নিজেদের উঠানে ঘানি : বাবার স্মৃতি খুব মনে পড়ে

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ২৫ মে, ২০১৬, ০৯:০৯:১০ সকাল



১৯৮১ সালে বাবাকে হারিয়েছি। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাবার বেশ কিছু স্মৃতি আমার কাছে এখনো অম্লান। তারই একটি স্মৃতি আজ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে উপহার দিতে চাই।

আমার বাবা স্বল্প শিক্ষিত কিন্তু ভারী সামাজিক মর্যাদা ও প্রচণ্ড ন্যায়বোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ন্যায় ও মর্যাদার পক্ষে তিনি খুব জেদীও ছিলেন।

আমাদের পাশের আটঘরা গ্রামে ঘানিতে নারিকেল, সরিষা, তিল, ইত্যাদি ভাঙানোর ব্যবস্থা ছিল। বাবা একদিন সেখানে নিজেদের গাছের নারিকেল ভাঙাতে গিয়ে দীর্ঘসময় সিরিয়ালে অপেক্ষার পর একটি বিষয় নিয়ে ঘানি মালিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয় যাতে বাবা নিজের মর্যাদা হানি বলে বিবেচনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, “জীবনে তোমার বাড়িতে আর ঘানি ভাঙাতে তো আসবই না- এমনকি এ নারিকেলগুলো আমি আমার ঘানিতেই ভাঙাব ইনশাআল্লাহ।”

বাবা বাড়িতে এসে ভারী কণ্ঠে শুধু এটুকু বললেন, “নারিকেলগুলো রোদে দে”- বলেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। বুঝতে বাকী রইল না কিছু একটা ঘটেছে! দুপুর-বিকেল গড়িয়ে রাতে বাবা ঘরে ফিরলেন ঠিকই কিন্তু মূল রহস্য খোলাসা করে কিছুই বললেন না। পরের দিন ভোরে আবার তিনি বেরিয়ে গেলেন। দুপুরে রহস্যের জট খুলল। গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে হাজির হলো ইয়া লম্বা এক ঘানি সাথে কয়েকজন শ্রমিক। সাথে সাথে জায়গা নির্ধারণ এবং তৎক্ষনাতই বাস্তবায়ন। উঠানের ঠিক মাঝখানে খনন কাজ শুরু হলো তবে রাতের মধ্যে শেষ হলো না। যতদূর মনে পড়ছে পরের দিন দুপুরে ঘানি স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয় এবং বিকেলেই আনন্দ করতে করতে নিজেরা টেনে সেই নারিকেল (আধা সম্পন্ন করে)ভাঙানো হয়। আমার সুস্পষ্ট মনে আছে, পরের দিনই কেশবপুর হাট থেকে ২৩০ টাকা দিয়ে একটি লাল গরু কেনা হয় ঘানি টানার জন্য। ইতোমধ্যে ঘানির ওপরে চালও স্থাপন করা হয়। ব্যস, শুরু হয়ে গেল গুরুত্বপূর্ণ এনালগ ঘানির ঐতিহাসিক যাত্রা-আত্মমর্যাদা রক্ষা ও প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তাই ছিল যার নির্মম সারকথা।

যতদূর মনে পড়ছে প্রায় মাস দুয়েক পর্যন্ত এ ঘানি আমাদের বাড়িতে বিদ্যমান ছিল। তারপর আবার তাকে বিদায় নিতে হয়। বিদায়ের দিন আমরা ভাইবোনেরা আপত্তি করেছিলাম, বলেছিলাম এটা থাক আমাদের বাড়িতে। বাবা বলেছিলেন, “পাগল! এটা কি স্থায়ী রাখার জন্য আমি এনেছি ?” বাবার সেই মর্যাদা বোধ ও সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা আজও আমাকে স্পর্শ করে- আমার মধ্যে তৈরি করে এক নিঃশব্দ উত্তেজনা। আমাদের মরহুম পিতা-মাতার আত্মার মাগফিরাতের জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই।

বিষয়: বিবিধ

২১৬৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370040
২৫ মে ২০১৬ সকাল ০৯:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : ভাল কথাকে কাজে পরিনত করার লোক আমাদের দেশে খুব একটা দেখা যায় না এখন।

মহান আল্লাহ আপনার আব্বাকে উনার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়ে জান্নাত নসীব করুন -আমিন ।
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
307109
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
370045
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঘানি চালান নাকি খুব কষ্টকর। শুধু সন্মান এর জন্য এত কষ্ট!
আটঘরা গ্রামের নামটা একটা উপন্যাসে পড়েছি। এই নামে সত্যিই গ্রাম আছে। তবে সেই উপন্যাসে গ্রামটা পশ্চিমবঙ্গে!!
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
307110
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সবুজ ভাই।
370052
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার আব্বাকে আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাত দান করুন।..এই কেশবপুর কি যশোরের মনিরামপুর ..কেশবপুর ??
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
307111
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : জী ভাইয়া, ঠিকই ধরেছেন, এই কেশবপুর যশোরেরই কেশবপুর। ধন্যবাদ আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার জন্য।
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০১:০১
307112
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনি তো আমার এলাকার লোক...আমিও যশোরের। মনিরামপুর পর্যন্ত আমার চেনা আছে Happy ওদিককার লোক আনেক ভালো Happy
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০১:৩১
307115
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আপনার এ পরিচয় জেনে সত্যিই ভালো লাগছে। ভালেঅ থাকবেন।
370069
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০২:৫৯
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনার আব্বাকে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতবাসী করুন।
আমাদের পাশের গ্রামে বুদা কলুর একটা ঘানি ছিল। আমি আর আমার বড় বোন গিয়ে লাল কাচের বোতলে করে তেল নিয়ে আসতাম। চোখ জ্বালা করত যখন ওরা ঘানি চালাত।
পরের বার ইনশা আল্লাহ খেজুরের গুড় খাব।
২৫ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:১৪
307135
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : অবশ্যই সুপ্রিয় মাজেদ ভাই, আমি আজও খেজুরের গুড় নিয়ে অাপনার জন্য অপেক্ষা করি। ধন্যবাদ।
370099
২৫ মে ২০১৬ রাত ০৮:১৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আমার আব্বাও বাড়ির বরুই গাছ কেটে দা দিয়েই একটা ঢেঁকী বানিয়ে নিজের বাড়িতে বসিয়ে ছিলেন, অন্যের ঢেঁকীতে লাইন দিতে হত বলে। আল্লাহ সকল গত মা বাবাদের আত্মার শান্তি দিক।ধন্যবাদ৷
২৯ মে ২০১৬ সকাল ০৮:৫৪
307345
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
370226
২৭ মে ২০১৬ রাত ১২:০৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়া।
শেকড়ের গভীরে নাড়া দিল আপনার লিখাটি।

আপনার প্রাণপ্রিয় বাবার জন্য দোয়া রইলো।
২৯ মে ২০১৬ সকাল ০৮:৫৪
307346
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আমীন। আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
370279
২৮ মে ২০১৬ সকাল ১০:১৫
আবু নাইম লিখেছেন : আপনার আব্বাকে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতবাসী করুন।
২৯ মে ২০১৬ সকাল ০৮:৫৪
307347
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আমীন। আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
370468
৩০ মে ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়।
রমজান উপলক্ষ্যে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আপনার অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। বিস্তারিত জানতে-
http://www.bddesh.net/blog/blogdetail/detail/9039/GaziSalauddin1/76670" target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File