জয় হে নগর পিতা !

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৩৭:০৭ দুপুর





জয় হে নগর পিতা ! তুমি মোদের করেছ গর্বিত। গতকাল বিকেলে মাত্র ৩০ মিনিটের বর্ষণে তিলোত্তমা নগরী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল, দিলকুশা, ফকিরাপুল, পল্টনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় ঢেউ জাগানো জলাধার সৃষ্টি হয়। এখন এ রকম প্রতিদিনই প্রায় সৌভাগ্যবান নগরবাসী ইট-পাথরের শহরে বসেই সৈকতের রূপ উপভোগ করতে পারে। সে এক অনন্য রোমাঞ্চ ! পাদুকা হাতে হাঁটু পানিতে নগরীর হাজার হাজার কর্পোরেট ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাদের একটি বিকেল উপভোগ করতে পারার শিহরণ কতই না চমৎকার। এ সবই তোমার দান পিতা !

শহরের পিচ যেন সৈকতের চিত্র,

ঢাকা আর ঢাকা নয় সাগরেরই মিত্র।

গতকালের পানিতে দাঁড়িয়ে কবির সেই কবিতার সুরে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল,

কোথায় সাগর কোথায় নদী কে বলে তা বহুদূরে ?

সাগর-নদী দেখতে হলে ঢাকা থেকে আসুন ঘুরে।

গতকাল সন্ধ্যে ৬টার দিকে ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কির বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে এক আত্মীয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সুখের ব্যাপার হলো, নগরীর আছড়ে পড়া ঢেউ বার বার অধমের দু‘ পা ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছিল, এ কি কম পাওয়া ? এক সময় নগরীর কোন কোন অঞ্চলে কখনো কখনো এ চিত্র দেখা যেত- এখন তা সার্বজনীন করতে পেরেছ পিতা। ঢাকার এমন কোন এলাকা নেই যেখানে সাগররূপের এ ভয়াবহ আশীর্বাদ স্পর্শ করেনি। আমার দেশে শিশিরে পা ধোয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আছে, তবে তার জন্য হেমন্ত-শীতের অপেক্ষা করতে হয় এবং গ্রামে কিংবা মাঠে ঘাসের কাছে যেতে হয়। ব্যস্ত নগরবাসীর সে সময় কোথায় ? তাই তো তোমার নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাদের বিনামূল্যে পা ধৌত করে দেয়ার এ অভিনব ব্যবস্থা। এ সবই তোমার দান পিতা ! তবে ভুলে যাবেন না, এ ক্ষেত্রে নগরবাসীর অবদানও কিন্তু কম নয়। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, পলিথিন এ সব ফেলে পানি নিষ্কাষণে বাঁধা সৃষ্টি করে আমরাও কিন্তু এ ঢেউ সৃষ্টির কৃতিত্বের দাবীদার।

হে নগর পিতা ! তোমাকে আশ্বস্ত করতে পারি, তুমি মোটেও চিন্তা করো না- তোমার নগরবাসী যে কোন পরিস্থিতি হজম করতে শিখেছে। শিখেছে মুষলধারের বর্ষণকে অন্তহীন লজ্জা পাইয়ে দিতে। আমার মতো এমন অনেকেই তৈরি হয়েছেন যারা অফিস ব্যাগে ছাতার পাশাপাশি হাওয়াই চপ্পল নিয়ে ঘুরেন। ভাবছি আগামী কাল থেকে ব্যাগে একটি লুঙ্গিও রাখব। বৃষ্টির সাক্ষাৎ পেলেই জুতা ব্যাগে নিয়ে চপ্পল পায়ে হাঁটু পানি মাড়াতে আমরা সচেতনভাবেই প্রস্তত তা সে পানি যতই কৃষ্ণবর্ণ হোক না কেন।

রাত সাড়ে আটটার দিকে যখন হাজার হাজার নগরবাসী আমার মতো জুতা হাতে ভেজা কাপড়ে ঘরে ফিরছিল তখন টেকসই উন্নয়নের চিত্র উপলব্ধি করতে পারছিলাম। বৃষ্টি আধা ঘণ্টা কিংবা তার চাইতেও কম সময় হোক, কিন্তু তার রেখে যাওয়া পানি যদি টেকসই না হয়, নগরবাসীর কাছে যদি তা দৃশ্যমান না হয় তাহলে কিসের টেকসই ? যদি তা জোয়ারের রূপ উপহার দিতে না পারে তাহলে বড় বড় নেতাদের ফেনা তোলা বক্তব্য ‘উন্নয়নের জোয়ার’ কথাটি অর্থবহ হয় কীভাবে ? জয় হে নগর পিতা ! তুমি মোদের করেছ গর্বিত!জয় হে নগর পিতা !

বিষয়: বিবিধ

১০০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383703
০২ আগস্ট ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ ,
০৩ আগস্ট ২০১৭ সকাল ১০:৩৫
316658
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : সুপ্রিয় মনসুর ভাই, আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File