শিশু। এদের

মধ্যে চারজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।

নিখোঁজের পর পাওয়া গেছে ছয়জনের লাশ। স্বজনদের

হাতে খুন হয়েছে তিনজন। বেসরকারি সংস্থা শিশু

অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য পাওয়া

গেছে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সাল

পর্যন্ত শিশু হত্যার হার ছিল ক্রমবর্ধমান। ২০১৫ সালে এই হার

২০১৪ সালের তুলনায় কিছুটা কমেছিল। কিন্তু চলতি বছরে

প্রায় প্রতিদিনই শিশু হত্যার ঘটনা, আগের সব হারকে

ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে

২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এক হাজার ৮৫ শিশু হত্যার শিকার

হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২০৯, ২০১৩ সালে ২১৮, ২০১৪

সালে ৩৬৬ জন এবং ২০১৫ সালে ২৯২ শিশু হত্যার শিকার

হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অপহরণের পর ১১১

শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। আর ২০১২ সালে ৬৭ শিশু

অপহরণে শিকার হয়, এদের মধ্যে ১৭ জনকে উদ্ধার করা

হয়েছে। তবে ৫০ জনের ব্যাপারে কোনো তথ্য সংস্থাটির

নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, নিখোঁজ

বা অপহরণের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ

ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে, মামলা হয়েছে। মুক্তিপণ

চাওয়ার বিষয়টিও পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারপরও

ওই শিশুদের জীবিত উদ্ধার করা যায়নি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের মুগারচর থেকে গত শুক্রবার

নিখোঁজ হয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. আবদুল্লাহ (১১)। এ

ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করে

পরিবার। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরিবারের কাছে

আবদুল্লাহকে অপহরণের কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ

দাবি করে। পরিবার বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকাও

পাঠায়। কিন্তু তারপরও আবদুল্লাহকে ফেরত দেওয়া হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার আবদুল্লাহদের বাড়ির মাত্র ১০০ গজ

পশ্চিমে একটি বাড়ি থেকে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরা

আবদুল্লাহর গলিত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই বাড়িটি আবদুল্লাহর

মায়ের বড় মামা মোতাহার হোসেনের। ঘটনার পর থেকে

মোতাহার পলাতক।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার

মুরাভাঙ্গা এলাকার একটি লেবু খেত থেকে মো. শাকিল

(১১) ও মো. ইমরান (১১) নামের দুই শিশুর গলাকাটা লাশ

উদ্ধার করা হয়। শাকিল ও ইমরানের বাড়ি ঢাকার ধামরাই

উপজেলার চরচৌহাট গ্রামে। তাঁরা স্থানীয় একটি

স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত বুধবার বাড়ি থেকে

বের হয়ে তারা নিখোঁজ হয়। শিশুদের পরিবারের কাছে

মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কিন্তু পরিবার মুক্তিপণ দিতে

পারেনি। পরে বাড়ির অদূরে ওই দুই শিশুর লাশ পাওয়া যায়।

রংপুর নগরের আদর্শপাড়ার মিঠাপুকুর উপজেলার

খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেপানি গ্রামের একটি জমি

থেকে গর্ত খুঁড়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় গত শুক্রবার রাতে

রাহিমুল ইসলাম রনক নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত

১ ডিসেম্বর দুপুরে বাড়ির উঠানে খেলার এক ফাঁকে

নিখোঁজ হয় সে। ওই দিন রাতেই কোতোয়ালি থানায়

একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার। পরে ৩

ডিসেম্বর পরিবার একটি অপহরণ মামলা করে।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার

থেকে হাফসা আক্তার রূপা নামের পাঁচ বছরের এক শিশু

নিখোঁজ হয়। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা শিশুটির

পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। ওই ব্যক্তিরা

পুলিশকে এ তথ্য না জানাতে বলে। কিন্তু পরিবার

পুলিশকে জানায়। পুলিশ অভিযান শুরু করে। এরপর ওই দিন

রাত দুইটার দিকে আড়াইহাজারের দুপ্তারা ইউনিয়নের

গিরদা এলাকা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এভাবে শিশু হত্যার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান

প্রথম আলোকে বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়।

দীর্ঘদিন ধরে এটি ঘটে আসছে। মানুষের বেশি পরিমাণে

লোভ, জায়গা জমি নিয়ে শত্রুতাসহ বিভিন্ন কিছুর জেরে

শিশু হত্যার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনা

প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, নৈতিকতার শিক্ষাসহ

সর্বস্তরে জনমত গড়ে ওঠাতে হবে। তা ছাড়া কঠোর আইন ও

তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান ইমরানুল হক চৌধুরী

প্রথম আলোকে বলেন, শিশু হত্যা সামাজিক ব্যাধিতে

পরিণত হয়েছে। একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা এ ব্যাধি দূর

করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

৭৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358397
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করেছে ভাই। এটাই উন্নয়ন!!!
358433
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:৩৫
শেখের পোলা লিখেছেন : ৩০ লাখ পুরণের প্রচেষ্টা হচ্ছে৷ এ সবই চেতনা৷
358446
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৫৮
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : সেই দিনের কথা ভাবলে ভয় হয় ,
যেদিন ১দিনে ই ২৯ জন হবে Crying
358466
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
হতভাগা লিখেছেন : মনে হয় ফেরাউনের যুগ চলে এসেছে - যে যুগে কন্যা শিশুদের জীবিত রাখা হত আর পুত্র সন্তানদের হত্যা করা হত ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File