৩৭ বছর পূর্বের কাপড় ইস্ত্রি করার আমার অভিনব পদ্ধতি

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:৪৮:৩১ সকাল





১৯৭৯ সালের দিককার কথা। তখন আমি ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি। আমার ঘনিষ্ট সহপাঠী শামীমের আব্বা জনাব হাতেম আলী (বি.কম, বি.এড.) যে প্যান্ট-শার্ট পরে চলা ফেরা করতেন তা বেশ পরিপাটি ও বিশেষ করে প্যান্টে ভাজ পড়া থাকত। বিষয়টি আমার দৃষ্টি আকর্ষণের পর্যায়ে পৌঁছালে শামীমকে জিজ্ঞাসা করলাম- কীভাবে প্যান্টে ও রকম ভাঁজ পড়ে ? সে জবাব দিল- “ইস্ত্রি করলে ও রকম ভাঁজ পড়ে। বাবা নিয়মিত চিনাটোলা বাজার (আমাদের গ্রাম থেকে ৩ কিঃ মিঃ দূরে ঢাকা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে অবস্থিত) থেকে প্যান্ট-শার্ট ইস্ত্রি করে নিয়ে আসে।” কাপড়ের যত্নে এ কাজটি সম্পর্কে আমার ধারণা একেবারেই নতুন মনে হলো।

অখ্যাত এক পল্লী পরিবারে জন্ম নেয়া এই বালকের মধ্যে ইস্ত্রি করা পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি কাপড় পরার উচ্চ মাত্রার লোভ জেঁকে বসল যদিও তখন বেশির ভাগ সময় তার কাটত হাফ প্যান্ট পরে। এলাকায় তখনো বিদ্যুৎ আসেনি। কাপড় ইস্ত্রি করার অভূতপূর্ব প্রযুক্তি সরেজমিন দেখার জন্য চিনাটোলা বাজারে গেলাম। দেখলাম- লোহার একটি ত্রিকোণাকার যন্ত্র যা কিনা বেশ ভারী বলে অনুমান করা গেল লোকটি হাতলে ধরে কাপড়ের ওপর চেপে ঘষছে আর কাপড় সমান হয়ে যাচ্ছে। বাহ! দারুন তো ! ব্যাস, পেয়ে গেছি পদ্ধতি। এটা কোন ব্যাপারই না। বাজার থেকে ফেরার সময় পথেই মাথায় বুদ্ধিটা চলে এলো। বাড়িতে এসেই কাঠের পিঁড়ি চিৎ করে তাতে কয়েকটি বাটখারা, ইট ইত্যাদি চাপিয়ে দিয়ে কাপড়ের ওপর ঘষা শুরু করি। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া গেল না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাহলে কীভাবে ওটা করব ? জানতে পারলাম- শুধু ভারী হলেই হয় না, গরমও হতে হয়। তাই নাকি ?

পুণরায় গেলাম চিনাটোলা বাজারে। খুব খেয়াল করে দেখতে থাকলাম। সত্যিই তো- ওটা তো গরম। কাপড়ের ওপর চেপে ধরলে একটু একটু ধোঁয়া উড়তেও দেখা যাচ্ছে। লোকটি খানিক পর পর ডান পাশে একটু নিচে কোথায় যেন যন্ত্রটি রাখছিল। উঁকি দিয়ে দেখি সেখানে দিব্যি স্টোভ জ্বালানো। সেখানে একটা রাখছে আর একটা তুলে নিচ্ছে। ওকে, নো প্রোব্লেম! এ প্রযুক্তি তো আমাদের ঘরেই বিদ্যমান। এবার কাপড়-চোপড় সমান না হয়ে পারবে কী করে ?

বাড়ীতে ফিরেই মায়ের সাথে দরবার করলাম। ভাত রান্না হওয়া মাত্রই মাড় গালিয়ে গরম ভাত এ্যালুমিনিয়ামের ডিশে ঢেলে আমাকে দেয়া হলো। কাপড় আমি আগেই বাক্সের উপর রেডি করে রেখেছিলাম। এখন বাষ্প উড়া গরম ভাতের ডিশ কাপড়ের উপর ঘষতে শুরু করি। মুহূর্তেই হাসি ম্লান হয়ে গেল। ভাজ ফেলানো পরিপাটি কাপড় পরার দূরন্ত আশা মারাত্মক আহত হলো। কাপড় সমান হওয়া তো দূরের কথা গরম ডিশের তলা থেকে কাপড়ে একরকম দাগ পড়তে দেখা যাচ্ছে। নিয়তি বুঝি আমায় সাপোর্ট করল না। অতঃপর এ পদ্ধতিকে বিরাম দেওয়ার পালা। শৈশবের সেই অভিনব কাপড় ইস্ত্রি করার কথা আজ খুব মনে পড়ে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380340
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


আপনার চমৎকার উপভোগ্য লিখাটি পড়ে আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের একটা লোহার বাক্সওয়ালা আয়রন ছিল, তার ভিতরে জ্বলন্ত কয়লা ভর্তি করে তারপর কাপড় আয়রন করা হত।


জাজাকাল্লাহু খাইর।


সর্বাবস্থায় নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা রইলো আপনার জন্য।
380351
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাতের ডিশের নিচে নিশ্চয় সমস্যা ছিল না হলে তো হওয়ার কথা!!!
শুনেছি আগে মার দেওয়া কাপড় মোটা ম্যাট্রেস এর নিচে রেখে ইস্ত্রি করা হতো!
০২ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:০৭
314795
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : এই ইন্ডিজিনাস আয়রন টেকনিকের ব্যাপারটা ছোট বেলায় আমি একটা নাটকে দেখেছিলাম | আশীষ কুমার লৌহকে দেখেছিলাম ম্যাট্রেসের নিচে কাপড় রেখে আয়রন করতে | মজা লিখেছিলো দেখে | মজার লেখাটার জন্য ধন্যবাদ |
381583
৩০ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৮:১৮
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : অনেক ভাল লাগলো। শৈশবের অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File