ইরানের ভিসা এবং সমস্যা

লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ১২ জুন, ২০১৪, ১২:০৮:৩৬ রাত

দেশের অনেকেই মাঝে মাঝে ইমেইল-ইনবক্স করেন ইরান ভিজিট করতে চান বলে। এখানে সমস্যা হচ্ছে ঢাকাতে ইরান এম্বাসি থেকে কোন বাংলাদেশীকে ট্যুরিস্ট/ভিজিট ভিসা দেয়া হয়না, শুধুমাত্র ইরানের সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে কারো কোন ধরনের কাজ থাকলে সে ই ভিসা পায়। সোজা ভাষায় তেহরান থেকে ইনভাইটেশন লেটার ঢাকায় পৌছুলেই আপনি ভিসা পাবেন।

এই সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে বছরখানেক আগে, উভয় দেশের লোভী কিছু মানুষের জন্য। অনেক দালাল ও এজেন্সি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে লোক পাচারের রুট হিসেবে বেছে নেয় ইরানকে। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তাদেরকে তেহরানগামী বিমানে তুলে দিত। টার্গেট থাকত ইরানের কিশ আইল্যান্ড বা বন্দর আব্বাসের দিক থেকে কোনরকম গালফ পাড়ি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোতে ঢোকা অথবা তুরষ্ক হয়ে গ্রীস/ইটালির লাইনে যাওয়া।

আর তাদের এ অপকর্মে সহযোগী ছিল কিছু ইরানী কর্মকর্তা যারা ঢাকায় এম্বাসিতে ভিসা দিত টাকার বিনিময়ে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বেশীরভাগই ইরানে নেমে কিছুদিনের মধ্যেই হয় পুলিশের খপ্পরে পড়ে জেলে যেত অথবা তাদেরকে কৌশলে দালালগ্রুপ পণবন্দী করে পরিবারের কাছে টাকা দাবী করত। এ নিয়ে অনেক কাহিনী, বেশ কজন আমাকে বিভিন্ন সময় ম্যাসেজও করেছেন দেশ থেকে তার ভাই বা মামা/চাচার জন্য কিছু করা যায় কিনা দেখেতে। এখনও বহু মানুষ ইরানের জেলে আছেন অথবা এখানে লুকিয়ে অবৈধ জীবন-যাপন করছেন।

একসময় ইরানের উচ্চপর্যায়ে এরকম ঘটনাগুলো পৌছুতে থাকে এবং ইরান সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম তদন্তের জন্য ঢাকা সফর করে। পরবর্তীতে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঢাকায় ইরান এম্বাসি থেকে সবধরনে ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়, শুধুমাত্র তারাই ভিসা পাবে যাদের নামে ইরান থেকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হবে।

ইরানে কয়েকরকমের ভিসা দেয়া হয়। ট্যুরিস্ট, এডুকেশন, ধর্মীয় ভিজিটসহ আরও বেশ কিছু। জব বা এডুকেশনে যারা আসেন তারা এসেই এক মাসের মধ্যে রেসিডেন্ট পারমিট নিতে হয়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য অবশ্যই ইউনিভার্সিটি বা ইরানের শিক্ষা/বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের আমন্ত্রণ পত্র থাকা লাগবে। ধর্মীয় ভিজিট/স্টাডি বা কালচারাল প্রোগ্রামের ভিসা শুধুমাত্র ঢাকার ইরান কালচারাল সেন্টার বা কোম-মাশহাদের আল-মুস্তাফা ইউনিভার্সিটি অথরিটিই দিতে পারে। এছাড়া অন্যান্য কোন কাজ থাকলে সে সংক্রান্ত্র ইরানী মন্ত্রনালয় বা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ ছাড়া আপনি ভিসা পাবেননা।

এদেশে বিদেশীদের কাজের কোন অনুমতি নাই অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, এমনকি স্টুডেন্টদের পার্টটাইম কোন জবও নিষিদ্ধ। ভিসা/রেসিডেন্ট পারমিট শেষ হলেই অবৈধ। নাগরিকত্বও দেয়া হয়না। এমনকি এদেশে আপনার সন্তান হলে সেও কিছুই পাবেনা। এসব ছাড়া বৈধভাবে আজীবন থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে যদি কেউ ইরানী বিয়ে করে, তারপরও বছর বছর তাকে দৌড়িয়ে বেড়াতে হবে রেসিডেন্ট পারমিট রিনিউ করার জন্য। অবৈধভাবে যারা আছেন তারা বেশীরভাগই শুনেছি মানবেতর জীবন যাপন করেন। অনেকে সব হারিয়ে দেশে ফিরেছেন আবার কেউবা বছরের পর বছর ধরে এখানেই আছেন। তাদের বেশীরভাগই থাকেন বন্দরআব্বাস-বুশেহরের দিকে। একবার বুশেহরের এক লোকের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তিনি অবৈধভাবে আসেন ২০ বছর আগে এবং পরে ইরানী মেয়ে বিয়ে করে এখন স্ত্রীর কারনে নিয়মিত রেসিডেন্ট পারমিট রিনিউ করতে পারেন।

তবে ইরান ট্যুরের একটা সহজ উপায় আছে, সেটা হল অন্য কোন দেশ হয়ে আসা। যেমন তুরষ্ক ভিজিট শেষে আপনি সেখানকার ইরান এম্বাসি থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে পারেন সহজেই। গালফের দেশগুলো থেকেও সম্ভবত ট্যুরিস্ট ভিসা নেবার ক্ষেত্র কড়াকড়ি নাই। ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা।

আর ইরান এমন একটা দেশ যার রাষ্ট্রীয় কাজকারবার অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং স্বভাবতই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য প্রতিটা বিদেশীকে এখানে কঠোর নজরদারীতে রাখা হয়। সুতরাং কেউ জেলে থাকলে আমাদের মত চুনোপুঠির কিছুই করার নাই, এই কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আর এম্বাসির। আর অবৈধভাবে কোথাও যাবার ইচ্ছা থাকলে ইরানে না ঢুকাই ভাল। এখানে পুলিশ প্রসাশন আর সরকার যেমন কঠোর তেমনি এই বিরাট দেশে বহু আন্ডাগ্রাউন্ড মাফিয়া/ড্রাগ/দালাল চক্রেরও গোপন আস্তানা আছে। এদের যে কারো হাতে একবার যে কোন দূর্ঘটনায় পড়লে পুরো লাইফটাই বরবাদ হয়ে যেত পারে।

বিষয়: বিবিধ

৮৫০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

234004
১২ জুন ২০১৪ রাত ০১:৫০
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো///
১২ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৪
180930
উমাইর চৌধুরী লিখেছেন : ধন্যবাদ Happy
234203
১২ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৮
শহর ইয়ার লিখেছেন : খুবই সুন্দর এবং সময়োপযোগী লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে।
১২ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
180931
উমাইর চৌধুরী লিখেছেন : ধন্যবাদ Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File