মাওলানা একেএম ইউসুফ এর অছিয়তনামা

লিখেছেন লিখেছেন পত্রিকার পাতা থেকে ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫১:৩২ সন্ধ্যা



ঢাকা: কারাবন্দি অবস্থায় আজ রবিবার ইন্তেকাল করেছেন জামায়াতে ইসলামী সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা একেএম ইউসুফ। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নালিল্লাহি রাজিউন।

গত বছরের ১২ মে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের আদেশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাাব।

গ্রেপ্তারের সপ্তাহ খানেক আগে ৪ মে তিনি পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের উদ্দেশ্যে একটি অছিয়তনামা লিখে যান। http://www.akmyusuf.org সেই অছিয়তনামাটি প্রকাশ করেছে।

আরটিএনএন পাঠকদের জন্য সেই অছিয়তনামাটি হুবহু প্রকাশ করা হলো;

আমার বয়স এখন ৮৭ বছরে উপনীত হয়েছে। আমার সমবয়সী সাথী ও বন্ধুদের অধিকাংশই এখন দুনিয়া ত্যাগ করে পরপারের যাত্রী। বর্তমানে বয়সের ভার ও নানা রকমের জটিল রোগে রোগাক্রান্ত সত্ত্বেও আল্লহ এখনো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার আট সন্তান ও চব্বিশজন নাতি-নাতনীদের অধিকাংশই এখন বিদেশে (আমেরিকা, কানাডা, ও আরব আমিরাতে) বসবাস করছে।

যেহেতু আমার বয়স অধিক; উপরন্তু আমি নানা রকম জটিল রোগে রোগাক্রান্ত, যে কোনো সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে পরপারের আহ্বান আসতে পারে, যথাসম্ভব এই আশংকার প্রেক্ষিতে আমার সন্তান ও নাতি-নাতনীরা আমার জীবন-চরিতের উপরে একখানা পুস্তিকা প্রকাশের আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে তাদের ওই পুস্তিকায় প্রকাশের জন্য লিখিত কিছু পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। তাদের আগ্রহ ও অনুরোধে তাদের ও আমার অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে নিম্নে লিখিত কথাগুলি পেশ করছি। আশা করি এরা সকলেই আমার অন্তর নিংড়ানো এ কথাগুলিকে উপদেশ (অছিয়ত) হিসেবে গ্রহণ করবে।

আমি পরম করুনামযয় আল্লাহর একজন ক্ষুদ্র বান্দাহ ও দাস। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমার ও আমার সন্তান-সন্ততি ও নাতি-নাতনীদের উপরে করুণার যে ধারা প্রবাহিত রেখেছেন, আমার কামনার চেয়ে তা অনেক অধিক, যার শুকরিয়া আদায় করা আমার সাধ্যের অতীত। আল্লাহর প্রিয় ও মকবুল বান্দাহদের নেক আমলসমূহের ধারে কাছেও আমি পৌঁছাতে পারিনি। তবে আল্লাহর উপরে গভীর ঈমান নিয়তই আমাকে তার মহান রসূলের (সা.) পথ অনুসরণ করে চলার তাকীদ করেছে। ফলে আমি জীবনভর ঐ পথ অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করেছি। যদিও চলার পথে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভুল-ভ্রান্তিও হয়েছে। যার জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রাথী ও তার করুণার ভিখারী।

আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন: ‘তোমরা আমার রহমত হতে নিরাশ হবে না। আল্লাহ তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (আল যুমার, আয়াত: ৫৩)

আমি আমার সন্তান ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, আমি মহান আল্লাহ ও তার রসূলের (সা.) নির্দেশের আলোকে পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের হক আদায়ের ব্যাপারে যেমন সজাগ ও সতর্ক ছিলাম, তেমনি সতর্ক ছিলাম সামাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণের ব্যাপারে। দেশ ও দেশের বাহিরে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য যারা কাজ করেছেন, আমর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নিয়ে আমি তাদের কাতারেও শামিল ছিলাম।

আমার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য আমার অছিয়ত, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনদের অধিকারের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকবে, তেমনি সতর্ক থাকবে প্রতিবেশী ও দরিদ্রের অধিকারের ব্যাপারে। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের কথাটাও যেন তোমাদের চিন্তায় থাকে।

পরম করুনাময় আল্লাহর আমার উপরে অনুগ্রহ ছিল, ফলে আমি দেশ-বিদেশের কতিপয় নেক বান্দাহ ও দাতা সংস্হার সাহায্যে আমার মাতৃভূমির সব এলাকায় বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক (সাদকায়ে জারিয়াহ্‌র) কাজ করেছি। সাধ্যের মধ্যে থেকে তোমরাও কিছু সদকায়ে জারিয়াহ্‌র কাজ করবে। কেন না সদকায়ে জারিয়াহ্‌র সওয়াব মৃত্যুর পরেও আমলনামায় জমা হতে থাকে।

আমার প্রাণাধিক সন্তান-সন্ততির জন্য আমার শেষ উপদেশ (আছিয়ত) হলো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার নির্দেশিত ফরজ ইবাদাসহমূহ যেমন: নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্ব নিয়মিত আদায়ের ব্যপারে আদৌ গাফলতি করবে না। গুনাহের (অপরাধমূলক) কাজের ধারে কাছেও যাবে না। আর নিয়তই নৈতিক চরিত্রের উঁচুমানে পৌঁছার জন্য সচেষ্ট থাকবে।

উপরে যে অছিয়ত আমি আমার সন্তান-সন্ততিদের উদ্দেশ্যে করলাম, ঐ একই আছিয়ত আমার আন্দোলনের সাথী প্রবীণ ও তরুণদের জন্যেও রইল।

আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ

জামাদিউস্ সানী ১৪৩৪ হিজরী

৪ মে ২০১৩ ঈসায়ী

বিষয়: বিবিধ

১৬৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

175133
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
175148
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
সিকদারর লিখেছেন : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File