ফিউশন

লিখেছেন লিখেছেন যোদ্ধা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩৮:৩৩ রাত

রাসুল স ইসলাম প্রচার করে চারদিক থেকে তখন প্রচুর সাড়া পাচ্ছিলেন । হুড় হুড় করে মানুষ জন আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টা জেনে ফেলছিল , মেনেও নিচ্ছিল ।

অবস্থার বেগতিক দেখে মুশরিকরা পড়ে গেল মহা চিন্তায় । এভাবে আর কিছুদিন চললে বাপ দাদার ধর্ম , লাত -মানাত- উজ্জা বলে যে কিছু থাকতে পারে এটা মানুষ বুঝতেই চাইবেনা ।

কি করি কি করি চিন্তা করতে করতে এরা একটা উপায় বাৎলে ফেলল । তারা ঠিক করল যে এই মুহাম্মদ কে তারা এক প্রকার আপোষের প্রস্তাব দেবে । তাদের তিন পুরুষের বিশ্বাস হুমকীর মুখের থেকে বের হয়ে বহাল তবিয়তে থাকতে পারে কেবল মাত্র মুহাম্মদ যদি সমঝোতায় রাজী থাকে ।

একদিন তারা ডেকে বলল , ´মুহাম্মদ , একটা কথা শোন , আমরা তোমাকে এত বেশী ধন সম্পদ দেবো যার ফলে তুমি আরবের সেরা বড়লোক হয়ে যাবা ... তোমাকে আরবের সেরা সুন্দরী এনে দেবো , যেই সুন্দরীকে তোমার মনে ধরবে ,শুধু একটা শর্তে ...। শর্ত হল , তুমি এসব ছেড়ে দাও । আমাদের দেব দেবীদের ব্যপারে মানুষের মন থেকে বিশ্বাস উঠে যায় এরকম কথা বার্তা আর বলবানা ।

ও হ্যা , আরেকটা কথা , আরেকটা প্রস্তাব আমরা তোমাকে দিতে চাই । এক বছর তুমি আমাদের উপাস্যদের উপাসনা করবা , আর পরের বছর আমরা তোমার আল্লাহকে ডেকে নেব নে ।´ ( হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত )

বহুবার ,বহু মজলিশে মুহাম্মাদ স কে আপোষের কথা বলা হয়েছিল ।( আব্দ ইবনে হুমাইস ) ´যদি তুমি আমাদের দেব দেবীদের চুমু দাও , তাহলে আমরা তোমার মাবুদ কে সিজদা করব ।´

ঠিক তখনই সুরা কাফিরুন নাজিল হল ।

সমস্ত রকমের মূর্তি পুজারী , আহলে কিতাব , নাস্তিক , গাছ আগুন মাটি গরু ছাগল ইত্যাদি পুজারীদের একটি মাত্র কাতারভুক্ত করে বলা হল ´ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন´ । এই কাতারভুক্ত লোকদের কাফির হিসেবে সম্বোধন করা হল যার অর্থ অমান্যকারী , অস্বীকারকারী , আলাদা ভাবে হে মুশরিক , হে আহলে কিতাব ডাকা হয়নাই ।

মুহাম্মদ স কে স্পষ্ট কথা বলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন আল্লাহ্‌ ।

´বলে দাও হে কাফের রা । আমি তাদের ইবাদত করিনা , যাদের ইবাদত তোমরা কর । আর না তোমরা তার ইবাদত কর ,যার ইবাদত আমরা করি । আর না আমি তাদের ইবাদত করব যাদের ইবাদত তোমরা করে এসেছ ।আর না তোমরা তাঁর ইবাদত করবে যার ইবাদত আমি করি । তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য ।´

ইবনে আব্বাস র বলেন , রাসুল স রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত থাকার জন্য এই সুরা পড়ে ঘুমাতেন .

এই দুর্দিনে , যখন নিজের বিশ্বাস খুব অযৌক্তিক ভাবে সংমিশ্রিত হওয়ার ডাক পাওয়া যাচ্ছে ... বলা হচ্ছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার , প্যাঁচার মুখোশ মুখে দিয়ে অমঙ্গল তাড়ানোর সিস্টেম আমরা বাস্তবায়ন করছি , সরস্বতীর সামনে নতমুখে হিজাব মাথায় দাঁড়িয়ে নিজের জ্ঞান গরিমা বাড়ানোর প্রার্থনা করছি , বাঙ্গালী হয়েছি তাই উলুধবনিকে আমার সংস্কৃতির অংশ মনে করছি , তরুন সমাজের সকাল বিকাল কুর্নিশ প্রাপ্ত বুদ্ধিজীবিরা হিজাবকে সংজ্ঞায়িত করছে লু হাওয়া ,মিশর ,পাকিস্তান দিয়ে ... কোরআনের নির্দেশ দিয়ে না ,আর রাষ্ট্র যেখানে করছে শিখা চিরন্তন পৃষ্ঠ পোষকতা - সেখানে প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে আমি সুরা কাফিরুন পড়ে ঘুমাতে যাওয়াটা নিজের জন্য অপরিহার্য মনে করি ।

আমরা একে অন্যের পাশাপাশি আছি - থাকব । জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাতে , বিপদে আমরা আমাদের জন্য । সুখের দিনগুলিতেও আমরা একসাথে হাসতে পারি ।

কিন্তু তাই বলে তুমি আমার কাছ থেকে যেমন স্ক্রিসমাসে স্যানটা ক্লজের ড্রেস পড়ে ´জিঙ্গল বেল জিঙ্গল বেল´ নাচানাচির আশা করতে পার না । আমি তেমনি আমাদের কোরবানির ঈদে তোমাকে আল্লাহ্‌র নামে গরু জবাইয়ে প্রলুব্ধ করব না জীবনেও , কিংবা বলব না , ´রোজা রাইখা আস গা , তারপর ইফতারীর প্লেট হাতে দিব । ´

এটা আমার বিশ্বাসের দাবী , আমার নীতির অংশ । এটা আমার ইডিওলজি । আমি জানি , আমার চলার পাথেয় হিসেবে আমি যা পেয়েছি , আমি যখনই সেটাকে জানার চেষ্টা দেই , একদম হৃদয় দিয়ে ফীল করি এটার সাথে অন্য বিশ্বাসের ভাল জিনিসপাতি যোগ করার যেমন অবকাশ নাই , তেমনি এর থেকে কিছু বাদ দেয়ার (যেমন মনের পর্দাই , মনের নামাজই , মনের খানা খাদ্যই বড় পর্দা , বড় নামাজ কিংবা বড় খানা খাদ্য )কোন উপায় নাই । এ নিজেই বড্ড বেশী স্বয়ং সম্পূর্ণ । এর ভাব ধারা আমি ধরতে ব্যর্থ হলে সেটা অবশ্যই আমার ব্যর্থতা ... আমি কোরআনের ঘাড়ে সেই দোষ চাপাতে পারি না !

সেই চৌদ্দশ বছর আগে এই রকম ফাইজলামী মার্কা প্রস্তাবকে যেরকম শক্ত বক্তব্য দিয়ে প্রতিহত করেছিলেন রাসুল স , এই সময়ে এসে ঐ এক জাতের ফিউশনকে অন্তত তাঁর উম্মত হিসেবে আমরা ইগনোর করতেই পারি ।পষ্টাপষ্টি বলেই দিতে পারি , আমি এগুলিকে আকথা কুকথা মনে করি এবং লজিক পাইনা । আর লজিক ছাড়া কাজ কারবার করে টাইম পাস করতে পারতাম না , স্যরি । তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181618
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:৪৪
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : সেই চৌদ্দশ বছর আগে এই রকম ফাইজলামী মার্কা প্রস্তাবকে যেরকম শক্ত বক্তব্য দিয়ে প্রতিহত করেছিলেন রাসুল স , এই সময়ে এসে ঐ এক জাতের ফিউশনকে অন্তত তাঁর উম্মত হিসেবে আমরা ইগনোর করতেই পারি। একমত
181620
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:৪৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাই আমিও ঘুমানোর আগে ঐ দুআটা পড়তে সবসময়ই চেষ্টা করি।
181635
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:২৪
181698
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০১
181762
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
যোদ্ধা লিখেছেন : পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
181767
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
হতভাগা লিখেছেন :


ইনারা সম্রাট আকবরের দীন - ই - ইলাহীর অনুসারী
181796
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File